সরকার-প্রশাসনের কি কিছু করার ছিল না?-এবার ঘাঘট নদে বাঁধ

কুমিল্লার তিতাস নদীর দশা হয়েছে রংপুরের ঘাঘট নদের। বালু ব্যবসায়ীরা কেবল নদী থেকে লাগাতার বালু তুলেই থামেনি, নদীর মাঝবরাবর বাঁধ দিয়ে সেই বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক চলাচলের রাস্তাও বানিয়েছে। দেশের অনেক নদী-খাল-জলাশয়ের ওপর এ রকম বাঁধ দেওয়ার যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তার চলতি শিকার হলো ঘাঘট নদ।


প্রায় সবগুলো ঘটনার চরিত্র একই: স্থানীয় সরকারদলীয় নেতার প্রশ্রয়, প্রশাসনের উদাসীনতা এবং একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর বেপরোয়াপনা। এই তিনের চক্রে বিপন্ন বাংলাদেশের জলজীবন, প্রকৃতি ও পরিবেশ।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন ও জীবনযাত্রার অপরিহার্য অঙ্গ হলো এর প্রবাহিত জলদেহগুলো। সাময়িক অর্থনৈতিক লাভের খাতিরে এগুলোর যে পরিমাণ ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে, তাতে ইতিমধ্যেই দেশের পানিসম্পদ ও পানিপ্রবাহের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এ ধরনের কার্যকলাপ আইনত দণ্ডনীয় হলেও, সরকারের নির্বাহী বিভাগ, পরিবেশ-প্রশাসনের ভূমিকা হয় দায়সারা। জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে পরিবেশ বা পানির প্রশ্ন এ ভূখণ্ডের জীবনযাত্রা ও জীববৈচিত্র্যের টিকে থাকারই প্রশ্ন।
প্রকৃতির সম্পদের ওপর সারা দেশে অব্যাহত দখল-লুণ্ঠনের যে হিড়িক লেগেছে, তা জরুরিভাবে থামানোর দায়িত্ব সরকারেরই। তার জন্য সবার আগে চাই, দখলদারদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্রয় কঠোরভাবে বন্ধ করা। সেই সদিচ্ছা ও সংকল্প সরকারের আছে বলে মনে হয় না।
নদী-জলাশয়ের ওপর ধ্বংসাত্মক হস্তক্ষেপের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের ধরন ও নগরায়ণের সম্পর্ক আছে। নির্মাণ ও আবাসনশিল্পের বিরাট বিস্তার ঘটেছে দেশে। এর খোরাক হিসেবে দরকার বিপুল মাটি ও বালু। তাই এক নদীর মাটি পুড়িয়ে ইট হচ্ছে; আর বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে অন্য কোনো নদী বা জলাশয়।
পাশাপাশি অনেক খাল-বিল-জলাশয় জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের হাত থেকে ইজারার নামে দেওয়া হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পান্ডাদের। তারা জলজীবী জেলেদের মতো নদীর নিয়ম না মেনেই মাছ চাষ ও শিকার করে যাচ্ছে।
এককথায়, সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যের গ্রাসেই বিপন্ন হচ্ছে বাংলাদেশের জলদেহ।
সরকার মানুষের মতো প্রকৃতিরও জিম্মাদার ও রক্ষক। অবিলম্বে যদি সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নির্বিচার নদীলুণ্ঠন না থামায়, তাহলে সর্বনাশের আর শেষ থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.