আকাশে শান্তির নীড়-চাই মাটিতে অশান্তির নিরাময়
ভুক্তভোগী বিমানযাত্রী মাত্রই জানেন 'আকাশে শান্তির নীড়' স্লোগান সত্ত্বেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা প্রত্যাশিত শান্তিময় আকাশযাত্রা নিশ্চিত করতে পারে না। কেউ কেউ একে ঠাট্টা করে গুলিস্তান-মিরপুর বাস সার্ভিসের সঙ্গেও তুলনা করেন। যাত্রীসেবার বালাই নেই, সময় মানার রেওয়াজ নেই, আকাশ যানের অবস্থাও তথৈবচ।
এমন অবস্থায় বিমান চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। খুব বিপদে না পড়লে সাধারণত যাত্রীরা বিমানের দ্বারস্থ হন না। বাইরের যাত্রী দূরের কথা_ উন্নত সেবা, স্বস্তিকর, আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দ্বারস্থ হন একান্ত দেশপ্রেমিক যাত্রীরাও। ফলে বিমানের ফ্লাইটগুলো থাকে যাত্রীবঞ্চিত। এর ফল মারাত্মক। প্রতি বছর প্রায় ৮০ কোটি টাকার গচ্চা। পৃথিবীর দেশে দেশে বাঙালির গমনাগমন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও অতিথি-অভ্যাগতের সংখ্যা কম নয়। সঠিকভাবে পরিচালিত হলে পৃথিবীর অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো বিমানও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারত। লাভের আশা দূরের কথা, লোকসান ভরতেই বিমান পেরেশান। বিমানের এমন লোকসানের খতিয়ান কেন? আকাশে শান্তির নীড় হওয়ার কথা যে বিমান সার্ভিসের, তা-ই বা অস্বস্তির নীড়ে পরিণত হয়েছে কেন? এসব প্রশ্নের উত্তরে ভূমিতেই তাকাতে হবে বৈকি। কেননা ভূমিতেই যত সমস্যার উদ্ভব। দুর্নীতি-অদক্ষতা যখন বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোকে আকীর্ণ করে ফেলে তখন আকাশে শান্তি প্রতিষ্ঠা কীভাবে সম্ভব? সোমবারের সমকালে বিমান নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে কিছু উপায় বের করা যেতে পারে। প্রথমেই যে বিষয়টির দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার তা হলো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তদারকির ভার কার হাতে? অভিযোগ উঠছে, মন্ত্রণালয় আছে, মন্ত্রীও আছেন_ কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ মানতে নারাজ বিমান কর্তৃপক্ষ। পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে মন্ত্রীর নির্দেশ যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। প্রশ্ন হলো, গুরুত্বপূর্ণ একটি অফিস কীভাবে মন্ত্রীর মতামত অগ্রাহ্য করে? মন্ত্রণালয়ের অধীন না থাকলে বিমান কার অধীন সেটি স্পষ্ট হওয়া দরকার। সংসদীয় কমিটিসহ অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গেও মন্ত্রণালয়ের দূরত্ব, ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাওয়া উচিত। বিমানের পরিচালনা পরিষদে নিয়ে আসা উচিত দক্ষ, অভিজ্ঞ ও বিমান সংশ্লিষ্ট মানুষদের। বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। এ জটিলতা থেকে মুক্ত হতে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে সমস্যা জটিলতর হবে। বিমানের আকাশ আরও সীমাবদ্ধ হয়ে আসবে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি নজরে আসা উচিত তা হলো_ বিমান ক্রয় ও ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা। পুরনো, লক্কড়-ঝক্কড় বিমান দিয়ে ভালো সেবা দেওয়ার চিন্তা সফল হওয়ার কথা নয়। নতুন বিমানের ব্যবস্থা করতে হবে, এক্ষেত্রে দুর্নীতিহীন ক্রয় নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। অন্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে শুধু নতুন বিমান আনাই যথেষ্ট নয়, যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে অদক্ষতা, অমনোযোগ ও আন্তরিকতার অভাব দূর করতে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল নিশ্চিত করা দরকার। সেবার ক্ষেত্রে এযাবৎ যে অবহেলা করা হয়েছে তা থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। যাত্রীদের অভিযোগ শুনে তার বিহিত করাও দরকার। মানুষকে সেবা দিয়েই সন্তুষ্ট করতে হবে। নিরুপায় যাত্রীর কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে খারাপ সেবা দিলে পরের যাত্রায় তিনি বিমানকে বেছে নেবেন এমন ভাবা যায় না। আমরা আশা করি, বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে তা থেকে উদ্ধারের আশু উদ্যোগ আসুক। নইলে লোকসানের অঙ্ক গোনার দিন কখনও শেষ হবে না। মন্ত্রীকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের সুযোগ করে দিতে হবে।
No comments