আ. লীগ ছাড়লেই বিএনপিতে পদ-বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু হবে : খালেদা by মোশাররফ বাবলু ও তারিকুল হক তারিক
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য কাজ করছে না বলে দাবি করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি 'দেশপ্রেমিক' আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, 'এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে কেবল বিএনপি। আওয়ামী লীগ দেশকে কিছু দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগে যারা দেশপ্রেমিক আছেন, তাঁরা দল ছেড়ে চলে আসুন; সম্মানজনক পদ দেওয়া হবে।'
খুলনা অভিমুখে রোডমার্চের প্রথম দিন গতকাল শনিবার দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদীতে এক পথসভায় খালেদা জিয়া এ কথা বলেন।
সন্ধ্যার পর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে চারদলীয় জোট আয়োজিত এক জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনো পদ্মা সেতু করতে পারবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করা হবে। একটি হবে মাওয়া দিয়ে, আরেকটি আরিচা-পাটুরিয়া দিয়ে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে সারা দেশে রোডমার্চ ও জনসভা শুরু করেছি। রোডমার্চ শেষে দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী এই সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ রক্ষা করব।' তিনি আরো বলেন, 'আওয়ামী লীগ দেশকে করদ রাজ্য বানানোর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। করদ রাজ্য বা তাঁবেদার রাজ্য হওয়ার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।'
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'টিপাইমুখে বাঁধ হলে দেশের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। আমি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনবার ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছি। বাঁধ নির্মাণের চুক্তি করার পর এখন আবার দিয়েছি। আজ আসার সময় শুনে এসেছি ভারতের প্রধানমন্ত্রী উত্তর দিয়েছেন।'
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ না হলে সড়ক অবরোধ : কুষ্টিয়ার জনসভা ও পাবনার পথসভায় প্রায় একই রকম বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে সরকারকে। এটা না হলে কৃষকদের নিয়ে সড়ক অবরোধ করা হবে।
সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না : বিরোধী দলের নেতা বলেন, এই সরকার গণতন্ত্র মানে না, আইন আদালত মানে না। সরকারের একটাই কাজ_বিরোধী দলের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা। সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারবে না বলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে চাইছে না। দেশ পরিচালনায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না।
অবিলম্বে আন্দোলনের মাধ্যমে হটাতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সব কিছু ফোকলা করে দিয়ে একসময় পালিয়ে যবে।
কুষ্টিয়ার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমি। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, এম ইলিয়াছ আলী, মশিউর রহমান, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, খেলাফত মজলিসের অধ্যাপক সিরাজুল হক, জেলা বিএনপির এম এ শামীম আরজু, জেলা জামায়াতের আবদুল ওয়াহেদ, অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত : ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম কুষ্টিয়ায় আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, পাবনা, রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলা থেকে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে বাস-ট্রাকে জনসভায় যোগ দেন। পাবনা থেকে কুষ্টিয়ার জনসভাস্থল পর্যন্ত সড়ক ও মহাসড়কে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তবে কুষ্টিয়ার জনসভায় খালেদা জিয়া সন্ধ্যার পর উপস্থিত হওয়ায় অনেকেই তাঁর বক্তব্যের আগেই চলে যায়।
টিপাইমুখ নিয়ে যৌথ জরিপের তাগিদ : এর আগে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া চৌরাস্তার মোড়ে পথসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, 'টিপাইমুখ প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনবার চিঠি দিয়েছি। শেষ চিঠিতে আমি দুই দেশের কারিগরি কমিটির জরিপ করার কথা বলেছি। ওই জরিপে প্রকল্পটি ক্ষতিকর মনে হলে অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে। নইলে দেশের জনগণ আন্দোলন করবে। তবে জরিপে যদি প্রকল্পটি ক্ষতিকর মনে না হয়, তা হলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।'
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে সিলেট অঞ্চলের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই বাঁধ হলে সুরমা-কুশিয়ারা নদী শুকিয়ে যাবে। এই অঞ্চলে হাওর-বাঁওড় ও জীববৈচিত্র্য শেষ হয়ে যাবে। ভূমিকম্প হলে এই অঞ্চলটি ধুয়েমুছে যাবে। আমরা বিশেষজ্ঞ নই। সে জন্য দুই দেশের যৌথ জরিপ করার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি।'
সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে : তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার বলেছিল তিস্তার পানি নিয়ে আসবে। কিন্তু তারা পানি আনতে পারেনি। সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে। ট্রানজিট-করিডর, মংলা বন্দর দিয়ে দিয়েছে। গোপন চুক্তির মাধ্যমে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করা সব ব্যবস্থা তারা করেছে।
দেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে : বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'সরকার প্রতিদিন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তারা। আমানতকারীরা বড় চেক দিয়ে টাকা পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো দেউলিয়ার পথে। বিএনপির রেখে আসা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বর্তমানে তারা শূন্যের কোঠায় এনে দাঁড় করিয়েছে। দেশ এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে।'
যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যর্থতায় বেহাল সড়ক : সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থার জন্য যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'রাস্তা সংস্কারে ব্যবস্থা নিন। নইলে অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।'
আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানাচ্ছে : কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, 'স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে তারা মুক্তিযোদ্ধা বলতে চায় না। কর্নেল অলি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছে। কাদের সিদ্দিকীকে ইদানীং রাজাকার বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানাচ্ছে। আর তাদের দলের রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হচ্ছে।' আওয়ামী লীগের মধ্যে যেসব নেতা 'বড় বড়' কথা বলছেন, তাঁদের প্রতি নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, রোডমার্চে গণজোয়ার দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন তারা আবোলতাবোল বলছে। পাবনার পাশে হেমায়েতপুর স্থানটি ঠিক করে রাখা প্রয়োজন।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা : খালেদা জিয়া বলেন, 'এভাবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দলীয় লোকজনকে দেওয়ার কারণে ১২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দায় জনগণের ওপর চাপানো হয়েছে।'
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কর্মসংস্থান, জনশক্তি রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যার সমাধান, তরুণ সমাজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
শুঁটকি বাজারে বেড়াল পাহারাদার : পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুণ্ঠনের জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, গরিবের টাকা লুট করে তারা বিদেশে পাচার করেছে। তদন্তে নিজেদের দলের বড় বড় লোকজন জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় অর্থমন্ত্রী সেই তালিকা প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এখন সেই বড় বড় লোককেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুঁটকি বাজারে বেড়াল পাহারাদারের মতো অবস্থা হয়েছে।
গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেন খালেদা জিয়া। উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, যমুনা সেতু পার হয়ে পাবনা, ঈশ্বরদী দিয়ে কুষ্টিয়ার জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেন। এরপর যশোরের উদ্দেশে রওনা হন। খালেদা জিয়া বিকেল ৩টার দিকে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় পেঁৗছান। দাশুড়িয়ার পথসভা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাবনা পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে কয়েক শ নেতা-কর্মী লালন শাহ সেতুর কাছে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে শুভেচ্ছা জানান। কয়েক দিন ধরে জেলা সভাপতি কে এস মাহমুদ ও পৌর মেয়র মিন্টু গ্রুপ আলাদাভাবে রোডমার্চের সমর্থনে প্রচার চালায়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি কে এস মাহমুদ। পরিচালনা করেন সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আবদুল্লাহ আল নোমান, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, জামায়াতের মাওলানা আবদুস সুবহান, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, শিরিন সুলতানা, জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, জেলা বিএনপির হাবিবুর রহমান তোতা, সেলিম রেজা হাবিব, নিলোফার চৌধুরী মণি এমপি, আলাউদ্দিন প্রমুখ।
,
সন্ধ্যার পর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে চারদলীয় জোট আয়োজিত এক জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনো পদ্মা সেতু করতে পারবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করা হবে। একটি হবে মাওয়া দিয়ে, আরেকটি আরিচা-পাটুরিয়া দিয়ে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে সারা দেশে রোডমার্চ ও জনসভা শুরু করেছি। রোডমার্চ শেষে দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী এই সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ রক্ষা করব।' তিনি আরো বলেন, 'আওয়ামী লীগ দেশকে করদ রাজ্য বানানোর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। করদ রাজ্য বা তাঁবেদার রাজ্য হওয়ার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি।'
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'টিপাইমুখে বাঁধ হলে দেশের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। আমি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনবার ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছি। বাঁধ নির্মাণের চুক্তি করার পর এখন আবার দিয়েছি। আজ আসার সময় শুনে এসেছি ভারতের প্রধানমন্ত্রী উত্তর দিয়েছেন।'
কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ না হলে সড়ক অবরোধ : কুষ্টিয়ার জনসভা ও পাবনার পথসভায় প্রায় একই রকম বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে সরকারকে। এটা না হলে কৃষকদের নিয়ে সড়ক অবরোধ করা হবে।
সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না : বিরোধী দলের নেতা বলেন, এই সরকার গণতন্ত্র মানে না, আইন আদালত মানে না। সরকারের একটাই কাজ_বিরোধী দলের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা। সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারবে না বলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে চাইছে না। দেশ পরিচালনায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না।
অবিলম্বে আন্দোলনের মাধ্যমে হটাতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সব কিছু ফোকলা করে দিয়ে একসময় পালিয়ে যবে।
কুষ্টিয়ার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ রুমি। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, এম ইলিয়াছ আলী, মশিউর রহমান, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, খেলাফত মজলিসের অধ্যাপক সিরাজুল হক, জেলা বিএনপির এম এ শামীম আরজু, জেলা জামায়াতের আবদুল ওয়াহেদ, অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত : ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম কুষ্টিয়ায় আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, পাবনা, রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলা থেকে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে বাস-ট্রাকে জনসভায় যোগ দেন। পাবনা থেকে কুষ্টিয়ার জনসভাস্থল পর্যন্ত সড়ক ও মহাসড়কে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। তবে কুষ্টিয়ার জনসভায় খালেদা জিয়া সন্ধ্যার পর উপস্থিত হওয়ায় অনেকেই তাঁর বক্তব্যের আগেই চলে যায়।
টিপাইমুখ নিয়ে যৌথ জরিপের তাগিদ : এর আগে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া চৌরাস্তার মোড়ে পথসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, 'টিপাইমুখ প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনবার চিঠি দিয়েছি। শেষ চিঠিতে আমি দুই দেশের কারিগরি কমিটির জরিপ করার কথা বলেছি। ওই জরিপে প্রকল্পটি ক্ষতিকর মনে হলে অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে। নইলে দেশের জনগণ আন্দোলন করবে। তবে জরিপে যদি প্রকল্পটি ক্ষতিকর মনে না হয়, তা হলে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।'
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে সিলেট অঞ্চলের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, 'এই বাঁধ হলে সুরমা-কুশিয়ারা নদী শুকিয়ে যাবে। এই অঞ্চলে হাওর-বাঁওড় ও জীববৈচিত্র্য শেষ হয়ে যাবে। ভূমিকম্প হলে এই অঞ্চলটি ধুয়েমুছে যাবে। আমরা বিশেষজ্ঞ নই। সে জন্য দুই দেশের যৌথ জরিপ করার কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি।'
সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে : তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার বলেছিল তিস্তার পানি নিয়ে আসবে। কিন্তু তারা পানি আনতে পারেনি। সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে। ট্রানজিট-করিডর, মংলা বন্দর দিয়ে দিয়েছে। গোপন চুক্তির মাধ্যমে ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করা সব ব্যবস্থা তারা করেছে।
দেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে : বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'সরকার প্রতিদিন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তারা। আমানতকারীরা বড় চেক দিয়ে টাকা পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো দেউলিয়ার পথে। বিএনপির রেখে আসা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বর্তমানে তারা শূন্যের কোঠায় এনে দাঁড় করিয়েছে। দেশ এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে।'
যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যর্থতায় বেহাল সড়ক : সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থার জন্য যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'রাস্তা সংস্কারে ব্যবস্থা নিন। নইলে অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।'
আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানাচ্ছে : কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, 'স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে তারা মুক্তিযোদ্ধা বলতে চায় না। কর্নেল অলি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছে। কাদের সিদ্দিকীকে ইদানীং রাজাকার বলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বানাচ্ছে। আর তাদের দলের রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হচ্ছে।' আওয়ামী লীগের মধ্যে যেসব নেতা 'বড় বড়' কথা বলছেন, তাঁদের প্রতি নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, রোডমার্চে গণজোয়ার দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন তারা আবোলতাবোল বলছে। পাবনার পাশে হেমায়েতপুর স্থানটি ঠিক করে রাখা প্রয়োজন।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা : খালেদা জিয়া বলেন, 'এভাবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পেলে আমাদের শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দলীয় লোকজনকে দেওয়ার কারণে ১২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দায় জনগণের ওপর চাপানো হয়েছে।'
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কর্মসংস্থান, জনশক্তি রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যার সমাধান, তরুণ সমাজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
শুঁটকি বাজারে বেড়াল পাহারাদার : পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুণ্ঠনের জন্য ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, গরিবের টাকা লুট করে তারা বিদেশে পাচার করেছে। তদন্তে নিজেদের দলের বড় বড় লোকজন জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় অর্থমন্ত্রী সেই তালিকা প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এখন সেই বড় বড় লোককেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুঁটকি বাজারে বেড়াল পাহারাদারের মতো অবস্থা হয়েছে।
গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেন খালেদা জিয়া। উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, যমুনা সেতু পার হয়ে পাবনা, ঈশ্বরদী দিয়ে কুষ্টিয়ার জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেন। এরপর যশোরের উদ্দেশে রওনা হন। খালেদা জিয়া বিকেল ৩টার দিকে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় পেঁৗছান। দাশুড়িয়ার পথসভা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাবনা পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে কয়েক শ নেতা-কর্মী লালন শাহ সেতুর কাছে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে শুভেচ্ছা জানান। কয়েক দিন ধরে জেলা সভাপতি কে এস মাহমুদ ও পৌর মেয়র মিন্টু গ্রুপ আলাদাভাবে রোডমার্চের সমর্থনে প্রচার চালায়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
পাবনার পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি কে এস মাহমুদ। পরিচালনা করেন সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আবদুল্লাহ আল নোমান, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, জামায়াতের মাওলানা আবদুস সুবহান, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, শিরিন সুলতানা, জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, জেলা বিএনপির হাবিবুর রহমান তোতা, সেলিম রেজা হাবিব, নিলোফার চৌধুরী মণি এমপি, আলাউদ্দিন প্রমুখ।
,
No comments