টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ by আলতাব হোসেন
উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের খবরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তাপ, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবাদ চলছে ভারতের মণিপুর, আসাম, মিজোরামসহ কয়েকটি রাজ্যে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে চিঠি দিয়েছেন। গতকাল চিঠির জবাবও দেওয়া হয়েছে; কিন্তু টিপাইমুখ
ইস্যুতে রাজনীতির মাঠ দিনদিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ১ ডিসেম্বর সিলেটে হরতাল ডাকা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক ও বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিদিনই বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের বিরাট অঞ্চলে বন্যা, জলাবদ্ধতা, মরুময়তা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ নানা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিপাইমুখ প্রকল্প ফারাক্কার ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। কারণ এখানে বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটিতে ভারত ঠিক কী কী অবকাঠামো তৈরি করবে সে সম্পর্কে বাংলাদেশকে সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত না দেওয়ায় এ উদ্বেগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে শুধু ড্যাম নির্মাণ করলেও নানামুখী বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ড্যামের পাশাপাশি যদি পানি প্রত্যাহারের জন্য ব্যারাজ নির্মাণ করা হয় তাহলে সেটা ফারাক্কার বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে যাবে। ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাবেক ডিজি ড. এনামুল হক বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে ভারত থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমস্যার সমাধান না হলে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্য পানিসম্পদমন্ত্রী
গতকাল বলেছেন, যৌথ সমীক্ষার ভিত্তিতে টিপাইমুখ বাঁধ না হলে বাংলাদেশ প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী জোর আন্দোলন হবে জেনেই ভারত প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে। এর আগে প্রকল্পের সমীক্ষা ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। তারপর রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পুরো প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এনএইচপিসি, এসজেভিএন ও মণিপুর রাজ্য সরকার ২২ অক্টোবর দিলি্লতে একটি যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই করেছে। যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে জাতীয় জলবিদ্যুৎ সংস্থা (এনএইচপিসি) ৬৯, রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থার (এসজেভিএন) ২৬ এবং রাজ্য সরকারের পাঁচ ভাগ মালিকানা থাকবে। মণিপুর রাজ্যের চন্দ্রচূড় জেলায় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে ১৬২ দশমিক ৮০ মিটার উঁচু পাথরের বাঁধ দিয়ে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছয়টি ইউনিট থাকবে। ৯ হাজার ২১১ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্প শেষ হবে ৮৭ মাসে।
২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রকল্প টিপাইমুখে নেওয়া হবে না। ক্ষতি হবে না বলে ভারত দাবি করলেও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা তা প্রত্যাখ্যান করছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ড্যামের পাশাপাশি টিপাইমুখ থেকে ১০০ কিলোমিটার ভাটিতে ফুলেরতল নামক স্থানে একটি ব্যারাজও তৈরি করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ব্যারাজের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করা হলে বাংলাদেশ শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাবে না। ফলে বরাক নদীর বাংলাদেশ অংশে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাবে। বরাক নদী বাংলাদেশের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির উৎস। এ দুটি নদী আবার মেঘনা নদীতে পড়েছে।
টিআইবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ সমকালকে বলেন, হিমালয় উপত্যকায় বাঁধ দেওয়া হলে ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে বাংলাদেশে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা হবে নজিরবিহীন। নদী, মৎস্য, বনসহ বিভিন্ন উৎসের ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। এদেশে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক ৫৭টি নদীর মধ্যে ৫৪টির উৎপত্তি ভারতে, বাকি তিনটির মিয়ানমারে।
টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনের নেতা হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের উজান থেকে আসা নদীর পানির মোট সাত থেকে আট ভাগ আসে ভারতের বরাক নদী থেকে। তিনি বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার ২৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তাৎক্ষণিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এ বাঁধ নির্মাণ হলে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের পাহাড় থেকে নির্গত হয়ে ৯৪৬ কিলোমিটার পথ পরিক্রমণ করে বরাক, সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা অভিন্ন নদীপ্রবাহ বাংলাদেশের ভোলা জেলার নিকটস্থ বঙ্গোপসাগরে নিপতিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৭ কিলোমিটার ভারতের এবং বাকি ৬৬৯ কিলোমিটার বাংলাদেশে বিরাজমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া ভারতের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ এক ধরনের অহমিকা ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, বাঁধ দেওয়া হলে নদীর ঋতুভিত্তিক প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে।
তবে টিপাইমুখে বাঁধ হলে কিছু উপকারও হতে পারে বলে একজন বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন। ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক কাজী গোলাম মোস্তফা এ বিষয়ে বলেন, টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণ করে বর্ষা মৌসুমে তারা পানি ধরে রাখলে বাংলাদেশের লাভ হবে। এতে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বন্যা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হবে। আবার টিপাইমুখ প্রকল্পে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পর শুষ্ক মৌসুমে ওই পানি ছেড়ে দেওয়া হলে সিলেট অঞ্চলে প্রয়োজনীয় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
৩৩ বছরেও কোনো সমীক্ষা করেনি বাংলাদেশ : ভারত টিপাইমুখ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ কোন ধরনের এবং কী পরিমাণ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য সমীক্ষা চালানোর কথা থাকলেও এখনও তা হয়নি। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে সমীক্ষাটি চালানোর বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত তাতেও কোনো অগ্রগতি নেই। কবে নাগাদ সমীক্ষাটি চালানো হবে, তাও নিশ্চিত নয়। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জেআরসির সাবেক সদস্য ইমামুল হক বলেন, ভারত ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশকে টিপাইমুখ বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও গত ৩৩ বছরে এককভাবে বাংলাদেশ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই। পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন সমকালকে বলেন, কোনো গবেষণা না হওয়ায় এ বিষয়ে তথ্য নেই। দ্রুত একটি সমীক্ষা করার বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে বলে জানান তিনি। টিপাইমুখ নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
সরকারের কী করা উচিত : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিপাইমুখ সম্পর্কিত বর্তমান প্রকল্পের পরিপত্রের সঙ্গে প্রকল্পের স্টাডি, ডিজাইন, মডেলসহ এ সংক্রান্ত সব কারিগরি তথ্য অবিলম্বে বাংলাদেশকে দেওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে ভারতকে তাগাদা দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, ভারতকে অনুরোধ করতে হবে এসব তথ্য-উপাত্ত, দলিলপত্র পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগ পর্যন্ত টিপাইমুখ প্রকল্প সংক্রান্ত সব উদ্যোগ আপাতত স্থগিত রাখার জন্য। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের উচিত হবে ভারতকে বলা, ফুলেরতল ব্যারাজ যেন কোনোভাবেই নির্মাণ না করা হয়। বাংলাদেশের উচিত এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি করার জন্য ভারতকে প্রস্তাব দেওয়া। ওই চুক্তিতে ফুলেরতল ব্যারাজ নির্মাণ করা হবে না বা পানি প্রত্যাহার হবে না_ এ ধরনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। টিপাইমুখ এলাকায় ছোট ছোট ড্যাম নির্মাণ করে ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, এ বিষয়েও ভারতের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে টিপাইমুখ ড্যাম নির্মিত হলে বাংলাদেশ কী সুবিধা পাবে_ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া উচিত।
প্রকল্প শুরুর কথা :ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। মণিপুরবাসীকে বলা হচ্ছে, বিনামূল্যে বিদ্যুৎসহ এ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ইলেকট্রিসিটি অ্যাক্টের ২৯ ধারার আওতায় এ বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সমালোচনার পর ২০০৯ সালে নিপকোর কাছ থেকে প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে নেয়।
ঢাকা-দিলি্ল মধুর সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে : বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিন্ন নদী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আটকে গেছে। এদিকে যৌথ সমীক্ষা ছাড়া টিপাইমুখে ড্যাম করা হলে বাংলাদেশ সহজে তা মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ সরকার এবার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে যে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে চিড় ধরতে পারে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মনমোহন সিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ টিপাইমুখে নেওয়া হবে না। ভারত এখনও বলছে, বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিন্তু এটি খুব সাধারণ কথা যে, যে কোনো নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব থাকবে। আর নেতিবাচক প্রভাব না থাকলে কেন ভারতের ওই রাজ্যগুলোতে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে?
টিপাইমুখ নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হলে ২০০৯ সালের শেষ দিকে জাতীয় সংসদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি ভারতের টিপাইমুখে এক সফরে যায়। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তারা মণিপুরে টিপাইমুখে নামতে পারেননি। হেলিকপ্টারে করে টিপাইমুখ পরিদর্শন করে তারা দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে আবারও একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
পানিসম্পদমন্ত্রী যা বললেন : পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুর সমাধানে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে যাবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইবি) মিলনায়তনে এক সেমিনারে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, 'বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। তারা যদি আমাদের অবজ্ঞা করে কোনো সমীক্ষা ছাড়াই কাজ করতে যায় তাহলে আমরা নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে লিখব। তারা যদি না শোনেন তাহলে তো বিভিন্ন আদালত আছে, আমরা সেখানে যাব আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য।'
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'নদী ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেজিংয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ বাংলাদেশে বন্যানিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। পরবর্তী যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব শিগগির হবে। ভারতকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে, জেআরসি বৈঠক করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির মতো বাংলাদেশ টিপাইমুখ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতে চাই। যদি সুযোগ থাকে এবং প্রয়োজন হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে বাধা নেই।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পে শুধু ড্যাম নির্মাণ করলেও নানামুখী বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ড্যামের পাশাপাশি যদি পানি প্রত্যাহারের জন্য ব্যারাজ নির্মাণ করা হয় তাহলে সেটা ফারাক্কার বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে যাবে। ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাবেক ডিজি ড. এনামুল হক বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে ভারত থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমস্যার সমাধান না হলে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্য পানিসম্পদমন্ত্রী
গতকাল বলেছেন, যৌথ সমীক্ষার ভিত্তিতে টিপাইমুখ বাঁধ না হলে বাংলাদেশ প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী জোর আন্দোলন হবে জেনেই ভারত প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে। এর আগে প্রকল্পের সমীক্ষা ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। তারপর রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পুরো প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এনএইচপিসি, এসজেভিএন ও মণিপুর রাজ্য সরকার ২২ অক্টোবর দিলি্লতে একটি যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই করেছে। যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পে জাতীয় জলবিদ্যুৎ সংস্থা (এনএইচপিসি) ৬৯, রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থার (এসজেভিএন) ২৬ এবং রাজ্য সরকারের পাঁচ ভাগ মালিকানা থাকবে। মণিপুর রাজ্যের চন্দ্রচূড় জেলায় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে ১৬২ দশমিক ৮০ মিটার উঁচু পাথরের বাঁধ দিয়ে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছয়টি ইউনিট থাকবে। ৯ হাজার ২১১ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্প শেষ হবে ৮৭ মাসে।
২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো প্রকল্প টিপাইমুখে নেওয়া হবে না। ক্ষতি হবে না বলে ভারত দাবি করলেও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা তা প্রত্যাখ্যান করছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ড্যামের পাশাপাশি টিপাইমুখ থেকে ১০০ কিলোমিটার ভাটিতে ফুলেরতল নামক স্থানে একটি ব্যারাজও তৈরি করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এ ব্যারাজের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করা হলে বাংলাদেশ শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাবে না। ফলে বরাক নদীর বাংলাদেশ অংশে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে যাবে। বরাক নদী বাংলাদেশের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির উৎস। এ দুটি নদী আবার মেঘনা নদীতে পড়েছে।
টিআইবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ সমকালকে বলেন, হিমালয় উপত্যকায় বাঁধ দেওয়া হলে ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে বাংলাদেশে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা হবে নজিরবিহীন। নদী, মৎস্য, বনসহ বিভিন্ন উৎসের ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। এদেশে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক ৫৭টি নদীর মধ্যে ৫৪টির উৎপত্তি ভারতে, বাকি তিনটির মিয়ানমারে।
টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনের নেতা হেলাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের উজান থেকে আসা নদীর পানির মোট সাত থেকে আট ভাগ আসে ভারতের বরাক নদী থেকে। তিনি বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার ২৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তাৎক্ষণিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এ বাঁধ নির্মাণ হলে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের পাহাড় থেকে নির্গত হয়ে ৯৪৬ কিলোমিটার পথ পরিক্রমণ করে বরাক, সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা অভিন্ন নদীপ্রবাহ বাংলাদেশের ভোলা জেলার নিকটস্থ বঙ্গোপসাগরে নিপতিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৭ কিলোমিটার ভারতের এবং বাকি ৬৬৯ কিলোমিটার বাংলাদেশে বিরাজমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া ভারতের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ এক ধরনের অহমিকা ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, বাঁধ দেওয়া হলে নদীর ঋতুভিত্তিক প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে।
তবে টিপাইমুখে বাঁধ হলে কিছু উপকারও হতে পারে বলে একজন বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন। ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশনের (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক কাজী গোলাম মোস্তফা এ বিষয়ে বলেন, টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণ করে বর্ষা মৌসুমে তারা পানি ধরে রাখলে বাংলাদেশের লাভ হবে। এতে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের বন্যা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হবে। আবার টিপাইমুখ প্রকল্পে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পর শুষ্ক মৌসুমে ওই পানি ছেড়ে দেওয়া হলে সিলেট অঞ্চলে প্রয়োজনীয় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
৩৩ বছরেও কোনো সমীক্ষা করেনি বাংলাদেশ : ভারত টিপাইমুখ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ কোন ধরনের এবং কী পরিমাণ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য সমীক্ষা চালানোর কথা থাকলেও এখনও তা হয়নি। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে সমীক্ষাটি চালানোর বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত তাতেও কোনো অগ্রগতি নেই। কবে নাগাদ সমীক্ষাটি চালানো হবে, তাও নিশ্চিত নয়। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জেআরসির সাবেক সদস্য ইমামুল হক বলেন, ভারত ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশকে টিপাইমুখ বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও গত ৩৩ বছরে এককভাবে বাংলাদেশ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেই। পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন সমকালকে বলেন, কোনো গবেষণা না হওয়ায় এ বিষয়ে তথ্য নেই। দ্রুত একটি সমীক্ষা করার বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে বলে জানান তিনি। টিপাইমুখ নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
সরকারের কী করা উচিত : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিপাইমুখ সম্পর্কিত বর্তমান প্রকল্পের পরিপত্রের সঙ্গে প্রকল্পের স্টাডি, ডিজাইন, মডেলসহ এ সংক্রান্ত সব কারিগরি তথ্য অবিলম্বে বাংলাদেশকে দেওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে ভারতকে তাগাদা দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, ভারতকে অনুরোধ করতে হবে এসব তথ্য-উপাত্ত, দলিলপত্র পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগ পর্যন্ত টিপাইমুখ প্রকল্প সংক্রান্ত সব উদ্যোগ আপাতত স্থগিত রাখার জন্য। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের উচিত হবে ভারতকে বলা, ফুলেরতল ব্যারাজ যেন কোনোভাবেই নির্মাণ না করা হয়। বাংলাদেশের উচিত এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি করার জন্য ভারতকে প্রস্তাব দেওয়া। ওই চুক্তিতে ফুলেরতল ব্যারাজ নির্মাণ করা হবে না বা পানি প্রত্যাহার হবে না_ এ ধরনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। টিপাইমুখ এলাকায় ছোট ছোট ড্যাম নির্মাণ করে ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, এ বিষয়েও ভারতের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে টিপাইমুখ ড্যাম নির্মিত হলে বাংলাদেশ কী সুবিধা পাবে_ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া উচিত।
প্রকল্প শুরুর কথা :ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। মণিপুরবাসীকে বলা হচ্ছে, বিনামূল্যে বিদ্যুৎসহ এ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ইলেকট্রিসিটি অ্যাক্টের ২৯ ধারার আওতায় এ বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সমালোচনার পর ২০০৯ সালে নিপকোর কাছ থেকে প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে নেয়।
ঢাকা-দিলি্ল মধুর সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে : বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিন্ন নদী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আটকে গেছে। এদিকে যৌথ সমীক্ষা ছাড়া টিপাইমুখে ড্যাম করা হলে বাংলাদেশ সহজে তা মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ সরকার এবার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে যে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে চিড় ধরতে পারে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মনমোহন সিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ টিপাইমুখে নেওয়া হবে না। ভারত এখনও বলছে, বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিন্তু এটি খুব সাধারণ কথা যে, যে কোনো নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব থাকবে। আর নেতিবাচক প্রভাব না থাকলে কেন ভারতের ওই রাজ্যগুলোতে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে?
টিপাইমুখ নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হলে ২০০৯ সালের শেষ দিকে জাতীয় সংসদের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি ভারতের টিপাইমুখে এক সফরে যায়। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তারা মণিপুরে টিপাইমুখে নামতে পারেননি। হেলিকপ্টারে করে টিপাইমুখ পরিদর্শন করে তারা দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদে আবারও একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
পানিসম্পদমন্ত্রী যা বললেন : পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুর সমাধানে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে যাবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বন্ধু দেশ হিসেবে ভারতকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইবি) মিলনায়তনে এক সেমিনারে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, 'বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত। তারা যদি আমাদের অবজ্ঞা করে কোনো সমীক্ষা ছাড়াই কাজ করতে যায় তাহলে আমরা নিশ্চয়ই এর বিরুদ্ধে লিখব। তারা যদি না শোনেন তাহলে তো বিভিন্ন আদালত আছে, আমরা সেখানে যাব আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য।'
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'নদী ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেজিংয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ বাংলাদেশে বন্যানিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। পরবর্তী যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব শিগগির হবে। ভারতকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে, জেআরসি বৈঠক করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির মতো বাংলাদেশ টিপাইমুখ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতে চাই। যদি সুযোগ থাকে এবং প্রয়োজন হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে বাধা নেই।'
No comments