অবহেলায় ছিটমহলবাসী-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

ছিটমহলবাসীর আশার গুড়েবালি। শেখ হাসিনা-মনমোহন প্রটোকল সই হওয়ার পর আশায় বুক বেঁধেছিল ছিটমহলবাসী। ধারণা ছিল, নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থাকার দিন এবার ফুরাল, ৬৫ বছর ধরে পুষে রাখা সমস্যা উবে গেল। কিন্তু অবস্থা যে তিমিরে, সেই তিমিরেই। নাগরিক অধিকারবঞ্চিত ছিটমহলবাসীকে এখনো যাপন করতে হচ্ছে অনেকটা উদ্বাস্তুর জীবন।


ছিটমহল নিয়ে আজকের যে সমস্যা, এর শুরু সেই ১৯৪৭ সালে, দেশ বিভাগের সময়। এরপর ছিটমহল নিয়ে দুই দফা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু ছিটমহলবাসীর সমস্যা যায়নি। দেশ বিভাগের পর নেহরু-নূন চুক্তি কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি হয়েছে। ১৯৯২ সালের তিন বিঘা করিডর সমস্যা সমাধানের সময়ও ছিটমহল বিনিময়ের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু ছিটমহলবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ছিটমহলগুলো বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে এই বিষয়ক একটি প্রটোকলও সই হয়। কথা ছিল, প্রটোকল বাস্তবায়িত হলে ছিটমহলগুলো ভৌগোলিকভাবে যে দেশের মধ্যে আছে, সে দেশের অংশ হিসেবে যুক্ত হবে। আর এর বাসিন্দারাও ছিটমহলের মতো ওই দেশের নাগরিক হবে। বছরের পর বছর ধরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ছিটমহলবাসী এই প্রটোকল সই হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তাদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান আশা করেছিল। কিন্তু ছিটমহল বিনিময়ে চুক্তি সই হলেও তা বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় হতাশ হয় ছিটমহলবাসী। আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, তিনটি চুক্তিতে ছিটমহল বিনিময়ের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি গত বছর মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ছিটমহল বিনিময়বিষয়ক যে প্রটোকল সই হয়েছে, এর মূল চুক্তি (১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি) ভারত এখনো অনুমোদন করেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় প্রটোকল সই হওয়ায় নাগরিক অধিকারবঞ্চিত ছিটমহলবাসী আশা করেছিল, ভারতীয় পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে চুক্তি ও প্রটোকলটি অনুমোদন হলে বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু ওই অধিবেশনে এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা না হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহলের ৫০ হাজার অধিবাসী স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
ছিটমহল এখন বাংলাদেশ ও ভারত_উভয় দেশের জন্যই সমস্যা। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে জানা গেছে। বেড়ে গেছে অপরাধীদের আনাগোনা। অভিযোগ আছে, মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ছিটমহল। দিন দিন সমস্যা বেড়েই চলেছে। এ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে বাংলাদেশকেই। ভারতের দীর্ঘদিনের নিশ্চুপ থাকার পেছনে কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে কি না, তাও খুঁজে বের করতে হবে। উভয় দেশকে সমস্যা সমাধানে সমান আগ্রহী হতে হবে। কোনো এক দেশের অনাগ্রহ ছিটমহলের বাসিন্দাদের জীবনকে আরো সমস্যাসঙ্কুল করে তুলতে পারে। ছিটমহল সমস্যার আশু সমাধান তাই জরুরি। ছিটমহলের অধিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.