চবিতে ২৪ বছরে নিহত ৯ মেধাবী ছাত্র
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি উত্থানের পর ২৪ বছরে মারা গেছে ১৩ মেধাবী ছাত্র। এর মধ্যে ৯ জনই মারা গেছে শিবিরের হাতে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ক্যাম্পাসে আধিপত্য এবং আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ নিতে এসব হত্যাকা- ঘটায় শিবির।
চবিতে সর্বশেষ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে। চবির রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ও ছাত্রলীগ সমর্থক এএমএ মহিউদ্দিন ওরফে মাসুম হত্যাকা-ে সন্দেহের তীর ছুটছে সেই শিবিরের বিরম্নদ্ধে।চবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশের প্রথমদিনেই সহিংস রাজনীতির ধারা চালু হয়। ১৯৮৬ সালের ২৬ নবেম্বর জাতীয় ছাত্রসমাজ নেতা হামিদের হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির ক্যাডাররা। কাটা কব্জি নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য মিছিল বের করে তারা।
চবিতে সর্বপ্রথম হত্যাকা- ঘটে ১৯৮৮ সালের ২৮ এপিল। সেদিন নগরীর বটতলী স্টেশনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । এ সংঘর্ষে নিহত হয় আমিনুল হক। সে ছিল পরিসংখ্যান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। চবিতে সংঘটিত সব হত্যাকা-ের মধ্যে শুধুমাত্র এটির বিচার হয়।
চবিতে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে। পরবর্তী বছরের ২২ ডিসেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যর বিজয় মিছিলে হামলা চালায় শিবির। এতে গুরম্নতর আহত হয় ছাত্রমৈত্রীর ফারম্নকুজ্জমান ফারম্নক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ ডিসেম্বর মারা যায় এ ছাত্রনেতা। এ হত্যা মামলার আসামি বর্তমানে চবির শিক।
চবি শিকপুত্র নরম্নল হুদা মুছাকে ১৯৯৪ সালে ২৯ অক্টোবর নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ছাত্রশিবিরের রাজনীতি ত্যাগ করে ছাত্রদলে যোগ দেয়ায় কাল হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন শিক তাঁর পিতা ড. ইনামুল হক পুত্রের হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে।
বিশ্বদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত মোজাম্মেল কটেজে শিবির ১৯৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর হামলা চালায়। সবাই পালিয়ে যেতে পারলেও বকুল আটকে পড়ে। নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করে ঘাতকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি আইয়ুব আলীর। শিবির সন্ত্রাসীদের গুলিতে ১৯৯৮ সালের ৬ মে মারা যায়।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও চবির শিক ড. রশীদ উন নবীর পুত্র মুশফিক উস সালেহীন ১৯৯৮ সালের ১৮ মে বালুচড়া এলাকায় শিৰক বাসে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে শিবির সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী ও চারম্নকলা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র সঞ্জয় তলাপাত্র নগরীর বটতলী স্টেশনে শিবিরের পাথর হামলায় ১৯৯৮ সালের ২০ আগস্ট গুরম্নতর আহত হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দুদিন পর ২২ আগস্ট চমেক হাসপাতালে মারা যায়।
২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২৯ ডিসেম্বর শিবিরের সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আলী মতর্ুজাকে গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দীর্ঘ সময়েও এসব হত্যা মামলার একটি ছাড়া অন্যগুলোর কোন বিচার হয়নি। হত্যা মামলার আসামিদের অনেকেই জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতায় হত্যা মামলার আসামিরা বার বার পার পেয়ে গেছে। এসব কারণে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে আবারও চবির মেধাবী এএমএ মহিউদ্দিন খুন হয়।
No comments