ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান by মানিক রহমান
প্রত্যেক জাতির ঐতিহাসিক কিছু দিন থাকে, যেগুলো স্মরণের মাধ্যমে প্রত্যেকে নতুন করে উজ্জীবিত হয়। বাঙালির তেমনি একটি দিন ২৪ জানুয়ারি। আমাদের কাছে দিনটি ৪৩ বছর ধরে স্মরণীয়। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান এ দিনটিতেই হয়েছিল।
যেদিন তৎকালীন পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা দৃঢ় প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। দিবসটির আগের যেমন একটা উজ্বল ইতিহাস রয়েছে, তেমনি পরের ইতিহাসও রয়েছে। সেটা বিজয়ের ইতিহাস। বাংলার পতপত করে ওড়া লাল-সবুজ পতাকার ইতিহাস।
আজকের বাংলাদেশের পরিচয় তখন পূর্ব পাকিস্তান। আমরা স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো কল্পনাও করতে পারছি না সে সময়টার কথা। যখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন করেছে, শোষণ করেছে। বঞ্চিত করেছে আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। সে সময়ের সংগ্রামগুলো দেখলে সহজেই বোঝা যায়। বোঝা যায় ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কীভাবে পাকিস্তানের শক্তিশালী অংশটি অপর অংশকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় যখন আমরা পড়লাম, আমাদের অগ্রজ প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে যখন শুনলাম পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, আমাদের বোঝার আর বাকি রইল না একটা স্বাধীনতা কীভাবে অনিবার্য হয়ে ওঠে। আমাদের বুঝতে মোটেও কষ্ট হয়নি পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্ক কিরূপ হয়ে উঠবে।
একই সঙ্গে আমরা দেখলাম কীভাবে একটি জাতি অধিকার আদায়ে তৎপর হয়ে ওঠে। আটচলি্লশে দেখেছি, বায়ান্নতে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি; ভাষার জন্য আমাদের সমবয়সী ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন। চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন করেছি। বাষট্টির চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষানীতি গ্রহণ করিনি আমরা। ছেষট্টির ছয় দফা দাবি দিয়েছি আমরা। আর ঊনসত্তরের আজকের দিনে স্বৈরশাসকের পতন নিশ্চিত করেছিলাম আমরা। স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল জনতা। ঘটনাটি ছেষট্টির ছয় দফারই প্রভাব। লাহোরে বাঙালির মুক্তির সনদ এ ছয় দফা যখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, তখনি আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেন, যার এক নম্বর আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
এই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ও ছয় দফার কথা আমরা জানি। আইয়ুব খান থেমে থাকেননি। থেমে থাকেননি তখনকার অকুতোভয় ছাত্ররাও। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা ১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা হয়েছিল। আর ২০ জানুয়ারি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার উত্তাল ছাত্র সমাবেশে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আসাদ। আসাদের শার্ট লিখেছিলেন কবি শামসুর রাহমান। সেদিনের ঘটনাপ্রবাহেই ২৪ জানুয়ারি, যেদিন ক্ষুব্ধ জনতা ঘরে বসে থাকেনি। প্রতিবাদ করতে রাস্তায় বেরিয়েছিল। সেদিন ঢাকার রাস্তার কথা কল্পনা করা যায়? দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষ বেরিয়েছিল। কোনো বাধা গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে পারেনি। সারাদেশে হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশের গুলিবর্ষণে নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান শহীদ হয়েছিল। অনেকেই সেদিন আহত হয়েছিলেন। কিন্তু গণমানুষের যে প্রতিবাদ, সেটাই পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। যে গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচার আইয়ুব খানকে ক্ষমতার মসনদ থেকে নামিয়েছিল, দীর্ঘ ৩৩ মাস আটক থাকার পর বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে এনেছিল। ফলে প্রত্যাহার হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।
এই ২৪ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থান সেদিন বাঙালিকে যে অজেয় মনোবল দিয়েছে সেই মনোবলই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছিল। যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে যত বাধাই আসুক সকলের ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে সে বাধার প্রাচীর বালির বাঁধের মতো ভেসে যায়। ঊনসত্তরের মহান গণঅভ্যুত্থান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি সোপান তৈরি করেছিল। সে জন্য এ দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।
আজকের বাংলাদেশের পরিচয় তখন পূর্ব পাকিস্তান। আমরা স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো কল্পনাও করতে পারছি না সে সময়টার কথা। যখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন করেছে, শোষণ করেছে। বঞ্চিত করেছে আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। সে সময়ের সংগ্রামগুলো দেখলে সহজেই বোঝা যায়। বোঝা যায় ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কীভাবে পাকিস্তানের শক্তিশালী অংশটি অপর অংশকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় যখন আমরা পড়লাম, আমাদের অগ্রজ প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে যখন শুনলাম পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, আমাদের বোঝার আর বাকি রইল না একটা স্বাধীনতা কীভাবে অনিবার্য হয়ে ওঠে। আমাদের বুঝতে মোটেও কষ্ট হয়নি পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পর্ক কিরূপ হয়ে উঠবে।
একই সঙ্গে আমরা দেখলাম কীভাবে একটি জাতি অধিকার আদায়ে তৎপর হয়ে ওঠে। আটচলি্লশে দেখেছি, বায়ান্নতে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি; ভাষার জন্য আমাদের সমবয়সী ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন। চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন করেছি। বাষট্টির চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষানীতি গ্রহণ করিনি আমরা। ছেষট্টির ছয় দফা দাবি দিয়েছি আমরা। আর ঊনসত্তরের আজকের দিনে স্বৈরশাসকের পতন নিশ্চিত করেছিলাম আমরা। স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল জনতা। ঘটনাটি ছেষট্টির ছয় দফারই প্রভাব। লাহোরে বাঙালির মুক্তির সনদ এ ছয় দফা যখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, তখনি আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেন, যার এক নম্বর আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
এই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ও ছয় দফার কথা আমরা জানি। আইয়ুব খান থেমে থাকেননি। থেমে থাকেননি তখনকার অকুতোভয় ছাত্ররাও। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা ১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা হয়েছিল। আর ২০ জানুয়ারি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার উত্তাল ছাত্র সমাবেশে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আসাদ। আসাদের শার্ট লিখেছিলেন কবি শামসুর রাহমান। সেদিনের ঘটনাপ্রবাহেই ২৪ জানুয়ারি, যেদিন ক্ষুব্ধ জনতা ঘরে বসে থাকেনি। প্রতিবাদ করতে রাস্তায় বেরিয়েছিল। সেদিন ঢাকার রাস্তার কথা কল্পনা করা যায়? দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষ বেরিয়েছিল। কোনো বাধা গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে পারেনি। সারাদেশে হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশের গুলিবর্ষণে নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান শহীদ হয়েছিল। অনেকেই সেদিন আহত হয়েছিলেন। কিন্তু গণমানুষের যে প্রতিবাদ, সেটাই পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। যে গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচার আইয়ুব খানকে ক্ষমতার মসনদ থেকে নামিয়েছিল, দীর্ঘ ৩৩ মাস আটক থাকার পর বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে এনেছিল। ফলে প্রত্যাহার হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা।
এই ২৪ জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থান সেদিন বাঙালিকে যে অজেয় মনোবল দিয়েছে সেই মনোবলই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছিল। যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে যত বাধাই আসুক সকলের ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে সে বাধার প্রাচীর বালির বাঁধের মতো ভেসে যায়। ঊনসত্তরের মহান গণঅভ্যুত্থান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি সোপান তৈরি করেছিল। সে জন্য এ দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।
No comments