বরগুনায় ভুয়া চিকিৎসকের ছড়াছড়ি, মামলা by এম জসীম উদ্দীন
বরগুনায় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসকের ছড়াছড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে সাতজন ভুয়া চিকিৎসকের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব চিকিৎসক ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার (রোগনির্ণয় কেন্দ্র), ব্যক্তিগত চেম্বার বা ফার্মেসিতে বসে রোগী দেখেন।
এসব কথিত চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় তিন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। মামলার পর চারজন গা ঢাকা দিয়েছেন।
বরগুনার ছয়টি উপজেলায় অন্তত ২০০ জন ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ইউনুস আলী। তিনি বলেন, ‘এই চিকিৎসকদের শনাক্ত করতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাব।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী, ন্যূনতম এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ নামের সঙ্গে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বরগুনার সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতারণামূলক চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ধরনের আইন পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএমডিসি। এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।
পাথরঘাটা পৌরসভার চিকিৎসা কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র বেপারী নিজেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সনোলজিস্ট দাবি করেন। তিনি একই সঙ্গে পাথরঘাটার জহুরা খাতুন মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকের চিকিৎসক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নানা ধরনের ডিগ্রির উল্লেখ আছে তাঁর সাইনবোর্ডে। এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কীভাবে পৌরসভার চিকিৎসা কর্মকর্তা হলেন, জানতে চাইলে বিধান চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এমবিবিএস সমমানের ডিগ্রি আছে।’ পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
যোগাযোগ করা হলে পৌর মেয়র মল্লিক মোহাম্মদ আইউব বলেন, তাঁর জানামতে, বিধান চন্দ্র কলকাতা থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন।
জেলা সদরের শেরেবাংলা সড়কে বরগুনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ার সেন্টারে রোগী দেখেন আল-আমিন। তাঁর সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘বিডিএস (কলকাতা)’। সাইনবোর্ডটি সম্প্রতি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ক্লিনিকের মালিক আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনার (আল-আমিন) সনদে সমস্যা আছে। এ জন্য আমরা সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছি।’
কিন্তু আল-আমিন এখনো রোগী দেখছেন ওই ক্লিনিকে। তিনি স্বীকার করেছেন, সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা ডিগ্রি তিনি নেননি। বিএমডিসির চিকিৎসা সনদও নেই। তবে ডেন্টালের ওপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স করা আছে তাঁর।
পাথরঘাটা হাসপাতাল সড়কে শাপলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেণ্টারে রোগী দেখেন, এমনকি অস্ত্রোপচারও করেন চিত্তরঞ্জন বাছার। সাইনবোর্ডে তাঁর নামের পাশে লেখা—এমবিবিএস, এমএস (সার্জারি) ইউনিভার্সিটি অব কলকাতা, এমআরএসএইচ (লন্ডন), জেনারেল অ্যান্ড কসমেটিক সার্জন। অভিযোগ আছে, এসব ডিগ্রি, এমনকি বিএমডিসির নিবন্ধন তাঁর নেই। তিনি গত ১৮ নভেম্বর ওই ক্লিনিকে প্রসূতি আসমা বেগমের অস্ত্রোপচার করেন। পরে রোগীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত বছরের ১ জুন এলাচি বেগম নামে আরেক রোগীর জরায়ুতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মূত্রনালি কেটে ফেলেন চিত্তরঞ্জন। এই দুটি ঘটনায় কথিত এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। তিনি সম্প্রতি গা ঢাকা দেন। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে শাপলা ক্লিনিকও।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে চিত্তরঞ্জন দাবি করেন, তিনি এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। তবে বিএমডিসির নিবন্ধিত চিকিৎসক কি না, এই প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।
শাপলা ক্লিনিকের মালিক মকবুল হোসেন বলেন, ২০০৬ সালে ক্লিনিকটি চালু করেন তিনি। এখন বন্ধ রেখেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পেলে আবার চালু করা হবে বলে তিনি জানান। মকবুল জানান, তাঁর ক্লিনিকে এত দিন যাঁরা চিকিৎসা দিতেন, তাঁদের কারও চিকিৎসা সনদ তিনি জমা রাখেননি। তাই চিত্তরঞ্জনের চিকিৎসা সনদ আছে কি না, তা জানেন না।
পাথরঘাটা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর প্রসূতি তাজেনূর বেগমের অস্ত্রোপচার করেন ‘চিকিৎসক’ আইউব আলী ও তাহমিনা বেগম। ভুল চিকিৎসায় তাজেনূরের মৃত্যু হয়েছে অভিযোগে আইউব, তাহমিনাসহ ক্লিনিকের পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন রোগীর স্বামী। এরপর দুই কথিত চিকিৎসক গা ঢাকা দেন। ওই ক্লিনিকের সাইনবোর্ডে তাহমিনার নামের পাশে ডিগ্রি হিসেবে লেখা রয়েছে এমবিবিএস (ঢাকা), গাইনি অবস ও সনোলজিস্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহমিনা ঢাকার একটি হাসপাতালে সেবিকা ছিলেন। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে পাথরঘাটা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের পরিচালক আলমগীর হোসেনের দাবি, তাহমিনা বেগম একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ।
জেলা সদরের সিরাজ উদ্দীন সড়কে আল-মানার ইসলামী হাসপাতালে জাহাঙ্গীর হোসেন অস্ত্রোপচার করতেন। তিনি গত ১৪ অক্টোবর আরেক প্রসূতি সখিনা বেগমের অস্ত্রোপচার করেন। এর পরপর সখিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি চার দিন পর মারা যান।
এ ঘটনায় মামলা হলে গত ২০ অক্টোবর বরগুনা থানার পুলিশ ‘চিকিৎসক’ জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। জামিনে মুক্তির পর তিনি গা ঢাকা দেন। বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জাহাঙ্গীর এর আগে গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শাহনাজ বেগম নামে আরেক প্রসূতির টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলেন। চম্পা বেগম নামে আরেক গৃহবধূর অ্যাপেন্ডিকসের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মূত্রনালি কেটে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
আল-মানার ইসলামী হাসপাতালের পরিচালক কামাল হোসেন দাবি করেন, জাহাঙ্গীর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস এবং গাইনি ও অবেদন (অ্যানেসথেশিয়া) বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর এখন কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না। তবে তাঁর হাসপাতালে ভুল অস্ত্রোপচারের জন্য যেসব রোগী জটিল সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের প্রত্যেকের চিকিৎসার ব্যয়ভার তাঁরা বহন করেছেন।
বিভিন্ন রোগে তাৎক্ষণিক আরোগ্য লাভের নিশ্চয়তা দিয়ে পাথরঘাটা পৌর এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে ব্যক্তিগত চেম্বার খুলেছেন শ্যামল চন্দ্র। রোগীপ্রতি ২০০ টাকা ফি নেন তিনি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, জ্বর বা কোনো ব্যথা নিয়ে গেলে শ্যামল চন্দ্র অ্যাটরোপেন সালফেট, ডাইক্লোফেনাক ও ওরাডেক্সন (এডিও)—এই তিন ধরনের ইনজেকশন মিশিয়ে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করেন। এতে রোগী দ্রুত ব্যথামুক্ত হয়। অবশ্য এ কথা অস্বীকার করে শ্যামল চন্দ্র দাবি করেন, ‘হয়তো হাতযশের কারণে রোগীরা আমার চিকিৎসায় ভালো হয়। তাই বেশি রোগী আমার কাছে আসে।’
এ রকম ভুয়া চিকিৎসকদের চিহ্নিতকরণ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসল-নকল যাচাই-বাছাইয়ের এখতিয়ার আমাদের নেই।’ তাঁর দাবি, এসব দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে তিনি সহায়তা দেবেন।
বরগুনার ছয়টি উপজেলায় অন্তত ২০০ জন ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ইউনুস আলী। তিনি বলেন, ‘এই চিকিৎসকদের শনাক্ত করতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাব।’
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী, ন্যূনতম এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ নামের সঙ্গে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বরগুনার সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতারণামূলক চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ধরনের আইন পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএমডিসি। এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।
পাথরঘাটা পৌরসভার চিকিৎসা কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র বেপারী নিজেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সনোলজিস্ট দাবি করেন। তিনি একই সঙ্গে পাথরঘাটার জহুরা খাতুন মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকের চিকিৎসক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নানা ধরনের ডিগ্রির উল্লেখ আছে তাঁর সাইনবোর্ডে। এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কীভাবে পৌরসভার চিকিৎসা কর্মকর্তা হলেন, জানতে চাইলে বিধান চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এমবিবিএস সমমানের ডিগ্রি আছে।’ পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
যোগাযোগ করা হলে পৌর মেয়র মল্লিক মোহাম্মদ আইউব বলেন, তাঁর জানামতে, বিধান চন্দ্র কলকাতা থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন।
জেলা সদরের শেরেবাংলা সড়কে বরগুনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ার সেন্টারে রোগী দেখেন আল-আমিন। তাঁর সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘বিডিএস (কলকাতা)’। সাইনবোর্ডটি সম্প্রতি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ক্লিনিকের মালিক আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনার (আল-আমিন) সনদে সমস্যা আছে। এ জন্য আমরা সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলেছি।’
কিন্তু আল-আমিন এখনো রোগী দেখছেন ওই ক্লিনিকে। তিনি স্বীকার করেছেন, সাইনবোর্ডে ব্যবহার করা ডিগ্রি তিনি নেননি। বিএমডিসির চিকিৎসা সনদও নেই। তবে ডেন্টালের ওপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স করা আছে তাঁর।
পাথরঘাটা হাসপাতাল সড়কে শাপলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেণ্টারে রোগী দেখেন, এমনকি অস্ত্রোপচারও করেন চিত্তরঞ্জন বাছার। সাইনবোর্ডে তাঁর নামের পাশে লেখা—এমবিবিএস, এমএস (সার্জারি) ইউনিভার্সিটি অব কলকাতা, এমআরএসএইচ (লন্ডন), জেনারেল অ্যান্ড কসমেটিক সার্জন। অভিযোগ আছে, এসব ডিগ্রি, এমনকি বিএমডিসির নিবন্ধন তাঁর নেই। তিনি গত ১৮ নভেম্বর ওই ক্লিনিকে প্রসূতি আসমা বেগমের অস্ত্রোপচার করেন। পরে রোগীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত বছরের ১ জুন এলাচি বেগম নামে আরেক রোগীর জরায়ুতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মূত্রনালি কেটে ফেলেন চিত্তরঞ্জন। এই দুটি ঘটনায় কথিত এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। তিনি সম্প্রতি গা ঢাকা দেন। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে শাপলা ক্লিনিকও।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে চিত্তরঞ্জন দাবি করেন, তিনি এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। তবে বিএমডিসির নিবন্ধিত চিকিৎসক কি না, এই প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।
শাপলা ক্লিনিকের মালিক মকবুল হোসেন বলেন, ২০০৬ সালে ক্লিনিকটি চালু করেন তিনি। এখন বন্ধ রেখেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পেলে আবার চালু করা হবে বলে তিনি জানান। মকবুল জানান, তাঁর ক্লিনিকে এত দিন যাঁরা চিকিৎসা দিতেন, তাঁদের কারও চিকিৎসা সনদ তিনি জমা রাখেননি। তাই চিত্তরঞ্জনের চিকিৎসা সনদ আছে কি না, তা জানেন না।
পাথরঘাটা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর প্রসূতি তাজেনূর বেগমের অস্ত্রোপচার করেন ‘চিকিৎসক’ আইউব আলী ও তাহমিনা বেগম। ভুল চিকিৎসায় তাজেনূরের মৃত্যু হয়েছে অভিযোগে আইউব, তাহমিনাসহ ক্লিনিকের পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন রোগীর স্বামী। এরপর দুই কথিত চিকিৎসক গা ঢাকা দেন। ওই ক্লিনিকের সাইনবোর্ডে তাহমিনার নামের পাশে ডিগ্রি হিসেবে লেখা রয়েছে এমবিবিএস (ঢাকা), গাইনি অবস ও সনোলজিস্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাহমিনা ঢাকার একটি হাসপাতালে সেবিকা ছিলেন। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে পাথরঘাটা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের পরিচালক আলমগীর হোসেনের দাবি, তাহমিনা বেগম একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ।
জেলা সদরের সিরাজ উদ্দীন সড়কে আল-মানার ইসলামী হাসপাতালে জাহাঙ্গীর হোসেন অস্ত্রোপচার করতেন। তিনি গত ১৪ অক্টোবর আরেক প্রসূতি সখিনা বেগমের অস্ত্রোপচার করেন। এর পরপর সখিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি চার দিন পর মারা যান।
এ ঘটনায় মামলা হলে গত ২০ অক্টোবর বরগুনা থানার পুলিশ ‘চিকিৎসক’ জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। জামিনে মুক্তির পর তিনি গা ঢাকা দেন। বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জাহাঙ্গীর এর আগে গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শাহনাজ বেগম নামে আরেক প্রসূতির টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলেন। চম্পা বেগম নামে আরেক গৃহবধূর অ্যাপেন্ডিকসের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মূত্রনালি কেটে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
আল-মানার ইসলামী হাসপাতালের পরিচালক কামাল হোসেন দাবি করেন, জাহাঙ্গীর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস এবং গাইনি ও অবেদন (অ্যানেসথেশিয়া) বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর এখন কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না। তবে তাঁর হাসপাতালে ভুল অস্ত্রোপচারের জন্য যেসব রোগী জটিল সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের প্রত্যেকের চিকিৎসার ব্যয়ভার তাঁরা বহন করেছেন।
বিভিন্ন রোগে তাৎক্ষণিক আরোগ্য লাভের নিশ্চয়তা দিয়ে পাথরঘাটা পৌর এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে ব্যক্তিগত চেম্বার খুলেছেন শ্যামল চন্দ্র। রোগীপ্রতি ২০০ টাকা ফি নেন তিনি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, জ্বর বা কোনো ব্যথা নিয়ে গেলে শ্যামল চন্দ্র অ্যাটরোপেন সালফেট, ডাইক্লোফেনাক ও ওরাডেক্সন (এডিও)—এই তিন ধরনের ইনজেকশন মিশিয়ে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করেন। এতে রোগী দ্রুত ব্যথামুক্ত হয়। অবশ্য এ কথা অস্বীকার করে শ্যামল চন্দ্র দাবি করেন, ‘হয়তো হাতযশের কারণে রোগীরা আমার চিকিৎসায় ভালো হয়। তাই বেশি রোগী আমার কাছে আসে।’
এ রকম ভুয়া চিকিৎসকদের চিহ্নিতকরণ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরগুনার সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসল-নকল যাচাই-বাছাইয়ের এখতিয়ার আমাদের নেই।’ তাঁর দাবি, এসব দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে তিনি সহায়তা দেবেন।
No comments