বাজেট বিশ্লেষণ-জনগণকে খুশি করার বাজেট তবে বাস্তবায়ন কঠিন by ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
প্রস্তাবিত বাজেটটি পঞ্চবার্ষিক
পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিগত বছরের বাজেটের ধারাবাহিকতায় করা হয়েছে। এ
বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এটি বেশ বড় আকারের বাজেট। বিগত যেকোনো সময়ের
তুলনায় বড় আকারের।
দুই লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার বাজেট। এই
বাজেট নিঃসন্দেহে জনগণের তুষ্টির জন্য করা হয়েছে। সরকার যেভাবে দিন দিন
বাজেট বাড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে জনগণ ভাববে সরকারের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ছে।
সরকার উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। তবে এর মধ্যে কিছুটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে,
যেটা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও স্বীকার করেছেন। বড় বাজেটে আপত্তি
নেই, উচ্চাভিলাষী হলে আপত্তি নেই, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলেও আপত্তি নেই।
তবে সেটা জনকল্যাণমুখী কি না, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এখানে দেখার বিষয়,
বাজেটের ধারাবাহিকতা অন্যান্য বছরের সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে কি না।
আমরা বরাবরই দেখে আসছি, প্রতিবছর যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটারই পুরো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। গতবারের বাজেটেও কিন্তু অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কর্মসংস্থানের একটি লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল; ঘরে ঘরে কাজ দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। এই প্রতিশ্রুতিগুলো সন্তোষজনকভাবে পালন করা হয়নি। এবার যে লক্ষ্যগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো যদি পূরণ না হয়, তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি হবে। তখন মানুষ এ রকম বাজেটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে।
গত দুই দশকে আমাদের ধারাবাহিক অর্জনগুলো ভালো ছিল। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের আশপাশে। আমি মনে করি, এটা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো। এখন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ভালো রয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে। এগুলোকে সুসংহত করে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যেত তাহলে অনেক দ্রুত আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে আটকে থাকত না। ৬.৫ বা ৬.৮-এ চলে আসত। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ না হয়ে সাড়ে ৭-এ নেমে আসত। আমাদের মূল ব্যর্থতা হলো, সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করার যে সুযোগটা এসেছিল, তা আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। কিছুটা পেরেছি, পুরোপুরি নয়। এ কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেল।
চ্যালেঞ্জগুলো হলো- বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের হার অনেক কম। এ কারণে কর্মসংস্থান কমে গেছে। প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। কারণ বেসরকারি খাতে উন্নয়ন কম হলে প্রবৃদ্ধি কমে যায়।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে আবারও প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ ধরা হয়েছে। শিল্প খাত ও সেবা খাতসহ অন্য খাতগুলোতে যে খুব দ্রুত গতিসঞ্চার হবে এটা আশা করা একটু কঠিন। অতএব এ বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি একবারে ৬ থেকে ৭.২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। আবার দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও আছে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমার কি কোনো সুযোগ আছে? গ্যাস, বিদ্যুৎ খরচ বেশি। পরিবহন ব্যয় বেশি। এ ব্যয়গুলো বেশি থাকলে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এখানে বিপণন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্যা আছে। ফড়িয়াদের দখলদারিত্ব, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য আছে। সরকারের ভালো তদারকি নেই বাজারে। অতএব খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমার সুযোগ দেখছি না এবং গড় মূল্যস্ফীতি ৭-এ নিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হবে বলে আমার মনে হয়।
সরকার এ দুটি লক্ষ্যমাত্রা যদি পূরণ করতে না পারে তাহলে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা কঠিন হবে। জনগণ যে কষ্টের মধ্যে আছে তা লাঘব করা সম্ভব হবে না।
এবার আসা যাক বরাদ্দের দিকে। এত বিশাল বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র উন্নয়ন বাজেট। এতেই বোঝা যায়, উন্নয়ন বাজেটে গুরুত্ব কম দেওয়া হচ্ছে। তাও দেখা যাবে যে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। এক হাজারের বেশি প্রকল্পের জন্য দক্ষ পরিচালক নির্বাচন; সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এ কাজটি করা খুবই কঠিন হবে। এখানে অনেক সমস্যা আছে। আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) একটি বড় অংশ দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য। একটি মাত্র প্রকল্পে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ! পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করাটা আমার মতে যুক্তিসংগত নয়। এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়ন অনেক কমে যাবে। এই খাতগুলো কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখে এবং সাধারণের জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব ফেলে। এটা তো কেবল এক বছরের জন্য নয়, পরপর আরো কয়েক বছর ধরে চলতে থাকবে। এর তাৎক্ষণিক সুবিধা তো পাবই না, বরং বিরাট একটি আর্থিক বোঝা আমাদের কাঁধে এসে পড়বে।
স্থানীয় সরকারেও অনেক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অথচ সত্যিকারের স্থানীয় সরকার বলতে কিছু নেই। কোনো শক্তিশালী ইউনিয়ন পরিষদ নেই। উপজেলা পরিষদও দুর্বল। জেলা পরিষদও নামমাত্র। তার মানে আমলাতান্ত্রিক খরচ বাড়বে সরকারের। এই খরচগুলো এমন খাতে হবে সেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না, স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ এখানেও রাজনীতিকরণ চলে আসবে।
কর ব্যবস্থাপনা বা আয়ের বিষয়েও দেখেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাও কতটুকু অর্জন সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বর্তমান সময়ের আমদানি-রপ্তানি চিত্রে এটা স্পষ্ট যে আমদানি কমে যাচ্ছে, রপ্তানিও কমে যাচ্ছে। অতএব এর শুল্কও কমে যাবে। ভ্যাট-ট্যাক্স কোথা থেকে কী পরিমাণ আসবে তাও দেখতে হবে।
এনবিআর বহির্ভূত আয় একটু বাড়তে পারে, তবে সেটাই বা আর কত হবে? যে বিশাল ঘাটতি বাজেট ধরা হয়েছে, সেটা আসার কথা বৈদেশিক সাহায্য, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও দেশীয় সঞ্চয় থেকে। কিন্তু এই খাতগুলোর বর্তমান ধারা থেকে দেখা যাচ্ছে এ খাতের অবস্থাও ভালো না। অবকাঠামো তেমন ভালো নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে।
বিদেশি সাহায্যের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের গুণগত মান ভালো না হলে বা সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে দাতারা চিন্তায় পড়ে যাবে। আর দেশে যে সঞ্চয় হবে, সেটা কিছুটা কর অব্যাহতি দিলে বাড়তে পারে।
মোদ্দা কথা হলো, আয়ের দিক থেকে কিছু কর অব্যাহতি হচ্ছে আর কিছু কর বাড়ানো হচ্ছে। এতে রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে কি না অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শেষ কথা হলো, সরকারের আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে হবে। ব্যয়টাকে যুক্তিসংগত করা, বিশেষ করে যে সব ব্যয় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ বয়ে আনবে না, তা কমাতে হবে। নইলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
আমরা বরাবরই দেখে আসছি, প্রতিবছর যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে, এর কোনোটারই পুরো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। গতবারের বাজেটেও কিন্তু অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কর্মসংস্থানের একটি লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল; ঘরে ঘরে কাজ দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। এই প্রতিশ্রুতিগুলো সন্তোষজনকভাবে পালন করা হয়নি। এবার যে লক্ষ্যগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো যদি পূরণ না হয়, তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি হবে। তখন মানুষ এ রকম বাজেটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তাদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে।
গত দুই দশকে আমাদের ধারাবাহিক অর্জনগুলো ভালো ছিল। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের আশপাশে। আমি মনে করি, এটা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো। এখন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ভালো রয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে। এগুলোকে সুসংহত করে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যেত তাহলে অনেক দ্রুত আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে আটকে থাকত না। ৬.৫ বা ৬.৮-এ চলে আসত। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ না হয়ে সাড়ে ৭-এ নেমে আসত। আমাদের মূল ব্যর্থতা হলো, সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করার যে সুযোগটা এসেছিল, তা আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। কিছুটা পেরেছি, পুরোপুরি নয়। এ কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেল।
চ্যালেঞ্জগুলো হলো- বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের হার অনেক কম। এ কারণে কর্মসংস্থান কমে গেছে। প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। কারণ বেসরকারি খাতে উন্নয়ন কম হলে প্রবৃদ্ধি কমে যায়।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে আবারও প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ ধরা হয়েছে। শিল্প খাত ও সেবা খাতসহ অন্য খাতগুলোতে যে খুব দ্রুত গতিসঞ্চার হবে এটা আশা করা একটু কঠিন। অতএব এ বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি একবারে ৬ থেকে ৭.২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। আবার দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও আছে।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমার কি কোনো সুযোগ আছে? গ্যাস, বিদ্যুৎ খরচ বেশি। পরিবহন ব্যয় বেশি। এ ব্যয়গুলো বেশি থাকলে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এখানে বিপণন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্যা আছে। ফড়িয়াদের দখলদারিত্ব, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য আছে। সরকারের ভালো তদারকি নেই বাজারে। অতএব খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমার সুযোগ দেখছি না এবং গড় মূল্যস্ফীতি ৭-এ নিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হবে বলে আমার মনে হয়।
সরকার এ দুটি লক্ষ্যমাত্রা যদি পূরণ করতে না পারে তাহলে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা কঠিন হবে। জনগণ যে কষ্টের মধ্যে আছে তা লাঘব করা সম্ভব হবে না।
এবার আসা যাক বরাদ্দের দিকে। এত বিশাল বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র উন্নয়ন বাজেট। এতেই বোঝা যায়, উন্নয়ন বাজেটে গুরুত্ব কম দেওয়া হচ্ছে। তাও দেখা যাবে যে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে না। এক হাজারের বেশি প্রকল্পের জন্য দক্ষ পরিচালক নির্বাচন; সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এ কাজটি করা খুবই কঠিন হবে। এখানে অনেক সমস্যা আছে। আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) একটি বড় অংশ দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতুর জন্য। একটি মাত্র প্রকল্পে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ! পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করাটা আমার মতে যুক্তিসংগত নয়। এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়ন অনেক কমে যাবে। এই খাতগুলো কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখে এবং সাধারণের জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব ফেলে। এটা তো কেবল এক বছরের জন্য নয়, পরপর আরো কয়েক বছর ধরে চলতে থাকবে। এর তাৎক্ষণিক সুবিধা তো পাবই না, বরং বিরাট একটি আর্থিক বোঝা আমাদের কাঁধে এসে পড়বে।
স্থানীয় সরকারেও অনেক টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অথচ সত্যিকারের স্থানীয় সরকার বলতে কিছু নেই। কোনো শক্তিশালী ইউনিয়ন পরিষদ নেই। উপজেলা পরিষদও দুর্বল। জেলা পরিষদও নামমাত্র। তার মানে আমলাতান্ত্রিক খরচ বাড়বে সরকারের। এই খরচগুলো এমন খাতে হবে সেখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না, স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ এখানেও রাজনীতিকরণ চলে আসবে।
কর ব্যবস্থাপনা বা আয়ের বিষয়েও দেখেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাও কতটুকু অর্জন সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বর্তমান সময়ের আমদানি-রপ্তানি চিত্রে এটা স্পষ্ট যে আমদানি কমে যাচ্ছে, রপ্তানিও কমে যাচ্ছে। অতএব এর শুল্কও কমে যাবে। ভ্যাট-ট্যাক্স কোথা থেকে কী পরিমাণ আসবে তাও দেখতে হবে।
এনবিআর বহির্ভূত আয় একটু বাড়তে পারে, তবে সেটাই বা আর কত হবে? যে বিশাল ঘাটতি বাজেট ধরা হয়েছে, সেটা আসার কথা বৈদেশিক সাহায্য, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও দেশীয় সঞ্চয় থেকে। কিন্তু এই খাতগুলোর বর্তমান ধারা থেকে দেখা যাচ্ছে এ খাতের অবস্থাও ভালো না। অবকাঠামো তেমন ভালো নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে।
বিদেশি সাহায্যের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের গুণগত মান ভালো না হলে বা সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে দাতারা চিন্তায় পড়ে যাবে। আর দেশে যে সঞ্চয় হবে, সেটা কিছুটা কর অব্যাহতি দিলে বাড়তে পারে।
মোদ্দা কথা হলো, আয়ের দিক থেকে কিছু কর অব্যাহতি হচ্ছে আর কিছু কর বাড়ানো হচ্ছে। এতে রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে কি না অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শেষ কথা হলো, সরকারের আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে হবে। ব্যয়টাকে যুক্তিসংগত করা, বিশেষ করে যে সব ব্যয় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ বয়ে আনবে না, তা কমাতে হবে। নইলে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
No comments