গার্মেন্টসে আবার আগুন
বাংলাদেশে আবার গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুর ৩টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ‘স্মার্ট’ নামের একটি গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে সাত পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
এছাড়া আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। উল্লেখ্য, নিহত পোশাক শ্রমিকদের সবাই নারী। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর। জানা গেছে, ‘স্মার্ট’ নামের ওই গার্মেন্টস কারখানায় শনিবার হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। দমকল বাহিনীর দশটি ইউনিট প্রায় আধঘণ্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়। দমকল বাহিনী সূত্রে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতাহতদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে সর্বক্ষণ ফোনে হতাহতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ও নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, এই অগ্নিকা-ের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যদি তদন্তে ‘স্মার্ট গার্মেন্টস কারখানার’ মালিকের কোন গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশনস গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর আবার ‘স্মার্ট গার্মেন্টসে’ অগ্নিকা- নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক ট্র্যাজেডি। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও এ এক আশঙ্কাজনক বার্তা বয়ে এনেছে। কারণ ইতোপূর্বে বহুবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে কিছু নেতিবাচক অবস্থার বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। বিশেষ করে পোশাক কারখানায় বিরাজমান অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তারা অসন্তুষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশসমূহ বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা। এরাই বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা দামের পোশাক আমদানি করে থাকে। এদের কারণেই বাংলাদেশ পোশাক রফতানির দিক দিয়ে অনেককেই ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বে পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে আছে। আমাদের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে পোশাকশিল্প থেকে। প্রায় ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক এই শিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারীশ্রমিক। বস্তুত বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন বিকাশমান পোশাক শিল্পকে ভিত্তি করে একটি মজবুত কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়েছে; তেমনই বাংলাদেশের নারীসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে এই শিল্পের বিকাশে পর্যাপ্ত সুবিধা আছে। কারণ পৃথিবীর অন্য কোথাও পোশাকশিল্পে এত সস্তা শ্রমিক পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পোশাকশিল্পে প্রায়শ বিশৃঙ্খলা, বিক্ষোভ, ভাংচুর ও শ্রমিক অসন্তোষ লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব কারণে পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনা। প্রতিবছরই তা যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্যে অনেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী বলে মনে করেন। ইতোপূর্বে তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে ক্রেতা দেশসমূহ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ‘জিএসপি’ বা ‘অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার’ সুবিধা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতোপূর্বে তাজরিনের অগ্নিকা-ের ঘটনাকে কেউ কেউ নাশকতামূলক’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দেশে-বিদেশের কোন চক্র কি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে চায়? বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে অগ্নিকা-ের বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এটি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করতে পারে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এখানকার পোশাকশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রতিটি মানুষ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিও মুখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই পোশাক কারখানায় যাতে পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে ওঠে সেই লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক তদারকি জোরদার করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে ও তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে দেশী-বিদেশী কোন চক্র জড়িত আছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
No comments