জরিপে তথ্য-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি পায় ৫৯% শিক্ষার্থী by শরিফুজ্জামান
৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকের হাতে শারীরিক শাস্তি পেয়ে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তির অবস্থা সম্পর্কে পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আর্থিক সহায়তায় ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) জরিপটি পরিচালনা করে।
জরিপের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সংগঠনটি জানিয়েছে, গত বছরের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে রায় দেন। এ বছরের ১৩ জানুয়ারি রায়ের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জরিপটি করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, শাস্তির শিকার ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ মৌখিকভাবে প্রচণ্ড ভর্ৎসনার শিকার হয়েছে। বাকিরা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা ওঠবস করা, চিমটি খাওয়া, চুল টানা, বেতের আঘাত বা হাঁটু গেড়ে বসার (নিল ডাউন) মতো শাস্তি পেয়েছে।
যেখান থেকে শুরু: চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আনোয়ার হোসেনকে (১০) টাকা চুরির অপবাদে সহপাঠীদের সামনে মারধর করেছিলেন তার শিক্ষক। অভিমান করে বাড়ি ফিরে ওই শিশু বিষপানে আত্মহত্যা করে।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর রানীপুর গ্রামে। ছোট মুন্সীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ছামছুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাঁর শাস্তিও হয়।
ঘটনার পর ১৮ জুলাই জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতন কেন অবৈধ ও মৌলিক অধিকার-পরিপন্থী হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি রুল জারি করেন।
আনোয়ারের মৃত্যু সরকার, মানবাধিকার সংগঠন এবং উচ্চ আদালতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতনকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে রায় দেন।
১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরিপ: রায় হওয়ার এক বছর পর শারীরিক শাস্তির অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে ব্লাস্ট। এরই অংশ হিসেবে বরিশাল, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও রংপুর অঞ্চলের ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ১৩১ শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন পদ্ধতিতে বাছাই করা হয়। একইভাবে জরিপ-প্রক্রিয়ায় ১০৭ জন অভিভাবক এবং ৮৮ শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী মন্তব্য করেনি: শারীরিক শাস্তির শিকার হওয়া প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকের হাতে মার খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কারও সঙ্গে বলতে চায় না। তবে ৪৭ শতাংশ মায়ের সঙ্গে এবং ২৭ শতাংশ বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে।
রাজধানীর অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় থাকা মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে জানান, বিদ্যালয়ের শেওড়াপাড়া শাখায় শরীরচর্চা শিক্ষকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যানজটের কারণে দেরিতে বিদ্যালয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীর বাবা এ কথা জানিয়ে শিক্ষককে চিঠি দেন। তা সত্ত্বেও অভিভাবককে তলব করা হয়। ওই অভিভাবক জানান, বাবা-ছেলে উভয়ের জন্য বিষয়টি বিব্রতকর। লাঠি দিয়ে পেটানোর চেয়ে এই শাস্তি কম কিছু নয়।
এ প্রসঙ্গে মনিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা গর্হিত অন্যায়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়। তার পরও কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাস্তির ক্ষতিকর প্রভাব: জরিপে দেখা যায়, শারীরিক শাস্তির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে দৈনিক পত্রিকা পড়ে জেনেছেন ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ অভিভাবক। আর শিক্ষকদের ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ পত্রিকা পড়ে জেনেছেন। উত্তরদাতা শিক্ষকদের ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে আইন থাকার বিষয়টি অবগত। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ এই আইন থাকার কথা জানে।
শিক্ষকেরা যেসব শাস্তি দেন: জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁরা ছাত্রদের শাস্তি দেন। কী ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়, এর জবাবে ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড ভর্ৎসনা করেন। ২৭ শতাংশ শিক্ষক ছাত্রদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে বা বসিয়ে রাখেন। এ ছাড়া অন্যান্য শাস্তির মধ্যে রয়েছে বহিষ্কার করা, রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা, হাত দিয়ে আঘাত করা প্রভৃতি।
শাস্তির প্রতি সমর্থন: জরিপে বেরিয়ে এসেছে, কোনো কোনো অভিভাবক মারধর ছাড়া অন্যান্য শারীরিক শাস্তির প্রতি সমর্থন দিয়ে থাকেন। দেখা গেছে, সন্তানের কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার প্রতি সমর্থন রয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ অভিভাবকের। শিক্ষকের কানমলাকে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ অভিভাবক সমর্থন করেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের শাস্তি বন্ধ করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা দরকার। এখনো অনেক অভিভাবক সন্তানকে চোখ-কানে আঘাত না করে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। তিনি জানান, শারীরিক শাস্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা আইন তৈরি করা হবে।
জরিপে দেখা গেছে, শাস্তির শিকার ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ মৌখিকভাবে প্রচণ্ড ভর্ৎসনার শিকার হয়েছে। বাকিরা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা ওঠবস করা, চিমটি খাওয়া, চুল টানা, বেতের আঘাত বা হাঁটু গেড়ে বসার (নিল ডাউন) মতো শাস্তি পেয়েছে।
যেখান থেকে শুরু: চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আনোয়ার হোসেনকে (১০) টাকা চুরির অপবাদে সহপাঠীদের সামনে মারধর করেছিলেন তার শিক্ষক। অভিমান করে বাড়ি ফিরে ওই শিশু বিষপানে আত্মহত্যা করে।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর রানীপুর গ্রামে। ছোট মুন্সীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ছামছুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাঁর শাস্তিও হয়।
ঘটনার পর ১৮ জুলাই জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতন কেন অবৈধ ও মৌলিক অধিকার-পরিপন্থী হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি রুল জারি করেন।
আনোয়ারের মৃত্যু সরকার, মানবাধিকার সংগঠন এবং উচ্চ আদালতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতনকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে রায় দেন।
১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরিপ: রায় হওয়ার এক বছর পর শারীরিক শাস্তির অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে ব্লাস্ট। এরই অংশ হিসেবে বরিশাল, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও রংপুর অঞ্চলের ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ১৩১ শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন পদ্ধতিতে বাছাই করা হয়। একইভাবে জরিপ-প্রক্রিয়ায় ১০৭ জন অভিভাবক এবং ৮৮ শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী মন্তব্য করেনি: শারীরিক শাস্তির শিকার হওয়া প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকের হাতে মার খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কারও সঙ্গে বলতে চায় না। তবে ৪৭ শতাংশ মায়ের সঙ্গে এবং ২৭ শতাংশ বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে।
রাজধানীর অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় থাকা মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে জানান, বিদ্যালয়ের শেওড়াপাড়া শাখায় শরীরচর্চা শিক্ষকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যানজটের কারণে দেরিতে বিদ্যালয়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীর বাবা এ কথা জানিয়ে শিক্ষককে চিঠি দেন। তা সত্ত্বেও অভিভাবককে তলব করা হয়। ওই অভিভাবক জানান, বাবা-ছেলে উভয়ের জন্য বিষয়টি বিব্রতকর। লাঠি দিয়ে পেটানোর চেয়ে এই শাস্তি কম কিছু নয়।
এ প্রসঙ্গে মনিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা গর্হিত অন্যায়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের সতর্ক করা হয়। তার পরও কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাস্তির ক্ষতিকর প্রভাব: জরিপে দেখা যায়, শারীরিক শাস্তির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে দৈনিক পত্রিকা পড়ে জেনেছেন ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ অভিভাবক। আর শিক্ষকদের ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ পত্রিকা পড়ে জেনেছেন। উত্তরদাতা শিক্ষকদের ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে আইন থাকার বিষয়টি অবগত। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ এই আইন থাকার কথা জানে।
শিক্ষকেরা যেসব শাস্তি দেন: জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাঁরা ছাত্রদের শাস্তি দেন। কী ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়, এর জবাবে ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড ভর্ৎসনা করেন। ২৭ শতাংশ শিক্ষক ছাত্রদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে বা বসিয়ে রাখেন। এ ছাড়া অন্যান্য শাস্তির মধ্যে রয়েছে বহিষ্কার করা, রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা, হাত দিয়ে আঘাত করা প্রভৃতি।
শাস্তির প্রতি সমর্থন: জরিপে বেরিয়ে এসেছে, কোনো কোনো অভিভাবক মারধর ছাড়া অন্যান্য শারীরিক শাস্তির প্রতি সমর্থন দিয়ে থাকেন। দেখা গেছে, সন্তানের কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার প্রতি সমর্থন রয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ অভিভাবকের। শিক্ষকের কানমলাকে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ অভিভাবক সমর্থন করেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের শাস্তি বন্ধ করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা দরকার। এখনো অনেক অভিভাবক সন্তানকে চোখ-কানে আঘাত না করে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। তিনি জানান, শারীরিক শাস্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা আইন তৈরি করা হবে।
No comments