ইব্রাহিম হত্যা মামলা-সাংসদ সবই জানতেন by প্রশান্ত কর্মকার ও গোলাম মর্তুজা
ইব্রাহিমের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া, পানি দিয়ে রক্তসহ আলামত ধুয়ে ফেলা, পিস্তলের হাতের ছাপ নষ্ট, কাছাকাছি হাসপাতাল রেখে সদরঘাটের সুমনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া—এমন সব ঘটনাই জানতেন সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওন। ইব্রাহিম হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘ তদন্তের পর গত বুধবার সিআইডি এ অভিযোগপত্র দাখিল করে। ৬ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।
অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, সাংসদের নির্দেশনাতেই গাড়িচালক কামাল হোসেন বাদী হয়ে প্রকৃত ঘটনা গোপন করে অপমৃত্যুর মামলা করেন। এমনকি যে গাড়িতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, পুলিশ জব্দ করার আগে সাংসদ নিজে সেই গাড়ি ব্যবহার করেন। এই কামালকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে সাংসদ নুরুন্নবীর কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধেও, অথচ নুরুন্নবীকে করা হয়েছে সাক্ষী।
২০১০ সালের ১৩ আগস্ট সংসদ ভবন এলাকায় গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগের কর্মী মো. ইব্রাহিম। সিআইডির অভিযোগপত্রে এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন: সাংসদের গাড়িচালক কামাল হোসেন ওরফে কালা, দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন, সাংসদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোলাম মোস্তফা, যে গাড়িতে করে প্রথমে ইব্রাহিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তার মালিক মাজহারুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগী নূর হোসেন ও সোহেল। তাঁরা সবাই এর আগে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা এবং অন্য পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুলিবিদ্ধ লাশ গোপন ও আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগপত্র ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। অদৃশ্য শক্তির কারণে সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি বলে মনে করেন তিনি। সাংসদের সামনে মামলার আলামত নষ্ট করা এবং হত্যা জেনেও অপমৃত্যুর মামলা করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
আলামত নষ্ট: অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার পর চালক কামাল হোসেনকে কোথাও না পেয়ে সাংসদ নিজে গাড়ি চালান। সাংসদের পাশে বসেন মাজহারুল ইসলাম (আসামি)। মাঝের সিটে বসেন দোলোয়ারসহ অন্যরা। সাংসদ নুরুন্নবী তাঁদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, পিস্তলটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়ার সময় ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হন। সাংসদের সামনেই আসামিরা পিস্তলটি নাড়াচাড়া করে হত্যাকারীর আঙুলের ছাপ বিনষ্ট করে ফেলেন। তখন সাংসদ পিস্তলটি যথাস্থানে রেখে দিতে বলেন। তাঁর নির্দেশে চালক কামালকে ফোন করেন দেলোয়ার। দেলোয়ারের ফোন থেকে কামালের সঙ্গে কথা বলেন সাংসদ। কাকরাইল মোড়ে পৌঁছে সাংসদ মাজহারুল, সোহেল ও নূর হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। দেলোয়ার ও গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে তিনি রামপুরায় যান এবং চালক কামালকে গাড়িতে তোলেন। সাংসদ তাঁদের নিয়ে আবারও কাকরাইল মোড়ে যান। সেখানে কামালের হাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ দিয়ে সাংসদ এক যুবলীগ নেতার ব্যক্তিগত গাড়িতে ওঠেন।
পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ ও মামলা: অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাংসদ ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন, ইব্রাহিম মারা গেছেন। এরপর সাংসদ মতিঝিলে এক বন্ধুর অফিসে গিয়ে চালকের কাছ থেকে আবারও ঘটনা শুনে তেজগাঁও পুলিশের উপকমিশনারকে ফোনে জানান। উপকমিশনারের পরামর্শে সাংসদ চালক কামাল হোসেনকে গাড়িটি সংসদ ভবন চত্বরের ৬ নম্বর ব্লকে যথাস্থানে রেখে আসতে বলেন। সেখান থেকেই পুলিশ গাড়ি ও পিস্তলটি জব্দ করে।
অপমৃত্যু মামলার যথার্থতা: অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার মধ্যে। কিন্তু মৃত অবস্থায় রাত আটটার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০১০ সালের ১৩ আগস্ট ইব্রাহিম নিহত হওয়ার পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, ওই রাতে একটি মাইক্রোবাসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ট্রলিতে ইব্রাহিমের লাশ ফেলে পালিয়ে যান। তখনই বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম। তবে ওই রাতে জানা যায়নি, ইব্রাহিমকে কীভাবে, কারা এবং কেন হত্যা করল। শাহবাগ থানা পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়।
ঘটনার পরদিন জানা যায়, গাড়িচালক কামাল এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এতে বলা হয়, সাংসদ নুরুন্নবীর গাড়িতে পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় গুলি বের হয়ে ইব্রাহিম নিহত হন। ওই মামলায় পুলিশ সাংসদের পিস্তল ও গাড়ি জব্দ করে। এ রকম একটি ঘটনায় কী করে অপমৃত্যু মামলা হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সংবাদমাধ্যম।
পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, কামাল হোসেন ভয় দেখাতে গিয়ে ইব্রাহিমকে গুলি করেন। ইব্রাহিমের ভাই মাসুম আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি নালিশি মামলা করার পর গোয়েন্দা পুলিশ কামালকে আসামি করে পৃথক মামলা করে। তবে অভিযোগপত্রে এই মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
ভাইয়ের মামলা টেকেনি: ইব্রাহিমের ভাই মাসুম আহমেদ আদালতে সাংসদ নুরুন্নবীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলাটি করেন, তদন্তে সেটিও টেকেনি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণাদি না পাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ইব্রাহিম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’ একই সঙ্গে মাসুমের করা মামলা থেকে নুরুন্নবীসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে সিআইডি।
ইব্রাহিমের স্ত্রী রীনা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার যেটা জানার দরকার ছিল, সেটা আমি জেনেছি। আমি প্রথম থেকে বলে আসছিলাম, অপমৃত্যু নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমে যা বেরিয়ে আসবে, সেটাই মেনে নেব।’
২০১০ সালের ১৩ আগস্ট সংসদ ভবন এলাকায় গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগের কর্মী মো. ইব্রাহিম। সিআইডির অভিযোগপত্রে এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন: সাংসদের গাড়িচালক কামাল হোসেন ওরফে কালা, দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন, সাংসদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী গোলাম মোস্তফা, যে গাড়িতে করে প্রথমে ইব্রাহিমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তার মালিক মাজহারুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগী নূর হোসেন ও সোহেল। তাঁরা সবাই এর আগে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা এবং অন্য পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুলিবিদ্ধ লাশ গোপন ও আলামত নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগপত্র ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। অদৃশ্য শক্তির কারণে সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি বলে মনে করেন তিনি। সাংসদের সামনে মামলার আলামত নষ্ট করা এবং হত্যা জেনেও অপমৃত্যুর মামলা করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
আলামত নষ্ট: অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার পর চালক কামাল হোসেনকে কোথাও না পেয়ে সাংসদ নিজে গাড়ি চালান। সাংসদের পাশে বসেন মাজহারুল ইসলাম (আসামি)। মাঝের সিটে বসেন দোলোয়ারসহ অন্যরা। সাংসদ নুরুন্নবী তাঁদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, পিস্তলটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়ার সময় ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হন। সাংসদের সামনেই আসামিরা পিস্তলটি নাড়াচাড়া করে হত্যাকারীর আঙুলের ছাপ বিনষ্ট করে ফেলেন। তখন সাংসদ পিস্তলটি যথাস্থানে রেখে দিতে বলেন। তাঁর নির্দেশে চালক কামালকে ফোন করেন দেলোয়ার। দেলোয়ারের ফোন থেকে কামালের সঙ্গে কথা বলেন সাংসদ। কাকরাইল মোড়ে পৌঁছে সাংসদ মাজহারুল, সোহেল ও নূর হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। দেলোয়ার ও গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে তিনি রামপুরায় যান এবং চালক কামালকে গাড়িতে তোলেন। সাংসদ তাঁদের নিয়ে আবারও কাকরাইল মোড়ে যান। সেখানে কামালের হাতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ দিয়ে সাংসদ এক যুবলীগ নেতার ব্যক্তিগত গাড়িতে ওঠেন।
পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ ও মামলা: অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাংসদ ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন, ইব্রাহিম মারা গেছেন। এরপর সাংসদ মতিঝিলে এক বন্ধুর অফিসে গিয়ে চালকের কাছ থেকে আবারও ঘটনা শুনে তেজগাঁও পুলিশের উপকমিশনারকে ফোনে জানান। উপকমিশনারের পরামর্শে সাংসদ চালক কামাল হোসেনকে গাড়িটি সংসদ ভবন চত্বরের ৬ নম্বর ব্লকে যথাস্থানে রেখে আসতে বলেন। সেখান থেকেই পুলিশ গাড়ি ও পিস্তলটি জব্দ করে।
অপমৃত্যু মামলার যথার্থতা: অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার মধ্যে। কিন্তু মৃত অবস্থায় রাত আটটার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০১০ সালের ১৩ আগস্ট ইব্রাহিম নিহত হওয়ার পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, ওই রাতে একটি মাইক্রোবাসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ট্রলিতে ইব্রাহিমের লাশ ফেলে পালিয়ে যান। তখনই বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম। তবে ওই রাতে জানা যায়নি, ইব্রাহিমকে কীভাবে, কারা এবং কেন হত্যা করল। শাহবাগ থানা পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়।
ঘটনার পরদিন জানা যায়, গাড়িচালক কামাল এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এতে বলা হয়, সাংসদ নুরুন্নবীর গাড়িতে পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় গুলি বের হয়ে ইব্রাহিম নিহত হন। ওই মামলায় পুলিশ সাংসদের পিস্তল ও গাড়ি জব্দ করে। এ রকম একটি ঘটনায় কী করে অপমৃত্যু মামলা হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সংবাদমাধ্যম।
পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, কামাল হোসেন ভয় দেখাতে গিয়ে ইব্রাহিমকে গুলি করেন। ইব্রাহিমের ভাই মাসুম আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি নালিশি মামলা করার পর গোয়েন্দা পুলিশ কামালকে আসামি করে পৃথক মামলা করে। তবে অভিযোগপত্রে এই মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
ভাইয়ের মামলা টেকেনি: ইব্রাহিমের ভাই মাসুম আহমেদ আদালতে সাংসদ নুরুন্নবীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলাটি করেন, তদন্তে সেটিও টেকেনি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণাদি না পাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ইব্রাহিম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’ একই সঙ্গে মাসুমের করা মামলা থেকে নুরুন্নবীসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে সিআইডি।
ইব্রাহিমের স্ত্রী রীনা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার যেটা জানার দরকার ছিল, সেটা আমি জেনেছি। আমি প্রথম থেকে বলে আসছিলাম, অপমৃত্যু নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমে যা বেরিয়ে আসবে, সেটাই মেনে নেব।’
No comments