দেশ : গণপ্রজাতান্ত্রিক না পুলিশ-শাসনতান্ত্রিক? by লুৎফর রহমান রনো
কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সব রকম চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার লক্ষ্য থাকা উচিত তার জনগণ। এটা শুধু কোনো নীতিকথা নয়, কোনো সরকারের নৈতিক দায়িত্ব নয় কিংবা দয়া-দাক্ষিণ্যের ব্যাপার নয়। জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে শারীরিক-মানসিক বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
এসব সাংবিধানিক দায়িত্ব। মোদ্দাকথা, একজন মানুষের নির্বিঘ্নে মানুষ হয়ে ওঠার, বাঁচার, আত্মবিকাশের সুযোগ তথা জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এ জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয় সংসদ সচল রাখা ও এমপি-মন্ত্রীদের ব্যয়বহুল জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে। গরিব দেশের সংসদ সদস্য-মন্ত্রীরা কেন যে গাড়ি-বাড়ি, ভাতা-বিলাসপূর্ণ জীবনের জন্য অত্যুৎসাহী, তা আমাদের বুদ্ধিতে ধরে না। জনগণ এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে চায় না। কিন্তু তারা জীবনের নিরাপত্তাসহ জীবিকার নিশ্চয়তা ও সুবিচার বা সুশাসনের মধ্যে বাঁচতে চায়। শান্তিশৃঙ্খলার জন্য পুলিশ-র্যাব-বিজিবি, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মন্ত্রী-সচিব- এই বিরাটাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ভার বহন করছে সাধারণ মানুষ। শ্রমের, করের টাকায় না পোষালে ঋণ করেও চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেই ঋণ সুদাসলে শোধ করে চলেছে জনম জনম ধরে বঞ্চনাগ্রস্ত জনগণ। তার বিনিময়ে কী পাচ্ছে জনতা? যাকে খুশি যখন-তখন যেকোনো জায়গা থেকে 'সাদা পোশাকের' লোকজন ধরে নিয়ে গুম করে ফেলে। খাকি পোশাকের পুলিশ বা কালো পোশাকের র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা কেউই খুঁজে বের করতে পারে না। একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা গুম হওয়ার তিন দিন পর ফিরে এলেন থানার ভেতর। যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারাই থানার ভেতরে এনে ছেড়ে দিয়ে গেল। অদ্ভুত এ দেশের আইনকানুন। মানুষ আইনশৃঙ্খলাযুক্ত সুশাসনের স্বাদ না পাক, অপরাধীরা কিন্তু একটা গূঢ় শৃঙ্খলার মধ্যেই তাদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তোপখানা রোডের বাড়িতে মা ও মেয়েকে বেঁধে মেয়েকে খুন করে গেল খুনিরা। গত কদিনে কয়েকটি ধর্ষণ ও নারীহত্যা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সব ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আর পুলিশ যথারীতি প্রমাণ করে চলেছে, তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপারগ। শুক্রবার আশুলিয়ায় ১১টি আবাসিক হোটেলে শ পাঁচেক জনতা আক্রমণ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। হোটেলে অবস্থানরত যৌনকর্মীদের ধরে এনে রাস্তায় মারপিট করেছে। পুলিশ আসেনি হোটেলের ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে এবং নিরীহ মেয়েদের রক্ষা করতে। পুলিশ হিংস্র হয়ে ওঠে মিছিলের ওপর। শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর হামলা করে মেরে ফেলে বৃদ্ধ শিক্ষককে।
পরিকল্পিতভাবে পুলিশ আক্রমণ করে সাংবাদিকদের। অথচ জনগণের সম্পদ ও নিরীহ মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষও আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর আস্থা রাখছে না। নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন আগের চেয়ে কমেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো হয়েছে পুলিশ। এসব কথা বলছেন রাষ্ট্রচালকরা! আর এ জন্য পুলিশ নারী কয়েদিদের ধর্ষণ করে। কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী তরুণীর ওপর পাশব বাসনায় চড়াও হয়। অথচ রাজধানীতে আলোচিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের একটিরও অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারেনি। পারেনি এ কারণে, পুলিশকে অপরাধী শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার না করায়, তার জন্য কোনো তাগিদ, ব্যর্থতার জবাবদিহি করতে হয়নি বলে। এই যে শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি, এর জন্য কেবল দায়ী সরকারি উদাসীনতা কিংবা অপরিণামদর্শিতা।
শনিবার ৯ জুন সিলেটে দাদি ও নাতনিকে বাসায় ঢুকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। ছয় বছরের অবুঝ শিশু সাবিহাও নিজের বাড়িতে নিরাপদ নয়। দেখা যাচ্ছে, সাগর-রুনিকে বেডরুমে খুন করার পর বাসায় ঢুকে খুন করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তার কারণ, সমাজ গবেষক বা অপরাধ বিজ্ঞান কী বলবে জানি না।
তবে সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তি পাওয়ার ভয় যদি না থাকে আইনের শৈথিল্য বা অপপ্রয়োগের কারণে, তাহলে অপরাধ বৃদ্ধি পায়। পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পায়ে ঠেলে দিয়ে তারা কী মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তার উদাহরণ রবিবার নরসিংদীর জজ আদালতে দেখা গেছে। এবার নির্যাতিত হয়েছেন পুলিশের হাতে একজন বিচারক। পুলিশের দায়িত্ব কী, আর পুলিশ করছে কী! তারা নিজেরাই অপরাধ করে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের বেপরোয়া হতে সহায়তা করছে। প্রশ্ন হলো, এই পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের রাজত্বে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?
লেখক : সাংবাদিক
ronokk1969@gmail.com
পরিকল্পিতভাবে পুলিশ আক্রমণ করে সাংবাদিকদের। অথচ জনগণের সম্পদ ও নিরীহ মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষও আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর আস্থা রাখছে না। নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন আগের চেয়ে কমেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো হয়েছে পুলিশ। এসব কথা বলছেন রাষ্ট্রচালকরা! আর এ জন্য পুলিশ নারী কয়েদিদের ধর্ষণ করে। কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী তরুণীর ওপর পাশব বাসনায় চড়াও হয়। অথচ রাজধানীতে আলোচিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের একটিরও অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারেনি। পারেনি এ কারণে, পুলিশকে অপরাধী শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার না করায়, তার জন্য কোনো তাগিদ, ব্যর্থতার জবাবদিহি করতে হয়নি বলে। এই যে শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি, এর জন্য কেবল দায়ী সরকারি উদাসীনতা কিংবা অপরিণামদর্শিতা।
শনিবার ৯ জুন সিলেটে দাদি ও নাতনিকে বাসায় ঢুকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। ছয় বছরের অবুঝ শিশু সাবিহাও নিজের বাড়িতে নিরাপদ নয়। দেখা যাচ্ছে, সাগর-রুনিকে বেডরুমে খুন করার পর বাসায় ঢুকে খুন করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তার কারণ, সমাজ গবেষক বা অপরাধ বিজ্ঞান কী বলবে জানি না।
তবে সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তি পাওয়ার ভয় যদি না থাকে আইনের শৈথিল্য বা অপপ্রয়োগের কারণে, তাহলে অপরাধ বৃদ্ধি পায়। পুলিশের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পায়ে ঠেলে দিয়ে তারা কী মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তার উদাহরণ রবিবার নরসিংদীর জজ আদালতে দেখা গেছে। এবার নির্যাতিত হয়েছেন পুলিশের হাতে একজন বিচারক। পুলিশের দায়িত্ব কী, আর পুলিশ করছে কী! তারা নিজেরাই অপরাধ করে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের বেপরোয়া হতে সহায়তা করছে। প্রশ্ন হলো, এই পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের রাজত্বে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?
লেখক : সাংবাদিক
ronokk1969@gmail.com
No comments