নাদুস by খসরু চৌধুরী
নাদুস হলো তার মায়ের একমাত্র ছেলে। তার
বাবার শরীর এতই বিশাল যে সবাই তাকে ডাকে ‘পাহাড়’ বলে। শ্রমিকেরা রাস্তার
ধারে পাথর ভাঙার সময় তার বাবাকে পাশ দিয়ে যেতে দেখলে রসিকতা করে বলে, ‘দয়া
করে পাথরগুলোর ওপর দিয়ে হেঁটে যান না, স্যার।
আমাদের কাজ খানিকটা কমে তাহলে!’
নাদুসের জন্ম হয়েছে এপ্রিলের ১ তারিখে। জন্মের আগেই তার জন্য কেনা হয়েছে একটা দোলনা আর সেই দোলনা ঘিরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছোট ছোট ঘণ্টা আর ক্যাপ। এবং তার জন্মের পর যা শুরু হলো সে আর কী বলব! ‘নাদুসের জন্য এটা আনো সেটা আনো’ শুনতে শুনতে ছোটাছুটির ফলে প্রাণ যাওয়ার জোগাড় তার সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য রাখা দুই নার্সের। তার বাবা-মা পারলে তার খেলার জন্য চাঁদটাও পেড়ে এনে দেয় আর তারাগুলোকে কেবল এনে দিতে পারল না সেগুলো অনেক দূরে বলে।
নাদুসের মা তাকে আদর করে ডাকল ‘হাতি বাবু’; বাবা ডাকল ‘বটু’; ছোট খালা ডাকল ‘ট্যালকম পাউডার’; বড় খালা ডাকল ‘গুলটেক্সের চাদর’। দুই নার্সের একজন ফরসা আরেকজন কালো। ফরসা নার্স নাদুসকে ডাকল ‘মিষ্টি বাবু’; কালো নার্স ডাকল ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’। নাদুসের মা-বাবার সামনে পাড়াপড়শিরা বলল, ‘এত সুন্দর বাচ্চা আমরা জীবনে দেখিনি’; আর আড়ালে বলল, ‘সুন্দর না ছাই, কুমড়োপটাশ একটা!’
নাদুস খাওয়া ছাড়া কিছু বোঝে না আর তার মা একটা খাবার শেষ হতে না হতেই এগিয়ে দেয় আরেকটা। ফলে দুই বছর বয়স হতেই নাদুস হলো যেমন লম্বা তেমন চওড়া। বাবা তবু তাকে দু-একবার শাসন করতে চায়, কিন্তু মা কিছু বলতেই দেবে না। নাদুস মায়ের নাকে ঘুষি মারলেও আহ্লাদে গলে পড়ে মা বলে, ‘দেখেছ ঘুসির জোর, হাতি বাবু আমার মোহাম্মদ আলী হবে।’
নাদুসের বয়স যখন চার, বাবা-মার সঙ্গে একদিন সে বসেছে ডাইনিং-টেবিলে। কিছুক্ষণ পর সে চটাস চটাস করে তবলা বাজাতে লাগল টেবিলের ওপর। বাবা রেগে গিয়ে বলল, ‘এটা আবার কোন অভদ্রতা হচ্ছে!’
মা সঙ্গে সঙ্গে নাদুসকে চুমু খেয়ে বলল, ‘না, না, ছোট বাচ্চাকে অত কঠোরভাবে বোলো না। ছোট বাচ্চার সঙ্গে ওভাবে কথা বলতে নেই।’
অন্য সময় হলে নাদুস হয়তো তার বাবাকে কামড়ে দিত, কিন্তু আজ তা সে করল না। একটু আগেই এক পাউন্ডের পুরো একটা কেক সাবাড় করার ফলে তার মেজাজ এখন যথেষ্ট খোশ।
কেটে গেল দিন। নাদুসের বয়স এখন ছয়। একদিন নাদুসের মা খাসির একটা রানের রোস্ট করেছে। সেটা এনে ডাইনিং-টেবিলের ওপর রাখতেই নাদুস বায়না ধরল, ‘আমি ঘোড়ায় চড়ব।’
বাবা বলব, ‘ঘোড়া আবার কোথায়?’
নাদুস হাত বাড়িয়ে দিল রোস্টের দিকে, ‘ঘোড়া, ঘোড়া।’
আনন্দে গদগদ মা বলল, ‘দেখেছ, আমার হাতি বাবুর সৃজনশীল বুদ্ধি, খাসির রানকে ঘোড়া হিসেবে কল্পনা করছে। এ রকম যার কল্পনাশক্তি, সে কবি না হয়েই যায় না!’
বাবা ধমক লাগাল এবার, ‘না, ঘোড়ায় চড়তে হবে না!’
মা বলল, ‘আহা, তুমি অমন করছ কেন? হাতি বাবুকে একবার রোস্টের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনার ভান করো না!’
অগত্যা বাবা তা-ই করল, সন্তর্পণে নাদুসকে ঘুরিয়ে আনতে গেল খাসির রানের রোস্টটার ওপর দিয়ে।
কিন্তু নাদুস এই কৌশলে ভুলবার বস্তু নয়, ঘোড়ার পিঠে তাকে চড়তেই হবে। তাই বাবার হাত ফসকে থপাস করে সে বসে পড়ল রোস্টের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে কাত হয়ে গেল টেবিল, ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেল কয়েকটা প্লেট আর বাটি।
বাবা রেগেমেগে বলল, ‘আজ আমি আর খাবই না!’
মা তার একমাত্র ছেলেকে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগল, ‘ব্যথা পাসনি তো, হাতি বাবু?’
নাদুস এমন ভাব করল, যেন কিছুই হয়নি, পরক্ষণেই রোস্টের দিকে হাত তুলে ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ল, ‘খেতে দাও, খেতে দাও, খিদেয় পেট জ্বলে গেল!
নাদুসের জন্ম হয়েছে এপ্রিলের ১ তারিখে। জন্মের আগেই তার জন্য কেনা হয়েছে একটা দোলনা আর সেই দোলনা ঘিরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছোট ছোট ঘণ্টা আর ক্যাপ। এবং তার জন্মের পর যা শুরু হলো সে আর কী বলব! ‘নাদুসের জন্য এটা আনো সেটা আনো’ শুনতে শুনতে ছোটাছুটির ফলে প্রাণ যাওয়ার জোগাড় তার সার্বক্ষণিক দেখাশোনার জন্য রাখা দুই নার্সের। তার বাবা-মা পারলে তার খেলার জন্য চাঁদটাও পেড়ে এনে দেয় আর তারাগুলোকে কেবল এনে দিতে পারল না সেগুলো অনেক দূরে বলে।
নাদুসের মা তাকে আদর করে ডাকল ‘হাতি বাবু’; বাবা ডাকল ‘বটু’; ছোট খালা ডাকল ‘ট্যালকম পাউডার’; বড় খালা ডাকল ‘গুলটেক্সের চাদর’। দুই নার্সের একজন ফরসা আরেকজন কালো। ফরসা নার্স নাদুসকে ডাকল ‘মিষ্টি বাবু’; কালো নার্স ডাকল ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’। নাদুসের মা-বাবার সামনে পাড়াপড়শিরা বলল, ‘এত সুন্দর বাচ্চা আমরা জীবনে দেখিনি’; আর আড়ালে বলল, ‘সুন্দর না ছাই, কুমড়োপটাশ একটা!’
নাদুস খাওয়া ছাড়া কিছু বোঝে না আর তার মা একটা খাবার শেষ হতে না হতেই এগিয়ে দেয় আরেকটা। ফলে দুই বছর বয়স হতেই নাদুস হলো যেমন লম্বা তেমন চওড়া। বাবা তবু তাকে দু-একবার শাসন করতে চায়, কিন্তু মা কিছু বলতেই দেবে না। নাদুস মায়ের নাকে ঘুষি মারলেও আহ্লাদে গলে পড়ে মা বলে, ‘দেখেছ ঘুসির জোর, হাতি বাবু আমার মোহাম্মদ আলী হবে।’
নাদুসের বয়স যখন চার, বাবা-মার সঙ্গে একদিন সে বসেছে ডাইনিং-টেবিলে। কিছুক্ষণ পর সে চটাস চটাস করে তবলা বাজাতে লাগল টেবিলের ওপর। বাবা রেগে গিয়ে বলল, ‘এটা আবার কোন অভদ্রতা হচ্ছে!’
মা সঙ্গে সঙ্গে নাদুসকে চুমু খেয়ে বলল, ‘না, না, ছোট বাচ্চাকে অত কঠোরভাবে বোলো না। ছোট বাচ্চার সঙ্গে ওভাবে কথা বলতে নেই।’
অন্য সময় হলে নাদুস হয়তো তার বাবাকে কামড়ে দিত, কিন্তু আজ তা সে করল না। একটু আগেই এক পাউন্ডের পুরো একটা কেক সাবাড় করার ফলে তার মেজাজ এখন যথেষ্ট খোশ।
কেটে গেল দিন। নাদুসের বয়স এখন ছয়। একদিন নাদুসের মা খাসির একটা রানের রোস্ট করেছে। সেটা এনে ডাইনিং-টেবিলের ওপর রাখতেই নাদুস বায়না ধরল, ‘আমি ঘোড়ায় চড়ব।’
বাবা বলব, ‘ঘোড়া আবার কোথায়?’
নাদুস হাত বাড়িয়ে দিল রোস্টের দিকে, ‘ঘোড়া, ঘোড়া।’
আনন্দে গদগদ মা বলল, ‘দেখেছ, আমার হাতি বাবুর সৃজনশীল বুদ্ধি, খাসির রানকে ঘোড়া হিসেবে কল্পনা করছে। এ রকম যার কল্পনাশক্তি, সে কবি না হয়েই যায় না!’
বাবা ধমক লাগাল এবার, ‘না, ঘোড়ায় চড়তে হবে না!’
মা বলল, ‘আহা, তুমি অমন করছ কেন? হাতি বাবুকে একবার রোস্টের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনার ভান করো না!’
অগত্যা বাবা তা-ই করল, সন্তর্পণে নাদুসকে ঘুরিয়ে আনতে গেল খাসির রানের রোস্টটার ওপর দিয়ে।
কিন্তু নাদুস এই কৌশলে ভুলবার বস্তু নয়, ঘোড়ার পিঠে তাকে চড়তেই হবে। তাই বাবার হাত ফসকে থপাস করে সে বসে পড়ল রোস্টের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে কাত হয়ে গেল টেবিল, ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেল কয়েকটা প্লেট আর বাটি।
বাবা রেগেমেগে বলল, ‘আজ আমি আর খাবই না!’
মা তার একমাত্র ছেলেকে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগল, ‘ব্যথা পাসনি তো, হাতি বাবু?’
নাদুস এমন ভাব করল, যেন কিছুই হয়নি, পরক্ষণেই রোস্টের দিকে হাত তুলে ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ল, ‘খেতে দাও, খেতে দাও, খিদেয় পেট জ্বলে গেল!
No comments