মাউন্ট কিনাবালু
নৈসর্গিক সৌন্দযের্র লীলাভূমি, নিসর্গবেদির স্বর্গ 'মাউন্ট কিনাবালু' (গড়ঁহঃ করহধনধষঁ), দৰিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ (উচ্চতা-৪,১০১ মিটার)। এই পর্বতটি বোর্নিও দ্বীপের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে গঠিত মালয়েশিয়ান প্রদেশ সাবাহ্তে অবস্থিত।
এই অনিন্দ্যসুন্দর মহীধরের নাম অনুসারেই সবাহ্'র রাজধানীর নাম রাখা হয়েছে_ কড়ঃধ করহধনধষঁ। কড়ঃধ অর্থ পাহাড়। বিষুব রেখার এতটা নিকটবতর্ী এই সুউচ্চ পর্বতটি প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ। এর নিম্নভাগে রয়েছে অজস্র পুষ্পতরম্ন, পুষ্পলতা সুশোভিত গ্রীষ্মম-লীর অরণ্যানী, বিশালকায় বৃৰরাজির সমারোহ ও বিবিধ প্রজাতির প্রাণী। অরণ্যের নিভৃত স্থানসমূহে প্রবহমান জলধারা, পতঙ্গের আবাসস্থল। পাহাড়ের উচ্চতর স্থানসমূহে ক্রমশ প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীকুলের পরিবর্তনও লৰণীয়। কেননা, প্রাণীজীবন প্রত্যৰ বা পরোৰভাবে উদ্ভিদের ওপরই নির্ভরশীল। পাহাড়টির উচ্চ থেকে উচ্চতর স্থানে জঙ্গলের ঘনত্ব ক্রমশ হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। প্রায় ৩,৩৫৩ মিটার উচ্চতায় শিলাময় রম্নৰ স্থলভাগের দৃশ্য পরিলৰিত হয় এবং মাত্র কয়েকটি প্রজাতির স্বল্পসংখ্যক উদ্ভিদ ও প্রাণী টিকে থাকে। শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এই সুউচ্চ রম্নৰ পরিবেশে জীবন ধারণে সৰম। রহস্যঘন এই মাউন্ট কিনাবালুর সুউচ্চ শৃঙ্গরাজি বিশাল আকৃতির শিলায় গঠিত। আর এই শৃঙ্গরাজির গগনস্পশর্ী রূপ বিস্ময়ে হতবাক করে। সুউচ্চ পর্বতচূড়ায় হিমশীতল বাতাসে শরীর কণ্টকিত হয়। পাহাড়ের গা ছুঁয়ে ভেসে চলে ছোট বড় মেঘের ভেলা। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য! ঘন জঙ্গলে আবৃত, রহস্যঘন এই পর্বতে লুকিয়ে আছে অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ আর বিচিত্র সব প্রাণী। রঙ-বেরঙের অজস্র বাহারি ফুলের সুবাস আর ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয় শত শত পৰী, কীটপতঙ্গ আর বর্ণিল সব প্রজাপতি। নানা জাতের ফলবান বৃৰের আকর্ষণে ছুটে আসে বানরের দল, কাঠবেড়ালী আর রঙ-বেরঙের নানা প্রজাতির পাখির ঝাঁক। মনে হয়, প্রকৃতি যেন এখানে তার অফুরনত্ম ভা-ার উজাড় করে দিতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি।এই বিসত্মীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে কমপৰে পাঁচ শ' প্রজাতির পাখি, আট শ' প্রজাতির অর্কিড, আরও শত শত প্রজাতির উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গ। ১,৫২৪ মিটার উচ্চতার উর্ধে বিস্ময়কর কলসী গাছ বা চরঃপযবৎ ঢ়ষধহঃ-এর অসত্মিত্ব লৰ্য করা যায়। এই কিনাবালু পর্বতে রয়েছে আট থেকে নয়টি প্রজাতির দুর্লভ কলসী গাছ। এই মনোমুগ্ধকর আর বিস্ময়কর কলসী গাছগুলো বিশ্বের বহু সংখ্যক দর্শক আর পর্যটকের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এটি দেখতে ফুল সদৃশ এক ধরনের উদ্ভিদ। এর ঢাকনাসহ কলসীগুলো আসলে পরিবর্তিত পাতার ভিন্নরূপ। কীটপতঙ্গভূক চমকপ্রদ এই কলসীগুলোর ভেতরে নিঃসৃত হয় এক ধরনের পিচ্ছিল তরল পদার্থ। কোন পোকামাকড় কলসীতে প্রবেশ করলে এই তরল পদার্থে আটকে যায় ও কলসী থেকে বেরিয়ে আসতে অৰম হয়। পরবতর্ী পর্যায়ে উক্ত তরল পদার্থ দ্বারা পরিপাক হয় ্ও এই উদ্ভিদের খাদ্য হিসেবে শোষিত হয়। আরেকটি মজার উদ্ভিদ হচ্ছে ৰুদ্রাকৃতির পাইন গাছ। এটি উদ্ভিদ জগতের বিরল প্রজাতিগুলোর একটি। বৈজ্ঞানিক নাম চড়ফড়পধৎঢ়ঁং ওসনৎরপধঃঁং ঠধৎরধঃরড়হ করহধনধষঁবহংরং। এই গাছটি পাহাড়ের ৩,০৪৮-৩,৩৫২ মিটার উচ্চতায় জন্মালেও মাত্র কয়েক ফুট লম্বা হয়ে থাকে। অথচ নিচে পাহাড়ের পাদদেশে বা সমতল ভূমিতে এই গাছটিই আবার অবিশ্বাস্য রকম উচ্চতা পায়। এটি তখন ৩০ মিটার পর্যনত্ম লম্বা হয়ে থাকে। রহস্যঘন এই মাউন্ট কিনাবালু পর্বতটি অত্যনত্ম মনোমুগ্ধকর আর অনিন্দ্যসুন্দর উদ্ভিদ অকর্িেডর যেন এক উৎসভূমি। প্রকৃতপৰে বের্নিও দ্বীপটি বিশ্বের অধিকাংশ অর্কিডের আবাসস্থল। এখানকার নানা প্রজাতির দুর্লভ অর্কিডগুলো প্রকৃতির দেয়া এক অমূল্য অবদান। পাহাড়টি স্থানে স্থানে প্রস্ফুটিত নয়নাভিরাম এই অমূল্য অর্কিডগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিকাশে রেখেছে এক অসামান্য অবদান। তাই পর্যটক, দর্শক আর পর্বতারোহীদের অন্যতম আকর্ষণ দৰিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট কিনাবালু সত্যিই এক চমকপ্রদ স্থান। এখানে যে আরও কত কি রহস্য রয়েছে কে জানে!
No comments