অস্থির সময়ে রাজনীতি-সরকার চাপে, গুরুত্ব পাচ্ছে দলীয় ঐক্য by জাহাঙ্গীর আলম

লমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মহাজোট সরকার যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চাপে আছে। সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা সরকারের সংকটকে আরও গভীর করেছে। এ অবস্থায় দলীয় ও সমমনাদের দৃঢ় ঐক্যই পরিস্থিতি মোকাবিলার অন্যতম উপায় বলে মনে করছে সরকারি দল।


তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা না-করা নিয়ে দুই বড় দলের দূরত্ব বেড়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ পরিস্থিতিতে জামায়াতের কিছুটা আত্মগোপন অবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর তাদের কর্মীদের একাধিক সহিংস হামলা নিয়েও সরকার উৎকণ্ঠায় আছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আশা করছেন, সংকট উত্তরণে তাঁরা সমর্থ হবেন, দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি সরকার উৎখাতের জন্য কতিপয় সেনা কর্মকর্তার অভ্যুত্থানের চেষ্টা নস্যাৎ করেছে সেনাবাহিনী। দলের সূত্রগুলো জানায়, বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। তাঁরা এই পরিস্থিতিতে দলীয় ঐক্য ও সংহতির পাশাপাশি গণতন্ত্রমনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন। দলের শীর্ষ মহল মনে করে, দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে সংকটের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আগামী ১২ মার্চ বিরোধী দল ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র বলেছে, সরকার চায়, বিরোধী দলের কর্মসূচি বিভাগীয় মহাসমাবেশগুলোর মতো ঢাকায়ও শান্তিপূর্ণ হোক। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারকে বলছেন, ঢাকার মহাসমাবেশে বড় রকমের লোকসমাগম করবে বিএনপি। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে জামায়াত বা অন্য কোনো পক্ষ সহিংসতার চেষ্টা করতে পারে। বিশেষ করে, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করে সহিংসতা চালাতে পারেন বলে তাঁরা সরকারকে সতর্ক করেছেন। জামায়াতের সাম্প্রতিক একাধিক চোরাগোপ্তা হামলার পর সরকার এই সতর্কতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিরোধী দল গণতান্ত্রিক কর্মসূচি দিতে পারে। তবে আমরা গুণগত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।’
আরেকটি সূত্র জানায়, সরকার বিরোধী দলকে মহাসমাবেশ করতে দেওয়ার পক্ষে। তবে এই কর্মসূচির প্রতি সরকারের কঠোর নজরদারি থাকবে। একই সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা এই সরকারের একটা বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। এখন এটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জও। কারণ, প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করে সরকার।
অবশ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা এ-ও মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন রয়েছে।
এদিকে জামায়াত আত্মগোপনে থেকে সহিংস হামলার কৌশল নিয়েছে। তাই জামায়াতের কার্যক্রমের ওপর সরকার নজরদারি আরও বাড়িয়েছে। তাদের চোরাগোপ্তা হামলার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এরই মধ্যে আবার নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীর নগরে সেনাবাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে বিপুল পোস্টার সেঁটেছে। এই সংগঠনসহ আরও কয়েকটি গোপন ধর্মীয় সংগঠনের দিক থেকে নাশকতামূলক তৎপরতার আশঙ্কা করে আসছিল সরকার।
ইতিমধ্যে অভ্যুত্থানের চেষ্টায় জড়িত মেজর জিয়াউল হককে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনা সদর। এই ব্যক্তির সঙ্গে হিযবুত তাহ্রীর ও জেএমবির যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে বলে একটি গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সূত্রগুলো মনে করে, বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে এ ধরনের গোষ্ঠীগুলো আরও তৎপর হওয়ার আশঙ্কা আছে।
চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার, দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখাসহ সরকারের প্রতিশ্রুত কাজ সম্পাদনে ঝুঁকি থাকলেও আমরা তা সম্পাদন করব। একটা কিছু হবে, সেই আশঙ্কায় আমরা বসে থাকব না।’
সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, সরকার তার মেয়াদের বাকি দুই বছরে বিতর্কের সুযোগ থাকে এমন কোনো বিষয়ে হাত দেবে না। এই সিদ্ধান্ত থেকেই নতুন করে যাতে কোনো জন-অসন্তোষ তৈরি না হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়লা উত্তোলন না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.