বিশ্বনাথে জাকিরকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ by নাজমুল ইসলাম মকবুল
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সভাপতি সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর জন্য কাঁদছে বৃহত্তর সিলেটসহ নিজ জন্মস্থান বিশ্বনাথের মানুষ। এ কান্না বাড়িয়ে দিয়েছে নিহত মনোয়ার, সেলিম ও জাকিরের বিয়োগ।
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে আনার পণ করে তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। তাদের শোকে স্বজনের আহাজারিতে বিশ্বনাথের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা।

সেলিমের পরিবারে চলছে শোকের মাতম : বিশ্বনাথের টেংরা (বাঘমারা) গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সেলিম আহমদ (২০)। তিনি অলঙ্কারী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা যায়। সংঘর্ষের সময় উপজেলা পরিষদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদিয়া মাদরাসার গেটের সামনে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। পরে র্যাব-পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর তার পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি প্রকাশ হলে পরিবারের লোকজন গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারে চলে শোকের মাতম। সেলিমের মা হাসিনা বেগম ছেলের মৃত্যু সংবাদ মেনে নিতে পারেননি। তার পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী জানান, সেলিম সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে মিছিলের সঙ্গে উপজেলা সদরে যান। চাচাতো ভাই ইউসুফ আলী বলেন, আমরা পত্রিকায় সেলিমের ছবি দেখে হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখে তাকে শনাক্ত করি।
দিনমজুর বাবা উপার্জনক্ষম ছেলে জাকিরকে হারিয়ে নির্বাক : পুলিশের গুলিতে নিহত জাকির হোসেনের (২৪) পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে পড়েন জাকিরের মা আর দিনমজুর বাবা। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে তারা নির্বাক। গত সোমবার পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের বাসিয়া ব্রিজের উপরে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন জাকির। এরপর পুলিশের হেফাজতে থাকাকালেই জাকিরকে বেদম মারধর করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্সাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান। তিনি পেশায় ছিলেন একজন রিকশাচালক। সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বালিউরার দোয়ারী গ্রামের ভুট্টো মিয়ার ছেলে তিনি। জাকিরের সহকর্মী বকুল মিয়া জানান, তিনি যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি করলে একটি গুলি তার পেটে লাগে। এ সময় জাকির মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। এ সময় শাসক দলের অস্ত্রধারী কয়েক যুবক জাকিরের পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপালে তার পায়ের মাংস কেটে ক্ষতবিক্ষত হয়। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হয়। পরিবারে ৩ ভাইয়ের মধ্যে জাকির ছিলেন সবার বড়। তার মৃত্যুতে পরিবারে কান্নার রোল যেন থামছেই না।
বিশ্বনাথে ৪ বিএনপি নেতা গ্রেফতারের প্রতিবাদ : বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৪ বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন উপজেলা সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, জেলা সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা সভাপতি মজাহিদ আলী, উপজেলা সহসভাপতি আবুল কালাম কচির এবং চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া। গতকাল বিকেলে সিলেট নগরীর গুলশান হোটেল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে। সিলেটের পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন জালাল উদ্দিন চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, তাকে ওসমানী নগর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বনাথের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবারের হরতাল চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্বনাথের ৮ হাজার জনতাকে আসামি করে থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়।
এদিকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ওই চার নেতাকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহানগর শাখার সভাপতি এমএ হক ও জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফফার, মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা শিগগিরই নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করেছেন, অন্যথায় আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করে আনা হবে বলে জানিয়েছেন।
No comments