কৃষি অর্থনীতি-বীজ-মাফিয়ার কবলে বোরো মৌসুম by পাভেল পার্থ
বোরো মৌসুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধান মৌসুমকে কোনোভাবেই কোম্পানিনির্ভর হাইব্রিড ধানবীজের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সরকারকে অবশ্যই সরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বিএডিসিকে শক্তিশালীকরণের ভেতর দিয়ে কৃষকের বীজের ওপর কৃষকের নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে
আমন, আউশ আর বোরো এ তিনটি ধান ঋতুই নির্মাণ করেছে গ্রাম-বাংলার ধান-বলয়ের সুরক্ষিত বুনিয়াদ। দেশি আমন ধানের কিছু জাত টিকে থাকার সংগ্রাম করে চললেও আউশ ও বোরো মৌসুমের প্রায় সব দেশি ধান জাতগুলোকে ১৯৬০ সালের পর থেকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। কালাবোরো, বোরো, ধলাবোরো, মোগলসাইল, আইজং, লাফা, জাগলিবোরো, ঝরাবোরো এ রকম নানা বোরো ধানের দেশি জাত এখন আর কোনো রাষ্ট্রীয় কৃষি প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে পাত্তা পায় না। এককালে হাওরে জন্মাত টেপি, বোরো, রাতাশাইল, লাখাই, মুরালী, চেংড়ি, সমুদ্রফেনা, হাসিকলমি, কাশিয়াবিন্ন, দুধরাকি, দুধসাগর, লাটলি, মারতি, তুলসীমালা, আখনিশাইল, গাছমালা, খৈয়াবোরো, রাতাশাইল, দেউড়ি, কন্যাশাইল, বিচিবোরো, লোলাটেপি, পশুশাইল, হাঁসের ডিম, গুয়ারশাইল, বেতী, ময়নাশাইল, গদালাকি, বিরঅইন, খিলই, ছিরমইন, আগুনী, গুলটিহি, ল্যাঠা, জাগলীবোরোর মতো অবিস্মরণীয় সব গভীর পানির বোরো মৌসুমের ধান জাত। উপমহাদেশের প্রথম গভীর পানির ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে হাওরের হবিগঞ্জ জেলার নাগুড়াতে। প্রশ্নহীনভাবে সেই প্রতিষ্ঠানকে বদলে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র। কোনো প্রতিষ্ঠানই বোরো মৌসুমের গভীর পানির ধানজাত উপহার দিতে পারেনি। বলা হয়ে থাকে যে, আমাদের জনপদে একসময় ছিল হাজার হাজার ধানের জাত। ধানবিজ্ঞানী ড. হেক্টর দেখিয়েছেন, একটা সময় বাংলাদেশে প্রায় ১৮ হাজারেরও বেশি ধানের চাষ হতো। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট 'দেশী ধানের জাত' নামে একটা পুস্তক প্রকাশ করে। ওই পুস্তকে বাংলাদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, পাবনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, বরিশাল, যশোর এই ২০টি জেলার ৩৫৯টি থানার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১২৪৮৭টি স্থানীয় জাতের ধানের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই যে আমরা একটির পর একটি দেশি ধানের জাত হারাচ্ছি তা কিন্তু আমাদের জন্য ভয়াবহ এক নিয়ন্ত্রিত ভবিষ্যৎকে ডেকে আনছে। কারণ ১৯৬০ সালের তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া উচ্চফলনশীল ধানের অত্যাচার কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আমাদের জমিনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হাইব্রিড ধানবীজ। বাংলাদেশে বোরো মৌসুমটি দখল করে নিয়েছে এই হাইব্রিড ধান। কৃষক হাইব্রিড বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারে না বলে প্রতিনিয়ত কৃষক ও দেশ বিভিন্ন হাইব্রিড বীজ কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। ২০১১-১২ উৎপাদন বর্ষের বোরো মৌসুমে দেশে সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমিনে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়। ওই বছর বিদেশ থেকে ৩ হাজার ৪২৩ টন হাইব্রিড ধানবীজ আমদানি করে বিক্রি করে বিভিন্ন কোম্পানি। পৌষ-মাঘ থেকেই শুরু হয় বোরো ধানের মৌসুম। আসন্ন বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে সরকার ৩৪টি করপোরেট কোম্পানি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ৭০ টন (প্রায় ১৮ লাখ এক হাজার ৩৪৫ মণ) হাইব্রিড ধানবীজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি 'হাইব্রিড ধানবীজ উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও বিদেশ থেকে বীজ আমদানির পরিমাণ নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির' ২০তম সভায় এ সর্বনাশা অনুমোদন দিয়েছে সরকার (সূত্র : সমকাল, ৯ জুলাই ২০১২)। যেসব হাইব্রিড ধানবীজের অনুমোদন হয়েছে তার ভেতর ঝলক, জাগরণ, টিয়া, রাইচা এসব সর্বনাশা জাতও আছে। এসব ধান চাষ করে দেশে প্রচুর কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছেন, প্রমাণিত হয়েছে এসব বীজের গুণগত মান খুবই বাজে। পাশাপাশি ওই কমিটি আশা করছে, আসন্ন বোরো মৌসুমকে ঘিরে দেশে আরও ৫ হাজার ৫০০ টন হাইব্রিড ধানবীজ উৎপাদিত হবে। তার মানে হচ্ছে আসন্ন বোরো মৌসুমে দেশে হাইব্রিড ধানবীজের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার ৫৭০ টন। প্রথম থেকেই হাইব্রিড ধানবীজের বাজারমূল্য ছিল কৃষকের নাগাল ও চিন্তার বাইরে। এ বছর সর্বনিম্ন প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকা প্রতি কেজি এসব ধানবীজের প্যাকেট বিক্রি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আসন্ন বোরো মৌসুমে করপোরেট বীজ কোম্পানিরা বিক্রি করতে যাচ্ছে প্রায় ৩৮৬ কোটি ৯০ লাখ ৪৬ হাজার টাকার হাইব্রিড ধানবীজ। চিন্তা করা যায়, বাংলাদেশের মাটি ও কৃষকের রক্তের ওপর দিয়ে এভাবে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে আর তার বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র তার জনগণের শরীর ও বীজের মতো জাতীয় সম্পদের কোনো সুরক্ষা না করেই বারবার গণতান্ত্রিক সার্বভৌমত্বের সাফাই গাইছে। নয়া উদারবাদী ব্যবস্থার এ বীজসম্পদ দখলের এ অন্যায় বাণিজ্য বাহাদুরি থামানো জরুরি।
আমাদের জনপদে কি আদিবাসী কি বাঙালি সমাজগুলোতে কৃষক-জুমিয়া নারীর রয়েছে বৈচিত্র্যময় শস্য ফসলের বীজ সংরক্ষণের এক প্রতিরোধী ইতিহাস। নানা হাট-গ্রাম-পাড়া ঘুরে আমাদের নারীরা সংগ্রহ করতেন নানা জাতের বীজ। গ্রামের প্রতিটি কৃষক বাড়িতেই গড়ে উঠেছিল আপন সব বীজাগার। এসব বীজাগারের মালিকানা ছিল যৌথ ও সামাজিক। কৃষকের বীজে কেবল কৃষকেরই ছিল অধিকার। ষাটের দশকে আমদানিকৃত সংহারী নানা উফশী বীজ ও সর্বনাশা সবুজ বিপল্গবের ভেতর দিয়ে এসব গ্রামীণ কৃষকের বীজাগারগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে থাকল। একটা সময় পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ, বীজাগার দেখভাল করা, বীজ শুকানো, বীজ সংরক্ষণ সব কাজই করতেন গ্রাম-জনপদের নারীরা। আর এ বীজ সংরক্ষণ নারীকে দিয়েছিল এক সশ্রদ্ধ সামাজিক মর্যাদা। উন্নয়নের কৃষির নাম করে বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক কৃষির সর্বগ্রাসী প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বীজশূন্য করল কৃষকের বীজাগারের।
বাংলাদেশে জাতীয় বীজ বোর্ড হাইব্রিড বীজ আমদানি-রফতানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নতুন নীতি/আইন/প্রজ্ঞাপন তৈরি না করেই ১৯৯৮ সালে ব্যক্তিমালিকানাধীন কিছু বীজ কোম্পানিকে প্রায় ২২০০ টন হাইব্রিড ধানবীজ বোরো (শীতকালীন) মৌসুমে ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করার অনুমোদন দেয়। ১৯৯৮-এর জুলাই-সেপ্টেম্বর বন্যায় দেশ ভেসে যায়, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য হাইব্রিড ধানবীজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্র। বীজ বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে এসিআই-বাংলাদেশ (অফাধহপবফ ঈযবসরপধষ ওহফঁংঃৎরবং, খঃফ. ইধহমষধফবংয/অঈও) ভারত থেকে আলোক-৬২০১ হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানি করে। বিশ্বের তৎকালীন সবচেয়ে দাপুটে কৃষি বীজ কোম্পানি এভেন্টিসের মালিকানাধীন প্রো-এগ্রোর সাবসিডিয়ারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড রাইস ইন্টারন্যাশনাল থেকে এসিআই-বাংলাদেশ (অফাধহপবফ ঈযবসরপধষ ওহফঁংঃৎরবং, খঃফ. ইধহমষধফবংয/অঈও) দেশে পয়লা হাইব্রিড বীজ ব্যবসায়িক বিপণনের জন্য আমদানি করে। এশিয়ায় সিনজেনটা এবং মনসান্টো মূলত হাইব্রিড ধানবীজের একচেটিয়া ব্যবসা করে। এসব করপোরেট কোম্পানিই জাতীয় সরকারগুলোকে চোখ রাঙানির ভেতর রাখে আর রাষ্ট্রের কৃষি বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে দেখা যায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার জাতীয় বীজ নীতিগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এসব করপোরেট কোম্পানির মুনাফার স্বার্থকে ঘিরেই। বাংলাদেশের জাতীয় বীজনীতি (১৯৯৩), জাতীয় কৃষিনীতি (১৯৯৯) এমনকি প্রস্তাবিত জাতীয় কৃষিনীতি (২০১০) কি বীজ আইনগুলোও বীজক্ষেত্রের করপোরেটায়ন ও বাণিজ্যিকায়নকেই বৈধতা দিয়েছে; কিন্তু যদি এভাবেই দেশের সব মৌসুমের ধানসহ সব শস্য ফসলের বীজের ওপর করপোরেট দখল ও নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয় তখন দেশের ক্ষমতা কাঠামো পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করবে এসব কোম্পানি। কারণ বীজের ওপরই দেশের উৎপাদন ও খাদ্য সুরক্ষা নির্ভর করে। আর খাদ্য সুরক্ষা সরাসরি প্রভাবিত করে জাতীয় রাজনৈতিক পালাবদল। আসন্ন বোরো মৌসুমের আগে সরকারকে অবশ্যই বিষয়টি আবারও ভাবতে হবে। বোরো মৌসুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধান মৌসুমকে কোনোভাবেই কোম্পানিনির্ভর হাইব্রিড ধানবীজের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সরকারকে অবশ্যই সরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বিএডিসিকে শক্তিশালীকরণের ভেতর দিয়ে কৃষকের বীজের ওপর কৃষকের নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আশা করি করপোরেট বীজ-মাফিয়ার বিরুদ্ধে তরুণ কৃষি প্রজন্মই রচনা করবে বাংলার বীজ সুরক্ষার নয়া বীজ বিদ্রোহ।
পাভেল পার্থ :গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ animistbangla@gmail.com
আমাদের জনপদে কি আদিবাসী কি বাঙালি সমাজগুলোতে কৃষক-জুমিয়া নারীর রয়েছে বৈচিত্র্যময় শস্য ফসলের বীজ সংরক্ষণের এক প্রতিরোধী ইতিহাস। নানা হাট-গ্রাম-পাড়া ঘুরে আমাদের নারীরা সংগ্রহ করতেন নানা জাতের বীজ। গ্রামের প্রতিটি কৃষক বাড়িতেই গড়ে উঠেছিল আপন সব বীজাগার। এসব বীজাগারের মালিকানা ছিল যৌথ ও সামাজিক। কৃষকের বীজে কেবল কৃষকেরই ছিল অধিকার। ষাটের দশকে আমদানিকৃত সংহারী নানা উফশী বীজ ও সর্বনাশা সবুজ বিপল্গবের ভেতর দিয়ে এসব গ্রামীণ কৃষকের বীজাগারগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে থাকল। একটা সময় পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ, বীজাগার দেখভাল করা, বীজ শুকানো, বীজ সংরক্ষণ সব কাজই করতেন গ্রাম-জনপদের নারীরা। আর এ বীজ সংরক্ষণ নারীকে দিয়েছিল এক সশ্রদ্ধ সামাজিক মর্যাদা। উন্নয়নের কৃষির নাম করে বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক কৃষির সর্বগ্রাসী প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বীজশূন্য করল কৃষকের বীজাগারের।
বাংলাদেশে জাতীয় বীজ বোর্ড হাইব্রিড বীজ আমদানি-রফতানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নতুন নীতি/আইন/প্রজ্ঞাপন তৈরি না করেই ১৯৯৮ সালে ব্যক্তিমালিকানাধীন কিছু বীজ কোম্পানিকে প্রায় ২২০০ টন হাইব্রিড ধানবীজ বোরো (শীতকালীন) মৌসুমে ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করার অনুমোদন দেয়। ১৯৯৮-এর জুলাই-সেপ্টেম্বর বন্যায় দেশ ভেসে যায়, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য হাইব্রিড ধানবীজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্র। বীজ বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে এসিআই-বাংলাদেশ (অফাধহপবফ ঈযবসরপধষ ওহফঁংঃৎরবং, খঃফ. ইধহমষধফবংয/অঈও) ভারত থেকে আলোক-৬২০১ হাইব্রিড ধানের বীজ আমদানি করে। বিশ্বের তৎকালীন সবচেয়ে দাপুটে কৃষি বীজ কোম্পানি এভেন্টিসের মালিকানাধীন প্রো-এগ্রোর সাবসিডিয়ারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হাইব্রিড রাইস ইন্টারন্যাশনাল থেকে এসিআই-বাংলাদেশ (অফাধহপবফ ঈযবসরপধষ ওহফঁংঃৎরবং, খঃফ. ইধহমষধফবংয/অঈও) দেশে পয়লা হাইব্রিড বীজ ব্যবসায়িক বিপণনের জন্য আমদানি করে। এশিয়ায় সিনজেনটা এবং মনসান্টো মূলত হাইব্রিড ধানবীজের একচেটিয়া ব্যবসা করে। এসব করপোরেট কোম্পানিই জাতীয় সরকারগুলোকে চোখ রাঙানির ভেতর রাখে আর রাষ্ট্রের কৃষি বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে দেখা যায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার জাতীয় বীজ নীতিগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এসব করপোরেট কোম্পানির মুনাফার স্বার্থকে ঘিরেই। বাংলাদেশের জাতীয় বীজনীতি (১৯৯৩), জাতীয় কৃষিনীতি (১৯৯৯) এমনকি প্রস্তাবিত জাতীয় কৃষিনীতি (২০১০) কি বীজ আইনগুলোও বীজক্ষেত্রের করপোরেটায়ন ও বাণিজ্যিকায়নকেই বৈধতা দিয়েছে; কিন্তু যদি এভাবেই দেশের সব মৌসুমের ধানসহ সব শস্য ফসলের বীজের ওপর করপোরেট দখল ও নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয় তখন দেশের ক্ষমতা কাঠামো পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করবে এসব কোম্পানি। কারণ বীজের ওপরই দেশের উৎপাদন ও খাদ্য সুরক্ষা নির্ভর করে। আর খাদ্য সুরক্ষা সরাসরি প্রভাবিত করে জাতীয় রাজনৈতিক পালাবদল। আসন্ন বোরো মৌসুমের আগে সরকারকে অবশ্যই বিষয়টি আবারও ভাবতে হবে। বোরো মৌসুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধান মৌসুমকে কোনোভাবেই কোম্পানিনির্ভর হাইব্রিড ধানবীজের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সরকারকে অবশ্যই সরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বিএডিসিকে শক্তিশালীকরণের ভেতর দিয়ে কৃষকের বীজের ওপর কৃষকের নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আশা করি করপোরেট বীজ-মাফিয়ার বিরুদ্ধে তরুণ কৃষি প্রজন্মই রচনা করবে বাংলার বীজ সুরক্ষার নয়া বীজ বিদ্রোহ।
পাভেল পার্থ :গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ animistbangla@gmail.com
No comments