তৈরি হচ্ছে ছায়াপথের মানচিত্র by ইব্রাহিম নোমান
আমাদের পৃথিবী নামের যে গ্রহে আমরা বাস করছি তা সৌরজগতের অন্তর্ভক্ত। একথা এখন সবার জানা। আর সূর্যকেন্দ্রিক এই সৌরজগত যে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের অনত্মভর্ুক্ত তার নাম মিল্কিওয়ে।
বাংলায় আমরা যাকে বলি আকাশগঙ্গা। আকাশগঙ্গা বা ছায়াপথের তাবত রহস্য উন্মোচন করতে এ মুহূর্তে বিশ্বের হাজার হাজার হোম কম্পিউটার কাজ করে যাচ্ছে একযোগে। আফ্রিকা থেকে সুদূর অস্ট্রেলিয়া পর্যনত্ম হাজার হাজার উৎসাহী স্বেচ্ছাসেবক তাদের হোম কম্পিউটারে কাজ করে চলেছে। তাদের লৰ্য মিল্কিওয়ের মানচিত্র তৈরি। এ উদ্দেশ্যে এক দশকের পুরনো ডেস্কটপ থেকে শুরম্ন করে আধুনিক নেটবুকে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। রেনসিলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন বিশ্বের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক তাদের হোম কম্পিউটার নিয়ে। শুধু ফেব্রম্নয়ারি মাসেই এই প্রক্রিয়ায় কম্পিউটারে হিসাব করার ৰমতা এক পেটাফপ ছাড়িয়ে গেছে, যা শক্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রম্নততম সুপার কম্পিউটারের গতির চাইতেও বেশি। মিল্কিওয়ে এ্যাট হোম নামের এই প্রকল্প নেটওয়ার্ক কম্পিউটিং (বোইঙ্ক) পস্নাটফরমের জন্য বার্কেলে ওপেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করে থাকে, যা ব্যাপকভাবে সেটি এ্যাট হোম প্রকল্প নামে পরিচিতি অর্জন করেছে। এর আগে এই প্রকল্পের আওতায় পৃথিবীর বাইরে জীবনের অসত্মিত্ব সন্ধান করা হয়েছে।মিল্কিওয়ে এ্যাট হোম প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন প্রফেসর থেকে শুরম্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আন্ডার গ্রাজুয়েশটগণ।
বোইঙ্ক পস্নাটফরমের আওতায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরম্ন হয়। মিল্কিওয়ের মানচিত্র তৈরির মতো এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার শক্তি যুগিয়ে চলেছেন হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী। এই উদ্দেশ্যে প্রত্যেক কম্পিউটার ব্যবহারকারী এই প্রকল্পে তাদের কম্পিউটার শক্তিকে একীভূত করেছেন। তারা নমুনা হিসেবে ছায়াপথের খুবই ৰুদ্র অংশের আকৃতি, ঘনত্ব ও চলাচল সম্পর্কে নিরলসভাবে উপাত্ত ব্যবহার করে চলেছেন। কিভাবে বিভিন্ন প্রকার বামন ছায়াপথ একীভূত হয়ে মিল্কিওয়ে নামের ছায়াপথে পরিণত হয়েছে_ সে সম্পর্কে গবেষণা চলছে। লাখ লাখ বছর আগে ছায়াপথের এই একীভূতকরণ সম্পন্ন হয়।
রেনসিলার পলিটেকনিকের পদার্থবিদ্যা, ফলিত পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক হেইডি নিউবার্গ এই গবেষণার পটভূমি সম্পর্কে বলেন, মিল্কিওয়ের নৰত্র ও পদার্থ সম্পর্কে ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরির লৰ্য নিয়ে তিনি গবেষণা শুরম্ন করেন। কিন্তু সেস্নায়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভের মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত ব্যবহার করেও তিনি ছায়াপথের একটি নৰত্র সম্পর্কেও কোন যৌক্তিক সময়ে মানচিত্র তৈরির একটি উপযুক্ত মডেল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। হিসাবনিকাশের কোন কুলকিনারাই তিনি পাচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রানত্মের গবেষকদের সহায়তা নেন। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরম্ন হওয়ার পর থেকে ১৬৯ দেশের ৪৫ হাজারের বেশি কম্পিউটার ব্যবহারকারী তাদের কম্পিউটার শক্তি একীভূত করে চলেছেন। বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার কম্পিউটার ব্যবহারকারী এই সিস্টেমের আওতায় নিরনত্মর সক্রিয় রয়েছেন। এই গবেষণায় প্রাথমিক তহবিল যুগিয়েছে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ)। আর সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে আইবিএম, এটিআই এবং এনভিআইডিআইএ। বিশ্বের সকল প্রানত্মের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ তাকিয়ে আছেন এই গবেষণার সাফল্য দেখতে। মহাজাগতিক রহস্য উন্মোচনে বিজ্ঞানীরা কতটুকু সফল হন তা শীঘ্রই জানতে পারবে বিশ্ববাসী।
No comments