প্রসঙ্গ জয়ের সদস্যপদ
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে ফিরেছেন সোমবার। আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পাওয়ার চার দিন পর জয় সকাল সাড়ে সাতটায় সস্ত্রীক হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
জয়ের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক অভিষেক নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। কবে থেকে জয় রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন, দলের কোন পদ-পদবি পাচ্ছেন কি-না, দলের মধ্যে তাঁর অবস্থানই বা কী হবে_ এ নিয়ে প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি করেছে ৬১ বছরের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের তরম্নণ প্রজন্মের মাঝে। দলটির প্রবীণ-নবীন নেতাসহ রাজনৈতিক সংশিস্নষ্টদের অভিন্ন মত, জয় সক্রিয় রাজনীতিতে এলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আসবে। পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হয়ে একদম তৃণমূল থেকে জয়ের অভিষেককে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের ইতিবাচক ঘটনা বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির নেতৃত্বে কেমনভাবে তাঁর আগমন ঘটবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর মঙ্গলবার আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশে ফিরলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চুপ তিনি। তৃণমূল নেতারা প্রধানমন্ত্রীর এই পুত্রকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ দিলেও এখনই তিনি সক্রিয় হচ্ছেন না। এ কথা তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। ঘনিষ্ঠজনদের মতে, রাজনীতিতে সক্রিয় হতে আর কিছুটা সময় নিতে চান বঙ্গবন্ধুর এই নাতি। পাশে থেকে মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাহায্য করার পাশাপাশি রাজনীতি সম্পর্কে আরও কিছুটা বুঝতে চান জয়। দেশে থেকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পুরনো প্রজন্মের সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচানো, তরম্নণ প্রজন্মকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করা এবং দলের মধ্যে সৃষ্ট বিভেদ-দ্বন্দ্ব নিরসনে নেপথ্যে থেকেই সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে যেতে চান সজীব ওয়াজেদ জয়।
রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরম্ন না হলেও দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনীতির পরিবারের সনত্মান সজীব ওয়াজেদ জয়ের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে ওঠা-বসা অনেক আগে থেকেই। দলের নাম লেখানোর অনেক আগে থেকেই নেপথ্যে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তিনি। দলের সদস্যপদ, পদ-পদবি না থাকলেও দীর্ঘদিন থেকেই তিনি মাকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। নেপথ্যচারির মতো পেছন থেকেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত 'ভিশন-২০২১' ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতৃত্বে কে আসছেন_ এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। দলটির সাধারণ নেতাকমর্ীরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি কাউকে দলের ভবিষ্যত প্রধান হিসেবে প্রত্যাশার বহিপর্্রকাশ ঘটিয়েছেন অনেক আগে থেকেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ, এখনও এ নিয়ে তাঁর কোন ইঙ্গিত নেই। অপরপৰে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভবিষ্যত নেতৃত্ব অনেকটাই পরিষ্কার করেছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বড় ছেলে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
সদস্যপদ প্রাপ্তি প্রসঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, "আমি এসব জানতাম না। তবে যেহেতু দল আমাকে সদস্য বানিয়েছে, সে জন্য আমি দলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি গর্বিত। আমি এখনই রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছি না। তবে দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যেতে চাই। পাশে থেকে মাকে সর্বৰণিক সাহায্য এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।"
পারিবারিক ঐতিহ্য ও প্রভাবের যে ধারা উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিদ্যমান বাংলাদেশের রাজনীতিও তা থেকে মুক্ত নয়। এদেশের জনগণও এ ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। জয়ের রাজনীতিতে যোগদান সেই ঐতিহ্যেরই নতুন সংযোজন বলেই মনে করছেন সংশিস্নষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন দল আওয়ামী লীগে জয়ের আগমনকে সাধুবাদ জানিয়েছে দলটির নবীন-প্রবীণ নেতা-কমর্ী-সমর্থকরা। সবচেয়ে বেশি খুশি আওয়ামী লীগের তরম্নণ অংশ। জয়ের রাজনীতিতে আগমন তারা অনেক আগে থেকেই প্রত্যাশা করছিল। তাদের সেই প্রতীৰার অবসান ঘটতে চলেছে জেনে দলটির তরম্নণ প্রজন্মের মাঝে অনেকটাই জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
জয়ের রাজনীতিতে নামার ব্যাপারে তাঁর মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ খুব একটা বেশি নেই। ইতোপূর্বে জয়ের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বারংবার একটি কথাই বলেছেন যে, "সে (জয়) বড় হয়েছে। এখন তাঁর সিদ্ধানত্ম নিজেই গ্রহণ করম্নক। আর জয়ের জন্ম তো রাজনৈতিক পরিবারেই। তাই আমি তাঁকে উৎসাহিতও করব না, নিষেধও করব না।"
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের মতে, উচ্চশিৰিত ও আধুনিক মনস্ক সজীব ওয়াজেদ জয় রাজনীতিতে সক্রিয় হলে আওয়ামী লীগে নতুন করে গতিশীলতা আসবে। তরম্নণরা উদ্বুদ্ধ হবে। নবীন-প্রবীণ মিলিত শক্তিই নতুনভাবে আওয়ামী লীগকে উজ্জীবিত করবে, যা ৰমতার রাজনীতিতে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখার মতো দৰতা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন জয়। আর অন্য সাধারণ ক'জনের মতোই জয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন। পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হননি। এটা রাজনীতির ইতিবাচক ঘটনা। তাঁদের মতে, বিএনপির মতো জয়কে যদি একেবারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শীর্ষে আনা হয় সেৰেত্রে কিছুটা ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে। সেৰেত্রে তৃণমূল থেকেই জয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলে সেৰেত্রে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও রাজনীতিতে পরিপক্বতা আসবে। অন্যৰেত্রে জয়কে ঘিরে ঐক্যের যে বলয় গড়ে উঠবে তাতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগই।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রাথমিক সদস্যপদ ফরম পূরণকারী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, দেশের যুবসমাজের কাছে জয়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে, কারণ জয় মেধাবী ও তারম্নণ্যের প্রতীক। জয় দলের নেতৃত্বে এলে দেশের জন্য সেটা হবে এক বিশাল প্রাপ্তি। আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ বাসত্মবায়নের জন্য দরকার জয়ের মতো উচ্চশিৰিত, প্রগতিশীল ও আধুনিক মানুষ। অদূর ভবিষ্যতে দল তাঁর মতো নেতৃত্ব চায়।
অনেকবারই দেশের মানুষ ব্যাপক গণসংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নিলেও সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরেই থেকেছেন আমেরিকা প্রবাসী এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রংপুরের দলের বর্ধিত সভায় জয়কে দলের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়া হলে জয় আবারও আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন। ওইদিন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জয়ের পৰে সদস্য ফরম পূরণ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। পরে তিনি প্রাথমিক সদস্যর ফরমটি জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আবুল মনসুর আহমেদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম রাজুর হাতে তুলে দেন। জয়ের প্রাথমিক সদস্যপদ ফরম নম্বর- ১১২৩২০১। সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করেছেন জয়। আর প্রাথমিক সদস্যপদ প্রাপ্তির মাধ্যমে জয়ের অভিষেক হলো ৬১ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে।
আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভের পর মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বঙ্গবন্ধুর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয়। সকাল সাড়ে ৯টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে দলের বেশকিছু নেতা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। তবে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলেননি।
তবে প্রাথমিক সদস্যপদ প্রাপ্তির পর সজীব ওয়াজেদ জয় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পথ ধরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর তিনিই (জয়) দলের হাল ধরবেন কী-না এ প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, এটা পরে দেখা যাবে। আপাতত আমি আওয়ামী লীগের ভিশন-২০২১ বাসত্মবায়নের জন্য কাজ করে যেতে চাই। তবে কবে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন, তাও সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। তবে বিএনপির অভিনন্দনের জবাবে জয় বলেন, যেহেতু তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন, সেজন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।
No comments