বাজেট অধিবেশনে উত্তাপ তবু আশা বেঁধে রাখি
গত দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয়
সংসদে কোনো বিরোধী দল এবারই প্রথম বাজেট অধিবেশনে যোগ দিল। সে জন্য অবশ্য
বিরোধী দল বিএনপি সংবাদমাধ্যম এবং সুধী সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনেই নতুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও বিরোধী
দলের এ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে দেওয়া
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় প্রবীণ
পার্লামেন্টারিয়ান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যে প্রথম দিনই উত্তাপ
পায় অধিবেশন এবং আকস্মিক ওয়াকআউটে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। পরদিন তারা আবার
ফিরে এলে স্বস্তি নেমে আসে। দ্বিতীয় দিনটি শান্ত থাকলেও বাজেট অধিবেশনের
তৃতীয় দিনে (বুধবার) দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের
বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। একই দিনে দু'দফা ওয়াকআউট। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া ও
সাংসদ মওদুদ আহমদকে নিয়ে যে বক্তব্য দেন, তার প্রতিবাদে প্রথম দফা
ওয়াকআউট। দ্বিতীয় দফা সন্ধ্যার পর। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পয়েন্ট অব
অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর ট্রেজারি বেঞ্চের সাংসদ তোফায়েল আহমেদ
তার জবাব দিলে আবারও উত্তেজনা। ব্যারিস্টার মওদুদ আবার তার জবাব দিতে চান
পয়েন্ট অব অর্ডারে। কিন্তু বিধিসম্মত নয় বলে স্পিকার তাকে বসতে অনুরোধ
করেন। রাতে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে পয়েন্ট অব
অর্ডারে বক্তব্য দিতে না পারার প্রতিবাদে বিএনপি সদস্যরা দ্বিতীয় দফা
ওয়াকআউট করেন। ঘটনার বিশদ বিবরণ এ কারণে যে, জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে
যোগদান করে বিএনপি যে আশার সঞ্চার করেছিল, তাতে হতাশা ছড়াবার মতো বাস্তবতা
আদৌ ছিল কি-না, তা পাঠকসাধারণের উপলব্ধির জন্যই। দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা
হচ্ছে গত দুই দশকে যখন যে দল বিরোধী অবস্থানে ছিল, তারাই সংসদ বর্জন করেছে।
বিএনপি সংসদের ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে যোগদানের বাধ্যবাধকতায় হোক, অথবা অন্য
যে কারণেই হোক, বাজেট অধিবেশনে যোগ দিয়েছে, সেটাই বড় আনন্দের কথা। এ দেশের
সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকারের পরিচালনায় এবারের বাজেট
অধিবেশনে অনেক ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে। বিরোধী দলের সাংসদদের তীব্র সমালোচনা
সত্ত্বেও ট্রেজারি বেঞ্চ শান্ত ছিল, যা অতীতে দেখা যায়নি। সংসদ পরিচালনায়
নবনিযুক্ত স্পিকারও বুদ্ধিমত্তায় নির্মোহ, নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছেন।
উত্তেজনা যাতে না ছড়ায় সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেছেন। তবু অর্থমন্ত্রীর বাজেট
বক্তৃতার দিন বিরোধী দল সংসদে আসেনি। তারা থাকলে বাজেট অধিবেশন আরও প্রাণ
পেত। গত দু'বছরে বিএনপি সংসদে না গিয়েও বিকল্প বাজেট দিয়েছে। এবার দেয়নি।
হয়তো সংসদে থাকার কারণেই। আমরা আশা করতে চাই, আগামী রোববার বাজেটের ওপর
বিরোধী দল পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রণীত বাজেট সংশোধনে দিকনির্দেশক
বক্তব্য দিয়ে বাজেট অধিবেশনে যোগদান অর্থবহ করে তুলবে। প্রধানমন্ত্রীর
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন করতে পারতেন তারা, বাজেট বক্তৃতায় উপস্থিত থাকতে
পারতেন। তাতে সৌজন্য এবং সংসদের সৌন্দর্য বিকশিত হতো। আশা করি, বাজেট
নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে সেই অতৃপ্তি বিরোধী দল দূর করবে। জনগণের অধিকতর
কল্যাণে কী কী সংশোধনী আনা যায়, তারা জানাবেন। ট্রেজারি বেঞ্চের কাছ থেকেও
এ ব্যাপারে সহায়ক অগ্রণী ভূমিকা প্রত্যাশিত। এত হতাশার মধ্যেও আমরা আশার
আলো দেখতে চাই।
No comments