একের পর এক ঘটনায় প্রচণ্ড চাপে সরকার by জাহাঙ্গীর আলম

গত ১৫ দিনে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড চাপে পড়েছে। নীতিনির্ধারকদের মতে, ক্ষমতার সাড়ে তিন বছরে এমন খারাপ সময় আসেনি মহাজোট সরকারের। বিরোধী রাজনীতির উত্তাপ আর দল ও সরকারের অভ্যন্তরীণ সংকট তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এই মুহূর্তে প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন। তবে তাঁরা সেই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছেন বলে জানিয়েছেন। কাতারে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে গতকাল দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাতে জ্যেষ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। আজ বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
৯ এপ্রিল বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদর দপ্তরে ৭০ লাখ টাকাসহ সাবেক রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) গাড়ি আটক হয়। এরপর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া, জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে ও দলীয় সাংসদ তানজিম আহমদ সোহেল তাজের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ ও সক্রিয় রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা, এমপি হোস্টেলে নারীর লাশ, বাসচালককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটে। এর কিছুদিন আগে সৌদি দূতাবাসের এক কর্মীকে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে পর পর ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা সরকারকে চাপে ফেলেছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা জানান, এসব ঘটনায় সরকার খুবই বিব্রত। সোহেল তাজের পদত্যাগ ও পিলখানায় টাকা কেলেঙ্কারির ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ নিয়ে বিরোধী দলের টানা হরতালসহ উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও সরকার বেকায়দায় পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এখান থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে হবে।
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে তাঁর বাসায় পাঠিয়েও দায় এড়াতে পারছেন না। ইলিয়াসকে উদ্ধারের জন্য তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলেও সরকার সন্দেহমুক্ত হতে পারছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টার আগেই দলীয় সাংসদ সোহেল তাজ সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। এটি সরকারের জন্য বড় ধাক্কা।
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, জাতীয় চার নেতা জীবদ্দশায়ও বঙ্গবন্ধুর অনুগামী ছিলেন, মৃত্যুতেও তাঁরা অনুগামী হন। এমন একজন নেতার ছেলে সোহেল তাজের প্রথমে প্রতিমন্ত্রী এবং পরে সাংসদ ও দলের সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণায় সরকারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা প্রকট হয়েছে।
অপর একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বলেন, বড় অসময়ে সোহেল পদত্যাগ করলেন। এমন একটা সময় বেছে নেওয়া তাঁর ঠিক হয়নি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সোহেল তাজের পদত্যাগের ঘটনায় এটাও মনে করেন, এটি দুঃখজনক ঘটনা। তবে তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যার জন্যই তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ঘটনায় সরকারকে সাময়িক নাড়া দিলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরেই সোহেল তাজ এলাকায় নেই। তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতে পারে। আর বিএনপির শাসনামলে কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের সময় কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবাদ এবং সেখানে সভা-সমাবেশ করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীর ঘটনা নিয়ে বিরোধী দল কর্মসূচি দীর্ঘ করলে আওয়ামী লীগও দলীয়ভাবে কর্মসূচি দেবে। এটাকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলতে না চাইলেও রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে নেতারা মনে করেন। শিগগির দলীয় বৈঠক করে বর্তমান পরিস্থিতিতে দলীয়ভাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা আলোচনা করা হবে। তবে ১ মে টঙ্গীর শ্রমিক জনসভায় বড় রকমের জমায়েত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইভাবে ২৮ এপ্রিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটিও বর্ণাঢ্য ও বিশাল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.