প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিঃ আমাদের কথা by আবুল কাসেম হায়দার
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো স্থায়ী শিক্ষানীতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে। সময় সময় এক একবার এক সরকার শিক্ষানীতি স্থায়ীভাবে করার জন্য কমিশন গঠন করে। কমিশন শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করে। সম্পূর্ণ শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে আজ পর্যন্ত পাস হয়নি। এ পর্যন্ত বহু শিক্ষানীতি বিভিন্ন সরকার প্রণয়ন করেছে। বর্তমান সরকার এসেই দ্রুত নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করার জন্য কমিশন গঠন করে।
তবে এ কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত খসড়া শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে সরকারের কাছে জমা দেয়। সরকার এ নীতি নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করছে। আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ প্রাপ্তির পর স্থায়ীভাবে শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন করবে। পর্যায়ক্রমে দীর্ঘ নয় বছর সময় লাগবে এ প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে। প্রয়োজন হবে প্রচুর অর্থ ও জনশক্তির।
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য বিষয় : প্রথমে আমরা আলোচনা করতে চাই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সংক্রান্ত মূল বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে। শিক্ষানীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুণাবলী, সুপ্ত প্রতিভা, চিত্তের উত্কর্ষ ও নৈতিকতা বোধের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরির চিন্তা-চেতনাকে সামনে রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে মোট চব্বিশটি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষানীতির প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবার জন্য শিক্ষা। শিক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। সব শিশুর জন্য শিক্ষার সুযোগের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে দেশে ১০-১৫ শতাংশ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয় না। এদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি ছেলেমেয়ে, চরাঞ্চলের ছেলেমেয়ে, হাওরাঞ্চলের ছেলেমেয়ে, বিল অঞ্চলের ছেলেমেয়ে, অতি দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়ে, প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে ও পথ শিশু ছেলেমেয়ে। শিক্ষানীতিতে এ সব শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য নানা কৌশল, উপায় ও সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। শিক্ষানীতিতে ধনী-দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, সাদাকালো, মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে, সবাইকে বিদ্যা শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই তা হচ্ছে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ার সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ। বিশাল এই ঝরে পড়ার কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। দরিদ্রতা ছাড়াও বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক, পাঠ্যসূচির অনিয়ম পদ্ধতির কারণে ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তক, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী পুস্তক প্রণয়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি, তাই শিক্ষানীতিতে ঝরে পড়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত করা, শিক্ষার্থীবান্ধব বই প্রণয়নসহ নানা বিষয়ে শিক্ষানীতিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তৃতীয় যে বিষয়টি আমরা আলোচনা করব তা হচ্ছে দক্ষতা সৃষ্টি; অর্থাত্ চিত্তের উত্কর্ষ এবং মানসিক বিকাশের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত প্রয়োজন। দক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী সহজে আয়-উপার্জন করতে পারে। সে জন্য বর্তমান শিক্ষানীতিতে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে প্রাক বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং পরবর্তী সময় কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণী থেকে প্রাক বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং পরবর্তী বিষয়ে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে।
চতুর্থ যে বিষয়টি শিক্ষানীতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো তা হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়ার জন্য সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আয়তায় আনা হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের দায়-দায়িত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, অধিকতর শিক্ষার্থী বান্ধব পঠন-পাঠন এবং প্রশাসনিক ও সামাজিক নজরদারির ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
পঞ্চম যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব তা হচ্ছে শিক্ষানীতিতে নৈতিকতা বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। শিক্ষানীতিতে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের জন্য, সত্ নাগরিক সৃষ্টির জন্য, দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। দেশের উন্নতি, অবনতি নির্ভর করে সত্, নিষ্ঠাবান, কর্মঠ, দক্ষ জনশক্তির ওপর। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার সব স্তরে নৈতিকতা, মূল্যবোধের বিকাশ সাধনের জন্য বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব তা হচ্ছে ধর্ম শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা। শিক্ষানীতির যারা খসড়া প্রণয়ন করেছেন তারা জোর দিয়ে বলেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতার মানে হচ্ছে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, কোনোক্রমে ধর্মহীনতার ধারণা বাংলাদেশে অনভিপ্রেত ও অবাস্তব। শিক্ষানীতি প্রণয়নকারীরা আরও বলেছেন, ধর্ম শিক্ষাকে শুধু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ধর্মের মর্মার্থ যাতে শিক্ষার্থীরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সে দিকে জোর দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রস্তবিত শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষায় ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিসল্টান ধর্ম যথাযথভাবে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার উদ্দেশ্যে অন্যান্য ধারার যে বিষয়গুলো বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হবে সেগুলো মাদ্রাসার নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পড়াতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বাংলাদেশ সল্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বাংলাদেশ সল্টাডিজ। এর ফলে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে। সমনাগরিক ভিত্তি সৃষ্টি হবে। এ বিষয়গুলো মাদ্রাসায় পড়ানো হবে ইসলাম শিক্ষার সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাশাপাশি।
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে সমালোচনা : এক. বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন ‘এই শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে সেক্যুলার গণমুখীসুলভ সুষম সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণ কৌশল হিসেবে কাজ করবে।’ বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি নেই। শিক্ষানীতির তৃতীয় ক্রমিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা বোধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সমালোচকদের দৃষ্টিতে এটি সংবিধানপরিপন্থী। ধর্ম নিরপেক্ষতা বোধ সৃষ্টির সুযোগ সংবিধানে বর্তমানে নেই। কিন্তু শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যায় বোধ, কর্তব্য বোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, শৃঙ্খলা, সহজ জীবন-যাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য ও গুণাবলী বিকাশ ঘটানোর কথা বলা হয়েছে। নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ কিভাবে সৃষ্টি হবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত ধর্মপ্রিয় মুসলমানদের দেশ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। তাই ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের ব্যবস্থা শিশুকাল থেকে থাকতে হবে—এ ধরনের ব্যবস্থার কথা প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে বলা হয়নি।
দুই : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। স্কুল, মাদ্রাসায় সব প্রতিষ্ঠানের একই নীতি ও কারিকুলাম ১ম থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অনুসরণ করা হবে। তাতে সনাতন মাদ্রাসায় আরবি, ইসলামিয়াত শিক্ষা মুখ্য না হয়ে গৌণ বিষয়ে রূপ নেবে। কোরআন, হাদিস, আকাইদ, ফিকাহ্, আরবি প্রভৃতি আর বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো যাবে না। এ শিক্ষানীতি মাদ্রাসাগুলোয় পরিচালিত হলে মাদ্রাসায় ইসলাম শিক্ষা না হয়ে একটি সেক্যুলার শিক্ষা চালু হবে। তাতে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে; তাই বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। ভারতসহ পৃথিবীর সব মাদ্রাসায় শিক্ষাব্যবস্থা প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির আলোকে পরিচালিত হচ্ছে না।
তিন : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে ১ম ও ২য় শ্রেণীতে ধর্মীয় শিক্ষা রাখা হয়নি। অন্যদিকে মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়নি। ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়নি। তাই ইসলাম শিক্ষা, সংস্কৃত ও পালি বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক না হওয়াতেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক না হলে নৈতিকতাহীনভাবে ছাত্রছাত্রীরা গড়ে উঠবে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কথা শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে তাতে ধর্মহীনতার দিকে ছাত্রছাত্রীরা বেশি মনোযোগী হয়ে পড়বে।
চার : মাদ্রাসা শিক্ষায় ফাজিল ও কামিলকে স্নাতক ও মাসল্টার্স ডিগ্রি মানে বিগত সরকার উন্নীত করেছে। শিক্ষানীতিতে এ বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। তাই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে শিক্ষানীতিতে আসা উচিত।
পাঁচ : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে বাংলা ও ইংরেজিতে মাদ্রাসায় ২০০ নম্বর করে রাখা হয়েছে কিন্তু আরবি করা হয়েছে ১০০ নম্বর করে। তাতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আরবিতে দুর্বল হয়ে পড়বে। মাদ্রাসায় আরবি বিষয়ে ২০০ নম্বর রাখা উচিত।
ছয় : প্রকৌশল, তথ্য-প্রযুক্তি, মেডিকেল, কৃষি ও ব্যবসা শিক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে সত্, চরিত্রবান ও নৈতিকতা বোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা বর্তমান প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে নেই। আজ সমাজে চরিত্রবান, সত্ ও যোগ্য নাগরিকের অভাব প্রবল। সেই সমস্যা সমাধানের নীতি শিক্ষানীতিতে আসতে হবে।
সাত : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যেহেতু এটি বিদেশি ধারার শিক্ষা তাই তাকে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শিক্ষানীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলকে কেন বিশেষ ব্যবস্থায় বিবেচনা করা হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। শিক্ষানীতিতে একমুখী শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। দেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির উত্কর্ষ সাধনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো কিছুর শিক্ষা নেই। তাই এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
অবশেষে : শিক্ষানীতি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত জাতির কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নীতি অনুপস্থিত। শিক্ষানীতি জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কাজ করে। বারবার নীতির পরিবর্তনের ফলে জাতি নানাভাবে বিভক্ত। দেশে আজ চার/পাঁচ ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। তাই দ্বিধাবিভক্ত জাতি বারবার নানাভাবে বিভক্ত হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, সত্, নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক জাতি গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সবার উপযোগী ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষানীতির। আমরা আশা করব সরকার প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির সংশোধনের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতি সবার জন্য তৈরি করবে।
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য বিষয় : প্রথমে আমরা আলোচনা করতে চাই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সংক্রান্ত মূল বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে। শিক্ষানীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুণাবলী, সুপ্ত প্রতিভা, চিত্তের উত্কর্ষ ও নৈতিকতা বোধের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরির চিন্তা-চেতনাকে সামনে রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে মোট চব্বিশটি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষানীতির প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবার জন্য শিক্ষা। শিক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। সব শিশুর জন্য শিক্ষার সুযোগের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে দেশে ১০-১৫ শতাংশ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয় না। এদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি ছেলেমেয়ে, চরাঞ্চলের ছেলেমেয়ে, হাওরাঞ্চলের ছেলেমেয়ে, বিল অঞ্চলের ছেলেমেয়ে, অতি দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়ে, প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে ও পথ শিশু ছেলেমেয়ে। শিক্ষানীতিতে এ সব শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য নানা কৌশল, উপায় ও সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। শিক্ষানীতিতে ধনী-দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, সাদাকালো, মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে, সবাইকে বিদ্যা শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই তা হচ্ছে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ার সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৪০ শতাংশ। বিশাল এই ঝরে পড়ার কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য। দরিদ্রতা ছাড়াও বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক, পাঠ্যসূচির অনিয়ম পদ্ধতির কারণে ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তক, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী পুস্তক প্রণয়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি, তাই শিক্ষানীতিতে ঝরে পড়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত করা, শিক্ষার্থীবান্ধব বই প্রণয়নসহ নানা বিষয়ে শিক্ষানীতিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তৃতীয় যে বিষয়টি আমরা আলোচনা করব তা হচ্ছে দক্ষতা সৃষ্টি; অর্থাত্ চিত্তের উত্কর্ষ এবং মানসিক বিকাশের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত প্রয়োজন। দক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী সহজে আয়-উপার্জন করতে পারে। সে জন্য বর্তমান শিক্ষানীতিতে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে প্রাক বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং পরবর্তী সময় কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণী থেকে প্রাক বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং পরবর্তী বিষয়ে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে।
চতুর্থ যে বিষয়টি শিক্ষানীতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো তা হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়ার জন্য সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আয়তায় আনা হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের দায়-দায়িত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, অধিকতর শিক্ষার্থী বান্ধব পঠন-পাঠন এবং প্রশাসনিক ও সামাজিক নজরদারির ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
পঞ্চম যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব তা হচ্ছে শিক্ষানীতিতে নৈতিকতা বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। শিক্ষানীতিতে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের জন্য, সত্ নাগরিক সৃষ্টির জন্য, দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। দেশের উন্নতি, অবনতি নির্ভর করে সত্, নিষ্ঠাবান, কর্মঠ, দক্ষ জনশক্তির ওপর। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার সব স্তরে নৈতিকতা, মূল্যবোধের বিকাশ সাধনের জন্য বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।
ষষ্ঠ যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব তা হচ্ছে ধর্ম শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা। শিক্ষানীতির যারা খসড়া প্রণয়ন করেছেন তারা জোর দিয়ে বলেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতার মানে হচ্ছে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, কোনোক্রমে ধর্মহীনতার ধারণা বাংলাদেশে অনভিপ্রেত ও অবাস্তব। শিক্ষানীতি প্রণয়নকারীরা আরও বলেছেন, ধর্ম শিক্ষাকে শুধু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ধর্মের মর্মার্থ যাতে শিক্ষার্থীরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সে দিকে জোর দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রস্তবিত শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষায় ইসলাম ধর্মের পাশাপাশি হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিসল্টান ধর্ম যথাযথভাবে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার উদ্দেশ্যে অন্যান্য ধারার যে বিষয়গুলো বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হবে সেগুলো মাদ্রাসার নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে পড়াতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বাংলাদেশ সল্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বাংলাদেশ সল্টাডিজ। এর ফলে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে। সমনাগরিক ভিত্তি সৃষ্টি হবে। এ বিষয়গুলো মাদ্রাসায় পড়ানো হবে ইসলাম শিক্ষার সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাশাপাশি।
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে সমালোচনা : এক. বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন ‘এই শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে সেক্যুলার গণমুখীসুলভ সুষম সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণ কৌশল হিসেবে কাজ করবে।’ বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি নেই। শিক্ষানীতির তৃতীয় ক্রমিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা বোধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সমালোচকদের দৃষ্টিতে এটি সংবিধানপরিপন্থী। ধর্ম নিরপেক্ষতা বোধ সৃষ্টির সুযোগ সংবিধানে বর্তমানে নেই। কিন্তু শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যায় বোধ, কর্তব্য বোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, শৃঙ্খলা, সহজ জীবন-যাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য ও গুণাবলী বিকাশ ঘটানোর কথা বলা হয়েছে। নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ কিভাবে সৃষ্টি হবে, তার কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত ধর্মপ্রিয় মুসলমানদের দেশ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম ধর্ম। তাই ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের ব্যবস্থা শিশুকাল থেকে থাকতে হবে—এ ধরনের ব্যবস্থার কথা প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে বলা হয়নি।
দুই : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। স্কুল, মাদ্রাসায় সব প্রতিষ্ঠানের একই নীতি ও কারিকুলাম ১ম থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অনুসরণ করা হবে। তাতে সনাতন মাদ্রাসায় আরবি, ইসলামিয়াত শিক্ষা মুখ্য না হয়ে গৌণ বিষয়ে রূপ নেবে। কোরআন, হাদিস, আকাইদ, ফিকাহ্, আরবি প্রভৃতি আর বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো যাবে না। এ শিক্ষানীতি মাদ্রাসাগুলোয় পরিচালিত হলে মাদ্রাসায় ইসলাম শিক্ষা না হয়ে একটি সেক্যুলার শিক্ষা চালু হবে। তাতে ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে; তাই বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। ভারতসহ পৃথিবীর সব মাদ্রাসায় শিক্ষাব্যবস্থা প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির আলোকে পরিচালিত হচ্ছে না।
তিন : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে ১ম ও ২য় শ্রেণীতে ধর্মীয় শিক্ষা রাখা হয়নি। অন্যদিকে মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়নি। ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা হয়নি। তাই ইসলাম শিক্ষা, সংস্কৃত ও পালি বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক না হওয়াতেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক না হলে নৈতিকতাহীনভাবে ছাত্রছাত্রীরা গড়ে উঠবে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কথা শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে তাতে ধর্মহীনতার দিকে ছাত্রছাত্রীরা বেশি মনোযোগী হয়ে পড়বে।
চার : মাদ্রাসা শিক্ষায় ফাজিল ও কামিলকে স্নাতক ও মাসল্টার্স ডিগ্রি মানে বিগত সরকার উন্নীত করেছে। শিক্ষানীতিতে এ বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। তাই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে শিক্ষানীতিতে আসা উচিত।
পাঁচ : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে বাংলা ও ইংরেজিতে মাদ্রাসায় ২০০ নম্বর করে রাখা হয়েছে কিন্তু আরবি করা হয়েছে ১০০ নম্বর করে। তাতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আরবিতে দুর্বল হয়ে পড়বে। মাদ্রাসায় আরবি বিষয়ে ২০০ নম্বর রাখা উচিত।
ছয় : প্রকৌশল, তথ্য-প্রযুক্তি, মেডিকেল, কৃষি ও ব্যবসা শিক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে সত্, চরিত্রবান ও নৈতিকতা বোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা বর্তমান প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে নেই। আজ সমাজে চরিত্রবান, সত্ ও যোগ্য নাগরিকের অভাব প্রবল। সেই সমস্যা সমাধানের নীতি শিক্ষানীতিতে আসতে হবে।
সাত : প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে যেহেতু এটি বিদেশি ধারার শিক্ষা তাই তাকে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শিক্ষানীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলকে কেন বিশেষ ব্যবস্থায় বিবেচনা করা হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। শিক্ষানীতিতে একমুখী শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। দেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির উত্কর্ষ সাধনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো কিছুর শিক্ষা নেই। তাই এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
অবশেষে : শিক্ষানীতি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত জাতির কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নীতি অনুপস্থিত। শিক্ষানীতি জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কাজ করে। বারবার নীতির পরিবর্তনের ফলে জাতি নানাভাবে বিভক্ত। দেশে আজ চার/পাঁচ ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। তাই দ্বিধাবিভক্ত জাতি বারবার নানাভাবে বিভক্ত হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী, সত্, নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক জাতি গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সবার উপযোগী ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষানীতির। আমরা আশা করব সরকার প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির সংশোধনের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতি সবার জন্য তৈরি করবে।
No comments