ওষুধের দাম-সম্প্রসারিত ও কার্যকর তালিকা চাই
সংসদে একটি সাদামাটা তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী_ কেবল ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের দাম সরকারিভাবে নির্ধারিত। বাকি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ উৎপাদনকারী কোম্পানির এখতিয়ারে। তালিকার বাইরে থাকা অবশিষ্টাংশ কত? সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু সাদামাটা হতে পারে না।
একটি হিসাবে দেখা গেছে, আড়াই শতাধিক ওষুধ কোম্পানি কমবেশি ২২শ' ব্রান্ডের ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে। এ থেকে ১১৭টি বাদ দিলে কয়টি থাকে? তার মানে, বিপুলসংখ্যক ওষুধের মূল্য নিছক কোম্পানির মর্জিনির্ভর। আর ভুক্তভোগীমাত্রই তার মাশুল সম্পর্কে জানেন। সাধারণ ওষুধ তো বটেই, তালিকাভুক্ত ওষুধের মূল্য নিয়েও চলছে যথেচ্ছাচার। বাক্সের গায়ে লেখা মূল্য কেটে কিংবা না কেটে বেশি দাম রাখা, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দাম হাঁকার মতো অপরাধমূলক তৎপরতা অহরহ চোখে পড়ে। হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতে এই প্রবণতা বেশি। বিপদগ্রস্ত রোগী কিংবা তার আত্মীয়স্বজনের পক্ষে অনিয়মের কাছে নতি স্বীকার ছাড়া কী করার থাকে? জীবন রক্ষার উপকরণ এভাবে মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত হতে দেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, সব ওষুধের মূল্যই সরকার নির্ধারিত হতে হবে। বর্তমানে ওষুধ প্রশাসন যেভাবে কোম্পানি নির্ধারিত দামে কেবল ভ্যাট বসিয়ে অনুমোদন দিয়ে দেয়, তা ঠুঁটো জগন্নাথের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ চিকিৎসাপ্রার্থী লাখো মানুষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক দণ্ড দূর করার জন্যই তাদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে। তালিকাটি করা হয়েছিল নব্বই দশকের গোড়ায়। গত দুই দশকে দেশে নতুন নতুন রোগের বিস্তার ঘটেছে; এসেছে নতুন ধরনের ওষুধপত্রও। নতুন পরিস্থিতিতে পুরনো তালিকা বহাল রাখা আর যাই হোক, জনবান্ধব হতে পারে না। প্রশাসনের উচিত হবে অবিলম্বে তালিকা সম্প্রসারণ করে তা দোকানে দোকানে টাঙিয়ে দেওয়া। থাকতে হবে নজরদারিও। উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের মধ্যে মুনাফার চেয়ে সেবার মনোভাব জাগ্রত করার কাজটি বিলম্বে হলেও শুরু করতে হবে। কর্তৃপক্ষের কড়া অবস্থান সে কাজটি সহজ করবে_ সন্দেহ নেই।
No comments