মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় তল্লাশি, রিজভী গ্রেপ্তার-মামলা-গ্রেপ্তার, বিএনপি নেতারা আত্মগোপনে

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পর ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। গত রাতে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগের রাতে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার বাসায় তল্লাশি করে পুলিশ। এ অবস্থায় চাপে পড়েছে বিএনপি, অনেক নেতাই গা-ঢাকা দিয়েছেন।


গতকাল সোমবার হরতাল চলাকালে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা যায়নি। রাজপথে ছিলেন না ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। গতকাল ভোরে তাঁর বাসায় তল্লাশি করে পুলিশ। এরপর সারা দিন তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেননি।
বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায় তল্লাশি করে পুলিশ। তবে তার আগেই তিনি পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের বাসায়ও যায় পুলিশ। রোববার রাতে বিএনপির নেতা কামরুজ্জামান রতন ও মহানগর মহিলা দলের নেত্রী রেহানা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হঠাৎ সরকারের কঠোর অবস্থানে টানা কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে এসেছে বিএনপি। তবে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ঢাকায় আসার কারণে কর্মসূচি শিথিল করা হয়েছে, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে নয়।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহে পাঁচ দিন হরতাল পালনের পর বিক্ষোভ-সমাবেশ দিয়েছে দলটি। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাঁদের কাউকে প্রকাশ্যে বা কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন গা-ঢাকা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন মধ্যম সারির নেতা-কর্মীরা। ফলে অন্যরা হরতালের সমর্থনে মাঠে নামতে সাহস পাননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, হঠাৎ করেই সরকারের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে দলের নেতারা কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় অন্য নেতা-কর্মীদের মনোবল নষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এ অবস্থা দীর্ঘ হবে না। শিগগিরই চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে।
গ্রেপ্তারের ভয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতালের সারাটা সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় আগলে রাখেন। বিকেল পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জন্য। শেষ পর্যন্ত মহাসচিবকে না পেয়ে হরতাল-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি। রাতে কাকরাইল এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
হরতালের দিন ভোর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থাকেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। গতকাল একবারের জন্যও তিনি আসেননি। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে শুধু মওদুদ আহমদ বেলা তিনটার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান। মহাসচিব কোথায়, তিনিও জানাতে পারেননি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ ঘিরে রেখেছে। তা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই তিনি কোথাও যাননি। তিনি বলেন, মামলার ভয় দিয়ে বিএনপির আন্দোলন থামানো যাবে না। কঠোর আন্দোলন চলবেই।
ফখরুল কোথায়, দিনভর আলোচনা: ভোর রাতে মির্জা ফখরুলের উত্তরার বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে ওই সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। এরপর দিনভর আলোচনা ছিল মির্জা ফখরুল কোথায়? তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে? এমন প্রশ্ন ছিল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ ছিল। তবে মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিগত সহকারী ও রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা প্রথম আলোকে জানান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ভালো আছেন। তিনি গ্রেপ্তার বা আটক হননি। তবে কোথায় আছেন, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
অন্য সময় হরতালে গণমাধ্যমে সরব থাকেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। নিজের অবস্থান সম্পর্কেও ধারণা দেননি। জানা গেছে, রোববার রাতে তিনি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে একটি নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন। সকালে কার্যালয়ে যাবেন এমন কথাই ছিল। কিন্তু তাঁর বাসায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আতঙ্কে তিনি সকালে কার্যালয়ে না গিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসায় যান। এরপর জামিনের চেষ্টা করেন দলীয় আইনজীবীদের দিয়ে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জামিনের জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠনে তাঁর আইনজীবীদের প্রস্তাব গ্রহণ না করে নিয়মিত বেঞ্চে যেতে বলেন।

No comments

Powered by Blogger.