অনেক টাকা দিয়ে কিছু কিনলেই কি অভিজাত হয় by জাহিদ হায়দার
প্রায় প্রতিদিনই ঈদের বাজারের খবরাখবর মুদ্রণ এবং প্রদর্শন মিডিয়ায় আমরা পড়েছি, শুনেছি আর দেখেছি। ঢাকার বড় বিপণি বিতানগুলোতে অনেক দামি দামি জামাকাপড় এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রির সংবাদ দিয়ে বলা হচ্ছে, 'অভিজাত' ক্রেতারা কিনছেন। মনে প্রশ্ন জাগে, অনেক টাকা দিয়ে যিনি কিছু কেনেন তিনিই কি অভিজাত হন?
সংবাদপত্রে (২১-৮-২০১১, বাংলাদেশ প্রতিদিন) পড়লাম, বন কর্মকর্তার কলেজপড়ুয়া ছেলে সাইফুল আজিমকে তার বাবা 'শখ করে' একটি দামি মোটরবাইক কিনে দিয়েছেন। যদিও বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব হাঁটাপথ। সেই মোটরবাইক নিয়ে তাঁর ছেলে ছিনতাই করতে গিয়ে দুই সহযোগীসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে। রিপোর্টার আরো লিখেছেন : "তার মতো বখে যাওয়া 'অভিজাত' পরিবারের দুলালরাই রাত হলে দামি প্রাইভেট কার ও হাল ফ্যাশনের মোটরবাইক নিয়ে ছিনতাইয়ের জন্য নেমে পড়ে।" আমার মনে পড়ে, বছর তিনেক আগে এক বন কর্মকর্তার খবর আমরা পেয়েছিলাম, যিনি তাঁর বিপুল পরিমাণ টাকা বালিশের মধ্যে লুকিয়ে রাখতেন। ধরা না পড়লে বোধ হয় (?) তিনিও মিডিয়ার ভাষায় 'অভিজাত' হতে পারতেন।
অনেক দিন আগে আমাদের একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে_যেটা এখন আর বহুল প্রচারিত নয়, একটি সম্পাদকীয় পড়েছিলাম। বিষয় ছিল, দুই 'অভিজাত' মহিলার ঝগড়া। সম্পাদকীয় পড়ে আমি দৈনিকের এক বন্ধুকে ফোন করে বলেছিলাম, আপনারা অভিজাত শব্দটিকে এভাবে অপমান করলেন কেন? তিনি আমার বক্তব্য শুনে বললেন, এ রকম আর হবে না।
সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, গুলশান এলাকায় একটি প্রায় ৩২০০ স্কয়ারফুটের ফ্ল্যাট নিয়ে দুই 'অভিজাত' মহিলার ঝগড়া এবং মীমাংসা। ফ্ল্যাটটির দাম কোটি টাকার ওপরে। দুই মহিলার একজন এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, অন্যজন কাস্টমস কর্মকর্তার। এই ক্রেতা দুজনের মধ্যে একজন মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম দিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলেন, অন্যজন তাঁর কয়েক দিন পর ফ্ল্যাটের দামের পুরোটা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে ফেলেন। প্রথমজন কয়েক দিন পর পুরো টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বুঝে নিতে গেলে জানতে পারেন, ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। তারপর গণ্ডগোল ও মীমাংসা। এই সিদ্ধান্তে মীমাংসা হলো যে এ বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনারা খুব ঝামেলায় পড়বেন, কেননা আপনাদের স্বামীরা যে চাকরি করেন, তাতে প্রশ্ন উঠতে পারে_কোটি টাকা দিয়ে গুলশানে ফ্ল্যাট আপনারা কিনতে পারেন কি না? দুই বুদ্ধিমতী মহিলা বুঝলেন, আর ঝগড়া-দ্বন্দ্বে লাভ নেই। বিশেষ একটি শব্দে তাঁদের স্বামীরা চিহ্নিত হলে আরো সমস্যা হবে। অভিজাতরা ঝগড়ায় ক্ষান্ত দেন।
সম্পাদকীয়ের এই বয়ান পাঠ করে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কাস্টমস কর্মকর্তা কোথায় এত টাকা পেলেন? আর টাকা পাওয়ার পর গুলশানে ফ্ল্যাট কিনে তাঁদের স্ত্রীরা কাগজের ভাষায় হয়ে গেলেন 'অভিজাত'? আমার আরো মনে হলো, কেন যে পুলিশ বা কাস্টমস কর্মকর্তা হলাম না, হলেই গুলশানে ফ্ল্যাট কিনে 'অভিজাত' হতে পারতাম!
যত দূর মনে পড়ে, আলবার্তো মোরাভিয়ার একটি লেখা পড়েছিলাম, বিষয় ছিল রুচি ও আভিজাত্য। তিনি বলেছেন, একজন মানুষ কায়দা ও বিশেষ বিশেষ কৌশল করে টাকা কামাতে পারে, সেই মানুষ টাকা খরচ করার রুচি অর্জন নাও করতে পারে। রুচি অর্জন টাকা দিয়ে করা যায় না। তা করতে হলে শিক্ষার বেশ কিছু স্তর পার হতে হয় এবং ক্রমাগত শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তৈরি হয় রুচি এবং তারপর আসে আভিজাত্য। ওই আভিজাত্য তৈরি হতে টাকা ও শিক্ষার যৌথ নিবিড় চলাচল থাকতে হয় অনেক শতাব্দীরও বেশি।
শ্রী সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'পরশপাথর' ছবিতে একটি দৃশ্য আছে, তা হলো, একটি মদ্যপানের আসরে হঠাৎ অনেক টাকার লোক বনে যাওয়া পরশপাথর পাওয়া মালিক (প্রধান চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী) অভিজাত শ্রেণীর আসরে গিয়ে মদ পান করে যাচ্ছেতাই মাতলামো শুরু করেন এবং তাঁকে ওই আসর থেকে অপমান হয়ে চলে আসতে হয়। তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি ওই আসরের যোগ্য নন। কতটুকু মদ পান করলে শীলিত সমাজে নিজের ব্যক্তিমর্যাদা বজায় থাকে, সভ্যরূপ চিত্রিত হয় তা জানতে হলে হতে হয় রুচিবান, টাকা দিয়ে যা অর্জন করা যায় না, সেখানে অতীব জরুরি হলো শিক্ষা, যা করণীয়-অকরণীয়র মাত্রা সম্পর্কে টেনে দেয় ভেদরেখা। তৈরি করে বিশেষ রুচি ও অভিজাত আচরণ।
কলকাতায় প্রয়াত শ্রী সমীর দাশগুপ্তের বাসায় পরিচয় হয়েছিল ইনামিনা লাহিড়ী নামে এক মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি আমার অগ্রজ দাউদ হায়দারের ভালো বন্ধু ছিল। সমীরদার বাসা থেকে আমরা খেয়ে ও বহুবিধ বিষয়ে আড্ডা দিয়ে প্রায় মধ্যরাতে ফেরার পথে দাউদকে জিজ্ঞেস করলাম, 'ইনামিনা মেয়েটি খুবই আলাদা ধরনের। কী রুচিপূর্ণ! বসনের রং পছন্দে কী পরিমিত! কথায় ও আচরণে পরিশীলিত।' আমার কথা শুনে খাঁটি পাবনার ভাষায় দাউদ বলল, 'হবি না, দ্যাখা লাগবি উয়ের গায় কার রক্ত?' দাউদ প্রশ্ন করে আমাকে আবার প্রশ্ন করল, 'রামতনু লাহিড়ীর নাম শুনেছিস?' আমি হ্যাঁ-বাচক উত্তর দিয়ে বললাম, শিবনাথ শাস্ত্রীর 'রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ' পড়েছি। দাউদ এবার ভালো বাংলায় বলল, 'ইনামিনা সেই লাহিড়ী পরিবারের মেয়ে, ওর বাবা ডাইরেক্ট রামতনুর রক্ত ধারণ করছেন, ওর ব্যবহার তো ওই রকম হবেই, অভিজাত তো। ওর মায়ের সঙ্গে ওর বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, ওর মা আমাদের কঞ্চিদি (অপলা দাশগুপ্ত, কবি মণীষ ঘটকের মেয়ে) এখন সমীরদার স্ত্রী।'
লর্ড মেকলের লেখা 'লর্ড ক্লাইভ' বইতে প্রায় ২৫০ বছর (হিসাবটা বর্তমান সময় থেকে) আগের লন্ডনের উঠতি টাকাওয়ালাদের একটি বর্ণনা আছে। তখন ভারতবর্ষে এসে ইউরোপের লোকরা ভাগ্য বদলাত, টাকাওয়ালা হয়ে দেশে ফিরে যেত। দেশে গিয়ে লর্ডদের মতো বাড়ি বানাত। বাড়ি বানিয়ে মনে করত, আমরা অভিজাত হয়েছি।
ঢাকাসহ অন্যান্য প্রধান শহরের দামি আবাসিক এলাকাগুলোকে ও সেখানকার বাসিন্দাদের এবং যেকোনো টাকাওয়ালা লোককে আমাদের বিভিন্ন মিডিয়ায় হরহামেশা লেখা হচ্ছে ও বলা হচ্ছে 'অভিজাত'। তাঁরা কত ধরনের কলকাঠি এদিক-ওদিক করে টাকা বানিয়েছেন তার হিসাব কে করবে? অভিজাতে অভিজাতে দেশ ভরে যাচ্ছে। অভিজাতরা (?) ঢাকার অদূরে বানাচ্ছেন বাগানবাড়ি। ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতার উঠতি টাকাওয়ালাদের বাগানবাড়ির কথা মনে পড়ছে। শব্দটির অপপ্রয়োগ বড় বেশি কানে বাজে। বড় বেশি পীড়িত করে।
যে জাতির টাকার মালিকরা টাকার যথাযথ ব্যবহার জানে না, তারা সভ্য হতে পারে না, রুচিশীল হতে পারে না, অভিজাত হওয়া তো অনেক দূরের কথা।
লেখক : কবি
অনেক দিন আগে আমাদের একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে_যেটা এখন আর বহুল প্রচারিত নয়, একটি সম্পাদকীয় পড়েছিলাম। বিষয় ছিল, দুই 'অভিজাত' মহিলার ঝগড়া। সম্পাদকীয় পড়ে আমি দৈনিকের এক বন্ধুকে ফোন করে বলেছিলাম, আপনারা অভিজাত শব্দটিকে এভাবে অপমান করলেন কেন? তিনি আমার বক্তব্য শুনে বললেন, এ রকম আর হবে না।
সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, গুলশান এলাকায় একটি প্রায় ৩২০০ স্কয়ারফুটের ফ্ল্যাট নিয়ে দুই 'অভিজাত' মহিলার ঝগড়া এবং মীমাংসা। ফ্ল্যাটটির দাম কোটি টাকার ওপরে। দুই মহিলার একজন এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, অন্যজন কাস্টমস কর্মকর্তার। এই ক্রেতা দুজনের মধ্যে একজন মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম দিয়ে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলেন, অন্যজন তাঁর কয়েক দিন পর ফ্ল্যাটের দামের পুরোটা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে ফেলেন। প্রথমজন কয়েক দিন পর পুরো টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট বুঝে নিতে গেলে জানতে পারেন, ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গেছে। তারপর গণ্ডগোল ও মীমাংসা। এই সিদ্ধান্তে মীমাংসা হলো যে এ বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনারা খুব ঝামেলায় পড়বেন, কেননা আপনাদের স্বামীরা যে চাকরি করেন, তাতে প্রশ্ন উঠতে পারে_কোটি টাকা দিয়ে গুলশানে ফ্ল্যাট আপনারা কিনতে পারেন কি না? দুই বুদ্ধিমতী মহিলা বুঝলেন, আর ঝগড়া-দ্বন্দ্বে লাভ নেই। বিশেষ একটি শব্দে তাঁদের স্বামীরা চিহ্নিত হলে আরো সমস্যা হবে। অভিজাতরা ঝগড়ায় ক্ষান্ত দেন।
সম্পাদকীয়ের এই বয়ান পাঠ করে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কাস্টমস কর্মকর্তা কোথায় এত টাকা পেলেন? আর টাকা পাওয়ার পর গুলশানে ফ্ল্যাট কিনে তাঁদের স্ত্রীরা কাগজের ভাষায় হয়ে গেলেন 'অভিজাত'? আমার আরো মনে হলো, কেন যে পুলিশ বা কাস্টমস কর্মকর্তা হলাম না, হলেই গুলশানে ফ্ল্যাট কিনে 'অভিজাত' হতে পারতাম!
যত দূর মনে পড়ে, আলবার্তো মোরাভিয়ার একটি লেখা পড়েছিলাম, বিষয় ছিল রুচি ও আভিজাত্য। তিনি বলেছেন, একজন মানুষ কায়দা ও বিশেষ বিশেষ কৌশল করে টাকা কামাতে পারে, সেই মানুষ টাকা খরচ করার রুচি অর্জন নাও করতে পারে। রুচি অর্জন টাকা দিয়ে করা যায় না। তা করতে হলে শিক্ষার বেশ কিছু স্তর পার হতে হয় এবং ক্রমাগত শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তৈরি হয় রুচি এবং তারপর আসে আভিজাত্য। ওই আভিজাত্য তৈরি হতে টাকা ও শিক্ষার যৌথ নিবিড় চলাচল থাকতে হয় অনেক শতাব্দীরও বেশি।
শ্রী সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'পরশপাথর' ছবিতে একটি দৃশ্য আছে, তা হলো, একটি মদ্যপানের আসরে হঠাৎ অনেক টাকার লোক বনে যাওয়া পরশপাথর পাওয়া মালিক (প্রধান চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী) অভিজাত শ্রেণীর আসরে গিয়ে মদ পান করে যাচ্ছেতাই মাতলামো শুরু করেন এবং তাঁকে ওই আসর থেকে অপমান হয়ে চলে আসতে হয়। তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তিনি ওই আসরের যোগ্য নন। কতটুকু মদ পান করলে শীলিত সমাজে নিজের ব্যক্তিমর্যাদা বজায় থাকে, সভ্যরূপ চিত্রিত হয় তা জানতে হলে হতে হয় রুচিবান, টাকা দিয়ে যা অর্জন করা যায় না, সেখানে অতীব জরুরি হলো শিক্ষা, যা করণীয়-অকরণীয়র মাত্রা সম্পর্কে টেনে দেয় ভেদরেখা। তৈরি করে বিশেষ রুচি ও অভিজাত আচরণ।
কলকাতায় প্রয়াত শ্রী সমীর দাশগুপ্তের বাসায় পরিচয় হয়েছিল ইনামিনা লাহিড়ী নামে এক মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি আমার অগ্রজ দাউদ হায়দারের ভালো বন্ধু ছিল। সমীরদার বাসা থেকে আমরা খেয়ে ও বহুবিধ বিষয়ে আড্ডা দিয়ে প্রায় মধ্যরাতে ফেরার পথে দাউদকে জিজ্ঞেস করলাম, 'ইনামিনা মেয়েটি খুবই আলাদা ধরনের। কী রুচিপূর্ণ! বসনের রং পছন্দে কী পরিমিত! কথায় ও আচরণে পরিশীলিত।' আমার কথা শুনে খাঁটি পাবনার ভাষায় দাউদ বলল, 'হবি না, দ্যাখা লাগবি উয়ের গায় কার রক্ত?' দাউদ প্রশ্ন করে আমাকে আবার প্রশ্ন করল, 'রামতনু লাহিড়ীর নাম শুনেছিস?' আমি হ্যাঁ-বাচক উত্তর দিয়ে বললাম, শিবনাথ শাস্ত্রীর 'রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ' পড়েছি। দাউদ এবার ভালো বাংলায় বলল, 'ইনামিনা সেই লাহিড়ী পরিবারের মেয়ে, ওর বাবা ডাইরেক্ট রামতনুর রক্ত ধারণ করছেন, ওর ব্যবহার তো ওই রকম হবেই, অভিজাত তো। ওর মায়ের সঙ্গে ওর বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, ওর মা আমাদের কঞ্চিদি (অপলা দাশগুপ্ত, কবি মণীষ ঘটকের মেয়ে) এখন সমীরদার স্ত্রী।'
লর্ড মেকলের লেখা 'লর্ড ক্লাইভ' বইতে প্রায় ২৫০ বছর (হিসাবটা বর্তমান সময় থেকে) আগের লন্ডনের উঠতি টাকাওয়ালাদের একটি বর্ণনা আছে। তখন ভারতবর্ষে এসে ইউরোপের লোকরা ভাগ্য বদলাত, টাকাওয়ালা হয়ে দেশে ফিরে যেত। দেশে গিয়ে লর্ডদের মতো বাড়ি বানাত। বাড়ি বানিয়ে মনে করত, আমরা অভিজাত হয়েছি।
ঢাকাসহ অন্যান্য প্রধান শহরের দামি আবাসিক এলাকাগুলোকে ও সেখানকার বাসিন্দাদের এবং যেকোনো টাকাওয়ালা লোককে আমাদের বিভিন্ন মিডিয়ায় হরহামেশা লেখা হচ্ছে ও বলা হচ্ছে 'অভিজাত'। তাঁরা কত ধরনের কলকাঠি এদিক-ওদিক করে টাকা বানিয়েছেন তার হিসাব কে করবে? অভিজাতে অভিজাতে দেশ ভরে যাচ্ছে। অভিজাতরা (?) ঢাকার অদূরে বানাচ্ছেন বাগানবাড়ি। ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতার উঠতি টাকাওয়ালাদের বাগানবাড়ির কথা মনে পড়ছে। শব্দটির অপপ্রয়োগ বড় বেশি কানে বাজে। বড় বেশি পীড়িত করে।
যে জাতির টাকার মালিকরা টাকার যথাযথ ব্যবহার জানে না, তারা সভ্য হতে পারে না, রুচিশীল হতে পারে না, অভিজাত হওয়া তো অনেক দূরের কথা।
লেখক : কবি
No comments