শান্তি কমিটির সদস্যরা বাড়ি বরাদ্দ, অর্থ সুবিধা নেয়ায় ব্যস্ত ছিল- মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র-৪৫ by মুনতাসীর মামুন
১৯৭১ শান্তি কমিটি যে দেশজুড়ে কী অশান্তির সৃষ্টি করেছিল তার কিছু বিবরণ আগে দিয়েছি। এখন আরও কিছু যোগ করছি এ কারণে যে, শান্তি কমিটির কার্যকলাপ সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই।
নেত্রকোনা মহকুমা মুসলিম লীগের সম্পাদক নাজমুল হোসাইন ১১ জুন, ১৯৭১ সালে নেত্রকোনার মহকুমা অফিসারকে [এসডিও] একটি আবেদনপত্র দেন মহকুমা পিস কমিটি বা শানত্মি কমিটির মাধ্যমে।নাজমুল জানাচ্ছেন, নেত্রকোনা শানত্মি কমিটির কাজে তিনি ব্যসত্ম এবং সে কারণে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে নেত্রকোনায় অবস্থান করছেন। এ সুযোগে ২৮ মে রাতে দুষ্কৃতকারীরা তাঁর বাড়িতে অগি্নসংযোগ করে। এতে তার ৪০,০০০ টাকা ৰতি হয়েছে। [গ্রামের বাড়ি ইকারাটিয়ায়, পুলিশ থানা : তেলিয়াগাতি, ময়মনসিংহ] এখন তাঁর আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। ছেলে, মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে। সুতরাং সরকার যেন তাঁকে ভাল একটা সাহায্য দেয়। একই ধরনের আবেদন করেছিলেন মধুপুর গ্রামের ইউসুফ আলী সরকার। উলিপুর শানত্মি কমিটির সম্পাদক বরাবর ১৯ নবেম্বর ১৯৭১ সালে তিনি আবেদন করে জানান। -[বানান অবিকল]
"অধীনের বিনীত নিবেদন এই যে গত ১৬ নভেম্বর পাক বাহিনী কতর্ৃক দুষ্কৃতিকারী দমন অভিযানের সময় অগি্নসংযোগের ফলে আমার বাসভবনটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। আমি একজন খাঁটি পাকিসত্মানী নাগরিক। পাকিসত্মানের সংহতি রৰার্থে আমি বদ্ধ পরিকর।
অতএব_
বিধায় প্রার্থনা দয়া করিয়া আমার পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করিতেছি।" তাঁর আবেদন ছিল মাত্র ৫০৫ টাকার। 'ৰয়ৰতির পরিমাণ' দেখলে সে সময়ের জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে একট ধারণা পাওয়া যাবে। যদিও মনে হয়, বেশি টাকা পাওয়ার জন্য জিনিসপত্রের দাম খানিকটা বেশি করে দেখান হয়েছে_
১. ৩টি খড়ের ঘর ৩০০ টাকা
২. ৩টি কাঠের চৌকি ৬০ টাকা
৩. টেবিল, চেয়ার ইত্যাদি ২৫ টাকা
৪. ২টি আলনা ৩০ টাকা
৫. ৩টি থালা ৪০ টাকা
৬. বাটি ও গস্নাস ২৫ টাকা
৭. পিতলের ঘড়া ২৫ [এটি আবার কেটে দেয়া হয়েছে]
হিসাবে যোগ করা হয়েছে ৫০৫ যা ভুল।
রৌমারী থানার, হরিণধরা গ্রামের আবুল হোসেন খন্দকার, উলিপুর শানত্মি কমিটির সেক্রেটারিকে ১৭ আগষ্ট এক চিঠিতে আবেদন জানিয়ে লিখেছিলেন_
"বিনীত নিবেদন এই, আমি উলিপুরে বসবাস করিতে চাই, আমি একজন সরকারী চাকুরে। ব্রহ্মপুত্রের পূর্বতীরে আমার বাড়ী এবং সে এলাকা এখনও দুষ্কৃতিকারীদের হাত হইতে মুক্ত হয় নাই। সুতরাং আমি উলিপুরের ধীরেশ চন্দ্র বাগচীর পরিত্যক্ত বাড়ীতে থাকিতে চাই। অতএব দয়া করিয়া আমাকে উক্ত বাড়ীর দখল দিতে আজ্ঞা হয়।"
উলিপুর শানত্মি কমিটিতে আরও আবেদন জানিয়েছিল একটি স্কুল কমিটির পৰে উমানন্দ গ্রামের তছলিম উদ্দিন আহমদ। তার আবদন-
"বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের তবকপুর বামনের হাটের ১নং এম.আর.পি স্কুলের আসবাবপত্র লুঠতরাজ হইয়া গিয়াছে। পুনরায় তাহা তৈয়ার করার জন্য গাছের বিশেষ প্রয়োজন, বিধায় প্রার্থনা, অত্র ইউনিয়নের উমানন্দ মৌজার শ্রী শ্যামাচরণ বর্মণের পরিত্যক্ত ১টা আম গাছ উক্ত কাজের জন্য অনুমতি প্রদান করিয়া স্কুলের সুবিধা করিতে আজ্ঞা হয়।"
উলেস্নখ্য, ১ জুন ১৯৭১ সালে শানত্মি কমিটি আহ্বান জানিয়েছিল এ বলে যে, পরিত্যক্ত বাড়িঘর ইত্যাদি প্রদান করা হবে। তারপর থেকে এ ধরনের আবেদন শুরম্ন হয়। অবশ্য্য, আবেদন ছাড়াও কমিটির সদস্যরা অনেক কিছু দখল করে নেয়। সংগ্রহ : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
No comments