হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ॥ দেশের বেশিরভাগ কোম্পানির ওষুধ মানসম্মত নয়- তৃতীয় ক্যাটাগরির কারখানাই বেশি, মানা হয় না ওষুধ প্রশাসনের শর্ত by নিখিল মানখিন
অধিকাংশ কারখানায় বিধি বহির্ভূত উপায়ে ওষুধ উৎপাদনের আলামত পাওয়া গেছে। সারাদেশের ওষুধ কারখানা পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে গঠিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, শতভাগ মান নিয়ন্ত্রণ করে এমন ওষুধ কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। পর্যাপ্ত মূলধন ছাড়াই অনেক কোম্পানি নামমাত্র ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। এ সব কোম্পানির ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত জনবল পর্যনত্ম নেই তাদের। নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তারা ওষুধ উৎপাদন করে। বাজারে এখনও এমন অনেক ওষুধ রয়ে গেছে যেগুলো ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি বাতিল ঘোষণা করতে পারে। নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির সংখ্যা বেশি হলেও দেশের প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে গুটি কয়েক প্রথম শ্রেণীর কোম্পানি। যারা ভাল মানের নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ উৎপাদন করে।তদনত্ম কমিটির প্রধান সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন জনকণ্ঠকে জানান, কমিটির সদস্যদের তত্ত্বাবধানে দেশের দেড় শতাধিক ওষুধ কোম্পানি পরিদর্শনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিটি ওষুধ কোম্পানিতে পাঁচজনের একটি টিম পরিদর্শনে গেছে। পাঁচ সদস্যের টিমে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু' জন শিক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দু' শিক কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে চূড়ানত্ম প্রতিবেদন প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। খুবই নিখুঁতভাবে কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় নিতে হয়েছে তদনত্ম কমিটির সদস্যদের। দেশের প্রথম শ্রেণীর ওষুধ কারখানাগুলোতে খুব বেশি ত্রম্নটি ধরা পড়ছে না। তৃতীয় ক্যাটাগরির অনেক কারখানায় ওষুধ প্রশাসনের দেয়া শর্ত অমান্য করে ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। ওই সব কারখানায় ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। চূড়ানত্ম প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগে নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে শিশু মৃতু্যর ঘটনার প্রেেিত দেশের ওষুধ কারখানাগুলো পরিদর্শনের সিদ্ধানত্ম নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্যের তদনত্ম কমিটির অন্যরা হলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হাবিবুন্নাহার, ড্রাগ সুপার আলতাফ হোসেন ও স্বাস্থ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের নির্ধারিত সময়সীমার গত ২৩ অক্টোবর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এর পর আরও দু' মাস সময় বাড়ানো হয়ে প্রতিবেদন জমার দেয়ার জন্য। যা গত ২৩ ডিসেম্বর পার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফা সময় বৃদ্ধির পরও ইতোমধ্যে বাড়তি দু' মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এবার তদনত্ম কমিটির সংশিস্নষ্টরা বলছেন, মার্চের মাসের প্রথম দিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
তদনত্ম কমিটির কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধিকাংশ ওষুধ কোম্পানির অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়। এটা ভাবতে ভাল লাগে যে, দেশের শতকরা ৯৮ ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দেশের ভাল গুটি কয়েক কোম্পাানি। ওষুধ কোম্পানিগুলো পরিদর্শনে দেখা গেছে, দেশে নিম্নমান ওষুধের বাজার রয়ে গেছে। এর পেছনে কতকগুলো কারণও রয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ ওষুধ কোম্পানি পর্যাপ্ত মূলধন ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী অনুমতি নিয়ে ওষুধ উৎপাদন করলেও তাদের কারখানার ভেতরে নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিতি জনবল। কারখানায় বিরাজ করছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কোন ওষুধ কোম্পানিকে বছরে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। যা ছোট ছোট ওষুধ কোম্পানির প েসম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ ছোট ছোট ওষুধ কোম্পানি মাসে মাত্র ৩ থকে ৪ লাখ টাকার ওষুধ বিক্রি করতে পারেন। বাজারে এখনও এমন অনেক ওষুধ রয়ে গেছে যেগুলো ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি বাতিল ঘোষণা করতে পারে। কোন ভিত্তি ও গবেষণা ছাড়াই দেশে অসংখ্য এ্যান্টিবায়োটিক ছড়িয়ে পড়েছে। যার হিসাব সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চিকিৎসকরা পর্যনত্ম জানেন না। এমন অব্যবস্থাপনার কারণেই ওই সব ওষুধ খেয়ে মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ না থাকলে কোন কোম্পানিকে ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না। বাজারে এখনও এমন অনেক ওষুধ রয়ে গেছে যেগুলো ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি বাতিল ঘোষণা করতে পারে।
No comments