জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে আইন ভেঙে by আহমেদ দীপু ও আরিফুজ্জামান তুহিন
'বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩'-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি জ্বালানি তথা তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু সরকার নিজেই এ আইন মানছে না। বছরে একাধিকবার জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে জনগণের পকেট থেকে টাকা বের করে নেওয়ার জন্য সরকার মরিয়া হয়ে দফায় দফায় তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে
চলেছে। আর আইনের এই লঙ্ঘনকে বৈধতা দেওয়ার অজুহাত হিসেবে বিইআরসিতে গণশুনানির ধুয়া তুলে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সরকারের নির্বাহী আদেশে এটা করা হচ্ছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বিইআরসিতে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায়, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কৌশলে দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তিন দফায়। একইভাবে গত অর্থবছরেও (২০১০-১১) দুই দফায় তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
অথচ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ৩৪ ধারার পাঁচ উপধারায় ট্যারিফ সংক্রান্ত অধ্যায়ে বলা হয়েছে, 'কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থ বৎসরে (জুন থেকে পরবর্তী বছরের জুলাই) একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাইবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে।' একই আইনের ৩৪-এর ৬ উপধারায় বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জ্বালানি পণ্যের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে একটি উন্মুক্ত গণশুনানি করে তবেই দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তবে সে ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত দেশের প্রধান অন্তত দুটি পত্রিকায় প্রকাশের সাত দিন পরই কেবল দাম বাড়ানো যাবে।'
তবে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কমিশন এসব আইনের তেমন কিছুই মানছে না বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনের ট্যারিফ সংক্রান্ত ৫ নম্বর ধারাটিতে মূলত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।' দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ডিজেলের দাম বেড়েছে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। এ কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।' সিএনজির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, 'ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সারা দেশে ডিজেলচালিত যেসব গাড়ি ছিল, সেখানে পণ্য পরিবহনে দাম বেড়েছে। এখন যদি সিএনজির দাম না বাড়াই, তাহলে কিন্তু সিএনজিচালিত পরিবহনগুলোও দাম বাড়াবে। তারা জনগণের পকেট কাটবে। এই মূল্যবৃদ্ধি জনস্বার্থকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।'
এভাবে দাম বাড়ানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, আইনে সব কিছু লেখা থাকে না। আইন মূলত একটা গাইডলাইন।
কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো আইনের শুরুতেই আইনের একটি ব্যাখ্যা থাকে। এই আইনের শুরুতেও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। এতে 'এনার্জি' বলতে বোঝানো হয়েছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ। স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকায় এ বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। আইনের এই ধারায় শুধু বিদ্যুৎ সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এভাবে ঘন ঘন জ্বালানিপণ্যের দাম বাড়ানো উচিত হচ্ছে না।' এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে শক্তিশালী করা হলে এ রকম হতো না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার তুহিন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্পষ্টতই এটা আইনের লঙ্ঘন। এভাবে সরকার জ্বালানিপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়াতে পারে না।'
আইন বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, আইনের 'জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন' বলতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম গত এক বছরে বাড়েনি, উল্টো কমেছে, তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্পষ্টই আইন লঙ্ঘন করেছে সরকার। আর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, গ্যাস বাংলাদেশের বাজার থেকেই নেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই আইনের এ অংশটুকু কোনোভাবেই দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতে চলতি বছরে ভর্তুকি দিতে হবে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই টাকা জনসাধারণের পকেট থেকে বের করে নেওয়ার জন্যই দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে সরকার এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ানোর কারণে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরো বাড়বে। সরকারকে সে অনুপাতে বর্ধিত মূল্যেই বিদ্যুৎ কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। এই বর্ধিত ব্যয় সামাল দিতেই সরকার দাম বাড়িয়ে চলেছে। এতে জনগণের ওপর যে কী পরিমাণ চাপ পড়ছে, সেদিকে সরকার কোনো খেয়াল করছে না। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, সরকার গত তিন বছরে নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করলে অনেক কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারত।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল (১৬৮ লিটার) জ্বালানি তেলের দাম ৯০ মার্কিন ডলারের কম। এর সঙ্গে জাহাজ ভাড়া, বন্দরের শুল্ক, ছোট জাহাজে করে তেল খালাস ও পরিশোধনের ব্যয় যুক্ত করলেও প্রতি লিটারের দাম ৬৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া আমদানীকৃত তেলের ওপর যেসব শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে, তা অনেকাংশেই বাদ দেওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) প্রথম দফায় আগস্ট মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর আরো এক দফা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সময় ঘোষণা দেওয়া হয় ১ ডিসেম্বর থেকে খুচরা পর্যায়ে এক দফা এবং ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এই হিসাবে চলতি অর্থবছরে খুচরা ও পাইকারি মিলিয়ে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
একই ঘটনা ঘটেছে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও। সকল প্রকার জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বেড়েছে দুবার। গত ১০ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সর্বশেষ সকল প্রকার জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা হারে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৌশল করা হয়েছে। এক অর্থবছরে একবারের বেশি মূল্য পরিবর্তন না করার নিয়ম রক্ষার জন্য অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ মে মাসে একবার এবং অর্থবছর শুরুর পর অক্টোবর মাসে আবার দাম বাড়ানো হয়। গত ১২ মে দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে প্রতি ঘনমিটার বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৯ অক্টোবর আরো একবার দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার করা হয় ৩০ টাকা। আরো এক দফা দাম বাড়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে। খোদ অর্থমন্ত্রী এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং বিইআরসিতে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায়, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কৌশলে দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তিন দফায়। একইভাবে গত অর্থবছরেও (২০১০-১১) দুই দফায় তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
অথচ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ৩৪ ধারার পাঁচ উপধারায় ট্যারিফ সংক্রান্ত অধ্যায়ে বলা হয়েছে, 'কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থ বৎসরে (জুন থেকে পরবর্তী বছরের জুলাই) একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাইবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে।' একই আইনের ৩৪-এর ৬ উপধারায় বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন জ্বালানি পণ্যের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে একটি উন্মুক্ত গণশুনানি করে তবেই দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তবে সে ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত দেশের প্রধান অন্তত দুটি পত্রিকায় প্রকাশের সাত দিন পরই কেবল দাম বাড়ানো যাবে।'
তবে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কমিশন এসব আইনের তেমন কিছুই মানছে না বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনের ট্যারিফ সংক্রান্ত ৫ নম্বর ধারাটিতে মূলত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।' দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ডিজেলের দাম বেড়েছে, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। এ কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।' সিএনজির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, 'ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সারা দেশে ডিজেলচালিত যেসব গাড়ি ছিল, সেখানে পণ্য পরিবহনে দাম বেড়েছে। এখন যদি সিএনজির দাম না বাড়াই, তাহলে কিন্তু সিএনজিচালিত পরিবহনগুলোও দাম বাড়াবে। তারা জনগণের পকেট কাটবে। এই মূল্যবৃদ্ধি জনস্বার্থকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।'
এভাবে দাম বাড়ানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, আইনে সব কিছু লেখা থাকে না। আইন মূলত একটা গাইডলাইন।
কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো আইনের শুরুতেই আইনের একটি ব্যাখ্যা থাকে। এই আইনের শুরুতেও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। এতে 'এনার্জি' বলতে বোঝানো হয়েছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ। স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকায় এ বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। আইনের এই ধারায় শুধু বিদ্যুৎ সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এভাবে ঘন ঘন জ্বালানিপণ্যের দাম বাড়ানো উচিত হচ্ছে না।' এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে শক্তিশালী করা হলে এ রকম হতো না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার তুহিন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্পষ্টতই এটা আইনের লঙ্ঘন। এভাবে সরকার জ্বালানিপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়াতে পারে না।'
আইন বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, আইনের 'জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন' বলতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম গত এক বছরে বাড়েনি, উল্টো কমেছে, তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্পষ্টই আইন লঙ্ঘন করেছে সরকার। আর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, গ্যাস বাংলাদেশের বাজার থেকেই নেওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই আইনের এ অংশটুকু কোনোভাবেই দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করে না।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতে চলতি বছরে ভর্তুকি দিতে হবে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই টাকা জনসাধারণের পকেট থেকে বের করে নেওয়ার জন্যই দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে সরকার এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনছে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ানোর কারণে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরো বাড়বে। সরকারকে সে অনুপাতে বর্ধিত মূল্যেই বিদ্যুৎ কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। এই বর্ধিত ব্যয় সামাল দিতেই সরকার দাম বাড়িয়ে চলেছে। এতে জনগণের ওপর যে কী পরিমাণ চাপ পড়ছে, সেদিকে সরকার কোনো খেয়াল করছে না। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, সরকার গত তিন বছরে নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করলে অনেক কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারত।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল (১৬৮ লিটার) জ্বালানি তেলের দাম ৯০ মার্কিন ডলারের কম। এর সঙ্গে জাহাজ ভাড়া, বন্দরের শুল্ক, ছোট জাহাজে করে তেল খালাস ও পরিশোধনের ব্যয় যুক্ত করলেও প্রতি লিটারের দাম ৬৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া আমদানীকৃত তেলের ওপর যেসব শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে, তা অনেকাংশেই বাদ দেওয়া যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) প্রথম দফায় আগস্ট মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর আরো এক দফা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সময় ঘোষণা দেওয়া হয় ১ ডিসেম্বর থেকে খুচরা পর্যায়ে এক দফা এবং ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এই হিসাবে চলতি অর্থবছরে খুচরা ও পাইকারি মিলিয়ে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
একই ঘটনা ঘটেছে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও। সকল প্রকার জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সরকারের নির্বাহী আদেশে দাম বেড়েছে দুবার। গত ১০ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সর্বশেষ সকল প্রকার জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা হারে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৌশল করা হয়েছে। এক অর্থবছরে একবারের বেশি মূল্য পরিবর্তন না করার নিয়ম রক্ষার জন্য অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ মে মাসে একবার এবং অর্থবছর শুরুর পর অক্টোবর মাসে আবার দাম বাড়ানো হয়। গত ১২ মে দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে প্রতি ঘনমিটার বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১৯ অক্টোবর আরো একবার দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার করা হয় ৩০ টাকা। আরো এক দফা দাম বাড়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে। খোদ অর্থমন্ত্রী এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
No comments