শীত মানেই ফ্যাশন by কাজী আনিস
এখন চলছে শীতের আমেজ। বলতে গেলে শীত পুরোপুরি জানান দিয়েছে তার উপস্থিতি। আর তাই গ্রামেগঞ্জে কি, আর শহরেই কি সবখানেই চলছে শীত নিয়ে মাতামাতি।
বিশেষজ্ঞদের মতে অন্য সময়ের তুলনায় আবহাওয়ার বেশ বড় পরিবর্তনের কারণে এবার শীত বেশ জাঁকালোভাবেই এসেছে। এতএব মোকাবেলা করার প্রস্তুতি আগে ভাগেই নেয়া হয়েছে। তবে এই গুছিয়ে নেয়া পোশাকে ছিল ফ্যাশনের ছোয়া। শীত মানেই যেন ফ্যাশন।বর্তমানে চলছে ফ্যাশনেবল ট্রেন্ড। শীতের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে পাশাপাশি স্টাইলটাও বেশ আমেজ নিয়ে করা যায়। শীত পোশাকের গৎবাধা ফরম্যাট ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়েছি আমরা। আউটফিটের ভিন্নতার বিবেচনায় এখন ছেলেমেয়ে যে কারও জন্যই শীত শুধু কাঁপুনি নয়, ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠারও অন্যতম উপলক্ষ। আর তখনই ফুটে উঠবে ব্যক্তির স্টাইল সেন্স।
যদিও আমাদের দেশীয় হাউসগুলোর প্রস্তুতিও কম নয়, তবুও তুলনামূলক ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন আউটলেটগুলোর তুলনায় আয়োজনে এবং তরুণদের চাহিদা মেটাতে এখনও বেশ পিছিয়েই রয়েছে। পথচলতি তরুণ-তরুণীদের পোশাক-আশাকের ধরন ও কর্মকা- দেখলেই বোঝা যাবে যে, সত্যিকার অর্থেই শীত বরণ এখন বেশ স্টাইলিশ এবং বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। তরুণ-তরুণীরা কোন ধরনের পোশাকের সঙ্গে কোন ধরনের শীতবস্ত্র বেছে নেবে, অথবা নিজেকে মানাবেÑএ বিষয়ে থেকে যায় তাদের বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব। ফ্যাশন ট্রেন্ডের এ যুগে একটু সচেতনভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিলেই বেশ হয়ে যায়। বর্তমানে বাজারে রয়েছে ফ্যাশনেবল টুপি, গলাবন্ধনী টি শাট, মাফলার, হাত ও পা মোজা। বর্তমানে মানুষ সৌন্দর্য সচেতন ও বেশ ফ্যাশনেবল । আর সেজন্য শীত মোকাবেলাতেও এসব শীত বস্ত্রও হয়েছে যুগের সাথে তাল রেখে সৌন্দর্যপূর্ণ ও রুচিবোধ সম্পন্ন। আর এ কারণেই এগুলো এখন বিভিন্ন রং ও ডিজাইনে এবং ভিন্ন ভিন্ন আকার ও আকৃতিতে পাওয়া যাচ্ছে।
শীতবস্ত্রগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবেই মাফলারের প্রসঙ্গ আসে। একই সঙ্গে গলা ও কানকে শীত থেকে সুরক্ষা দেয়, ফলে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এর চাহিদা ব্যাপক। তবে নারী ও পুরুষের জন্য মাফলারের পার্থক্য রয়েছে। মেয়েদের মাফলারগুলো সাধারণত রেশমি হয়ে থাকে, দৈর্ঘ্যও বেশ ছোট। বাজারে নতুন ধরনের মাফলার এসেছে, এগুলোকে সেমি-মাফলার বলা হয়। এর সুবিধা হচ্ছে মাফলার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি দোপাট্টা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ফলে এটি রয়েছে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে। এসব সেমি-মাফলারের বেশিরভাগই একরঙা। তাছাড়া পুতুল, প্রজাপতি, ফুল ও বিভিন্ন নকশা করা মাফলারও রয়েছে। এই সেমি-মাফলারের সঙ্গে পোশাক হিসেবে লং কামিজ ও ফতুয়া-ই ফ্যাশনেবল শীতবস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করবে কে কিভাবে ক্যারি করতে পছন্দ করে। আর উলেন টুপি ও মাঙ্কি টুপি তো রয়েছেই।
ট্রেন্ডি ফ্যাশন তো রয়েই গেছে। ছেলেমেয়ে উভয়েরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে হুডি জ্যাকেট, হুডি-টি শার্ট, হুডি সোয়েটার। প্রায় দু’তিন বছর ধরেই হুডি জ্যাকেট প্রচলন বেশ বেড়েছে। হিপহপ অথবা স্পোর্টিং লুকের জন্য পুল ওভার ও হুডি জ্যাকেট সংগ্রহে বরাবরই তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। এক কথায় বলা চলে হুডি-ই এখন যেন হট-ট্রেন্ড। আর তাই এখন বিভিন্ন ড্রেস হাউসগুলোও বিভিন্ন ডিজাইনে, বিভিন্ন মানের মোটা কাপড়ের সঙ্গে হুডি যোগ করছে। যেমন মোটা কাপড়ের পাঞ্জাবিতেই পাওয়া গেছে এর প্রচলন। মিলিটারি টাইপড জ্যাকেটেরও রয়েছে বেশ কাটতি। গত শীতে কয়েকটি ওয়েস্টার্ন ঘরানার ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউসগুলোর নিজস্ব তৈরি ও সংগ্রহ থাকলেও এবার যথারীতি অন্যান্য শপ, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজারে আমদানি ও দেশীয় শিল্পকারখানাগুলোতেও তৈরি হচ্ছে। আর মেয়েদের জন্য লং কার্ডিগান, পুলওভার, বড় গলার সোয়েটার তো আছেই। আবার উভয়ের জন্য পাওয়া যাচ্ছে সিøম ফিটেড সোয়েটার। অর্নামেন্টেশন ও মেশিন এমব্রয়ডারির মাধ্যমে এগুলোকে বেশ নান্দনিক ও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। জার্সি বা ট্রাকসুটও রয়েছে ফ্যাশনের তালিকায়। বিশেষ করে স্পোর্টসপ্রেমীদের কাছে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর বেশ কদর। ঢাকায় বিভিন্ন মার্কেটে এর ব্র্যান্ড প্রোডাক্টগুলোর পাশাপাশি রেপ্লিকা প্রোডাক্টও রয়েছে। সুবিধা এই যে, একই রকম, একই ডিজাইন, দাম বেশ কম। ব্লেজার তো রয়েই গেছে। ইদানীং ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পছন্দানুযায়ী ও মানানসই ব্লেজার পরছে। করপোরেট ড্রেস হিসেবে আলাদা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরিতে নানান কার্টের স্যুট, লংকোট, সিঙ্গেল জ্যাকেট প্রিন্স কোট আর ফরমাল ব্লেজার চলছে বেশ দারুণ ইমেজ নিয়ে। চলছে কাট ও ডিজাইনিংয়ের ভেরিয়েশন রীতিমতো পাল্লা দিয়ে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওভারকোটের চাহিদাও বেশ জমে উঠছে। নামী ব্র্যান্ডের বেশ কয়েকটি আউটলেটে পাওয়া যাচ্ছে উলেন ওভারকোট। ওয়েস্টকোটের বাজারটাও বোধহয় জমে উঠবে অল্প কিছু দিনেই। লেদার ও ডেনিস জ্যাকেটের দৌড় এখন একটু কমই, তবে বেশ জমে উঠতে শুরু করেছে বাইকার্স জ্যাকেটের চাহিদা। অন্যান্য ফ্যাশন হাউসগুলোও কিন্তু পিছিয়ে নেই। শীত মাথায় রেখে শাড়ি, ফতুয়া, টি-শার্ট, অথবা সালোয়ার সুট তৈরি করছে সেভাবেই। ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার করছে দোবিয়ান এ্যান্ডি সিল্ক, এ্যান্ডি কটন। আর দেশজ ফ্লেভারে শাল তো বাদ যাচ্ছেই না, নানান রঙে সুতি, খাদি, পশমি, উলেন শালগুলোতে কাজ করা হচ্ছে ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, মেশিন ও হাতের এমব্রয়ডারি ও সুতার কাজ। মোটিফ ও ডিজাইনেও রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। এসব পাবেন আজিজ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, এ্যাকট্যাসি, আড়ংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোতে। চাইলে মিরপুর বেনারশী পল্লী থেকেও বেছে নিতে পারেন পছন্দানুযায়ী রেডিমেট অথবা অর্ডারী পোশাক।
তাছাড়া এসবের সাথে পরার জন্য ব্র্যান্ড অথবা নন ব্র্যান্ড শার্ট, টি-শার্ট, এগুলোতেও রয়েছে বডি ফিট, ট্রেন্ডটাই হিট। আর সঙ্গে গলায় ঝুলবে নেকরেপ, স্টাইলিশ কমফোর্টার অথবা উলেন মাফলার। মেয়েরা পরছে ফেমিনিন কালারড মাফলার, সোয়েটারের নিচে বাহারি ডিজাইন ও কাটের বিভিন্ন টপস। তবে মাফলার বা কমফোর্টার বাছাইয়ে মেয়েদের চেয়ে ছেলেরাই বেশি সাহসী। ছেলেরা নটবাঁধা টাইপের নানা ধরনের ভাইব্র্যান্ড কালারের মাফলার গলায় ঝোলাতে মোটেই দ্বিধা করে না। কখনও আবার ছেলেমেয়ে উভয়েই পরছে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের স্কার্ফ। পাশাপাশি তরুণদের মাঝে শীত ও স্টাইল দুটোই মিলিয়ে আরবীয় স্কার্ফের প্রতিও রয়েছে ঝোঁক। তবে যেভাবে শীতের প্রভাব পড়ছে সেটা ভেবেই চাহিদা বাড়ছে ডেনিম, ক্রাশড ডেনিম, কার্গো বা ক্ল্যাসিক ফিট ট্রাউজার্সের প্রতি। মেয়েরাও সিøম ফিট ডেনিম বেছে নিচ্ছে। লং কার্ডিগান বা টপসের সঙ্গে এ ধরনের ডেনিম বেশ ভালই মানায়। আবার কর্পোরেট ড্রেসের জন্য ডেনিমের বদলে সামান্য মোটা গ্যাবার্ডিন বা কর্ড প্যান্ট হলে সোনায় সোহাগা।
এ তো গেল শুধু ড্রেসের কথা। জুতা তো এখনও বাকি। বর্তমানে তরুণ-তরুণী সবারই বেশিরভাগ পছন্দ বিভিন্নমানের কনভার্স ও স্নিকার্স। আর এই শীতে কমফোর্টেবল তো বটেই, ড্রেস আর লুকিংয়ে মানিয়ে গেলে তো কথাই নেই, ১০০-তে ১০০, পুরো স্টাইলিশ।
এবার শুধুই আপনার বেছে নেবার পালা। পছন্দানুযায়ী ও শরীর-স্বাস্থ্য অনুযায়ী বেছে নিন সব প্রডাক্ট ও এক্সেসরিজ। সেটাপ-গেটাপের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে টেনে দিন ম্যাচিং লাইনটাও। গড়ে নিন নিজস্ব স্টাইল। যেখানেই থাকুন কাছে বা দূরে, ঘরে বা বাইরে উপভোগ করুন শীত, স্টাইলিশ শীত।
মডেল : আরেফিন শুভ ও নায়লা
পোশাক : ইজি এবং ওটু
No comments