শেয়ারবাজার-রক্তক্ষরণ কে থামাবে?
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশায় আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কয়েকটি পুরনো প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং নতুন কিছু প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। কয়েক বছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি সন্তোষজনক এবং নতুন বছরের জন্য প্রাক্কলিত ৭.২ শতাংশ অর্জনও অসম্ভব নয় বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
তারপরও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরা তো দূরের কথা, কেন অব্যাহত দরপতন চলছে? কেন বাজারকে নিয়মের মধ্যে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না? এ বাজার ঝুঁকিপূর্ণ, অতএব নিজের বুঝ-বিবেচনা অনুযায়ী সাবধানতা ও সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করার গৎবাঁধা বুলি ও পরামর্শের মধ্যেই কি সরকারের দায় শেষ হয়ে যায়? বাজারের হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ একদল বিনিয়োগকারী বৃহস্পতিবার 'ধর্মঘট' করেছে। অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থার কারণে এর প্রভাব ব্যাপক না হলেও এদিনেই প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের তথ্য স্পষ্ট করে দেয়, অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটিতে কোনো কিছুই ঠিকভাবে চলছে না। বৃহস্পতিবার সমকালের শীর্ষ শিরোনাম ছিল 'ধীরে ধীরে রক্তশূন্য শেয়ারবাজার'। একই দিনে প্রথম আলো 'আগের জায়গায় যাচ্ছে শেয়ারবাজার' শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছে, প্রতিদিনই 'বিনিয়োগকারীদের রক্ষক্ষরণ হচ্ছে'। বাজারের অব্যাহত পতনে হতাশ অর্থমন্ত্রী আবুল আল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে 'দুষ্টু শেয়ারবাজার' মন্তব্য করেছেন, যা পড়তি বাজারে দিয়েছে নেতিবাচক ধাক্কা। তাহলে উত্তরণের উপায় কী? দেড় বছর আগে বড় ধরনের ধসের পর দ্রুত বাজার স্বাভাবিক হবে, এমন আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা কি কোনোভাবেই সম্ভব নয়? আমরা মনে করি, শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের পর বিশিষ্ট ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল তার সুপারিশ-পরামর্শেই ছিল এর সমাধান সূত্র। বৃহস্পতিবার সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও তিনি এর পুনরুক্তি করেছেন। বিশেষভাবে তিনি বলেছেন দুটি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা_ এক. পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিকে বাজারের ব্রোকার ও খেলোয়াড়দের প্রভাবমুক্ত করে আইন অনুযায়ী দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দুই. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেয়ারবাজারের ব্রোকারদের ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এই ডিমিউচুয়ালাইজেশন করার জন্য অর্থমন্ত্রী বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না। ব্রোকার ও বাজারের খেলোয়াড়দের চাপের কাছে সরকার কি অসহায়, এ প্রশ্ন কিন্তু সঙ্গতভাবেই আসছে। চরম অস্থির বাজারে এসইসি যে কাঙ্ক্ষিত দৃঢ়তা দেখাতে পারছে না, সেটাও সহজেই ধরা পড়ে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, পুঁজিবাজারে এত বড় বিপর্যয়ের পরও এজন্য প্রধান অভিযুক্তদের তেমন কাউকেই বিচারের জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বলতা কোথায়, সেটা লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কাছে বোধগম্য নয়। তবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকা উচিত নয় যে শেষ পর্যন্ত সব ক্ষোভ-রোষ যায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধেই। শুধু মতিঝিল-দিলকুশার রাজপথে তরুণদের প্রতিদিনের আগুন ঝরানো স্লোগানে নয়, দেশজুড়েই কিন্তু এর উত্তাপ অনুভব করা যায়। বিনিয়োগকারীদের নড়বড়ে আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার কি তাহলে কিছুই করবে না?
No comments