কৃষি-আলু চাষে রাষ্ট্রীয় পরিচর্যা প্রয়োজন by তুহিন ওয়াদুদ
কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধতা সত্ত্বেও যেখানে বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্র উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমাদের প্রধান খাদ্যের তালিকায় ভাতের সঙ্গে আলু অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব
অনেক ব্যয়, অনেক কায়িক শ্রম বিনিয়োগ করে রংপুরের কৃষক চোখভরা স্বপ্ন আর বুকভরা আশা নিয়ে আলুর চাষ করেন। অভাবনীয় বাম্পার ফলনও হয়। রাষ্ট্রীয় পরিচর্যা না থাকায় কৃষকরা মুনাফা করতে ব্যর্থ হন। এ বছরের উৎপাদিত আলু শুধুই সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা সামান্য কিছু হিমঘরের ব্যবস্থা থাকলেও সরকারি উদ্যোগে কোনো হিমঘরের ব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রান্তিকচাষি আলু সংরক্ষণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্য সহনশীল রাখার সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি যেখানে নির্ভরশীল, সেখানে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলুর উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করে আলু সংরক্ষণ করা অতীব জরুরি। রংপুর অঞ্চলে আলু কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে_ এরকম শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন। রংপুরসহ যেসব এলাকায় প্রচুর আলুর চাষ হয়, সেসব এলাকায় প্রয়োজনে পর্যাপ্ত হিমঘরের জন্য ঋণ দেওয়া প্রয়োজন। আলুর মৌসুমে আলুর চাষভিত্তিক পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে আরও অনেক জমি আলু চাষের আওতায় আনা সম্ভব হতো। প্রান্তিকচাষিরা নিজ উদ্যোগে আশাব্যঞ্জক আলু উৎপাদন করছেন। কিন্তু সরকার আলু উৎপাদনে যে দৃষ্টি দিয়েছে সেটুকু হতাশাব্যঞ্জক। চলতি মৌসুমে বাজারে যখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এক মণ আলুর বীজ পাওয়া যেত, তখন সরকারি মূল্য ঠিক করা ছিল মণপ্রতি ৮০০ টাকা। পরিবহন খরচসহ তা ৯০০ টাকা কিংবা স্থানের দূরত্ব এবং পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত মণপ্রতি ব্যয় হয়েছে। সেই বীজ পাওয়াটা আবার সহজলভ্য নয়। প্রথমে আলুর বীজ পাওয়ার জন্য যেতে হয় উপজেলা কৃষি অফিসে, তারপর ব্যাংকে, এরপর নির্দিষ্ট তারিখে রংপুর বিভাগের কৃষকদের যেতে হয় রংপুরে। মাঠের সাধারণ কৃষক জানেন না, রংপুরে কোথায় বিএডিসি অফিস। কৃষকের আর্থিক ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় দু'দিনের কায়িক শ্রম। ধানের বীজ কিংবা সার সরকারিভাবে যত সহজে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, আলুর বীজও তেমনি সহজপ্রাপ্য হওয়া প্রয়োজন।
ব্যক্তিমালিকানায় যে সীমিত পর্যায়ে কয়েকটি হিমঘর রয়েছে, সেখানে আলু সংরক্ষণ করা অনেক ব্যয়বহুল। ৮০ কেজি কিংবা ৮২ কেজির এক বস্তা আলু হিমঘরে রাখা বাবদ ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা। একটি বস্তার মূল্য প্রায় আশি টাকা। এক বস্তা আলু হিমঘর নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যয় গড়ে ৪০ টাকা। এক মণ আলু উৎপাদনে ব্যয় হয় প্রায় ৩০০ টাকা। বর্তমান মণপ্রতি আলুর মূল্য মাঠে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বাজারমূল্য অনেক কম। একজন আলুচাষিকে যদি হিমঘরে আলু রেখে সংরক্ষণ করতে হয়, তাহলে উৎপাদিত ব্যয়ের সঙ্গে মণপ্রতি আরও ২৩০ টাকা প্রয়োজন। হিমঘরে যেহেতু পর্যাপ্ত আলু রাখার ব্যবস্থা নেই, ফলে হিমঘর মালিকরা ছোটখাটো আলুচাষিদের পরিবর্তে বড় আলুচাষিদের আলু হিমায়িত করেন। হিমঘর ব্যবসা যারা করছেন, তারা মাত্রাতিরিক্ত লাভ করছেন। সবকিছু মিলিয়ে এ কথা বলা যায়, আলু উৎপাদনকারীরা ভীষণ অবহেলিত। আলুচাষিরা আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য পথে পথে আন্দোলন করবেন_ এ দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না।
অসংখ্য কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধতা সত্ত্বেও যেখানে বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্র উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমাদের প্রধান খাদ্যের তালিকায় ভাতের সঙ্গে আলু অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। বিদেশে আলু রফতানি করে কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আলুর ব্যবহার বৃদ্ধি করারও একটি চেষ্টা থাকা দরকার। এ বছর আলুচাষিদের ক্ষতিপূরণে ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা হিমঘরে ভর্তুতি প্রদান করে আলু সংরক্ষণে ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে আলুচাষিদের অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি আলু সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমঘর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া দরকার। আলুর যে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন শুরু হয়েছে, সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ড. তুহিন ওয়াদুদ : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্য সহনশীল রাখার সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি যেখানে নির্ভরশীল, সেখানে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলুর উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করে আলু সংরক্ষণ করা অতীব জরুরি। রংপুর অঞ্চলে আলু কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে_ এরকম শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন। রংপুরসহ যেসব এলাকায় প্রচুর আলুর চাষ হয়, সেসব এলাকায় প্রয়োজনে পর্যাপ্ত হিমঘরের জন্য ঋণ দেওয়া প্রয়োজন। আলুর মৌসুমে আলুর চাষভিত্তিক পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে আরও অনেক জমি আলু চাষের আওতায় আনা সম্ভব হতো। প্রান্তিকচাষিরা নিজ উদ্যোগে আশাব্যঞ্জক আলু উৎপাদন করছেন। কিন্তু সরকার আলু উৎপাদনে যে দৃষ্টি দিয়েছে সেটুকু হতাশাব্যঞ্জক। চলতি মৌসুমে বাজারে যখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এক মণ আলুর বীজ পাওয়া যেত, তখন সরকারি মূল্য ঠিক করা ছিল মণপ্রতি ৮০০ টাকা। পরিবহন খরচসহ তা ৯০০ টাকা কিংবা স্থানের দূরত্ব এবং পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত মণপ্রতি ব্যয় হয়েছে। সেই বীজ পাওয়াটা আবার সহজলভ্য নয়। প্রথমে আলুর বীজ পাওয়ার জন্য যেতে হয় উপজেলা কৃষি অফিসে, তারপর ব্যাংকে, এরপর নির্দিষ্ট তারিখে রংপুর বিভাগের কৃষকদের যেতে হয় রংপুরে। মাঠের সাধারণ কৃষক জানেন না, রংপুরে কোথায় বিএডিসি অফিস। কৃষকের আর্থিক ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় দু'দিনের কায়িক শ্রম। ধানের বীজ কিংবা সার সরকারিভাবে যত সহজে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, আলুর বীজও তেমনি সহজপ্রাপ্য হওয়া প্রয়োজন।
ব্যক্তিমালিকানায় যে সীমিত পর্যায়ে কয়েকটি হিমঘর রয়েছে, সেখানে আলু সংরক্ষণ করা অনেক ব্যয়বহুল। ৮০ কেজি কিংবা ৮২ কেজির এক বস্তা আলু হিমঘরে রাখা বাবদ ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা। একটি বস্তার মূল্য প্রায় আশি টাকা। এক বস্তা আলু হিমঘর নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যয় গড়ে ৪০ টাকা। এক মণ আলু উৎপাদনে ব্যয় হয় প্রায় ৩০০ টাকা। বর্তমান মণপ্রতি আলুর মূল্য মাঠে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বাজারমূল্য অনেক কম। একজন আলুচাষিকে যদি হিমঘরে আলু রেখে সংরক্ষণ করতে হয়, তাহলে উৎপাদিত ব্যয়ের সঙ্গে মণপ্রতি আরও ২৩০ টাকা প্রয়োজন। হিমঘরে যেহেতু পর্যাপ্ত আলু রাখার ব্যবস্থা নেই, ফলে হিমঘর মালিকরা ছোটখাটো আলুচাষিদের পরিবর্তে বড় আলুচাষিদের আলু হিমায়িত করেন। হিমঘর ব্যবসা যারা করছেন, তারা মাত্রাতিরিক্ত লাভ করছেন। সবকিছু মিলিয়ে এ কথা বলা যায়, আলু উৎপাদনকারীরা ভীষণ অবহেলিত। আলুচাষিরা আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য পথে পথে আন্দোলন করবেন_ এ দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না।
অসংখ্য কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধতা সত্ত্বেও যেখানে বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্র উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমাদের প্রধান খাদ্যের তালিকায় ভাতের সঙ্গে আলু অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। বিদেশে আলু রফতানি করে কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আলুর ব্যবহার বৃদ্ধি করারও একটি চেষ্টা থাকা দরকার। এ বছর আলুচাষিদের ক্ষতিপূরণে ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা হিমঘরে ভর্তুতি প্রদান করে আলু সংরক্ষণে ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে আলুচাষিদের অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি আলু সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমঘর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া দরকার। আলুর যে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন শুরু হয়েছে, সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ড. তুহিন ওয়াদুদ : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
No comments