আমেরিকায় বাড়ছে মসজিদ by জহির উদ্দিন বাবর

নাইন-ইলেভেনের পর বিশ্বে মুসলমানদের সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টা কম হয়নি। এত বাধা-বিপত্তি ও চাপ সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অগ্রগতি অব্যাহত আছে।
এমনকি নাইন-ইলেভেনের পর আমেরিকায়ও মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য সেখানে ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদ নির্মাণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
২০০০ সালে আমেরিকায় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার ছিল ১২০৯টি। আর বর্তমানে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০৬-এ। এমনকি মন্টানা, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাইরের জনসংখ্যা শতকরা ১ ভাগেরও কম, সেখানেও দুটি মসজিদ রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২৫৭টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৪৬টি এবং টেক্সাসে ১৬৬টি মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। আমেরিকার বড় বড় শহরগুলোতে নির্মিত হচ্ছে সুরম্য মসজিদ। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। ২০১০ সালে তা বেড়ে ২৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমানে আমেরিকায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মুসলমান শুক্রবার মসজিদে যান। ৪০ ভাগ আমেরিকান মুসলমান নিয়মিত মসজিদে যান। শুধু পুরুষই নয়, নারীরাও মসজিদে যান। প্রতিটি মসজিদেই নারীদের জন্য নামাজের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। আমেরিকার মসজিদগুলোর ইমামরাও ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তারা যে কোনো ধর্মীয় সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে এখানকার মুসলমানরা দিন দিন মসজিদমুখী হচ্ছেন। বর্তমানে আমেরিকায় ইসলাম সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন ধর্ম। এ ছাড়া মুসলমানরাও আস্তে আস্তে নিজেদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন। ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কে যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, তা নিরসনের চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তরুণরা ইন্টারনেটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার মাত্র ১ ভাগ মুসলমান। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের টার্গেটে পরিণত হন মুসলমানরা। এভাবে আমেরিকার মুসলমানদের নানাভাবে নিগৃহীতও হতে হয়েছে। অবশ্য এই প্রতিকূলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের প্রতি মমতা ও দরদ অনেক গুণ বেড়ে যায়। ইসলামী অনুশাসনগুলো তারা আগের চেয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করতে থাকেন।
আমেরিকায় বসবাসরত মুসলমানের মধ্যে বিরাটসংখ্যক তরুণ নিয়মিত মসজিদে যান। এসব তরুণ সম্পর্কে কোনো কোনো গণমাধ্যম অপপ্রচার চালাচ্ছে_ তারা মৌলবাদ ও চরম পন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু দেশটির শতকরা ৮৭ ভাগ মুসলিম নেতা ও ইমাম তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, মুসলিম তরুণদের মধ্যে চরম পন্থা বাড়ছে না।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ মুসলমান হচ্ছেন এবং ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কারণ তারা এটা বুঝতে পেরেছেন, কয়েকটি উগ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসলামকে এক করে দেখানোর যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে; বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। ইসলামে আল্লাহর ওপর নির্ভরতা, এক খোদার প্রতি আনুগত্য, যে কোনো কুসংস্কার থেকে দূরে থাকা, মানবীয় মূল্যবোধ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া_ সর্বোপরি পবিত্র কোরআন শরিফে আজ পর্যন্ত কোনো বিকৃতি না ঘটায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্রমেই ইসলামের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্রিটেনে একদিন মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। শুধু ব্রিটেন, আমেরিকা নয়; সারাবিশ্বই একদিন ইসলামের আদর্শের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে_ এমনটাই প্রত্যাশা প্রত্যেক মুমিনের।
zahirbabor@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.