জলকপাট উঠিয়ে নদীটির পুনর্জীবন ঘটান করতোয়া হত্যা



সরকারের ভুল পানি ব্যবস্থাপনার আরেকটি শিকার হলো করতোয়া নদী এবং এর পার্শ্ববর্তী জনপদ। ২৫ বছর আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য করতোয়া নদীতে জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণের পর থেকেই দিনে দিনে মরে গেছে নদীটি।
কী অদ্ভুত অথর্বতা, ২৫ বছর হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই নিল না পানি উন্নয়ন বোর্ড!
মহাভারতের বর্ণনায় করতোয়া একটি প্রাচীন ও পবিত্র নদী। এ নদীর দুই পারেই গড়ে উঠেছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা পুণ্ড্রনগর। প্রাচীন শ্রাবস্তী নগরও এই নদীর পারেই ছিল বলে অনুমান আছে। কেবল প্রাচীনতার কারণেই নয়, আধুনিক বগুড়া শহরের কারণেও নদীটি গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরবঙ্গে এখন করতোয়া নদীর চারটি ধারা দেখা যায়। এ রকমই দুটি ধারার সংযোগস্থলে গোবিন্দগঞ্জের খলসীতে ২৫ বছর আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে নির্মিত হয় জলকপাট। সেই থেকে জলকপাটের এক পাড়ের নদী জলভরা বহমান; অন্য পাড়ে শুষ্কপ্রায় নর্দমার আকার ধারণ করেছে। তাতে অবশ্য অনেকের সুবিধা হয়েছে। নদীর বুক শুকিয়ে আসায় নদীর জমি দখলে জেরবার হয়ে পড়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, জলকপাটই করতোয়ার মৃত্যুর কারণ। এ নিয়ে তারা কয়েক দফা চিঠিও দিয়েছে বগুড়া ও গাইবান্ধার জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছে দেওয়া বক্তব্যে বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ওই চিঠির ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই অবস্থা বগুড়া জেলা প্রশাসকেরও। ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নদী শুকিয়ে গেল, অথচ কারোরই কোনো ভাবান্তর না হওয়া খুবই হতাশাজনক।
নদী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি মত রয়েছে যে পানি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ভুল বাঁধ ও জলকাঠামো নির্মাণও নদীমৃত্যুর অন্যতম কারণ। করতোয়ার বেলায় এটাই ঘটেছে। এ বিষয়ে নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আঞ্চলিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বগুড়া ও গাইবান্ধার জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বই এখানে বেশি। ২৫ বছরের অবহেলার দায়ও তাদেরই নিতে হবে। করতোয়ার পুনর্জীবন এবং এর ওপর দখল-দূষণ প্রতিরোধে প্রকল্প গ্রহণের এখনই সময়। প্রশাসনের অপরিণামদর্শিতায় একটি পৌরাণিক নদীর এমন করুণ অপমৃত্যু সহ্য করা যায় না।

No comments

Powered by Blogger.