চট্টগ্রাম বন্দর-চালু টার্মিনাল যাচ্ছে বেসরকারি হাতে! by মাসুদ মিলাদ

কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জেটি, যন্ত্রপাতি—সব অবকাঠামোই আছে বন্দরের চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি)। টার্মিনাল পরিচালনায় নতুন কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। তার পরও এই টার্মিনালে বিনিয়োগ করে পরিচালনার জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ করতে বন্দরকে নির্দেশ দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।


পিপিপির পরিপত্র (গত ৫ মে জারি হয়) অনুযায়ী, যেসব প্রকল্পে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হয়, সে ক্ষেত্রে পিপিপি প্রকল্প প্রযোজ্য। বন্দর সূত্র জানায়, এই টার্মিনাল নির্মাণ করে ২০০৬ সালে ১৫১ কোটি টাকার চারটি আধুনিক গ্যান্ট্রি ক্রেনও স্থাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল আছে আরও অন্তত ১৫ বছর। দরপত্রের মাধ্যমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজও করছে আধুনিক এই টার্মিনালে।
জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশে পিপিপির আওতায় এই টার্মিনালে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো থাকার পরও এই টার্মিনালে পিপিপি প্রযোজ্য কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্দরের অনেক বিষয় আমার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার সুযোগ হয় না।’ বিষয়টি নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন তিনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূরে আলম চৌধুরী লিটন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিসিটিতে পিপিপির আওতায় অপারেটর নিয়োগ হলে যন্ত্রপাতি খাতে বিনিয়োগ করে পরিচালনা করবে বেসরকারি অপারেটর। বিদেশের বন্দরগুলোতে এভাবে টার্মিনাল পরিচালনা করে দক্ষতা বাড়ায় আমরা সুপারিশ করেছি। এতে বন্দরের আয় কমার সুযোগ নেই।’
বন্দর পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে তিন বছরের জন্য এই টার্মিনালের দুটি জেটিতে নিজস্ব জনবল দিয়ে কনটেইনার ওঠানো-নামানো ও পরিবহনের কাজ করছে নিযুক্ত ঠিকাদার। এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনারপ্রতি ১৫৫ টাকা করে দিচ্ছে ঠিকাদারকে। আর জাহাজ কোম্পানি থেকে কনটেইনারপ্রতি ২২ থেকে ১৩০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত মাশুল আদায় করছে বন্দর।
বন্দরের অর্থ বিভাগ এবং পরিবহন বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বন্দরে কনটেইনার খাত থেকে আয় হয় ৯৭৬ কোটি টাকা। আর এই টার্মিনাল থেকে গত বছর আয় হয় আনুমানিক হিসেবে ৩০০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী বছরে ঠিকাদারকে দেওয়া হচ্ছে প্রায় চার কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখন নতুন করে অপারেটর নিয়োগ হলে মাশুলের টাকা নেবে বেসরকারি অপারেটর। আর সেই মাশুল থেকে দরপত্রের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট অংশ বন্দরকে রয়্যালটি বাবদ দেবে বেসরকারি অপারেটর।
বন্দরের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) হাদী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সব অবকাঠামো থাকায় এই টার্মিনালে পিপিপির পরিবর্তে প্রচলিত পদ্ধতিতে অপারেটর নিয়োগ বন্দরের জন্য লাভজনক। এর পরও বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হলে বন্দরের আয় হাতছাড়া হবে। সূত্র জানায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গত ১২ ডিসেম্বর এক চিঠিতে বলেছে, এই টার্মিনালে বর্তমানে নিযুক্ত ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে থেকে পিপিপি পদ্ধতি অনুসরণ করে বেসরকারি খাতে বন্দর পরিচালনা ছেড়ে দিতে হবে।
বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই টার্মিনালে যন্ত্রপাতিসহ সব অবকাঠামো আছে, এটা সত্য। তবে সরকার চাইলে এসব যন্ত্রপাতি অন্য টার্মিনালে সরিয়ে এখানে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য আহ্বান করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.