ওদের চাপা কান্না কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না ওরা বাঁচতে চায়- শীতে কাতর বরমীর সহস্রাধিক ক্ষুধার্ত বানর
বহুকাল ধরে শ্রীপুরের ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে বন্দরনগরী খ্যাত শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ঘেঁষা বরমী বাজারের অনাহারক্লিষ্ট সহস্রাধিক বানর। মানুষের সহানুভূতির ওপর নির্ভরশীল বানরগুলো প্রতিনিয়ত এক গাছ থেকে অন্য গাছে, এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করে বাজারটিকে মাতিয়ে রাখে।
দর্শনার্থীরা বানরের মাতামাতি ও খেলা করা উপভোগ করলেও স্থানীয় দোকানিরা বিরক্ত। ক্ষুধার তাড়নায় ক্লান্ত বানরগুলো বটের ছায়ায় বসে কখনও নীরব কখনও আবার সরব ভাষায় কেঁদে ওঠে। নিদারুণ কষ্টে থাকা বানরগুলোর বেঁচে থাকার করুণ‘ আর্তনাদ যাঁরা বুঝেন-তাঁরাই সামান্য খাদ্য বিলিয়ে বিলিয়ে এদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। খাদ্যের অভাবে এরা মরছে ধুঁকে ধুঁকে।প্রাচীনতম বরমী বাজারে শতাব্দী কাল ধরে হাজার হাজার বানর বসবাস করে আসছিল। বিভিন্ন কারণে এর সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। বানরের অত্যাচারে দোকানী বা বাড়িওলারা খাদ্যের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নির্বিচারে করছে হত্যা। বৈদ্যুতিক তার এলোমেলো থাকায় বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে এবং খাদ্যের অভাবে গত দুই যুগে প্রায় এক হাজার বানর মারা গেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। বরমী বাজরের ফারুক মৃধা জানান কাপাসিয়া, ভালুকা ও গফরগাঁয়ের সীমান্তবর্তী স্থান ঐতিহ্যের ধারক বরমীর বানরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকার না নিলে অচিরেই এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এখনও বরমী বাজারে ১ হাজারেরও বেশি বানর রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
বরমী রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিউল্লাহ ফকির বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ বানর দেখতে বরমী বাজারে যান। এঁদের করুণায়ই মূলত বানরগুলো বেঁচে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কোন সরকারই এই বানরের দিকে দৃষ্টি দেয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর বানরগুলো দলবেঁধে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ পেলে বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন দোকানে চুরি করে এরা। চুরিতেও এরা বেশ পাকা। সবচেয়ে প্রবীণ বানরের নেতৃত্বে এরা দল বেধে চলাচল এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানিতে দলবদ্ধভাবে গোসল করে। শ্রীপুর উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ আব্দুল জলিল বলেন, দূষিত পানিতে গোসল করার কারণে বানরগুলোর শরীরে নানারকম রোগ বাসা বেধেছে। এছাড়াও খাদ্যের অভাবজনিত রোগ তো আছেই। কোন বানরকে আঘাত করলে এরা জোটবদ্ধ হয়ে আঘাতকারীকে আক্রমন করে। শ্রীপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা দেবাশীষ নাগ বলেন, আমার উদ্যোগে ওই বানরগুলোকে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য বছরখানেক আগে স্থানীয় লোকজন ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও কিছু দিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
বরমীর বানরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে বরমী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আরাজ্জাক বেপারী জানান। বানরগুলোর জন্য নিরাপদ একটা আশ্রয়, চাহিদা মতো খাদ্যের ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরমী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বার বার সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি।
No comments