বিশেষ সাক্ষাৎকার-ট্রানজিট নিয়ে কোর কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক by এম রহমতউল্লাহ

পরিবহন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ রহমতউল্লাহর জন্ম ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১৯৬২ সালে বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে প্রভাষক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিক ডিজাইনে মাস্টার ডিগ্রি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন পরিবহন পরিকল্পনার ওপর।


এরপর পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ১৯৭৮ সালে যোগ দেন ইউএন-এসকাপের পরিবহন ও অবকাঠামো বিভাগে। সেখানে ২২ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বিভাগের পরিচালক হিসেবে তিনি অবসর নেন ২০০০ সালে। এর পর থেকে তিনি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। রহমতউল্লাহ দেশের পরিবহনসংক্রান্ত নানা নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো  ট্রানজিট বিষয়ে গঠিত কোর কমিটির রিপোর্ট সরকার এখনো প্রকাশ করেনি। আপনার অভিমত?
এম রহমতউল্লাহ  এটা করা উচিত। এ ব্যাপারে দেখছি সরকারের মধ্যে ইতস্তত ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রথম আলো  কোর কমিটি যাঁদের নিয়ে করা হয়েছে, তাতে আপনি কি সন্তুষ্ট?
এম রহমতউল্লাহ  দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ কমিটি হয়েছে। দেশে যতগুলো ইনস্টিটিউট ট্রানজিট নিয়ে চিন্তাভাবনা করে, তাদের প্রধানেরা এতে রয়েছেন। আমি একটি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান।
প্রথম আলো  কমিটির কার্যপরিধি কী ছিল?
এম রহমতউল্লাহ  কীভাবে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেওয়া হবে।
প্রথম আলো  ট্রানজিট, না ট্রান্সশিপমেন্ট?
এম রহমতউল্লাহ  আমরা ট্রানজিটের কথাই বলছি তবে সড়কে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করতে হবে।
প্রথম আলো  এটা আপনারা কতজনে সই করেছেন?
এম রহমতউল্লাহ  না, সই করার দরকার পড়ে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এটা করা হয়েছে। সর্বসম্মতভাবে সরকারের কাছে পেশ করা হয়।
প্রথম আলো  রিপোর্টের সুপারিশ না হোক, এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে যদি ধারণা দিতেন।
এম রহমতউল্লাহ  কোন কোন রুটে ট্রানজিট দেওয়া যেতে পারে। কোন রুটে কী রকম চার্জ (ভাড়া) হতে পারে। অবকাঠামো বাস্তবায়ন করতে গেলে কী করা উচিত? প্রাতিষ্ঠানিক সেটআপ কী হওয়া উচিত? ভারতের সঙ্গে যদি ট্রানজিট চুক্তি করা হয় তাহলে কী করতে হবে।
প্রথম আলো  তার মানে ট্রানজিট চুক্তি এখনো হয়নি?
এম রহমতউল্লাহ  না চুক্তি হয়নি। ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে যেটা সই হওয়ার কথা ছিল, সেটা ট্রানজিটের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট।
প্রথম আলো  কিন্তু মিডিয়ায় এ বিষয়ক কিছু চুক্তির কথাবার্তা আলোচিত হচ্ছে। তাহলে সেসব কী?
এম রহমতউল্লাহ  সেটা হলো, অন্তর্বর্তীকালীন কিছু ব্যবস্থা। যেমন, আশুগঞ্জ বন্দরের ব্যবহার। নৌপরিবহনে যে প্রটোকল ছিল, তার আওতায় আশুগঞ্জ দিয়ে কিছু মাল পরিবহনে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে।
প্রথম আলো  এটাকে আমরা কী বলব? অন্তর্বর্তীকালীন সমঝোতা, না চুক্তি?
এম রহমতউল্লাহ  এটাকে একধরণের সমঝোতা বলা যায়। আশুগঞ্জ ব্যবহারের কথা আগে ছিল না। ২০০৯ সালে এটা করা হয়েছে। তবে শর্ত ছিল, সে জন্য আশুগঞ্জকে একটি বন্দরে উন্নীত করতে হবে। আশুগঞ্জ-আগরতলা সড়ক তৈরি করতে হবে। কিন্তু এসবের হদিস নেই। এখন ঢাকা-সিলেট সড়কের একটি অংশ ব্যবহার করে কিছু মাল তারা পারাপার করে দিয়েছে।
প্রথম আলো  আইনগতভাবে বলা চলে, প্রটোকলের শর্ত কিন্তু পূরণ না করেই এটা করা হয়েছে।
এম রহমতউল্লাহ  প্রটোকলে বলা আছে, আশুগঞ্জ হতে হবে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট। কিন্তু এখনও তার অবকাঠামো তৈরি হয়নি।
প্রথম আলো  ওই এলাকা সফর করে দেখেছি, বেশি ওজনের মালামাল পরিবহনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে নদীনালা ভরাট করে ভারতীয় যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিতাস নদীর বুক চিরে রাস্তা বানানো হয়েছে।
এম রহমতউল্লাহ  তিতাস নদীর বিষয়টি কিন্তু আবার ভিন্ন বিষয়; দিল্লিতে হাসিনা-মনমোহনের স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারের আওতায় এটা করা হয়েছে। এটাকে বলে ওডিসি বা ওভারসাইজড কার্গো।
প্রথম আলো  শুধু যৌথ ইশতেহারের ভিত্তিতে কিছু সরাসরি বাস্তবায়ন করা কি আন্তর্জাতিকভাবে রীতিসিদ্ধ?
এম রহমতউল্লাহ  এটি রীতিসিদ্ধ। আমাদের ধারণা সরকার নিশ্চয়ই বিস্তারিত ওয়ার্কআউট করে নিয়েছে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশের এই উদারতা মিডিয়ায় প্রচার পায়নি।
এম রহমতউল্লাহ  আমিও তাই মনে করি। বাংলাদেশ নিশ্চয় অনেক উদারতা দেখিয়েছে। তবে কার্গো পার করার পর অবকাঠামো আগের অবস্থায় নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ যদি খুব কঠোর হতো, তাহলে ওই ভারী মালামাল পরিবহন অনেক বিলম্বিত হতো।
প্রথম আলো  এর জন্য খরচ কত পড়ল?
এম রহমতউল্লাহ  সেটা আমার জানা নেই। তবে সবটুকু ব্যয় ভারতের বহন করার কথা। এ বিষয়ে কোনো লিখিত চুক্তি হয়েছে কি না, তা আমরা দেখিনি। ত্রিপুরার পলাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ওই সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই বলেই এটা আমরা করেছি।
প্রথম আলো  আশুগঞ্জ ‘ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট’ তৈরির খরচ কে জোগাবে?
এম রহমতউল্লাহ  এটা ভারত যে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, সেখান থেকে মেটানোর কথা।
প্রথম আলো  কিন্তু এখন আমরা জানছি যে অবকাঠামো নির্মানে যে মালামাল লাগবে, তার ৮৫ শতাংশ ভারত থেকে নিতে হবে।
এম রহমতউল্লাহ  এটাই সমস্যা। সড়ক নির্মাণে ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড—সবই আমাদের আছে। সেখানে ৮৫ শতাংশ দূরের কথা, পাঁচ শতাংশ জিনিসও ভারত থেকে আনার দরকার নেই। এ পর্যন্ত মাত্র বাস কেনার একটি প্রকল্প ওই ঋণের আওতায় পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। কঠিন শর্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ সরকারকে সড়কসংক্রান্ত অনেক প্রকল্প প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে।
প্রথম আলো  এ ধরনের অসম চুক্তি করা কি বাংলাদেশের কূটনৈতিক অপারগতা?
এম রহমতউল্লাহ  আমাদের যাঁরা বিশেষজ্ঞ, তাঁদের উচিৎ ছিল শর্তগুলো প্রকল্পভিত্তিক করা।
প্রথম আলো  সমস্যা কিসের? জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, নাকি রাজনৈতিক নির্দেশনার ঘাটতি?
এম রহমতউল্লাহ  চুক্তিকালে অবশ্য প্রকল্পগুলো চিহ্নিত হয়নি। ৮৫ শতাংশর শর্ত মেনে নেওয়া ঠিক হয়নি। আরও পরিপক্বতা দেখানো উচিত ছিল। খুবই দ্রুততার সঙ্গে ওই চুক্তি হয়েছিল। তখন যদি খসড়ায় বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হতো, তাহলে তার উত্তরও মিলত। ভারতীয়রা এখন বলছে, তারা বাংলাদেশ থেকে ৬৫ শতাংশ মালামাল নিতে রাজি। কিন্তু সড়কের ক্ষেত্রে সেটাও আমাদের মানা সম্ভব হবে না।
প্রথম আলো  প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান কিসের ভিত্তিতে বলেছিলেন, ট্রানজিট ফি আমরা নেব না।
এম রহমতউল্লাহ  রাজনীতিকদের উচিত বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করা। জনগণ কী চায় ও বিশেষজ্ঞদের কী মত, তা জেনেবুঝে সরকারের নীতি গ্রহণ করা উচিত। একতরফা নিলে তা অংশগ্রহণভিত্তিক হলো না। এ মন্তব্য হয়তো তাঁর ব্যক্তিগত ।
প্রথম আলো  প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা যখন প্রকাশ্যে বললেন, তখন কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত থাকে না।
এম রহমতউল্লাহ  এখন তাঁরাই হয়তো দেখছেন, জনগণের ভাবাবেগ ভিন্নতর।
প্রথম আলো  ভাবাবেগ সব সময় গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে। আমরা এমন কিছু আশা করতে পারি না, যা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। এ বিষয়ে অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে?
এম রহমতউল্লাহ  কোর কমিটির রিপোর্টে এ বিষয়ে বিশ্লেষণ রয়েছে। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার যেসব দেশ ট্রানজিট দেয়, সেসবের বিশ্লেষণ আছে।
প্রথম আলো  তাহলে ট্রানজিটের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেকে যেমনটা বলছেন বাংলাদেশ ভারতকে এমন সুবিধা দিচ্ছে, যা বিশ্বে দেখা যায় না।
এম রহমতউল্লাহ  সেটা সত্য নয়। তবে এখনো তো বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট দেয়নি। আমাদের রিপোর্টে সরকার অনেক তথ্য পাবে। যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সুবিধা হবে। আমরা যে ট্রানজিট দিচ্ছি, সেটা কি প্রকৃত অর্থে ট্রানজিটের সংজ্ঞায় পড়ে? কারণ, প্রকৃত ট্রানজিট হলো, তিন দেশের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। প্রথম দেশ মধ্যবর্তী একটি দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে মাল পাঠাবে। তাহলে মধ্যবর্তী দেশটি হবে ট্রানজিট দেশ। ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যখন তার দেশেই মাল নেবে, তখন সেটা কিন্তু একটা সংশোধিত বা বিশেষ ধরনের ট্রানজিট বলে গণ্য হবে।
প্রথম আলো  এই বিশেষ ধরনের ট্রানজিট বিশ্বের কোথায় আছে?
এম রহমতউল্লাহ  সুয়েজ খাল বড় উদাহরণ।
প্রথম আলো  কিন্তু সেটা নৌ-ট্রানজিট। ঠিক আমরা যেভাবে স্থলসীমান্ত দিয়ে দিচ্ছি, সেটা কোথায় আছে?
এম রহমতউল্লাহ  ঠিক স্থলসীমান্তের উদাহরণ নেই, তবে নীতিটা অভিন্ন। সুয়েজ যেটা নদীপথে দিচ্ছে, আমরা সেটা স্থলপথে দিতে চাই। সুয়েজ খাল ব্যবহারে ঘোরা পথ কমে। এতে খরচও বাঁচে। তো মিসর বলল, এই বেঁচে যাওয়া খরচের একটা অংশ তাকে দিতে হবে। আমরাও তাই বলছি। উত্তর-পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাল পাঠাতে যে খরচ হতো, তা এখন অনেকটাই বেঁচে যাবে। আমরা তাদের সেই সঞ্চয় থেকে একটা হিস্যা চাই। সে কারণে আমরা রিপোর্টে সুয়েজের উদাহরণ টেনেছি। পানামাও আরেক দৃষ্টান্ত। ভারত আমাদের নৌপথ ব্যবহার করে তেমন সুফল পায়নি। এখন রেল, সড়ক ও নৌপথ—তিনটিই তাদের জন্য খোলা থাকবে। যখন যেখান থেকে তাদের সুবিধা, সেটাই তারা ব্যবহার করবে।
প্রথম আলো  আগামী দুই বছরে কতটা সুবিধা ভারতকে দেওয়া সম্ভব?
এম রহমতউল্লাহ  বছরে ১৮ মিলিয়ন টন ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশ বহন করতে পারে। তবে আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ১৬ মিলিয়ন টনই বহন করতে দেওয়া সম্ভব হবে না। অবকাঠামোগত দুর্বলতাই এর মুখ্য কারণ। আমরা আপাতত বছরে দুই লেনের সড়ক দিয়ে দুই মিলিয়ন টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে পারব না।
প্রথম আলো  কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, আগামী মার্চেই ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হবে। আমরা তাহলে কী বুঝব?
এম রহমতউল্লাহ  এটা স্পষ্ট নয়। আমরা চাই যে, প্রতিবেশী ভারত উপকৃত হোক। ট্রানজিটের দুটি দিক রয়েছে। একটি অর্থনৈতিক, অন্যটি রাজনৈতিক। এখন আমরা বুঝতে পারছি যে ট্রানজিট দিলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হবো, যদি আমরা যথাযথভাবে শুল্ক, ভাড়া ইত্যাদি উশুল করতে পারি। আর রাজনৈতিক দিক যেমন—তিস্তার পানি, সমুদ্রসীমা, স্থলসীমানা চুক্তির বাস্তবায়ন ইত্যাদি দিক আছে। আমি বলব, দুই প্রতিবেশীর জন্যই লাভজনক হয়—এমনভাবে ট্রানজিট চালু করতে হবে।
প্রথম আলো  ভারতকে বিশেষ ট্রানজিট দিয়ে আমরা বছরে কি আয় করতে পারি?
এম রহমতউল্লাহ  বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। তবে তা এখনই নয়। ১৬ বছরের মাথায় সম্ভব হবে। কারণ, অবকাঠামো সৃষ্টি করতে সময় লাগবে। পণ্য চলাচলও ধীরে ধীরে বাড়বে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশের সড়ক তো নিজেই বেহাল। কী করে দুই মিলিয়ন টন মাল বহনের চাপ নেবে।
এম রহমতউল্লাহ  সেই পণ্য ভারতীয় ট্রাকে নয়, বাংলাদেশের ট্রাক দিয়ে চলবে, দিনে নয়, রাতে। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গে বা বাংলাদেশের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এটাকে বলা হবে ট্রান্সশিপমেন্ট-ভিত্তিক ট্রানজিট। ভারতের সড়ক ১৬ টন, আর আমাদের সড়ক আট টন এক্সেল লোডের জন্য ডিজাইন করা। সুতরাং, চার লেনের মহাসড়ক না করা পর্যন্ত ভারতীয় ট্রাক চলতে দেওয়া উচিৎ হবে না। এটা করতে পাঁচ থেকে ছয় বছর লাগবে।
প্রথম আলো  আগামী মাসে বিশেষ ট্রানজিট চালু করতে চুক্তি লাগবে না?
এম রহমতউল্লাহ  লাগবে, কিন্তু সরকারি মহলে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি না করতে অনীহার কথা শোনা যাচ্ছে।
প্রথম আলো  অবকাঠামো গড়ার বিষয়টি একটু বিশদ বলুন। কীভাবে কী হতে পারে।
এম রহমতউল্লাহ  সড়কের কথা আগেই বলেছি। রেল আরও বেহাল। রেল চালু করতেও দু-তিন বছর লাগবে। রেলরুটের দরকারি সংযোগগুলো নেই। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের রেল-সংযোগ লাগবে। কুলাউড়া থেকে মহিশাসন বা শাহবাজপুর পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার ওই ভারতীয় ঋণে করার কথা। আখাউড়া-আগরতলা ১০ কিলোমিটার হওয়ার কথা ভারতীয় মঞ্জুরিতে, কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই শুরু হয়নি। অন্যদিকে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যদিও একটি কমিটি এখন কাজ করছে, কিন্তু চূড়ান্ত সমাধান হচ্ছে, শুধু রেল চলার জন্য আরেকটি যমুনা সেতু তৈরি করা। এবার দেখুন নৌপথ। কলকাতা থেকে জাহাজ আশুগঞ্জ আসবে, সেখান থেকে সড়কপথে আগরতলা। কিন্তু আশুগঞ্জকে পোর্ট বানাতে বাস্তবে কোনো কাজই শুরু হয়নি।
প্রথম আলো  অনেকে বলেন, এ খাতে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ, সুবিধা নেবে ভারত।
এম রহমতউল্লাহ  অবকাঠামো তো বাংলাদেশেরও লাগবে। আর ভারতের জন্য বাড়তি যেটুকু, সে জন্যই তো আমরা উপযুক্ত হারে ভাড়া নেব। উপরন্তু সঞ্চয়ের হিস্যা দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ ঘোরা পথে ধরুন কোনো পণ্য পরিবহনে তাদের ১০০ ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশ দিয়ে সোজা পথে ৬০ ডলার লাগে। এই ৬০ ডলার হলো পণ্য পরিবহনের খরচ। বাকি ৪০ ডলার যে বেঁচে গেল, তার একটা ন্যায্য হিস্যা আমার চাই।
প্রথম আলো  ভাটির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নদীর পানি আমাদের অধিকার। কিন্তু ভারতকে ট্রানজিট দিতে কি এমন কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে?
এম রহমতউল্লাহ  ভারত যদি ভুটানের মতো ভূবেষ্টিত দেশ হতো, তাহলে ডব্লিউটিওর আওতায় ট্রানজিট দিতে আমাদের বাধ্যবাধকতা থাকত। কিন্তু এখন ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হবে বন্ধুত্বের নিদর্শন। আশা করি ভারতও তার প্রতিদান দেবে।
প্রথম আলো  অপনাকে ধন্যবাদ।
এম রহমতউল্লাহ  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.