'বেগ সাহেবের জন্য ভালো মাল পাঠাবেন'- শান্তি কমিটির চিঠিতে এভাবে লেখা হতো। 'বেগ' মানে পাকিস্তানী সেনা, মাল- অর্থা রমণী by মুনতাসীর মামুন
শান্তি কমিটি সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা আছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে
প্রথমেই তৃণমূল পর্যায় পর্যনত্ম গঠন করা হয় শানত্মিকমিটি। প্রচারে বলা
হয়েছিল, দেশে শানত্মি রৰার্থে এরা সহায়তা করবে।
কিন্তু, কার্যত দেখা যায়
অধীকাংশ শানত্মি কমিটি আলবদর/ রাজাকারদের মতোই হানাদার পাকিসত্মানী বাহিনীর
অধসত্মন সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল। হত্যা, লুট ধর্ষণ, জমি দখল কোন কিছুতেই
তারা পিছপা ছিল না। এর একটি উদাহরণ শানত্মি কমিটির এক চেয়ারম্যানের চিঠি।
মে মাসের ২৮ তারিখে [১৯৭১] বরিশালের ঝালকাঠি শানত্মি কমিটির চেয়ারম্যান
ছলিমুদ্দিন মিয়া এক চিঠি পাঠিয়েছিলেন কীর্তিপাশা ইউনিয়ন শানত্মি কমিটির
চেয়ারম্যান আজহার মিয়াকে। চিঠির ভাষা ও হাতের লেখা দেখে অনুমান করে নিতে
পারি ছলিমুদ্দিন ছিলেন স্বল্প শিৰিত। চিঠিটি উদ্ধৃত করছি_" ভাই সাহেব
সালামবাদ সমাচার, আপনার কীর্তিশালা কমিটিতে ইউনিট কমান্ডার হিসেবে আঃ রবের নাম শাহ আলম ছার পাশ করিয়া নিয়েছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে উত্তর দিকের শয়তান দমন করার জন্য যাইতে হইবে। আপনার এলাকার সব ইন্ডিয়ান দালালদের যত তাড়াতাড়ি পারেন ধরিয়া ক্যাম্পে পাঠাবেন। ওদের হেদায়েত করার পর উত্তর দিকের অপারেশন শুরম্ন করা হইবে। এদিকে ইতিপূর্বে পাঠানো অস্ত্র যেন ইন্ডিয়ার দালালরা খুঁজে নিতে না পারে। বেগ সাহেবের জন্য ভালো মাল পাঠাবেন। রোজ অনত্মত একটা অন্যদের জন্য মাল পাবেন। খোদা আমাদের সহায় আছেন। আলস্না হাফেজ।"
চিঠিতে উলিস্নখিত 'শয়তান' হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধারা, 'ইন্ডিয়ান দালাল' হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকমর্ী ও সমর্থকরা। 'বেগ সাহেব' স্থানীয় পাকি কমান্ডার। "ভালো মাল' অর্থাৎ নারী। অর্থাৎ, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগাদের দমন করে 'শানত্মি' প্রতিষ্ঠাই লৰ্য। অন্যদিকে, স্থানীয় সেনা কমান্ডার ও তার সাঙ্গপাঙ্গোদের নিয়মিত নারী 'সাপস্নাই' ছিল প্রধান কাজ। এ ভাবে কত নারীর সম্ভ্রম যে তারা নষ্ট করেছে তার ইয়ত্তা নেই এবং তাদের ধারণা এসব 'উত্তম' কাজ এবং আলস্নাহ এ জন্য তাদের সহায়তা দেবেন। এভাবেই পাকিসত্মান ও তার সহযোগীরা ধর্মের নামে মুসলমান নারী-পুরম্নষকে হত্যা করেছে। কীর্তিপাশার এই ছলিমুদ্দিন মিয়াকে যদি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই যুদ্ধাপরাধীদের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড় করাতে হবে।
সংগ্রহ : মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর।
No comments