দীপু মনি বড় হয়ে পলিটিশিয়ান হবে by খুররম জামান
বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার মুজিব কাকু
“বঙ্গবন্ধুকে কত ছোটবেলায় দেখেছি আজ আর মনে নেই। স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে আমাদের অবাধ যাতায়াত ছিলো। তখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমার মুজিব কাকু। এখন বঙ্গবন্ধু যেমন আমাদের প্রাণের ডাক। তখন মুজিব কাকু ডাকও ছিলো আন্তরিকতায় ভরা।”
স্মৃতিচারণমূলক এসব কথা বলছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা.দীপু মনি। সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি এই স্মৃতিচারণ করেন। কথা বলতে বলতে তিনি চলে যান সেই ৬০’র দশকের শেষ ও ৭০’র দশকের গোড়ার দিকের দিনগুলোতে।
বলেন, বঙ্গ মাতাকে চাচী বলে ডাকতাম। আদরটা পেতাম মায়ের মতোই। দুপুরে গেলেই চাচীর হাতের রান্না খাওয়া ছিলো অবধারিত। চাচী আন্তরিকতায় পূর্ণ একটা মানুষ ছিলেন, খুব স্নেহ করে কথা বলতেন। সবাইকেই আদর করতেন, সবকিছু দেখাশুনা করতেন। আর আজকের যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি ছিলেন আমাদের সবারই প্রিয় হাসু আপা, অন্যরা সবাই আপা কিংবা ভাই। অসাধারণ এক পারিবারিক বন্ধন ছিলো আমাদের।
বঙ্গবন্ধুকে কখন কোথায় প্রথম দেখেছেন?- এ প্রশ্নের জবাব স্মৃতি হাতড়েও সুনির্দিষ্ট করতে পারলেন না দীপু মনি।
তবে বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি কতবার, কিন্তু কবে কখন প্রথম দেখি তা ঠিক মনে নেই। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কতগুলো ইভেন্ট খুব মনে আছে। ১৯৭৩ সাল কিংবা ’৭৪ সালের কথা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বাবার হাত ধরে গেছি ৩২ নম্বরে। গেটের বাইরে থেকেই লোকে লোকারন্ন। আমাদের দেখতে পেয়ে উনি আমাকে বললেন- ও তুই এসেছিস..., বলেই বাবার কাছ থেকে আমার দুই হাত ধরে একটানে কাঁধে তুলে নিলেন। এরপর যতক্ষণ নীচ তলায় ছিলেন আমি তার কাঁধের ওপরেই ছিলাম। আমি তো ভয়ে কাঠ হয়ে আছি। এমন লম্বা মানুষ.. যদি উচু থেকে পড়ে যাই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সে কি অমুলক ভাবনা আমার। যিনি গোটা জাতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। গোটা জাতিকে স্বাধীন করলেন। তার কাঁধে যে কেহউ যে নিরাপদ তা বলারই অপেক্ষা রাখে না।- বললেন দীপু মনি।
বাবা অন্তপ্রাণ দীপু
বঙ্গবন্ধুকে কখন কোথায় প্রথম দেখেছেন?- এ প্রশ্নের জবাব স্মৃতি হাতড়েও সুনির্দিষ্ট করতে পারলেন না দীপু মনি।
তবে বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি কতবার, কিন্তু কবে কখন প্রথম দেখি তা ঠিক মনে নেই। অবশ্য বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কতগুলো ইভেন্ট খুব মনে আছে। ১৯৭৩ সাল কিংবা ’৭৪ সালের কথা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বাবার হাত ধরে গেছি ৩২ নম্বরে। গেটের বাইরে থেকেই লোকে লোকারন্ন। আমাদের দেখতে পেয়ে উনি আমাকে বললেন- ও তুই এসেছিস..., বলেই বাবার কাছ থেকে আমার দুই হাত ধরে একটানে কাঁধে তুলে নিলেন। এরপর যতক্ষণ নীচ তলায় ছিলেন আমি তার কাঁধের ওপরেই ছিলাম। আমি তো ভয়ে কাঠ হয়ে আছি। এমন লম্বা মানুষ.. যদি উচু থেকে পড়ে যাই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সে কি অমুলক ভাবনা আমার। যিনি গোটা জাতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। গোটা জাতিকে স্বাধীন করলেন। তার কাঁধে যে কেহউ যে নিরাপদ তা বলারই অপেক্ষা রাখে না।- বললেন দীপু মনি।
বাবা অন্তপ্রাণ দীপু
আমার বাবা মরহুম এমএ ওয়াদুদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক ছিলো খুবই ঘনিষ্ঠ। বাবা ডাকতেন মুজিব ভাই বলে। তার সঙ্গে ছিলো বিশ্বাসের সম্পর্ক। বাবা ছিলেন আওয়ামী লীদের প্রতীষ্ঠাকালীন সদস্য।
স্বাধীনতার পর আমার বাবা চেয়েছিলেন তিনি চাকরি না করতে। রাজনীতি করবেন। রাজনীতির জন্যই তিনি ইত্তেফাকে কাজ করতেন।
স্বাধীনতার পর যখন পোস্তগোলার দিকে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিল তখন সেখানে কোন প্রশাসকই টিকতে পারছিলেন না।
আমার বাবাকে ডেকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ওয়াদুদ তুই ছাড়া এটি কেউ সামলাতে পারবে না।
বাবা বললেন, আমাকে চাকরি করতে পাঠাচ্ছেন!
বঙ্গবন্ধু বললেন, না না আমি তোকে চাকরি করতে পাঠাচ্ছি না। এটিও তোর পার্টির কাজ। তোকে প্রশাসক হিসাবে পাঠাচ্ছি।
এর পর বাবা সেখানে গেলেন এবং শ্রমিক অসন্তোষ আর রইল না। বাবার সঙ্গে কেউ ঝামেলা করতে পারলো না। ফ্যাক্টরিগুলো চালু হয়ে গেল।
আমার বাবা যে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করেছিলেন সেগুলোর মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠান তখন ছিল না- দৃঢ়তা ও গৌরবের সঙ্গে বলছিলেন দীপু মনি।
বাবার যোগ্যতা ও দেশপ্রেমের ওপর তার অটল বিশ্বাস।
জানালেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু এমএ ওয়াদুদকে পেপার মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব নিতে বললেন। কারণ, সেখানেও তখন অনিয়ম চলছিল।
আমার বাবা বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, দায়িত্ব নিতে পারি তবে কেউ আপনার সুপারিশ আনতে পারবে না।
উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ আমার সুপারিশ নিয়ে তোর কাছে যাবে না। তুই যেভাবে সব চালাবি সেভাবেই চলবে।
বাবা তখন যত ভূয়া লাইসেন্স ছিল সব বাতিল করে দেন। অনেক রিস্ক নিয়েই সে সময় তা করতে হয়েছিল বাবাকে।
১৯৭২ সালে আমার বাবা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠান। সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার খুবই খাতির করেছিল। সেখানে বাবার ভালো অপারেশনও হয়। ডাক্তাররা বলেছিলেন, তিনি বেশ কিছু দিন বাঁচবেন।
কিন্তু ৭৫ পর তার ওপর যে নির্যাতন নেমে আসে তা তাকে বেশিদিন বাঁচতে দেয়নি- বলেন বাবা অন্তপ্রাণ দীপু মনি।
তিনি বলেন, বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। তার পরও যে টর্চার, মামলা হয়েছে তার ওপর সে প্রভাব তো অস্বীকার করা যায় না।”
দীপু মনি জানান, তার বাবা এমএ ওয়াদুদের ওপর চাপ ছিল জিয়াউর রহমানের দলে যোগ দেওয়ার। কিন্তু উনি তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, সামরিক শাসকের কোন দলে যাবেন না। অবৈধ সেনা শাসকের করা দলে তিনি যোগ দেবেন না। তাই স্বভাবতই তাকে জেলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হলো। তিনি তাদের বললেন- জেলে আমার ভয় নেই।
শেষ পর্যন্ত জেলেই গেলেন আমার বাবা। সে সময় আমাদের পরিবার প্রচ- আতঙ্কে ছিল। আমি ছোট, আমার এক বড় ভাই। মা স্কুল টিচার। কিন্ত আমার বাবা কোন দিন নীতির সঙ্গে আপোস করেন নি।
দীপু বড় হলে পলিটিশিয়ান হবে
স্বাধীনতার পর আমার বাবা চেয়েছিলেন তিনি চাকরি না করতে। রাজনীতি করবেন। রাজনীতির জন্যই তিনি ইত্তেফাকে কাজ করতেন।
স্বাধীনতার পর যখন পোস্তগোলার দিকে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিল তখন সেখানে কোন প্রশাসকই টিকতে পারছিলেন না।
বাবা বললেন, আমাকে চাকরি করতে পাঠাচ্ছেন!
বঙ্গবন্ধু বললেন, না না আমি তোকে চাকরি করতে পাঠাচ্ছি না। এটিও তোর পার্টির কাজ। তোকে প্রশাসক হিসাবে পাঠাচ্ছি।
এর পর বাবা সেখানে গেলেন এবং শ্রমিক অসন্তোষ আর রইল না। বাবার সঙ্গে কেউ ঝামেলা করতে পারলো না। ফ্যাক্টরিগুলো চালু হয়ে গেল।
আমার বাবা যে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করেছিলেন সেগুলোর মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠান তখন ছিল না- দৃঢ়তা ও গৌরবের সঙ্গে বলছিলেন দীপু মনি।
বাবার যোগ্যতা ও দেশপ্রেমের ওপর তার অটল বিশ্বাস।
জানালেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু এমএ ওয়াদুদকে পেপার মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব নিতে বললেন। কারণ, সেখানেও তখন অনিয়ম চলছিল।
আমার বাবা বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, দায়িত্ব নিতে পারি তবে কেউ আপনার সুপারিশ আনতে পারবে না।
উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ আমার সুপারিশ নিয়ে তোর কাছে যাবে না। তুই যেভাবে সব চালাবি সেভাবেই চলবে।
বাবা তখন যত ভূয়া লাইসেন্স ছিল সব বাতিল করে দেন। অনেক রিস্ক নিয়েই সে সময় তা করতে হয়েছিল বাবাকে।
১৯৭২ সালে আমার বাবা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠান। সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার খুবই খাতির করেছিল। সেখানে বাবার ভালো অপারেশনও হয়। ডাক্তাররা বলেছিলেন, তিনি বেশ কিছু দিন বাঁচবেন।
কিন্তু ৭৫ পর তার ওপর যে নির্যাতন নেমে আসে তা তাকে বেশিদিন বাঁচতে দেয়নি- বলেন বাবা অন্তপ্রাণ দীপু মনি।
তিনি বলেন, বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। তার পরও যে টর্চার, মামলা হয়েছে তার ওপর সে প্রভাব তো অস্বীকার করা যায় না।”
দীপু মনি জানান, তার বাবা এমএ ওয়াদুদের ওপর চাপ ছিল জিয়াউর রহমানের দলে যোগ দেওয়ার। কিন্তু উনি তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, সামরিক শাসকের কোন দলে যাবেন না। অবৈধ সেনা শাসকের করা দলে তিনি যোগ দেবেন না। তাই স্বভাবতই তাকে জেলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হলো। তিনি তাদের বললেন- জেলে আমার ভয় নেই।
শেষ পর্যন্ত জেলেই গেলেন আমার বাবা। সে সময় আমাদের পরিবার প্রচ- আতঙ্কে ছিল। আমি ছোট, আমার এক বড় ভাই। মা স্কুল টিচার। কিন্ত আমার বাবা কোন দিন নীতির সঙ্গে আপোস করেন নি।
দীপু বড় হলে পলিটিশিয়ান হবে
আমার বড় হয়ে ওঠার সময়টি ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি সঙ্কটময় সময়। ষাটের দশকের শেষ দিকে আন্দোলনের সময়গুলো আমাদের বাসায় দেখতাম পাড়ার সব ছেলেরা পোস্টার লিখত। আগে তো অনেক সুন্দর করে পোস্টার লেখা হত। মিটিং মিছিল লেগেই থাকত। অনেক লোককে দেখতাম রাজনীতির কারণে পলাতক। আমার বাবাও পালিয়ে থাকতেন।
এতো কিছুর মধ্যে থেকে তো রাজনীতির বাইরে চিন্তা করার অবকাশই ছিল না। ছোটবেলা থেকেই মাথায় ভর করেছিলো রাজনীতি। আমকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলতাম- আমি পলিটিশিয়ান হব। আসলে খুব ছোটবেলা থেকে এতো বড় বড় পলিটিশিয়ানদের দেখেছি যে আমার অজান্তেই আমার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। আমার বাবাও সবসময় সমর্থন দিয়ে বলতেন- দীপু বড় হলে পলিটিশিয়ান হবে।
আপনার মেয়ের নামটি বদলে দিন
আপনার মেয়ের নামটি বদলে দিন
আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন মেট্রিক দেবার জন্য রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। তত দিনে আমি স্কুল বদলে ফেলেছি। আগে ছিলাম মায়ের স্কুলে। পুরাতন স্কুলের হেডমাস্টারসহ বেশ কয়েকজন স্কুল টিচার আমার বাবার কাছে এসে বললেন, আপনার মেয়ের নামটি বদলে দিন।
আমার বাবা জানতে চাইলেন, কেন?
শিক্ষকরা বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওকে ছেলেরা টিজ করবে। কিন্তু এ সব শুনেও আমার বাবা আমার নাম বদল করেননি। তিনি শিক্ষকদের বললেন, আমার কনফিডেন্স আছে দীপু এসব মোকাবেলা করতে পারবে। ও যেহেতু রাজনীতি করবে তাই এই নামেই তাকে সকলে সহজেই চিনবে। তবে আমার ভাইয়ের প্রথম নাম ছিল টিপু সুলতান। সে নাম অবশ্য পরে বদলে আমার বাবা আকিকা করে পোষাকী আরবি নাম রাখেন। ভাইয়ের বেলায় মেনেছেন। কিন্তু আমার বেলায় তিনি ছিলেন অনঢ়। এটি একজন বাবার সৎ চাওয়া ছিল। তিনি নিজেও ছিলেন সৎ। মানুষের ভালো ছাড়া তিনি কিছুই চিন্তা করতে পারতেন না। তার চাওয়াটি আল্লাহর রহমতে বাস্তব রূপ নিয়েছে। এমনও হতে পারে তার চিন্তা বাস্তবায়ন করতেই আমি আমার কাজ করে গেছি।
আমি ভাগ্যবান আমার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ চেষ্টা করে, কিন্তুলক্ষ্যে পৌছায় না। আমার বাবার কারণেই আমার নির্বাচনী এলাকায় পরিচয় গড়ে তোলা, নেত্রীর কাছাকাছি যাওয়া সব সহজতর হয়েছে। সব কিছুর মূলে আমার বাবার পরিচিতি ভূমিকা রেখেছে। তার পরে সবকিছুই আমাকে তৈরি করতে হয়েছে। তবে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আপার কাছে আমার শিক্ষা ছিল অপরিসীম।
দেখা হল, পছন্দ হল, বিয়ে করলাম
আমার বাবা জানতে চাইলেন, কেন?
শিক্ষকরা বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ওকে ছেলেরা টিজ করবে। কিন্তু এ সব শুনেও আমার বাবা আমার নাম বদল করেননি। তিনি শিক্ষকদের বললেন, আমার কনফিডেন্স আছে দীপু এসব মোকাবেলা করতে পারবে। ও যেহেতু রাজনীতি করবে তাই এই নামেই তাকে সকলে সহজেই চিনবে। তবে আমার ভাইয়ের প্রথম নাম ছিল টিপু সুলতান। সে নাম অবশ্য পরে বদলে আমার বাবা আকিকা করে পোষাকী আরবি নাম রাখেন। ভাইয়ের বেলায় মেনেছেন। কিন্তু আমার বেলায় তিনি ছিলেন অনঢ়। এটি একজন বাবার সৎ চাওয়া ছিল। তিনি নিজেও ছিলেন সৎ। মানুষের ভালো ছাড়া তিনি কিছুই চিন্তা করতে পারতেন না। তার চাওয়াটি আল্লাহর রহমতে বাস্তব রূপ নিয়েছে। এমনও হতে পারে তার চিন্তা বাস্তবায়ন করতেই আমি আমার কাজ করে গেছি।
আমি ভাগ্যবান আমার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ চেষ্টা করে, কিন্তুলক্ষ্যে পৌছায় না। আমার বাবার কারণেই আমার নির্বাচনী এলাকায় পরিচয় গড়ে তোলা, নেত্রীর কাছাকাছি যাওয়া সব সহজতর হয়েছে। সব কিছুর মূলে আমার বাবার পরিচিতি ভূমিকা রেখেছে। তার পরে সবকিছুই আমাকে তৈরি করতে হয়েছে। তবে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আপার কাছে আমার শিক্ষা ছিল অপরিসীম।
দেখা হল, পছন্দ হল, বিয়ে করলাম
১৯৮৭ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়েটা আমার নিজের পছন্দের। স্বামী তৌফিক নাওয়াজ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট।
আমার হাসবেন্ড রসিকতা করে বলেন, আমি উনাকে বিয়ে করেছি তিনটা কারণে। একটা কারণ উনি বাঁশি বাজান, দ্বিতীয়ত, তিনি পোশাক-আসাকে ষোলআনা বাঙালি। বলা যায়, ক্লাসিক্যাল বাঙালি। তৃতীয় কারণ হলো তার রাজনৈতিক বিশ্বাস।
আমার স্বামীর রাজনীতি হল শত বছরে গড়ে ওঠা মূল বাঙালি জাতির রাজনীতির চেতনা। প্রচ-রকম রাজনীতি সচেতন মানুষটির সক্রিয় কিছু ভূমিকাও রয়েছে। একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে যে আইনি ব্যবস্থা কি করে ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে সার্বক্ষণিক সক্রিয় তিনি। তবে তিনি কোন দলেরই সদস্য নন। বাংলাদেশের মূলধারার যে রাজনীতি সেটার ধারক বাহকতো অবশ্যই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ, ধারা, গতিপথ সবকিছুরই মিল আমি আমার স্বামীর রাজনৈতিক চেতনায় পাই। তার কাছ থেকে যতোটা গভীরতায় আমি শুনি বা জানি সেটি কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই।
এ জন্যই তাকে বিয়ে করেছি- সহাস্য উক্তি দীপু মনির।
কিভাবে বিয়ে হল?
দেখা হল, পছন্দ হল, বিয়ে করলাম (আবারও হাসি)
আমি বলি আমি অসম্ভব লাকি
আমার হাসবেন্ড রসিকতা করে বলেন, আমি উনাকে বিয়ে করেছি তিনটা কারণে। একটা কারণ উনি বাঁশি বাজান, দ্বিতীয়ত, তিনি পোশাক-আসাকে ষোলআনা বাঙালি। বলা যায়, ক্লাসিক্যাল বাঙালি। তৃতীয় কারণ হলো তার রাজনৈতিক বিশ্বাস।
আমার স্বামীর রাজনীতি হল শত বছরে গড়ে ওঠা মূল বাঙালি জাতির রাজনীতির চেতনা। প্রচ-রকম রাজনীতি সচেতন মানুষটির সক্রিয় কিছু ভূমিকাও রয়েছে। একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে যে আইনি ব্যবস্থা কি করে ঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে সার্বক্ষণিক সক্রিয় তিনি। তবে তিনি কোন দলেরই সদস্য নন। বাংলাদেশের মূলধারার যে রাজনীতি সেটার ধারক বাহকতো অবশ্যই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ, ধারা, গতিপথ সবকিছুরই মিল আমি আমার স্বামীর রাজনৈতিক চেতনায় পাই। তার কাছ থেকে যতোটা গভীরতায় আমি শুনি বা জানি সেটি কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই।
কিভাবে বিয়ে হল?
দেখা হল, পছন্দ হল, বিয়ে করলাম (আবারও হাসি)
আমি বলি আমি অসম্ভব লাকি
মেয়েদের রাজনীতি করা তথা সব বাধা আসে স্বামীর ঘর থেকেই। বাবা-মা সুযোগ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামীরা সহায়তা করেন না। আমার ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। আমার বাবা-মার পরিবেশ ছিল রাজনীতির। যখন বিয়ে করেছি তখন থেকেই আমার স্বামী প্রতি মুহূর্তে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
আমি যেন আরো যোগ্য হয়ে উঠতে পারি সে জন্য সবসময় তিনি আমার পাশে থেকেছেন। আমার পড়াশুনা, কাজ সব ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন।
এ সব করতে গিয়ে সংসারকে আমার যে সময় দেওয়া প্রয়োজন তা দিতে পারিনি। কিন্তু সেটাকে কখনই নেতিবাচক ভাবে না দেখে আমাদের বাচ্চারাও যাতে সেটি মেনে নিতে মানসিকভাবে তৈরি হয় সেকাজটিও তিনি করেছেন। এ জন্য আমি বলি আমি অসম্ভব লাকি।
অনেকে জানে না আমার ধর্ম কি
অসুবিধা হয় এমন অনেক ক্ষেত্রে আমাকে অনেকে হাত ধরে এগিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে দিয়েছেন বাধা। যারা বাধা দিয়েছেন আমি তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ, তারা বাধা না দিলে তা ডিঙানো শিখতাম না। আমার নাম, ধর্ম নিয়েও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এটি আমাদের দেশের অপরাজনীতির অংশ। এর শিকার আমাকে হতে হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে। এখনও অনেকে জানেন না আমার ধর্ম কি।
আমি কাজ করছি, কোথাও আমার কিছু প্রাপ্য রয়েছে। আমাকে কোন একটি দায়িত্ব দেওয়া হবে। ওরা গিয়ে সেখানে বাধা দিলেন। না এর দরকার নেই। বা নেতিবাচক মন্তব্য করলেন।
কারও ক্ষতি না করে, হিংসা পরায়ণ না হয়ে, খারাপ আচরণ না করে এবং তাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর মনোভাব দেখাতে শিখেছি আমি তাদের জন্যই।
তারা বাধা দিয়েছেন, আর আমি আমার বাবা-মার কথা ভেবেছি, স্বামী-সন্তানের কথা ভেবেছি, আমি আমার নেত্রীর কথা ভেবেছি, যিনি জীবনে অনেক বড় বড় বাধা ডিঙিয়েছেন।
এ সব ভেবে আমি তাদের জন্য ঘৃণা পুষে না রেখেও এগিয়ে গেছি।
বাবা নেত্রীকে বলতেন মা মনি
আমি যেন আরো যোগ্য হয়ে উঠতে পারি সে জন্য সবসময় তিনি আমার পাশে থেকেছেন। আমার পড়াশুনা, কাজ সব ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন।
এ সব করতে গিয়ে সংসারকে আমার যে সময় দেওয়া প্রয়োজন তা দিতে পারিনি। কিন্তু সেটাকে কখনই নেতিবাচক ভাবে না দেখে আমাদের বাচ্চারাও যাতে সেটি মেনে নিতে মানসিকভাবে তৈরি হয় সেকাজটিও তিনি করেছেন। এ জন্য আমি বলি আমি অসম্ভব লাকি।
অনেকে জানে না আমার ধর্ম কি
অসুবিধা হয় এমন অনেক ক্ষেত্রে আমাকে অনেকে হাত ধরে এগিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকে দিয়েছেন বাধা। যারা বাধা দিয়েছেন আমি তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ, তারা বাধা না দিলে তা ডিঙানো শিখতাম না। আমার নাম, ধর্ম নিয়েও অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এটি আমাদের দেশের অপরাজনীতির অংশ। এর শিকার আমাকে হতে হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে। এখনও অনেকে জানেন না আমার ধর্ম কি।
আমি কাজ করছি, কোথাও আমার কিছু প্রাপ্য রয়েছে। আমাকে কোন একটি দায়িত্ব দেওয়া হবে। ওরা গিয়ে সেখানে বাধা দিলেন। না এর দরকার নেই। বা নেতিবাচক মন্তব্য করলেন।
কারও ক্ষতি না করে, হিংসা পরায়ণ না হয়ে, খারাপ আচরণ না করে এবং তাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর মনোভাব দেখাতে শিখেছি আমি তাদের জন্যই।
তারা বাধা দিয়েছেন, আর আমি আমার বাবা-মার কথা ভেবেছি, স্বামী-সন্তানের কথা ভেবেছি, আমি আমার নেত্রীর কথা ভেবেছি, যিনি জীবনে অনেক বড় বড় বাধা ডিঙিয়েছেন।
এ সব ভেবে আমি তাদের জন্য ঘৃণা পুষে না রেখেও এগিয়ে গেছি।
বাবা নেত্রীকে বলতেন মা মনি
১৯৮১ সালে ১৭ মে আপা (শেখ হাসিনা) যখন ফিরে আসেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম তাকে আনতে। বৃষ্টি পড়ছে। আমার বাবা তখন প্রচন্ড অসুস্থ। কিন্তু তখন কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। খ্বু ভিড়। আমরা বনানী পর্যন্ত যেতে পেরেছি। ঠিক তখনই দেখা আপার ট্রাকের সঙ্গে। ট্রাকে আপার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ভাই। তিনি আপাকে দেখিয়ে বললেন, ওই যে ওয়াদুদ ভাই।
বাবা চিৎকার দিয়ে বললেন, মা মনি। বাবা নেত্রীকে বলতেন মা মনি। তার পর সেই বহরে আমাদের গাড়িকেও যায়গা করে দেওয়া হয়।
ছেলে মেয়ে যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার চেষ্টা করছে
বাবা চিৎকার দিয়ে বললেন, মা মনি। বাবা নেত্রীকে বলতেন মা মনি। তার পর সেই বহরে আমাদের গাড়িকেও যায়গা করে দেওয়া হয়।
ছেলে মেয়ে যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার চেষ্টা করছে
আমার দুই সন্তান- ছেলে তওকীর রাশাদ নাওয়াজ (২৩) ও মেয়ে তানি দীপাভলী নাওয়াজ (১৯)। ছেলে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে দেশে থেকেই দূর শিক্ষণ পদ্ধতিতে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করছে। মেয়ে দেশে এ লেবেল পরীক্ষা দিয়েছেন।
আমার ছেলে ও মেয়ে এমনিতেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। রেজাল্ট অত্যন্ত ভাল। মেয়ের অবশ্য রেজাল্টের ও মেধার সঙ্গে সবসময় মেলে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর আমি আগের মত তাদের এখন সময় দিতে পারি না। আমার বাড়ির পরিবেশ একটু আলাদা। আমার স্বামী প্রচুর সময় দেন ওদের। তিনি যেহেতু একটি স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাই আমাকে সময় দেন কাজ করে যাওয়ার, আর বাচ্চাদের সময় দেন ওদের ঠিকভাবে গড়ে ওঠার জন্য।
বাবা-ছেলে যুগলবন্দি আলাপি বাজায়
আমার ছেলে ও মেয়ে এমনিতেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। রেজাল্ট অত্যন্ত ভাল। মেয়ের অবশ্য রেজাল্টের ও মেধার সঙ্গে সবসময় মেলে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর আমি আগের মত তাদের এখন সময় দিতে পারি না। আমার বাড়ির পরিবেশ একটু আলাদা। আমার স্বামী প্রচুর সময় দেন ওদের। তিনি যেহেতু একটি স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাই আমাকে সময় দেন কাজ করে যাওয়ার, আর বাচ্চাদের সময় দেন ওদের ঠিকভাবে গড়ে ওঠার জন্য।
বাবা-ছেলে যুগলবন্দি আলাপি বাজায়
কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি আকাশবানীর এ গ্রেড শিল্পী ছিলেন। পরে ঢাকা রেডিওতে তিনি নিয়মিত বাঁশি বাজিয়েছেন। তার সূত্র ধরে ভারতের ধ্রুপদী সঙ্গীতের যত উদ্যোগ রয়েছে তার সঙ্গে একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আমার শ্বশুরের কাছ থেকে আমার স্বামী বাঁশি বাজানো শেখেন। আমার ছেলেও শিখেছে তার বাবার কাছে। ছেলে তার বাবার সঙ্গে যুগলবন্দি আলাপি বাজায়।
মেয়ে আর বেহালা বাজায় না
আমার মেয়ের প্রিয় বেহালা। একসময় খুব বাজাতো। এখন অবশ্য বাজায় না। আশা করি সামনে আবার বাজাবে। বেহালা না বাজলেও সঙ্গিতের সঙ্গে তার বড় যোগসূত্র রয়েছে।
গান বাজনা, পড়াশুনা, ইতিহাসের প্রতি খুব নজর রয়েছে পরিবারে। আমার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের খ্যাতিমান ছাত্র ছিলেন। আইনের জগতের পাশাপাশি ইতিহাসের প্রতি তার খুব নজর রয়েছে যা পরিবারেও সঞ্চারিত হয়েছে।
সবার আগে মানুষ হতে হয়
গান বাজনা, পড়াশুনা, ইতিহাসের প্রতি খুব নজর রয়েছে পরিবারে। আমার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের খ্যাতিমান ছাত্র ছিলেন। আইনের জগতের পাশাপাশি ইতিহাসের প্রতি তার খুব নজর রয়েছে যা পরিবারেও সঞ্চারিত হয়েছে।
সবার আগে মানুষ হতে হয়
একটা ভিন্ন পরিবেশে নানা ব্যস্ততার মধ্যে বাচ্চাদের আমরা চেষ্টা করেছি দেশ, মানুষ, সমাজ, আমাদের ইতিহাস ঐহিত্য সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব জানাতে। তারপরও দৈনিন্দিন যে জীবন, আকাশ সংস্কৃতির যে বিরাট প্রভাব সবকিছু মিলিয়ে আমাদের বাচ্চারা তো সব বিশ্বমানব। তবে বিশ্বমানব হতে হলে সবার আগে মানুষ হতে হয়। সেভাবেই চেষ্টা করেছি মানুষ করতে। ঠিক যেভাবে চেয়েছি ঠিক সেভাবে হয়ত হয়নি। কিন্তু সচেতনতা, দেশ সেবার একটি চিন্তা মনে হয় তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার যে বিশাল গুরুত্ব রয়েছে মানব জীবনে তার একটি পরিবেশ নিয়ে আরও দশজনকে নিয়েই যে মানুষ এ ধরনের সচেতনতা আমরা হয়ত সন্তানদের মধ্যে দিতে পেরেছি। আশা করি, সবাই দোয়াও করবেন, যাতে ছেলে মেয়েরা মানুষ হয়, দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে। সারা বিশ্বে যা কিছু ভালো সেদিকে যেন সন্তানদের একটি নজর যেন থাকে সেভাবে গড়ার চেষ্ঠা করেছি। কতদূর পেরেছি আল্লাহ জানেন।
No comments