ফ্যাশনে তারকা দ্যুতি by রেজা ফারুক

দেশীয় ফ্যাশন ধারা ইতোমধ্যে বিলুপভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিলাভে যেমন সম হয়েছে, তেমনি এর আউটলুকিংয়েও এসেছে বর্ণোজ্জ্বল আবহ।
সময়ের বিবর্তনে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে বাঙালী সংস্কৃতি ও চেতনাকে ধারণ করে চিরায়তরূপে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে আজ বাংলার ফ্যাশন জগত। ১৯৭১-এ দেশে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাঙালীর মধ্যে খুব দ্রম্নত স্বাধীন সত্তা বিকশিত হতে থাকে। বদলে যেতে থাকে জীবনধারা। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হৃদয়ে-মনে এক নতুন অনুভূতি জাগরণের, প্রোপটের উন্মেষ ঘটে। এই উন্মেষের পথ বেয়েই মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম নিজস্ব সংস্কৃতির পথটাকে বিসত্মৃত থেকে বিসত্মীর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই এগিয়ে যাওয়ার ধারাতে ফ্যাশন একটা প্রেতি। যে প্রেেিতর ছবিটা খুব যত্নে লালিত হতে দেখা যায় তখন। মুক্তিযুদ্ধোত্তর ফ্যাশনধারায় তখন সবচেয়ে বেশি পরিলমাণ ছিল খাদির সোল্ডার এবং দুই বা চার পকেটঅলা বেস্নজার টাইপের শার্ট। সঙ্গে বেলবটম প্যান্ট। সারা সত্তরের দশকজুড়ে চলতে থাকে ফ্যাশনের উলিস্নখিত ধারাটা। আধুনিক বোধের বিকাশমান পথটা মাঝপথে এসে হঠাৎ একটু থমকে যায়। একটু টাল খেতে খেতে সোজা হয়ে পুনরায় দাঁড়িয়ে যায় চলমান ফ্যাশনের উজ্জ্বল অঙ্গন। যে অঙ্গনে এখন ঝলমল করছে এক বর্ণময় ভবিষ্যত। ফ্যাশনে এই বর্ণময়তার শুরম্নটা নব্বইয়ের গোড়ার দিকে। সে সময়ে বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে দেশীয় ফেব্রিকে, দেশীয় মোটিফে ড্রেস তৈরির উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক সফলতা পায়। আধুনিক ডিজাইনের নানা পোশাকের সমাবেশ ঘটে সে সব আউটলেটে। মূলত ডিজাইনিংয়ে সম্পৃক্ত এবং প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই তারা সূচনা করেন ফ্যাশনের এই নতুন ট্রেন্ড। যার প্রধান ল্য হলো নতুন প্রজন্ম, এবং সাফল্যের ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের দশকে যাঁরা এই নতুন ত্রে তৈরিতে রেখেছিলেন অফুরনত্ম অবদান, তাঁরা যেমন তাঁদের রম্নট ধরে এগিয়ে যেতে থাকেন আগামীর দিকে, একইভাবে নিত্যনতুন ভাবনা, আবেগ, অনুভূতি, ফ্যাশন চিনত্মা নিয়ে আরও অনেক সংস্কৃতিসেবী ও ডিজাইনার ফ্যাশনধারায় যুক্ত হয়ে পড়েন। মূলত এখন সারা বাংলায় চলছে এই দেশীয় আধুনিক ফ্যাশন সংস্কৃতির নির্মল প্রবাহ।
যে প্রবাহের নিরনত্মর ছোঁয়ায় উদ্বেলিত আজ নতুন প্রজন্ম। ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠালগ্নে ড্রেসে যেমন এক নতুনত্বকে ডিজাইনাররা দেশীয় সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে ক্রিয়েট করছেন, পাশাপাশি সেই নান্দনিক ধারার ড্রেস পুরো দেশের নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে ব্র্যান্ড-এ্যাম্বাসেডর কিংবা সাময়িক ড্রেসের মডেল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন সমকালীন মিডিয়া তারকাদের। এ মিডিয়া তারকা তথা টিভি, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং মডেলিং পেশার তারকারা যখন নির্দিষ্ট ফ্যাশন হাউসের পোশাক পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তখন ওই পোশাকটি স্বভাবতই পেয়ে গেছে এক ভিন্ন ডাইমেনশন। এবং সেই পোশাক পরিহিত তারকার ছবিটি যখন প্রিন্ট মিডিয়ার ফ্যাশন পাতায় মুদ্রিত হয়েছে। তখন অনিবার্যভাবেই সেই পোশাকের গুরম্নত্ব, চাহিদা এবং মর্যাদা বেড়ে গেছে অনেকাংশে। অত্যনত্ম সুন্দর করে ফ্যাশনেবল মোটিফে তৈরি করা ডিজাইনারের পোশাকটি শোবিজ তারকা এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সমন্বিত আয়োজনে একটা নিজস্ব অবস্থান সৃষ্টিতে রেখেছে বিপুল ভূমিকা। সব মিলিয়ে গত প্রায় দুই দশক ধরে ফ্যাশন হাউসের উদ্যোক্তা, ডিজাইনার শোবিজ তারকা, প্রিন্ট মিডিয়া সমানত্মরালভাবে উপস্থাপন করে বাঙালীর লোকজ মর্মানুভূতিতে যখন এক অনন্যসাধারণ ফ্যাশন বোধের জন্ম দিয়ে পথচলা শুরম্নু করেছে, ঠিক সেই সময়ে এই ফ্যাশন ধারাকে আরও ব্যাপকতা, সম্প্রসারণ ত্রে তৈরিতে টিভি চ্যানেলগুলোও উদ্যমী অবদান রাখার মতো কাজ শুরম্ন করে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন রিলেটেড অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে। এ ছাড়া চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত প্রায় সব নাটকেই এখন প্রায় পারফরমাকেই দেখা যায় দেশীয় শার্ট, ফতুয়া, টি-শার্ট, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, শাড়ি পরে সাবলীলভাবে তাদের অভিনয়শৈলী উপস্থাপন করছেন। শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ফ্যাশন হাউসের মাধ্যমে সংগৃহীত হলেও শাড়ির ভুবন হলো টাঙ্গাইল, রাজশাহী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ প্রভৃতি অঞ্চল। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার কাতান-বেনারশী এবং নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি আবহমান বাংলার পরিধেয় বস্ত্রশিল্পে যুগ যুগ ধরে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলে হয়ে আছে এক বিশাল প্রাঙ্গণ। সাম্প্রতিককালে এই শাড়ির জমিনেও সময়ের চাহিদাকে মাথায় রেখে দেশীয় সংস্কৃতির ভাবধারাকে লালন করে আধুনিক ফর্মেটের রূপদানের েেত্র গুরম্নত্ব প্রদান। ফলে সব মিলিয়ে চলমান ফ্যাশন অঙ্গন এখন ধারণ করে আকণ্ঠ দেশাত্ববোধ। যে বোধ ছড়িয়ে পড়েছে নতুন প্রজন্মের মর্মে মর্মে।
শখের গ-ি পেরিয়ে, ঘরোয়াবৃত্তের বাইরে এসে নগর এবং গ্রামীণ জীবনও ভাসছে এই ফ্যাশন ধারায়। আর লণীয় বিষয় হলো, ফ্যাশনের ছোঁয়ায় আজ আপস্নুত হয়ে ওঠা এই বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিসিক্ত নতুন প্রজন্ম আর আগামীর নতুন প্রহর।
মডেল : ফেরদৌস, তানিয়া
তনিমা, ইমন ও মিলা
ড্রেস : পস্নাস পয়েন্ট
রঙ : মনেমন্টু
বাংলার মেলা।

No comments

Powered by Blogger.