জনগণের নবযাত্রা শুরু, আরেকটি কলঙ্ক মোচন- রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রথম রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশের জনগণের নবযাত্রা শুরু হলো।
দেশবাসীকে দেয়া আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ হলো। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করছি। এই রায়ের মাধ্যমে জাতির দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার পূরণ হলো। জাতির ললাটে থাকা আরেকটি কলঙ্কও মোচন হলো। সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি ভোটারদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সমাপ্ত করতে তিনি দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ চলতেই থাকবে। যখনই কোন যুদ্ধাপরাধীকে পাওয়া যাবে তখনই তার বিচার করা হবে। এ বিচারের পথ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। তিনি ভবিষ্যতে কেউ একাত্তরের গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রথম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজ একটি বিশেষ দিন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রথম রায় ঘোষণার মাধ্যমে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করলাম। বাংলাদেশের মানুষের নবযাত্রা শুরু হলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের মানুষকে জাগ্রত করতে না পারলে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং লাখো শহীদের স্বপ্ন পূরণ হবে না। তিনি বলেন, বাঙালী জাতি আবার তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে। আমরা বিশ্ব দরবারে বীরের জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। আর যেন বাংলাদেশে পরাজিত শক্তিদের দাপটের অভিশাপ না আসে সেজন্য দেশবাসীর সহযোগিতা ও সমর্থনও চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে দেশবাসীর কাছে ওয়াদা করেছিলাম ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই করব। জনগণ আমাদের ওয়াদার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশাল ভোটে আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দিয়েছেন। সরকার গঠনের পরই আমরা বিচারের কাজ শুরু করি, আল্লাহর রহমতে আজ একটি মামলার প্রথম রায় ঘোষণা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে আমরা জনগণের ললাট থেকে একটি কলঙ্ক মুছে দিয়েছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেও বাকি কলঙ্কও মোচন করেছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটকে ভোট দেয়ার জন্য দেশের সকল ভোটার এবং দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, মা-বোনদের পাক হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে লুটপাট করেছিল- বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবেই হবে। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছিলেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করলাম, জাতির কাছে দেয়া ওয়াদা পূরণ করলাম। জাতির ললাটে থাকা কলঙ্কের কালিমা মুছে দিতে পেরেছি।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আগামী তিন বছরের জন্য নির্বাচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের শুরুতেই কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ দাঁড়িয়ে জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সভায় সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দফতর সম্পাদক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। পুরনোরা ছাড়াও এবার প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রায় ১১ নেতা বৈঠকে অংশগ্রহণ করে সিনিয়র সদস্যদের দোয়া নিতে দেখা গেছে। সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও সাংগঠনিক বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়। তবে বৈঠকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়।
সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা জনগণকে নির্বাচনী যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা শতভাগ পূরণ করতে না পারলেও বেশিরভাগই পূরণ করেছি। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণকে যে ওয়াদা দেয় তা পূরণ করে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মোটেই মসৃণ ছিল না। কিন্তু আমরা জাতির দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ’৭২ সালে বিশেষ অর্ডিন্যান্স জারি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কয়েক হাজার যুদ্ধাপরাধী তখন কারাবন্দীও ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে উল্টো মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। কারাগার থেকে সকল যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি, বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন এমনকি প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকারও ফিরিয়ে দিয়েছিল তারা।
তিনি বলেন, ‘৭৫-পরবর্তী দীর্ঘ বছর একটি প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করতে পারিনি, কিন্তু অনেক কাজ করেছি। গত নির্বাচনে জাতিকে আমরা ওয়াদা দেই ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিশেষ করে দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজয়ের অহঙ্কার জেগে ওঠে, তারা বিজয়ের স্বাদ পেতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে চায় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন হচ্ছে না সে প্রশ্নও ছিল সবার মুখে মুখে।
দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ না দিলে আমরা জাতির ললাটে থাকা কলঙ্কের তিলক মোচন করতে পারতাম না। আওয়ামী লীগ দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের সেবা করাই আমাদের প্রধান কাজ। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, আমরা দেশবাসীকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চাই। বাঙালী জাতি মায়ের ভাষা, স্বাধীনতা থেকে শুরু করে যা কিছু পেয়েছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। তাই সকলকে নিয়েই আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ করে দেশকে গড়ে তুলবই, ইনশাআল্লাহ।
No comments