কল্যাণমূলক সমাজ কবে হবে? by ইকবাল আজিজ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালীর তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুর ডাকে হাজার হাজার কৃষক ছাত্র সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পৃথিবীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
বিশেষ কোন দল নয়, কোন বিশেষ গ্রম্নপ বা ক্যাডার নয়; বরং কয়েক লাখ পাকিসত্মানপন্থী দালাল রাজাকার আলবদর ছাড়া প্রায় সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালী এখানে মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি হিসাবে এই সর্বাত্মক মুক্তির লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। আর সেদিনের মুক্তিযুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার শতকরা নব্বই ভাগ ছিল গ্রামীণ সাধারণ কিশোর যুবক; একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে তারা এসেছিল। তাদের সবারই একটি অভিন্ন স্বপ্ন ছিল, শোষণহীন সোনার বাংলা। সেদিন আমরা এমন একটি স্বাধীন মাতৃভূমির স্বপ্ন দেখেছিলাম, যেখানে প্রতিটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিৰা, চিকিৎসা ও জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই স্বপ্নের শোষণহীন সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লৰ্যে অগ্রসর হয়েছেন। তিনি জনগণকে বলেছেন, 'তিন বছর কিছুই দিতে পারব না। সবাইকে দেশ গঠনের মধ্যে কাজ করতে হবে'। জনগণ বঙ্গবন্ধুর আদেশ মাথা পেতে নিয়েছে, তারা অপেৰা করেছে তিন বছর। কিন্তু এই তিন বছর বসে থাকেনি দেশের প্রতিবিপস্নবী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। লুটপাট, অনত্মর্ঘাত ও ষড়যন্ত্রের লৰ্যে তারা বাঙালীর প্রধান রাজনৈতিক দলটিতে অনুপ্রবেশ করেছিল। এ যুগের মীরজাফর খোন্দকার মোশতাক আহমেদ ছিলেন এইসব অনত্মর্ঘাতক মুনাফিকদের নেতা। মুনাফিক সব দেশে সব যুগেই থাকে। কিন্তু মীরজাফরের পর মোশতাকের মতো এত জঘন্য মুনাফিক ভারত উপমহাদেশে কখনও জন্মগ্রহণ করেননি। কোন কোন ৰেত্রে তার চরিত্রের হিংস্রতা ও বীভৎসতা মীরজাফরকে ছাড়িয়ে গেছে। একাত্তরের সূচনায় যখন বাঙালী জাতি স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল, তখন এই মোশতাক অতিশয় চাতুর্যের সাথে বঙ্গবন্ধুর 'ঘনিষ্ঠ সহযোগী' সেজে তাঁর পাশেই অবস্থান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের সাথে থেকে তিনি আমাদের যুদ্ধকালীন দুঃসময়ের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের বিরম্নদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন এবং মুক্তিসংগ্রামকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর তার বিরম্নদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং তিনি তার দলবল নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি শক্তিশালী জোট গঠন করেছিলেন। পাকিসত্মান, মধ্যপ্রাচ্যের একটি অত্যনত্ম প্রভাবশালী তেল সমৃদ্ধ দেশ এবং স্বাধীনতাবিরোধী ধমর্ীয় কট্টরপন্থীরা অতি সঙ্গোপনে হাত মিলিয়েছিল 'মোশতাক গ্রম্নপ'-এর সাথে। এই মুনাফিকদের হাতেই বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হন। মুনাফিকদের হাতে ইমানদার বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণ ইতিহাসের অন্যতম করম্নণ ও ষড়যন্ত্রের কাহিনী। বঙ্গবন্ধু এদেশের সংখ্যাগুরম্ন গরিব ও সাধারণ মানুষের জন্যে একটি শোষণহীন ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এটাই ছিল তাঁর অপরাধ। এ কারণেই দলের নব্যধনী, লুটেরা ও পাকিসত্মানপন্থীদের নেতা খোন্দকার মোশতাক বাঙালী জাতির ত্রাণকর্তাকে সপরিবারে খুন করেন। আমি আগেই বলেছি, খোন্দকার মোশতাক ও তার অনুসারীরা মুনাফিক ও মানবতার শত্রম্ন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শুভ বুদ্ধি ও যাবতীয় কল্যাণ বোধকেও হত্যা করেছিল। ধার্মিকের ছদ্মবেশধারী এরা মূলত ধার্মিক নয়, বরং এরা ধর্মের শত্রম্ন এবং কল্যাণকামী শুভবোধেরও শত্রম্ন। এরা স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালী জাতির সব সম্ভাবনাকেই গলা টিপে হত্যা করেছিল। এই সব বিপথগামীকে নিয়েই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি গঠন করেছিলেন। সেইসাথে ভারতীয় সম্প্রদায়িক বাঙালী বুদ্ধিজীবী এবং বাংলাদেশের মোশতাকপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবীদের চিনত্মা ও চেতনার আলোকে তৈরি করেছিলেন 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ'। তাদের পরিকল্পনা ছিল এদেশ থেকে চিরতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালিত্বকে নিমর্ূল করা। এরপর বেসরকারীকরণের নামে ধীরে ধীরে প্রায় সব কলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। ফলে দেশে ধনী ও গরিবের ব্যবধান বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামরিক শাসন ও বিএনপি-জামায়াত জোটের দুনর্ীতি, দুঃশাসন ও শোষণের কারণে দেশে বর্তমানে প্রায় চলিস্নশ শতাংশ মানুষই অতি দরিদ্র শ্রেণীর অনত্মর্গত। তাদের শাসনামলে এক ধরনের স্বাধীনতাবিরোধী লুটেরা ব্যবসায়ী শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটেছে এবং গরিব আরও গরিব হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সময় সবার আগে ভেবেছিলেন দেশের গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কথা।
সুবিশাল হৃদয়ের অধিকারী মহামানব বঙ্গবন্ধু তাঁর শত্রম্নদের চিনতে পারেননি। দেশের শত্রম্ন খন্দকার মোশতাক ও তার দল সত্মাবকতার মাধ্যমে তাঁকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছিল। এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকারে এই সুবিধাবাদী মুনাফিকরা যোগদান করেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি না, খুনী ফারম্নক রশিদরা এদের রাইফেল উঁচিয়ে জোর করে মন্ত্রী হতে বাধ্য করেছিল। বরং খাঁটি সত্য হলো এরাও ছিলেন মোশতাকের মতো মুনাফিক এবং তার সঙ্গে ছিল এদের গোপন ঘনিষ্ঠতা। এখন অনুভব করি, এরা ছিলেন দেশব্যাপী বাঙালী জাতীয়তাবাদের তুমুল উত্থানের দিনে দলের অভ্যনত্মরে সুবিধালোভী ও ছদ্মবেশী পাকিসত্মানী অনুপ্রবেশকারী। এদের এখন সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করা দরকার এবং ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সামরিক শাসন ও বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের দিনগুলোতে এরা মূলত লুটপাট ও শোষণের মাধ্যমে সারাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছেন। নির্যাতিত মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের সমর্থনে ও ভোটে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার বর্তমানে ৰমতাসীন। বাঙালী জাতির শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ আজ অসহায় ও বঞ্চিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শোষণহীন বাংলাদেশ গড়তে। কিন্তু দেশবিরোধীরা সেদিন বন্ধুর ছদ্মবেশে তাঁকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল। তিনি অনেকবার বক্তৃতায় বড় আৰেপের সঙ্গে এদের কথা বলেছেন। এই মুনাফিকরা বাঙালীর দুশমন, উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় অনত্মরায়। দয়ালু বঙ্গবন্ধু সেদিন এদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেননি, এর ফলে তাকে শাহাদতবরণ করতে হয়েছে। এরা ছিলেন মূলত দলের ভেতর অনুপ্রবেশকারী সুবিধালোভী স্বাধীনতাবিরোধী। এরা সেদিনও ছিলেন, এরা এখনও আছেন। এরাই বাংলাদেশের যত অকল্যাণের মূলে। ঘরের দুশমন বাসত্মবিকই বিভীষণ, আর দুশমনের চেয়ে মুনাফিক বহুগুণে নিকৃষ্ট ও ৰতিকর।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করার পর মনে হচ্ছে, এ এক নতুন বাংলাদেশ। এখন আমি নিশ্চিত, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লৰ্যে আমরা দৃঢ় পদৰেপে এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ, 'দীর্ঘ সংগ্রামের পথে সত্যিকার বন্ধু ও শত্রম্ন আপনি চিনেছেন। বিপদের দিনে মুনাফিকদের আসল চেহারা দেখা যায়। মুনাফিকদের বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই কঠোর থাকতে হবে। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশ ও পনেরো কোটি বাঙালীর ভবিষ্যত আপনার হাতে ন্যসত্ম'। সাধারণ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিৰা, বাসস্থান ও জীবিকার কথা সর্বাগ্রে ভাবতে হবে। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়াই হবে বর্তমান সরকারের প্রধান কর্মসূচী। এদেশে বেশিরভাগ মানুষই দেশপ্রেমিক। সেদিনের মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই আজ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। এইসব দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। এদেশে একটি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সর্বদাই তৎপর। এরাই খোন্দকার মোশতাকের সেইসব সহযোগী। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে এরা দুনর্ীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এদের বিষয়ে প্রতিমুহূর্তে সচেতন থাকা প্রয়োজন এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ব্যবসায়ীদের সর্বৰেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট বিপুলসংখ্যক প্রাইভেট ভার্সিটি গড়ে তুলেছে। এখানে লেখাপড়া অত্যনত্ম খরচসাপেৰ। এছাড়া এখানকার শিৰার মান সম্পর্কেও প্রশ্নের অবকাশ আছে। দেশে শিৰা ৰেত্রে যে বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। ধনী-গরিব প্রত্যেকে যাতে একই মানের শিৰা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো শত শত প্রাইভেট কিনিক গড়ে উঠেছে। এও এক ধরনের হৃদয়বিদারক ব্যবসা। বিপুল অর্থের বিনিময়ে কেবল ধনীরাই এখানে চিকিৎসা পেতে পারে। তবে অসুস্থ হলে গরিবরা যাবে কোথায়? বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এদেশে কখনোই শিৰা ও চিকিৎসা নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারতেন না। কারণ পাকিসত্মানী ঔপনিবেশিকদের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সৃষ্টিই হয়েছিল একটি শোষণহীন ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণা নিয়ে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত আমলে যেভাবে সর্বৰণ বাজার অর্থনীতির প্রচার করা হতো, তার ফলে একটি ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্নই ধূলিসাত হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত টেলিভিশনে আলোচনাকালে অনেকবারই বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র বা ওয়েলফেয়ার স্টেট হিসাবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। জানি সেই লৰ্যে এগিয়ে নেয়ার পথে সবচেয়ে বাধা হলো বর্তমানের বিএনপি-জামায়াত জোটের স্বাধীনতাবিরোধী ব্যবসায়ীরা। এরা আমাদের মাতৃভূমিকে কিছুতেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে দিতে চায় না। এরা চায় দেশের শতকরা আশি ভাগ লোক সর্বৰেত্রে অবহেলিত, বঞ্চিত ও শোষিত হবে এবং বাকি বিশ ভাগ লোক লুটপাট করে দেশের যাবতীয় সম্পদ ভোগ করবে। বিএনপি আমলের অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমানের চেহারাটা এখনও আমি মনের আয়নায় সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই। তিনি অর্থনৈতিকৰেত্রে সারাজীবন দেশের সুবিধাভোগী ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ সংরৰণ করেছেন। বাসত্মবিকই তিনি ছিলেন একজন মানবিদ্বেষী, তিনি একবার বক্তৃতাকালে বলেছিলেন, গরিব মানুষ যাতে নগরে এসে ভিড় না জমায়, সে জন্যে তাদের নগরে আসার ওপর শুল্ক আরোপ করবেন। তিনি চাইতেন না, গরিব মানুষ যাতে শহরে এসে বড়লোকের শানত্মি নষ্ট না করে। সাইফুর রহমান সাধারণ মানুষকে ভাতের বদলে কফি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যতবার অর্থমন্ত্রী হয়েছেন, তার প্রথম কাজ ছিল সাধারণ মানুষের সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার কমানো। ধনীরাষ্ট্র ও ধনিক শ্রেণীর স্বার্থের সংরৰক বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ (আনত্মর্জাতিক অর্থ তহবিল) কে সন্তুষ্ট করতেই তিনি এ কাজ করতেন। এদেশে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য সঞ্চয় প্রকল্প অবশ্য একটি কল্যাণমূলক প্রকল্প। দরকার হলে দেশের ধনিক শ্রেণীর কিছু সুবিধা খর্ব করেও এই প্রকল্প আরও সম্প্রসারণ করা দরকার। গত দশ বছরে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেকৰেত্রে দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু দেশের সঞ্চয়পত্র বা সঞ্চয়প্রকল্পের সুদ এতটুকু বাড়েনি। বরং কেউ কেউ তা কমানোর প্রসত্মাব করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের কাছে অনুরোধ, দ্রব্যমূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধির প্রেৰিতে দেশে সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়প্রকল্পের সুদের হার যেন বাড়ানো হয়। এছাড়া ফিক্সড ডিপোজিট ও অন্যান্য সঞ্চয়ের সুদও বাড়ানো উচিত। সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়প্রকল্প বাংলাদেশের অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস।
ষাট দশকের সেই দেশব্যাপী রেশনের কথা এখনও আমাদের মনে আছে। ষাট দশকে আমার কৈশোরে নাটোরে নানাবাড়িতে থাকার সময় আমি সপ্তাহে একদিন ঝোলা হাতে রেশনের দোকানে যেতাম। পকেটে সযতনে রেখে দিতাম রেশন কার্ড। রেশন কার্ড নিয়ে কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতাও আছে। পাকিসত্মানী আমলে অনেক খারাপ ব্যবস্থার পাশাপাশি রেশনব্যবস্থা ছিল একটি অতিশয় শুভ উদ্যোগ। সমগ্র দেশকে কি আবার রেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা যায় না? আমি জানি, এর ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। কিন্তু এর ফলে দেশে খাদ্য ব্যবসায়ীদের কি অসুবিধা হবে? তাদের কায়েমী স্বার্থ কি ৰুন্ন হবে? বাংলাদেশকে যে ধরনের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন আমরা দেখি, সেখানে খাদ্য, শিৰা ও চিকিৎসা নিয়ে বাণিজ্য করার অধিকার কাউকে দেয়া উচিত নয়। খাদ্য ব্যবসায়ী, প্রাইভেট ভার্সিটির মালিক ও কিনিক ব্যবসায়ীদের সামলানোর দায়িত্ব সরকারের। তবে বিরোধী দলেরও উচিত দেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র করার লৰ্যে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করা।
এদেশের মানুষের অবস্থার উন্নয়নে সরকার ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারে। সাধারণ মানুষের স্বার্থের চেয়ে বড় কী আর আছে? আমাদের জন্যে খাদ্য, শিৰা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও জীবিকা নিশ্চিত করার জন্যই একদিন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। জনগণের ঐক্যই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বাসত্মবতাকে নিশ্চিত করতে পারে। এৰেত্রে এখনও কিছু স্বাধীনতাবিরোধী মুনাফিক বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের শনাক্ত করা দরকার।
No comments