পাহাড়ে সহিংসতায় চিহ্নিত ৮- পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে ॥ কার্ফু প্রত্যাহার, ১৪৪ ধারা বহাল
পাহাড়ী-বাঙালী সংঘর্ষে তিগ্রস্ত খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ির পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। শুক্রবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি শহরে দোকানপাট খুলেছে। বাজারে আসতে শুরম্ন করেছে উভয় সমপ্রদায়ের লোকজন।
তিন দিন বন্ধ থাকার পর জেলার সকল আনত্ম ও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরম্ন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তৃতীয়বারের মতো জারি করা কাফর্ু শুক্রবার সকাল থেকে প্রত্যাহার হয়েছে। তবে এখনও বহাল রাখা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নতুন করে আর কোন কাফর্ু জারি করা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রায় শহরের সর্বত্র সেনা, র্যাব, বিডিআর ও এপিবিএনের পাশাপাশি পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে। আজ বাঘাইছড়িতে শানত্মি মিছিল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া। তবে তদনত্মের স্বার্থে তাদের নাম বলা হয়নি।এদিকে পুড়ে যাওয়া বসতভিটায় নতুন করে বাড়িঘর নির্মাণের কাজ শুরম্ন করেছে তিগ্রসত্মরা। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখতে পাহাড়ী-বাঙালীর সমন্বয়ে পাড়া-মহলস্নায় গঠিত শানত্মি কমিটির নেতৃবৃন্দ এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা শিথিল করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে চলেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তাই শুক্রবার নতুন করে কাফর্ু বলবত করা হয়নি। তবে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতভর নজরদারিতে থাকবে। তিগ্রসত্মদের জন্য সরকার পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ করছে। ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির তিগ্রসত্মদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে নগদ ৫ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল এবং গৃহ নির্মাণের জন্য ১২ লাখ টাকা ও ৫০০ বান্ডিল ঢেউ টিন। এ ছাড়াও তিগ্রসত্ম ১০০ পরিবারকে মার্চ থেকে মে পর্যনত্ম ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় প্রতিপরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। অন্যদিকে কলেজ গেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ নাছিমা বেগম ও যুবক মোঃ ফরিদ কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ করেছে।
খাগড়াছড়িতে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে দ্রম্নত উত্তরণের ল্যে শুক্রবার দুপুরে খাগড়াছড়ি পৌর মিলনায়তনে পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে এক সমপ্রীতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যনত্মরীণ উদ্বাস্তু চিহ্নিতকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া, র্যাব-৭ এর মেজর আশফাক, পুলিশ সুপার আমীর জাফর, অধ্যাপক মধু মঙ্গল চাকমা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জানে আলম, পৌর মেয়র জয়নাল আবেদীন, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মংক্যচিং চৌধুরী, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রভাকর চাকমা ও সম্পাদক সনত্মোষিত চাকমা বকুল। এ সময় বিপুলসংখ্যক পাহাড়ী-বাঙালী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় এমপি যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সামপ্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভঁূইয়াকে দায়ী করেন। ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সংঘাতের পেছনে কারা জড়িত তা উদ্ঘাটনের জন্য গোয়েন্দা তদনত্ম চলছে। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এ ঘটনা সৃষ্টির জন্য কলকাঠি নাড়া হয়েছে। তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে। এ ছাড়াও জেলার দীঘিনালা, মানিকছড়ি, পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গা উপজেলায়ও শানত্মির সমপ্রীতি মিছিল হয়েছে। অপরদিকে দীর্ঘ ৪ দিন বন্ধ থাকার পর সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ায় স্বসত্মি ফিরে এসেছে। দেশের বিভিন্ন জেলার আটকে পড়া মানুষজন ফিরতে শুরম্ন করেছে নিজ গনত্মব্যে।
বাঘাইহাটে সৃষ্ট ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং গুজবে কান না দেয়ার জন্য শুক্রবার বাঘাইছড়িতে এক জরম্নরী আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক করা হয়। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস শুক্কুর ,সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, বিএনপি সভাপতি মুন্সী মিয়া, সাধারণ সম্পাদক সেলিম বাহারি, জেলা পরিষদ সদস্য বিশকেতু প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন। সভায় আজ শনিবার বাঘাইছড়িতে পাহাড়ী-বাঙালী যৌথভাবে শানত্মি মিছিল করার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা। শুক্রবার বাঘাইছড়িতে আওয়ামী লীগের প থেকে বাঘাইহাটে তিগ্রসত্মদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। বাঘাইহাট পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তবে বিছিন্নভাবে জেলার কয়েকটি উপজেলায় এখনও উত্তেজনার কিছু কিছু খবর আসছে। এখনও পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস পুরোপুরি ফিরে আসেনি। সদরে পাহাড়ী-বাঙালীর সম্পর্ক ক্রমশ উন্নতির দিকে। দুর্গম পাহাড়ে আশানুরূপ সম্পর্ক উন্নয়ন এখনও ঘটেনি। বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার সীমানার কাছে কালাপাকুজ্জা, পাবলাখালী এলাকায়ও ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে সেখানে এখনও নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। পাহাড়ী সমপ্রদায়ের প থেকে তিগ্রসত্মদের জন্য সুযোগ সন্ধানীরা চাঁদাবাজি শুরম্ন করেছে বলে জানা গেছে।
No comments