দুর্বিষহ জীবন by কাজী আনিছ
প্রথমে দুই পায়ের ওপর বসা, এরপর ঝুঁকে কোনোমতে বালিশের সঙ্গে মাথা ছোঁয়ানো। এভাবেই প্রতিদিন ঘুমানোর চেষ্টা করেন রহিমা বেগম (৩৮)। কিন্তু ঘুম তাঁর আসে না। ব্যথায়-যন্ত্রণায় সারাক্ষণই করেন আর্তনাদ।
আগুনে পুড়ে প্রায় সারা শরীরই দগ্ধ হয়ে যাওয়া হতদরিদ্র রহিমার দিন কাটছে এভাবেই। দিনদিন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কারণ, অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। একদিকে নিজের এ পরিণতি, অন্যদিকে দুই শিশুসন্তানের দেখভাল—সবকিছু মিলিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রহিমার জীবন।রহিমা মিরপুর উত্তর পীরেরবাগের বাসিন্দা। ‘আলাল সাহেবের প্লট’ নামে পরিচিত একটি জায়গায় কোনোমতে টিনশেড ঘর তুলে সন্তানদের নিয়ে থাকেন তিনি। পাশে থাকেন তাঁর বোন মাহিনূর বেগম।
২৫ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় রহিমার বাসায় গেলে বোন মাহিনূর প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে প্রচণ্ড শীতে কাতর ছিলেন রহিমা। শীত থেকে রক্ষা পেতে বাসার সামনে আগুন জ্বালানো হয়। আগুন পোহাতে গিয়ে শাড়িতে আগুন লাগে। শরীরে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর আগে রহিমার হাঁটু থেকে শরীরের পেছনে প্রায় কাঁধ পর্যন্ত পুড়ে যায়।
মাহিনূর বলেন, ঘটনার পর রহিমার শরীরে পানি ঢালা হয়। ডিম ভেঙে দেওয়া হয়। পরদিন অবস্থা খারাপ হলে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছ থেকে মলম নিয়ে আনা হয়। এখন ওই মলম এবং সরিষার তেল দিয়ে তাঁর শরীরের ক্ষত সারানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু দিনদিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে।
হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন, জানতে চাইলে মাহিনূর বলেন, ‘হের (রহিমা) তো ছোড দুই বাচ্চা। স্বামী অনেক আগেই তারে ছাইড়া চইলা গেছে। আমিও তো সংসার নিয়া আছি। কে নিয়া যাইব তারে। আর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তো আরও ওষুধপত্র কিনতে অইব। ওই টাকা তো আমাদের নাই।’
No comments