জাতীয় পরিচয়পত্রের বহুমাত্রিক ব্যবহার by ফখরুল ইসলাম

নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তবে এটা যেনতেন কোনো কিছু নয়। রীতিমতো স্মার্টকার্ড। বিশ্বব্যাংক এতে ১৯৫ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা জোগান দেবে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আটশ' কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়।
নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি আর জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সে সময় জাতীয় নির্বাচন দুই বছর প্রলম্বিত হয়।
নামে স্মাটকার্ড এই জাতীয় পরিচয়পত্রের বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এটিকে সত্যিকার অর্থে স্মার্টকার্ড বলা যাবে। এতে সর্বক্ষেত্রে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশা করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে এ সরকার যাত্রা শুরু করেছিল, তার স্বপ্নপথের দীর্ঘ অংশ পাড়ি দেওয়া হবে যদি প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। বার কোড সংবলিত এ কার্ড হতে হবে মেশিন রিডেবল। কার্ডগ্রহীতার সব তথ্য সেন্টাল ডাটা ব্যাংকে জমা থাকবে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন কর বিভাগ, ভূমি রেজিস্ট্রেশন বিভাগ, থানা, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট, পাসপোট বিভাগ, সব আগমন-বহির্গমন বিভাগসহ সংশিষ্ট বিভাগ এতে প্রয়োজনমতো ডাটা সংযুক্ত করবে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির নামে মামলা হলে থানা এ তথ্য ওই ব্যক্তির ডাটা ব্যাংকে তাৎক্ষণিকভাবে সংযুক্ত করবে। এতে সন্দেহজনক কেউ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে হুলিয়া থাকলে সে ইমিগ্রেশন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না। অন্যদিকে নিরপরাধ ব্যক্তি ইমিগ্রেশনে হয়রানির শিকার হবেন না। কোনো সম্পত্তি কেউ ক্রয় করলে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন বিভাগ এ তথ্য তার ডাটা ব্যাংকে যুক্ত করবে। এতে করে কেউ স্থাবর সম্পত্তি অর্জন করে সে তথ্য গোপন করতে পারবে না। আবার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে ব্যক্তির আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না আর আয়কর ঠিকভাবে পরিশোধ করছে কি-না তা তদারকি করা যাবে। ফলে কর বিভাগের কাজ একটু হলেও সহজ হবে। করদাতাও অযাচিত হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন। পাসপোর্ট বিভাগ থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবে না।
ভিজিএফ কার্ড ও বয়স্ক ভাতা প্রদানে সরকার এ ডাটা ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতে পারে। এতে সত্যিকার অর্থে যে ব্যক্তি ভিজিএফ সুবিধা বা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য, তাকে নির্বাচিত করা সহজতর হবে। নিজেকে ভূমিহীন কৃষক প্রমাণ করতে আর স্থানীয় নেতাদের দ্বারস্থ হতে হবে না কোনো নিঃস্ব ব্যক্তিকে।
এভাবে ডাটা আপডেট হওয়ার সুবাদে কার্ডগ্রহীতার নাগরিক অধিকারগুলো পাওয়া সহজ হবে। আবার অপরাধী নিজেকে আড়াল করে সমাজে অনেক নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবে না। ছিঁচকে অপরাধীর জন্য পরিস্থিতি যতটা কঠিন হবে সমাজের বড় রাঘববোয়ালদের জন্য পরিস্থিতি তার চেয়ে আরও কঠিন হবে। অবৈধ সম্পত্তি অর্জন ও অন্যান্য অপরাধের তথ্য গোপন করা সম্ভব হবে না। এতে করে অসৎ কাজের প্রবণতা কমে আসবে। অহেতুক সন্দেহের কারণে হয়রানির শিকার হতে হবে না যে কাউকে।
কোনো ব্যক্তি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুরস্কৃত হলে সে তথ্যও তার ডাটা ব্যাংকে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি আবহ তৈরি হবে। তবে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি। এটি না হলে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। কঠোরভাবে প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দিতে হবে। আইন করে জনগণকে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এত সব ভালো কাজ করতে গিয়ে যদি একজনেরও গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয় তবে পুরো বিষয়টি ব্যর্থ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।
fakhrul2011@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.