ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে সিলেট আওয়ামী লীগ by আবদুর রাহমান,

তুন কমিটি হয়নি অনেক দিন; তাই দলে স্থবিরতা বিরাজ করছিল। অন্যদিকে দল ক্ষমতায় থাকার পরও অনেকে ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছেন না। এসব কারণে তুষের আগুনে পুড়ছিল সিলেট আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণার পর স্থবিরতা কিংবা অসন্তোষ কোনোটাই কাটেনি, বরং এ আগুন এবার দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে এত দিন বড় নেতারা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ছিলেন। এখন কমিটিতে জায়গা না পাওয়ায় শুরু হয়েছে তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ। তাঁরা সিলেটের রাজপথ গরম করছেন।


কমিটিতে স্থান পেয়েও অনেকে খুশি নন। তাঁদের অভিযোগ যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তোষামোদকারী ও নিকটাত্মীয়দের অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। আর নতুন কমিটির দায়িত্ব যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা করছেন; কিন্তু সফল হচ্ছেন না।
গত বুধবার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে নতুন কমিটির সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের কথা থাকলেও সেখানে দুই কমিটির মাত্র তিনজন উপস্থিত ছিলেন। ফলে ভেস্তে যায় বৈঠক। একইভাবে নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ডেকেও কমিটির অনেক সদস্যকে সভায় নিয়ে আসতে পারছেন না। উল্টো তোপের মুখে পড়ছেন।
পদবঞ্চিতরা নতুন কমিটি সম্পর্কে বলছেন, এগুলো তিন ব্যক্তির পকেট কমিটি। তাঁদের অভিযোগ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে। তাঁরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী দলের সবাইকে চেনেন না। তাই তাঁকে যা বোঝানো হয়েছে, তিনি তা-ই বিশ্বাস করেছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কমিটির নামে ব্যবসা করেছেন। আর মেয়র কামরান তাঁর পরিবারকে অতিমূল্যায়ন করেছেন।
কমিটি ঘোষণার পর প্রথম দুই দিন বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মান-অভিমান-ক্ষোভ প্রকাশ্য রূপ না নিলেও বুধবার থেকে তা আর আড়াল থাকেনি। বৃহস্পতিবার নতুন কমিটির বিরুদ্ধে নগরীতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল হয়েছে। ওই মিছিল থেকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর দক্ষিণ সুরমায় নতুন কমিটির পাল্টা মহানগর দক্ষিণ শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নবগঠিত কমিটি সম্পর্কে সিটি কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রকিব বাবলু বলেন, 'এগুলো সুবিধাবাদীদের পকেট কমিটি। দলের স্বার্থে নয়, তাঁদের নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের লোকদের নিয়ে এ দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।' পদবঞ্চিত ও অবমূল্যায়িত দাবিদার নেতা-কর্মীরা জানান, দুই কমিটিতেই নজিরবিহীন স্বজনপ্রীতি হয়েছে। মহানগর কমিটির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাওর বলেন, 'নতুন কমিটিতে মন্ত্রী ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের পছন্দের মানুষ ঠাঁই পেয়েছেন।' সিটি কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'মহানগর কমিটিতে একটি পরিবারের বাবা-মা-ছেলে সবাই স্থান পেয়েছেন। অথচ অনেক যোগ্য নেতাকে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। মনে হয়, যেন এক ঘরেই সব নেতার জন্ম হয়ে গেছে।'

No comments

Powered by Blogger.