ডেমাক্লিসের তরবারি! by এম আবদুল হাফিজ
অহর্নিশ ঝোলানো ডেমাক্লিসের তরবারি ঝুলে থাকে আমাদের গর্দানের ওপর আতঙ্ক ও অস্বস্তির মিশ্রণে। টানাপড়েনের সংসার যৎসামান্য পেনশনের টাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে। মাসওয়ারি খরচার হিসাবে কোনো তারতম্যের সুযোগ নেই।
সেখানে যদি সংবৎসর শুনতে হয় মূল্যবৃদ্ধির আগাম খবর_ মূল্য যখনই বাড়ূক আমরা থাকি সেই প্রবাদের তরবারির নিচে, যা আমাদের গর্দানের ওপরই ঝুলে রয়েছে। শুনছি, নতুন বছরের শুরুতেই নাকি এই সরকারের মেয়াদকালে সপ্তমবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়বে। বাড়বে জ্বালানি তেলের দাম, যার অর্থ_ বাজারে আরেক দফা আগুন। দাম বাড়াবাড়ির হিড়িকে এতটাই বোধশক্তিহীন হয়ে পড়েছি যে, এসব দুঃসংবাদ আর আমাকে উত্তেজিত করে না। বিনা প্রতিবাদে আমাদের নিয়তি জেনে বলির পাঁঠার মতো শুধু গর্দান পেতে দিই।
অতীতে এসব নিয়ে বহু চেঁচামেচি করেছি, খবরের কাগজে লেখালেখি করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে বিশাল বিলের জন্য কিছু বুঝে এবং কিছুটা না বুঝে বিদ্যুৎওয়ালাদের (ডেসা বা ডেসকো) সঙ্গে অনেক বাদানুবাদ করেছি এবং কর্তৃপক্ষের বাক্যবাণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বিরস বদনে ফিরে এসেছি। তাদের কাছে তাদের যুক্তি যা শক্তিশালী, আমার কাছে আমার যুক্তি যা মূলত অসহায়ত্বের :এত টাকা দেব কী করে! কেন বারবার এবং ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়বে_ এসব হিসাবের মারপ্যাঁচ আমি বুঝি না এবং বুঝতেও প্রস্তুত নই। আমার সমস্যা শুধু এইটুকুই যে, এত বিল পরিশোধ করব কী করে! আমার তো সে সামর্থ্য নেই।But who bothers?
আমার মতো পেনশনারদের সমস্যা এই যে, আমাদের পেনশন তো আর বাজারে মহার্ঘতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে পারে না। তার পরিমাণ আজীবন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এদিকে সব দ্রব্যমূল্যসহ গ্যাস, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদির দাম দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ((Dialectic materialism) তত্ত্ব অনুযায়ীই হয়তো বাড়তে হবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অনেক গুণী-জ্ঞানীই আছেন। তারা এর কোনো সমাধান কেন বের করেননি_ তা আমার কাছে বিস্ময়।
আমাদের সাধ্যের তরণীটা প্রয়োজনের নানা অনুষঙ্গে অহরহ ঠাসা বোঝাই, যাতে বাড়তি বোঝা তোলার কোনো উপায় থাকে না। আকস্মিকভাবে দাম বৃদ্ধি এমনই একটি বাড়তি বোঝা, যা জোর করে আমাদের সাধ্যের তরণীতে চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর তখনই টালমাটাল হয় আমাদের জীবনের তরণী। অনেক কাটছাঁট করেও তাকে আর ভাসমান রাখা যায় না।
কী অবলীলায় কর্তৃপক্ষ কত যুক্তিমালা গাঁথেন তাদের তুঘলকি সিদ্ধান্তে। একবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করেন না, গ্রাহককে তা কী বিপর্যয়ে ফেলবে। সবসময়ই তাদের ভর্তুকি বাবদ সরকারের ব্যয় বাহুল্যের জন্য মায়াকান্না। অথচ সরকারেরই হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলাতেও সংশ্লিষ্টদের হৃদয় বিগলিত হয় না। বিদ্যুৎ খাতসহ সরকার নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য খাতে যে পরিমাণ অপচয় ঘটে অথবা দুর্নীতি ও তথাকথিত সিস্টেম লসের জন্য সরকারকে বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এখনকার মেজাজ :সরকার কা মাল, দরিয়ামে ঢাল।
আমরা আর কতকাল সরকারের ভ্রান্তনীতির জন্য ডেমাক্লিসের তরবারির নির্দয় আঘাতে রক্তক্ষরণের শিকার হবো? বন্ধুবান্ধব মৃদু তিরস্কারে বলে :দোস্ত, মানিয়ে চলো। অলৌকিকভাবে তোমার টানাপড়েন দূর হবে। মন তা চায় না। মনে হয়, এই তো ভালোই আছি। একটু-আধটু টানাপড়েন না থাকলে সুখের মর্ম বুঝব কী করে? কারও সঙ্গে বিশেষ করে ধনাঢ্য সচ্ছল মস্তানদের সঙ্গে যেমন_ হলমার্ক, পদ্মা সেতু, ডেসটিনিসহ অসংখ্য লুটেরার এক কাতারে নিজেকে ভাবতেও ঘৃণা লাগে। শুধু যদি আমার সাধ্যের তরণীটি কোনোমতে ভাসমান থাকে, তাহলেই আমি খুশি। তাহলেই গুনগুন করে পঙ্কজ মলি্লকের গানের কলিটি আওড়াতে আমার ভালো লাগবে_ কী পাইনি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি। আমার ইচ্ছে করে, কর্তৃপক্ষ যদি এতটুকুই আমিসহ আমার মতো লোকদের নিশ্চিত করে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ :সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
অতীতে এসব নিয়ে বহু চেঁচামেচি করেছি, খবরের কাগজে লেখালেখি করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে বিশাল বিলের জন্য কিছু বুঝে এবং কিছুটা না বুঝে বিদ্যুৎওয়ালাদের (ডেসা বা ডেসকো) সঙ্গে অনেক বাদানুবাদ করেছি এবং কর্তৃপক্ষের বাক্যবাণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বিরস বদনে ফিরে এসেছি। তাদের কাছে তাদের যুক্তি যা শক্তিশালী, আমার কাছে আমার যুক্তি যা মূলত অসহায়ত্বের :এত টাকা দেব কী করে! কেন বারবার এবং ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়বে_ এসব হিসাবের মারপ্যাঁচ আমি বুঝি না এবং বুঝতেও প্রস্তুত নই। আমার সমস্যা শুধু এইটুকুই যে, এত বিল পরিশোধ করব কী করে! আমার তো সে সামর্থ্য নেই।But who bothers?
আমার মতো পেনশনারদের সমস্যা এই যে, আমাদের পেনশন তো আর বাজারে মহার্ঘতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে পারে না। তার পরিমাণ আজীবন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এদিকে সব দ্রব্যমূল্যসহ গ্যাস, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদির দাম দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের ((Dialectic materialism) তত্ত্ব অনুযায়ীই হয়তো বাড়তে হবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের অনেক গুণী-জ্ঞানীই আছেন। তারা এর কোনো সমাধান কেন বের করেননি_ তা আমার কাছে বিস্ময়।
আমাদের সাধ্যের তরণীটা প্রয়োজনের নানা অনুষঙ্গে অহরহ ঠাসা বোঝাই, যাতে বাড়তি বোঝা তোলার কোনো উপায় থাকে না। আকস্মিকভাবে দাম বৃদ্ধি এমনই একটি বাড়তি বোঝা, যা জোর করে আমাদের সাধ্যের তরণীতে চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর তখনই টালমাটাল হয় আমাদের জীবনের তরণী। অনেক কাটছাঁট করেও তাকে আর ভাসমান রাখা যায় না।
কী অবলীলায় কর্তৃপক্ষ কত যুক্তিমালা গাঁথেন তাদের তুঘলকি সিদ্ধান্তে। একবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করেন না, গ্রাহককে তা কী বিপর্যয়ে ফেলবে। সবসময়ই তাদের ভর্তুকি বাবদ সরকারের ব্যয় বাহুল্যের জন্য মায়াকান্না। অথচ সরকারেরই হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলাতেও সংশ্লিষ্টদের হৃদয় বিগলিত হয় না। বিদ্যুৎ খাতসহ সরকার নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য খাতে যে পরিমাণ অপচয় ঘটে অথবা দুর্নীতি ও তথাকথিত সিস্টেম লসের জন্য সরকারকে বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এখনকার মেজাজ :সরকার কা মাল, দরিয়ামে ঢাল।
আমরা আর কতকাল সরকারের ভ্রান্তনীতির জন্য ডেমাক্লিসের তরবারির নির্দয় আঘাতে রক্তক্ষরণের শিকার হবো? বন্ধুবান্ধব মৃদু তিরস্কারে বলে :দোস্ত, মানিয়ে চলো। অলৌকিকভাবে তোমার টানাপড়েন দূর হবে। মন তা চায় না। মনে হয়, এই তো ভালোই আছি। একটু-আধটু টানাপড়েন না থাকলে সুখের মর্ম বুঝব কী করে? কারও সঙ্গে বিশেষ করে ধনাঢ্য সচ্ছল মস্তানদের সঙ্গে যেমন_ হলমার্ক, পদ্মা সেতু, ডেসটিনিসহ অসংখ্য লুটেরার এক কাতারে নিজেকে ভাবতেও ঘৃণা লাগে। শুধু যদি আমার সাধ্যের তরণীটি কোনোমতে ভাসমান থাকে, তাহলেই আমি খুশি। তাহলেই গুনগুন করে পঙ্কজ মলি্লকের গানের কলিটি আওড়াতে আমার ভালো লাগবে_ কী পাইনি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি। আমার ইচ্ছে করে, কর্তৃপক্ষ যদি এতটুকুই আমিসহ আমার মতো লোকদের নিশ্চিত করে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ :সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
No comments