রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নতুন বেতন কাঠামো আসছে
পদ প্রারম্ভিক মূল বেতন
জিএম ৫২,০০০ডিজিএম ৪২,০০০
এজিএম ৩৪,০০০
এসপিও ২৬,০০০
এসও ১৬,০০০
অফিসার ১৩,০০০
জুনিয়র অফিসার (শিক্ষানবিশ) ১০,০০০
সহায়ক কর্মচারীর (গ্রেড-১) ৮,০০০
সহায়ক কর্মচারীর (গ্রেড-২) ৬,৫০০
সাধারণ কর্মচারী ৫,০০০
অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বতন্ত্র নতুন বেতন কাঠামো আসছে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বেতন কাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃক্ষের কাছে উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাবে।
তবে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) বেতন কাঠামো নতুন স্কেলের আওতায় হবে না। তাদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে বেতন কাঠামো নির্ধারিত হবে।
জানা গেছে, আপাতত সরকারী খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে এ নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে। বর্তমানে এসব ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারী বেতন স্কেলে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এর আগে সরকারী খাতের বেসিক ব্যাংকের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে।
সরকারের তার মেয়াদের শেষ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য আলাদা এ বেতন কাঠামো ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। এটিকে অনেকে সরকারের নির্বাচনী ট্রার্মকার্ড হিসেবে বিবেচনা করছেন। এর মাধ্যমে সরকার ব্যাংকিং খাতের একটি বড় জনগোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে।
তবে এর মাধ্যমে ব্যাংকারদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো বেসরকারী ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক কম। বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ে বেশি কাজ করলেও তাদের বেতন কম। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারী ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো আলাদা করে বাড়ানোর দাবি করে আসছিলেন তাঁরা। ব্যাংকগুলোর অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংকও এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে একাধিকবার। এ বিষয়ে মাঝে মধ্যে ফাইল নাড়াচাড়া হলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষ মুহূর্তে এ কাজটি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।
সরকারী ব্যাংকের বেতন কাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ জানুয়ারি অনুমোদন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের আগে গত ২ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাব অনুমোদন করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ওই প্রস্তাব কার্যকর হবে। ওই প্রজ্ঞাপনে নতুন বেতন কাঠামো কবে নাগাদ কার্যকর করা হবে তা উল্লেখ থাকবে। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী একজন মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) প্রারম্ভিক মূল বেতন ধরা হয়েছে ৫২ হাজার টাকা, একজন উপ-মহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) প্রারম্ভিক মূল বেতন ধরা হয়েছে ৪২ হাজার টাকা, একজন সহকারী মহাব্যবস্থাপকের (এজিএম) প্রারম্ভিক মূল বেতন ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা, একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারের (এসপিও) প্রারম্ভিক মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার টাকা, একজন সিনিয়র অফিসারের (এসও) প্রারম্ভিক মূল বেতন ধরা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা, একজন অফিসারের প্রারম্ভিক মূল বেতন হবে ১৩ হাজার টাকা, একজন জুনিয়র অফিসারের (শিক্ষানবিশ) অবস্থায় প্রারম্ভিক মূল বেতন হবে ১০ হাজার টাকা, সহায়ক কর্মচারীর (গ্রেড-১) প্রারম্ভিক মূল বেতন হবে ৮ হাজার টাকা, সহায়ক কর্মচারীর (গ্রেড-২) প্রারম্ভিক মূল বেতন হবে ৬ হাজার ৫০০ এবং সাধারণ কর্মচারীদের প্রারম্ভিক মূল বেতন হবে ৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের মূল বেতনের ৬৫ শতাংশ অর্থ বাড়িভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য পাবেন। আপ্যায়ন ভাতা পাবেন প্রত্যেকের মূল বেতনের ১০ শতাংশ। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যাংকের গাড়ি ব্যবহার করেন না, তাঁরা যাতায়াত ভাতা হিসেবে পাবেন প্রত্যেকের মূল বেতনের ১০ শতাংশ। এ ছাড়া কর্মকর্তা ও পদবি ভেদে পাওয়া যাবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
তা ছাড়া মহাব্যবস্থাপক থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার পর্যন্ত প্রত্যেকে মাসে চিকিৎসা ভাতা হিসেবে পাবেন ৩ হাজার টাকা।
আর সিনিয়র অফিসার থেকে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা পাবেন ১ হাজার ৫০০ টাকা।
ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার থেকে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত প্রত্যেকে তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে পাবেন ৫০০ টাকা করে।
সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য এ ভাতা দেয়া হবে। সন্তানদের বয়স ২১ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা এ ভাতা পাবেন। তবে সন্তানদের এ ভাতা কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের মাসিক বেতনের সঙ্গে প্রদান করা হবে।
এ অর্থ সন্তানদের শিক্ষা খাতে ব্যয় করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ভাতা এই প্রথমবারের মতো চালু করা হলো।
চারটি সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক যেমন, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে এমডি ও ডিএমডি বর্তমান আইনে নিয়োগ করা হচ্ছে চুক্তির ভিত্তিতে।
এর জন্য তাদের নিয়োগ পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত হচ্ছে। এ কারণে এদের বেতন ওই আলোচনার পর্যায়ে নির্ধারিত হবে। যে কারণে তাঁরা এ নতুন বেতন কাঠামোর আওতায় আসবেন না।
No comments