একুশ শতক- ডিজিটাল যুগের পেশা ॥ ইন্টারনেটই মূল কেন্দ্র by মোস্তাফা জব্বার
কিন্তু আমাদের জন্য বিষয়টি বৈপরীত্য নিয়ে
এসেছে। যেহেতু আমরা কৃষি যুগটিকে এখনও অতিক্রম করিনি এবং আমাদের
মানবসম্পদের শতকরা ৬০ ভাগ এখনও কেবল কৃষি খাতেই নিয়োজিত সেহেতু আমদের
প্রস্তুতির স্বরূপটি খুব লাগসইভাবে ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত নয়।
বরং শিল্পযুগে কেরানি তৈরি করার যে প্রবণতা শিক্ষার ভিত্তিমূলে কাজ করত
সেটি এখন আমাদের শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দুনিয়ার সকল
দেশের মতোই আমরাও পেশাজীবী তৈরি করছি। তবে তাদের যে মাপের যোগ্যতা তৈরি করা
দরকার সেটি আমরা করতে পারছি না।
সেজন্যই প্রশ্ন ওঠে, একটি ডিজিটাল যুগ বা কাগজবিহীন পৃথিবীর জন্য ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসা ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, অফিস পরিচালক- কিছুই কি সঠিকভাবে তৈরি করছি আমরা? ওদের জন্য যেসব কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে সেগুলো কি এখন কাজ করার উপযুক্ত? যেমন ধরা যাক, আমাদের বাণিজ্য শাখার কারিকুলামের কথা। ওখানে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয়, যা পড়ানো হয় তার সঙ্গে বাস্তবতার কোন সম্পর্কই নেই। আমরা তাদের ব্যাংকিং শেখাই কিন্তু তাতে অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য নতুন ধরনের ব্যাংকিং বা তার প্রয়োগ সম্পর্কে একটি বাক্যও শেখাই না। যেখানে প্রতিটি কর্মজীবীকে তার কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয় সেখানে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে কোন ধারণাই দিইনি। শহর-উপশহর বা সচ্ছল অঞ্চলে কম্পিউটারের কিছুটা প্রবেশ ঘটলেও আমাদের দেশের দরিদ্র, গ্রামের বা সাধারণ ছেলেমেয়েদের বৃহৎ অংশ শিক্ষা জীবন শেষ করার আগে কোনদিন কম্পিউটার স্পর্শ করে দেখে না। কম্পিউটার বিষয়টি নবম শ্রেণীতে অপশনাল পাঠ্য হয়ে আছে। বিশ্বে যেখানে ইন্টারনেট না জানাটাকে মূর্খতা বলে, সেখানে ইন্টারনেট এখনও একটি বিলাসবহুল পণ্য। বিশ্বের শিশুরা যেখানে আড়াই বছর বয়সে কম্পিউটার দিয়ে লেখাপড়া শেখা শুরু করে সেখানে বাংলাদেশের যুবকরাও কম্পিউটার প্রযুক্তিকে ক্লাসরুমে দেখতে পায়নি।
তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরিতে জটিলতা : বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরিতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিল না। তবুও সাধারণ শিক্ষার চরম দুরবস্থার মাঝেও আমরা তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পেশাজীবী তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রসর হতে থাকি। যদিও ডেস্কটপ প্রকাশনা বিপ্লব শুরু হবার আগে এই প্রচেষ্টার তেমন কোন সুফল পাওয়া যায়নি তথাপি ব্যবসা-বাণিজ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করার একটা ন্যূনতম ঝোঁক আমাদের মাঝে কাজ করত। ৮৭ সালের ডিটিপি বিপ্লবের পর কম্পিউটার যখন বাংলাদেশে সচেতনতা গড়ে তোলে, প্রতিটি জোয়ারের মতো তখনও ভাবা হয়েছিল এই বুঝি আমাদের স্বপ্নের বরপুত্র এসে গেল। সেই সময়ে বিশেষত সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একটি ব্যাপক জনগোষ্ঠী ডেস্কটপ পাবলিশিং নামক একটি পেশায় যুক্ত হতে থাকে। একটি সাধারণ কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার ও একটি ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে নানাবিধ সেবা দেবার কাজটি শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জেও ছড়াতে থাকে। সেই সময়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জোয়ারও আসে। আমরা ভাবতে থাকি, বেকারত্বের দুঃস্বপ্ন কম্পিউটারের কাজের ফুৎকারে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আমরা ভাবি, তার ছায়ায় আমরা বেড়ে উঠব এবং বাংলাদেশে কেউ বেকার থাকবে না।
বস্তুতপক্ষে তা তো হয়ইনি। বরং এখানে চলেছে আরও বড় প্রতারণা। পূর্ব শিক্ষিত লোকজন কম্পিউটার শিখে হয়েছিল ডাবল বেকার। শহরগুলোর অলিতে গলিতে দশফুট বাই বারো ফুট দোকানে দেয়া হচ্ছিল হায়ার ডিপ্লোমা, গ্র্যাজুয়েশন ইন কম্পিউটার সায়েন্স সার্টিফিকেট। সেই সার্টিফিকেটের মানের কথা বলার প্রয়োজন আছে কি? বগুড়ার আব্দুল মান্নান সরকারের নট্রামসের সেই দিনগুলোর কথা অনেকেরই মনে নেই হয়ত। তবে এখনকার কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রায় একই ধরনের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের কথা আমরা সবাই জানি।
অনেকেরই মনে থাকতে পারে যে, এখন থেকে প্রায় এক যুগ আগে এই দেশে পাইকারি হারে আমদানি করা হয়েছিল বিদেশী (প্রধানত ভারতীয়) ফ্রান্সাইস প্রতিষ্ঠানসমূহকে। সেইসব ফ্রান্সাইস প্রতিষ্ঠান যতটা বলত ততটা করত না। এসব প্রতিষ্ঠানে একদিকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড পড়ানোর জন্য ৫৬ হাজার টাকা নেয়া হতো, আবার হাজার হাজার টাকা বেতন দিয়ে ওয়ার্ড পড়ানোর শিক্ষক আনা হতো ভারত থেকে। অন্যদিকে বিপুল টাকার বিনিময়ে পাওয়া প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর সুযোগ পাওয়া যেত না দেশের কোথাও। এমনকি একটি অদ্ভুত বিষয় এ দেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা তলিয়ে দেখেননি। বিগত ২৫ বছরে এ দেশে আইটি খাতে ব্যাপকভাবে চাকরি হয়েছে মুদ্রণ-প্রকাশনা ও আইটিইএস খাতে। কিন্তু আমরা আইটি শিক্ষা দিচ্ছিলাম ওয়ার্ক টেকনোলজিতে। এদেশে যে তথাকথিত আইটি শিক্ষার ভবিষ্যত আইটি এনেবল সার্ভিসেস-এর মাঝে সীমিত হয়ে পড়েছে সে বিষয়টি কোন প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞই স্পষ্ট করে বলেননি।
মোদ্দা কথা আমাদের সন্তানেরা যুুগোপযোগী শিক্ষা তো বটেই কার্যকর আইটি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণও পায়নি। শুল্কমুক্ত কম্পিউটার ঘরে ঘরে পেয়েও আমরা পাইনি দক্ষ প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী।
তবে খুব সম্প্রতি বাংলাদেশ মানবসম্পদ তৈরিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেবার পাশাপাশি পাঠ্যসূচির পরিবর্তন করায় মনোযোগী হবার ফলে আমরা প্রচলিত ধারায় কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার চরম দীনতার জন্য ১০ বছর আগেই জার্মানি থেকে আমরা ১০ হাজার চাকরির অফার পেয়েও কোটি কোটি বেকারের দেশ থেকে মাত্র ১৭ জনকে চাকরি দিতে পেরেছিলাম। এখনও বিদেশিরা আইটি খাতে তাদের গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করার সময় জনসম্পদ খোঁজে পায় না। স্যামসাং নামক একটি কোরীয় কোম্পানি এখনও তাদের প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রকৌশলী পায়নি। এটিই যদি আমাদের বিশ্ববাজারে চাকরি পাবার মান হয়ে দাঁড়ায় তবে আমাদের একসময়ে মাথার চুল ছিড়তে হবে।
নতুন শিক্ষানীতি : ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ একটি বিদেশি, ঔপনিবেশিক ও শিল্পযুগের শিক্ষা দিয়ে তার মানবসম্পদ তৈরিতে যাত্রা শুরু করে। এই অঞ্চলে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল ইংরেজদের দেশীয় তাবেদার তৈরি এবং পাকিস্তানীদের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানী জাতীয়তার ভিত্তি নির্মাণের জন্য শিক্ষার আধুনিক অংশটাকে পশ্চাতে ফেলে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রসারিত করা। স্বাধীনতা উত্তরকালে তাই আমরা শিক্ষার আধুনিকতম ধারাটিতে পা ফেলতে অনেক সময় নিয়েছি। ২০০৯ সালের ক্ষমতাসীন সরকারের অনুমোদিত শিক্ষানীতির আগে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং আজকের দিনের সাথে মোটামুটি সঙ্গতি রাখতে পারে তেমন কোন শিক্ষানীতিই আমরা প্রণয়ন করতে পারিনি।
বাংলাদেশের সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থায় জটিলতার অভাব নেই। নানা ধরনের শিক্ষার চাপে জর্জরিত ও বিভক্ত এই শিক্ষাব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের নতুন শিক্ষানীতিতে। এই নীতির ফলে পাঠক্রমে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষাকে অনেকটাই সমন্বিত করা হয়েছে। তবে আমার নিজের কাছে যেটি সবচেয়ে ভাল দিক বলে মনে হচ্ছে সেটি হলো ২০১২ সাল থেকেই বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলন এবং ধীরে ধীরে ক্লাসরুমকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা বা কর্মউদ্যোগ। এর ফলে পশ্চাৎপদ শিক্ষার কিছু না কিছু অগ্রগতি হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে পারলে আমরা কিছুটা হলেও সামনে যেতে পারব।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পেশা : দিনে দিনে এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশে বিদ্যমান পেশাগুলো থাকবে না। অন্তত এটি আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে, সকল পেশার যোগ্যতা হিসেবেই কম্পিউটার জানা, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারা ইত্যাদি যুক্ত হবে। তবে এটিও স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইন্টারনেট এবং আইসিটি নিজেই তৈরি করে বিশাল পেশার জগত। আমরা অন্য পেশাগুলোর কথা না বলে কেবল কম্পিউটার ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ঘিরে যেসব পেশার উদ্ভব হচ্ছে সেগুলোর নিয়ে একটু আলোচনা করব।
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং : বাংলাদেশে এখন একটি ঝোঁক হচ্ছে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। বলা হয়ে থাকে যে, এই খাতে এখন আমাদের কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী কাজ করে। এদের আয় ২০১১ সালে ১১ মিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এর আগের বছর সেটি ৭ মিলিয়ন ডলার ছিল। সামনের বছর এটি ২৩ মিলিয়ন ডলার হতে পারে।
১-৩ ডিসেম্বর ২০১১ অনুষ্ঠিত ই-এশিয়ায় ওডেস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট কুপার এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ তখন ওডেস্ক-এ আউটসোর্সিং-এ চতুর্থ স্থানে ছিল। প্রথম স্থানে ফিলিপিন্স, দ্বিতীয় স্থানে ভারত, তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র এবং চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ ছিল। ম্যাট কুপার জানান যে, আমাদের দেশের যেসব তরুণ-তরুণী এই খাতে কাজ করেন তারা বেশিরভাগ কাজ করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করার। এরপর তারা ডাটা এন্ট্রির কাজ করেন এবং কাজের দিকে থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট। (সূত্র দৈনিক প্রথম আলো ৯ ডিসেম্বর ২০১১)।
মে ১২ সময়কালে ম্যাট কুপার আবার বাংলাদেশে আসেন। তাঁর সেই সফরে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠকে জানান যে, তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ৭ হাজারের বেশি গ্রাহক কাজ করাচ্ছে। তারা শতকরা ৭৬ ভাগ কাজ স্থায়ীভাবে করায়। ওডেস্কের হিসাব অনুসারে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি ঘণ্টা ১০ ডলারে কাজ শুরু করলেও ফ্রি-ল্যান্সাররা পরের বছরেই ঘণ্টায় ১৬ ডলার কামাই করতে পারে। ২০০৯ সালে ওডেস্কে বাংলাদেশীদের কাজ ছিল শতকরা ২ ভাগ, ২০১১ সালে সেটি শতকরা ১২ ভাগে উঠেছে। ২০১২-এর মে মাসে ওডেস্কে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় স্থানে। ২০১১ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশীরা ৪.৫ লাখ ঘণ্টা কাজ করেছিল। ২০১২ সালে সেটি ৭.২০ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০১২ সালে ওডেস্কে বাংলাদেশীদের মোট কাজ ২৮ লাখ ঘণ্টা হতে পারে। কালের কণ্ঠকে দেয়া সাক্ষাতকারে ম্যাট কুপারস জানান যে, বাংলাদেশের লোকজন বেশিরভাগ কাজ করছে ডাটা এন্ট্রি ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের। মোট কাজের শতকরা ৪২ ভাগই এই দুটি কাজ।
ফ্রিল্যান্স নিয়ে আমাদের হুজুগটা বেশ বড়। এখন প্রায় প্রতিটি তরুণ-তরুণী এই কাজে যুক্ত হবার স্বপ্ন দেখে। এমন হুজুগ এর আগে ডাটা এন্ট্রি, ওয়াইটুকে এবং ট্রান্সক্রিপশন নিয়ে হয়েছে। তখন পণ্ডিতরা হুজুগে ছিলেন। এখন যারা কাজ করবে তারাও এই হুজুগে রয়েছে।
মে ১২ সময়কালে বাংলাদেশে আসা ওডেস্ক-এর কর্মকর্তা ম্যাট কুপার ও মনিকা চুয়া দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, বর্তমানে স্মার্টফোনের এ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন করার কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এর মাঝে আই ও.এস এবং এন্ড্রয়েড ও.এস-এর কাজের চাহিদা বেশি বলে তাঁরা জানান। তাঁরা বলেন যে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করার কাজে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়ে আছে। তবে তাঁরা বলেন যে, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, ওয়েব গবেষণা, গ্রাহক সেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গণযোগাযোগ, লেখা ও অনুবাদসহ নানা ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। (দৈনিক প্রথম আলো, ২৫ মে ১২)
ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচীর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net
সেজন্যই প্রশ্ন ওঠে, একটি ডিজিটাল যুগ বা কাগজবিহীন পৃথিবীর জন্য ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসা ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, অফিস পরিচালক- কিছুই কি সঠিকভাবে তৈরি করছি আমরা? ওদের জন্য যেসব কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে সেগুলো কি এখন কাজ করার উপযুক্ত? যেমন ধরা যাক, আমাদের বাণিজ্য শাখার কারিকুলামের কথা। ওখানে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয়, যা পড়ানো হয় তার সঙ্গে বাস্তবতার কোন সম্পর্কই নেই। আমরা তাদের ব্যাংকিং শেখাই কিন্তু তাতে অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য নতুন ধরনের ব্যাংকিং বা তার প্রয়োগ সম্পর্কে একটি বাক্যও শেখাই না। যেখানে প্রতিটি কর্মজীবীকে তার কর্মক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয় সেখানে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে কোন ধারণাই দিইনি। শহর-উপশহর বা সচ্ছল অঞ্চলে কম্পিউটারের কিছুটা প্রবেশ ঘটলেও আমাদের দেশের দরিদ্র, গ্রামের বা সাধারণ ছেলেমেয়েদের বৃহৎ অংশ শিক্ষা জীবন শেষ করার আগে কোনদিন কম্পিউটার স্পর্শ করে দেখে না। কম্পিউটার বিষয়টি নবম শ্রেণীতে অপশনাল পাঠ্য হয়ে আছে। বিশ্বে যেখানে ইন্টারনেট না জানাটাকে মূর্খতা বলে, সেখানে ইন্টারনেট এখনও একটি বিলাসবহুল পণ্য। বিশ্বের শিশুরা যেখানে আড়াই বছর বয়সে কম্পিউটার দিয়ে লেখাপড়া শেখা শুরু করে সেখানে বাংলাদেশের যুবকরাও কম্পিউটার প্রযুক্তিকে ক্লাসরুমে দেখতে পায়নি।
তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরিতে জটিলতা : বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরিতে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিল না। তবুও সাধারণ শিক্ষার চরম দুরবস্থার মাঝেও আমরা তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পেশাজীবী তৈরি করার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রসর হতে থাকি। যদিও ডেস্কটপ প্রকাশনা বিপ্লব শুরু হবার আগে এই প্রচেষ্টার তেমন কোন সুফল পাওয়া যায়নি তথাপি ব্যবসা-বাণিজ্যে কম্পিউটার ব্যবহার করার একটা ন্যূনতম ঝোঁক আমাদের মাঝে কাজ করত। ৮৭ সালের ডিটিপি বিপ্লবের পর কম্পিউটার যখন বাংলাদেশে সচেতনতা গড়ে তোলে, প্রতিটি জোয়ারের মতো তখনও ভাবা হয়েছিল এই বুঝি আমাদের স্বপ্নের বরপুত্র এসে গেল। সেই সময়ে বিশেষত সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একটি ব্যাপক জনগোষ্ঠী ডেস্কটপ পাবলিশিং নামক একটি পেশায় যুক্ত হতে থাকে। একটি সাধারণ কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার ও একটি ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে নানাবিধ সেবা দেবার কাজটি শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জেও ছড়াতে থাকে। সেই সময়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জোয়ারও আসে। আমরা ভাবতে থাকি, বেকারত্বের দুঃস্বপ্ন কম্পিউটারের কাজের ফুৎকারে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আমরা ভাবি, তার ছায়ায় আমরা বেড়ে উঠব এবং বাংলাদেশে কেউ বেকার থাকবে না।
বস্তুতপক্ষে তা তো হয়ইনি। বরং এখানে চলেছে আরও বড় প্রতারণা। পূর্ব শিক্ষিত লোকজন কম্পিউটার শিখে হয়েছিল ডাবল বেকার। শহরগুলোর অলিতে গলিতে দশফুট বাই বারো ফুট দোকানে দেয়া হচ্ছিল হায়ার ডিপ্লোমা, গ্র্যাজুয়েশন ইন কম্পিউটার সায়েন্স সার্টিফিকেট। সেই সার্টিফিকেটের মানের কথা বলার প্রয়োজন আছে কি? বগুড়ার আব্দুল মান্নান সরকারের নট্রামসের সেই দিনগুলোর কথা অনেকেরই মনে নেই হয়ত। তবে এখনকার কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রায় একই ধরনের সার্টিফিকেট বাণিজ্যের কথা আমরা সবাই জানি।
অনেকেরই মনে থাকতে পারে যে, এখন থেকে প্রায় এক যুগ আগে এই দেশে পাইকারি হারে আমদানি করা হয়েছিল বিদেশী (প্রধানত ভারতীয়) ফ্রান্সাইস প্রতিষ্ঠানসমূহকে। সেইসব ফ্রান্সাইস প্রতিষ্ঠান যতটা বলত ততটা করত না। এসব প্রতিষ্ঠানে একদিকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড পড়ানোর জন্য ৫৬ হাজার টাকা নেয়া হতো, আবার হাজার হাজার টাকা বেতন দিয়ে ওয়ার্ড পড়ানোর শিক্ষক আনা হতো ভারত থেকে। অন্যদিকে বিপুল টাকার বিনিময়ে পাওয়া প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর সুযোগ পাওয়া যেত না দেশের কোথাও। এমনকি একটি অদ্ভুত বিষয় এ দেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা তলিয়ে দেখেননি। বিগত ২৫ বছরে এ দেশে আইটি খাতে ব্যাপকভাবে চাকরি হয়েছে মুদ্রণ-প্রকাশনা ও আইটিইএস খাতে। কিন্তু আমরা আইটি শিক্ষা দিচ্ছিলাম ওয়ার্ক টেকনোলজিতে। এদেশে যে তথাকথিত আইটি শিক্ষার ভবিষ্যত আইটি এনেবল সার্ভিসেস-এর মাঝে সীমিত হয়ে পড়েছে সে বিষয়টি কোন প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞই স্পষ্ট করে বলেননি।
মোদ্দা কথা আমাদের সন্তানেরা যুুগোপযোগী শিক্ষা তো বটেই কার্যকর আইটি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণও পায়নি। শুল্কমুক্ত কম্পিউটার ঘরে ঘরে পেয়েও আমরা পাইনি দক্ষ প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী।
তবে খুব সম্প্রতি বাংলাদেশ মানবসম্পদ তৈরিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেবার পাশাপাশি পাঠ্যসূচির পরিবর্তন করায় মনোযোগী হবার ফলে আমরা প্রচলিত ধারায় কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার চরম দীনতার জন্য ১০ বছর আগেই জার্মানি থেকে আমরা ১০ হাজার চাকরির অফার পেয়েও কোটি কোটি বেকারের দেশ থেকে মাত্র ১৭ জনকে চাকরি দিতে পেরেছিলাম। এখনও বিদেশিরা আইটি খাতে তাদের গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করার সময় জনসম্পদ খোঁজে পায় না। স্যামসাং নামক একটি কোরীয় কোম্পানি এখনও তাদের প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রকৌশলী পায়নি। এটিই যদি আমাদের বিশ্ববাজারে চাকরি পাবার মান হয়ে দাঁড়ায় তবে আমাদের একসময়ে মাথার চুল ছিড়তে হবে।
নতুন শিক্ষানীতি : ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ একটি বিদেশি, ঔপনিবেশিক ও শিল্পযুগের শিক্ষা দিয়ে তার মানবসম্পদ তৈরিতে যাত্রা শুরু করে। এই অঞ্চলে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল ইংরেজদের দেশীয় তাবেদার তৈরি এবং পাকিস্তানীদের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানী জাতীয়তার ভিত্তি নির্মাণের জন্য শিক্ষার আধুনিক অংশটাকে পশ্চাতে ফেলে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রসারিত করা। স্বাধীনতা উত্তরকালে তাই আমরা শিক্ষার আধুনিকতম ধারাটিতে পা ফেলতে অনেক সময় নিয়েছি। ২০০৯ সালের ক্ষমতাসীন সরকারের অনুমোদিত শিক্ষানীতির আগে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং আজকের দিনের সাথে মোটামুটি সঙ্গতি রাখতে পারে তেমন কোন শিক্ষানীতিই আমরা প্রণয়ন করতে পারিনি।
বাংলাদেশের সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থায় জটিলতার অভাব নেই। নানা ধরনের শিক্ষার চাপে জর্জরিত ও বিভক্ত এই শিক্ষাব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের নতুন শিক্ষানীতিতে। এই নীতির ফলে পাঠক্রমে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষাকে অনেকটাই সমন্বিত করা হয়েছে। তবে আমার নিজের কাছে যেটি সবচেয়ে ভাল দিক বলে মনে হচ্ছে সেটি হলো ২০১২ সাল থেকেই বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষার প্রচলন এবং ধীরে ধীরে ক্লাসরুমকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা বা কর্মউদ্যোগ। এর ফলে পশ্চাৎপদ শিক্ষার কিছু না কিছু অগ্রগতি হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে পারলে আমরা কিছুটা হলেও সামনে যেতে পারব।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পেশা : দিনে দিনে এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে, ডিজিটাল বাংলাদেশে বিদ্যমান পেশাগুলো থাকবে না। অন্তত এটি আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে, সকল পেশার যোগ্যতা হিসেবেই কম্পিউটার জানা, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারা ইত্যাদি যুক্ত হবে। তবে এটিও স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইন্টারনেট এবং আইসিটি নিজেই তৈরি করে বিশাল পেশার জগত। আমরা অন্য পেশাগুলোর কথা না বলে কেবল কম্পিউটার ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ঘিরে যেসব পেশার উদ্ভব হচ্ছে সেগুলোর নিয়ে একটু আলোচনা করব।
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং : বাংলাদেশে এখন একটি ঝোঁক হচ্ছে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। বলা হয়ে থাকে যে, এই খাতে এখন আমাদের কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী কাজ করে। এদের আয় ২০১১ সালে ১১ মিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এর আগের বছর সেটি ৭ মিলিয়ন ডলার ছিল। সামনের বছর এটি ২৩ মিলিয়ন ডলার হতে পারে।
১-৩ ডিসেম্বর ২০১১ অনুষ্ঠিত ই-এশিয়ায় ওডেস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট কুপার এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ তখন ওডেস্ক-এ আউটসোর্সিং-এ চতুর্থ স্থানে ছিল। প্রথম স্থানে ফিলিপিন্স, দ্বিতীয় স্থানে ভারত, তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র এবং চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ ছিল। ম্যাট কুপার জানান যে, আমাদের দেশের যেসব তরুণ-তরুণী এই খাতে কাজ করেন তারা বেশিরভাগ কাজ করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করার। এরপর তারা ডাটা এন্ট্রির কাজ করেন এবং কাজের দিকে থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট। (সূত্র দৈনিক প্রথম আলো ৯ ডিসেম্বর ২০১১)।
মে ১২ সময়কালে ম্যাট কুপার আবার বাংলাদেশে আসেন। তাঁর সেই সফরে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠকে জানান যে, তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ৭ হাজারের বেশি গ্রাহক কাজ করাচ্ছে। তারা শতকরা ৭৬ ভাগ কাজ স্থায়ীভাবে করায়। ওডেস্কের হিসাব অনুসারে আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা প্রতি ঘণ্টা ১০ ডলারে কাজ শুরু করলেও ফ্রি-ল্যান্সাররা পরের বছরেই ঘণ্টায় ১৬ ডলার কামাই করতে পারে। ২০০৯ সালে ওডেস্কে বাংলাদেশীদের কাজ ছিল শতকরা ২ ভাগ, ২০১১ সালে সেটি শতকরা ১২ ভাগে উঠেছে। ২০১২-এর মে মাসে ওডেস্কে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় স্থানে। ২০১১ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশীরা ৪.৫ লাখ ঘণ্টা কাজ করেছিল। ২০১২ সালে সেটি ৭.২০ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০১২ সালে ওডেস্কে বাংলাদেশীদের মোট কাজ ২৮ লাখ ঘণ্টা হতে পারে। কালের কণ্ঠকে দেয়া সাক্ষাতকারে ম্যাট কুপারস জানান যে, বাংলাদেশের লোকজন বেশিরভাগ কাজ করছে ডাটা এন্ট্রি ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের। মোট কাজের শতকরা ৪২ ভাগই এই দুটি কাজ।
ফ্রিল্যান্স নিয়ে আমাদের হুজুগটা বেশ বড়। এখন প্রায় প্রতিটি তরুণ-তরুণী এই কাজে যুক্ত হবার স্বপ্ন দেখে। এমন হুজুগ এর আগে ডাটা এন্ট্রি, ওয়াইটুকে এবং ট্রান্সক্রিপশন নিয়ে হয়েছে। তখন পণ্ডিতরা হুজুগে ছিলেন। এখন যারা কাজ করবে তারাও এই হুজুগে রয়েছে।
মে ১২ সময়কালে বাংলাদেশে আসা ওডেস্ক-এর কর্মকর্তা ম্যাট কুপার ও মনিকা চুয়া দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন যে, বর্তমানে স্মার্টফোনের এ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন করার কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এর মাঝে আই ও.এস এবং এন্ড্রয়েড ও.এস-এর কাজের চাহিদা বেশি বলে তাঁরা জানান। তাঁরা বলেন যে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করার কাজে বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়ে আছে। তবে তাঁরা বলেন যে, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, ওয়েব গবেষণা, গ্রাহক সেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া, গণযোগাযোগ, লেখা ও অনুবাদসহ নানা ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। (দৈনিক প্রথম আলো, ২৫ মে ১২)
ঢাকা, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচীর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net
No comments