ঢাকা থেকে তিন শ’ কর্মীর প্রথম ফ্লাইট ২৭ মার্চ মালয়েশিয়া যাচ্ছে by ফিরোজ মান্না
মালয়েশিয়ার জনশক্তি রফতানির দুয়ার খুলেছে। ঢাকা থেকে ২৭ মার্চ ৩শ’ কর্মী নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি মালয়েশিয়ায় অবতরণ করবে। লটারীতে নির্বাচিত ১১ হাজার ৭৫৮ জন থেকে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার কর্মী যাবেন সেদেশে।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে প্রথম ফ্লাইটের দিন ঠিক করা হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ১০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার পর আরও ২০ হাজার কর্মী নেবে। বাকি ২০ হাজার কর্মী নির্বাচনের জন্য এটুআইয়ের সহযোগিতা নেয়া হবে। মোট ৩০ হাজার কর্মী নিয়োগের পর আরও কর্মী নেয়ার কথা রয়েছে দেশটির। মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের ‘সোর্স কান্ট্রি’ হিসাবে ঘোষনা করেছে। ১৩ সোর্স কান্ট্রির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এখন মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোটা থাকবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া থেকে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ঢাকায় আসে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে প্রতিনিধিদল বৈঠক। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আগামী ২৭ মার্চ প্রথম ফ্লাইট ৩ শ’ কর্মী নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাবে। মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (পলিসি ও ইন্টারন্যাশনাল) মোহাম্মদ সাহার বিন দারুসমান।প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের সঙ্গে মালয়েশিয়ার শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ জেফরি জোয়াকিন, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ইসহাক লেবেই ওমর, ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখ্য সচিব আতিয়া আজরিনা আমিরুলদিন, প্ল্যান্টেশন মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি রাজালি আব মালিকসহ দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়।
সচিব বলেন, লটারীর মাধ্যমে কর্মী নির্বাচনে মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদল সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর এই লটারী নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বাংলাদেশকে কর্মী নির্বাচনে তারা সহযোগিতা দেবে। তাছাড়া মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সার্ভার রয়েছে। এই সার্ভারে কর্মীদের সব তথ্য দেয়া রয়েছে। এই তথ্য উভয় দেশ দেখতে পাবে। চাহিদামত কর্মী। চাইলে সার্ভার ‘ওপেন’ বা খুললেই দেখা যাবে কোন কোন সেক্টর কর্মী তারা নিতে চান।
সচিব বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বাংলাদেশী কর্মী তার নিজে খরচ করবেন। এখানে কোন মধ্য স্বত্ত্বভোগী থাকবে না। ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ বিভাগে ১০ লাখ ২৪ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে লটারী করে তিন ধাপে ৩০ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠানো হবে। প্রথম ধাপে ১০ হাজার কর্মী যাবে। লটারিতে বিজয়ী প্রতি কর্মীকে সরকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তারা মালয়েশিয়ায় গিয়ে যেন কোন প্রকার সমস্যায় না পড়ে। মালয়েশিয়া যেতে একজন কর্মীকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। উড়োজাহাজ ভাড়ার (একপথ) জন্য শ্রমিকদের খরচ হবে ৩১ হাজার পাঁচশ টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিন হাজার পাঁচশ টাকা, কল্যাণ ফি ২৫০ টাকা, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প তিন শ’ টাকা, ভিসা ফি এক হাজার একশ টাকা, সার্ভিস চার্জ দুই হাজার টাকা, আয়কর দুই শ’ টাকা, ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং এক হাজার টাকা এবং বিবিধ খরচ হিসেবে ধরা হয়েছে ১৫০ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের (এটুআই) জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাঈমুজ্জামান মুক্তা জনকন্ঠকে বলেন, সারাদেশের ৬৪ জেলা থেকে মোট ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৬ আবেদন করেন। এখান থেকে কম্পিউটারে র্যান্ডম সিলেকশনের মাধ্যমে ১১ হাজার ৭৫৮ জনকে বাছাই করা হয়েছে। কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটুআই কাজ করে যাবে। বিভাগওয়ারী লটারীর ফল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখানে জেলা,উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কে নির্বাচিত হয়েছেন তার তথ্য সার্ভারে দেয়া হয়েছে। বরিশাল ৭৬২, খুলনা ১হাজার ২৭৯, সিলেট ৮৭৩, ঢাকা ৩হাজার ৬৪৬, রাজশাহী ১হাজার ৫৫১, চট্টগ্রাম ২হাজার ২৮৭ ও রংপুর বিভাগের ১ হাজার ৩৬১ কর্মী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে দেশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে কোন কর্মী নিবন্ধন করতে পারেননি।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ উঠেছে-সরকারী পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি বানচালের জন্য বায়রা নানাভাবে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার বাজারটি নষ্ট করার জন্য। বায়রার পক্ষ থেকে একটি পত্রিকার সম্পাদককে দিয়ে জনশক্তির ওপর কাজ করে এমন সাংবাদিকদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। বায়রা মালয়েশিয়াতেও নানাভাবে লোবি করে যাচ্ছে। কিন্তু মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ এতে রাজি হয়নি। মালয়েশিয়া ২০০৭ সালে নানা অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নিয়ে। এজেন্সিগুলো গণহারে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে শ্রমবাজারটিকে অস্থির করে তোলে। তখন মালয়েশিয়া সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার বাজারটি আবার উদ্ধার করে শর্তের বিনিময়ে। কর্মী নিয়োগ হবে সরকারী পর্যায়ে। আর এতে কর্মীপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ হবে ৪০ হাজার টাকা। আগে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
No comments